অর্থনৈতিক ধস ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
দেশের সার্বিক অর্থনীতি যে অত্যন্ত সংকটজনক পর্যায়ে রয়েছে এবং তা ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যতই বলুক অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই, বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিদিনই পত্র-পত্রিকায় অর্থনীতির যে চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই উদ্বেগের বাইরে নেই। সাধারণ মানুষের আয় কমে যাওয়া, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে তাদের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে ওঠা, কর্মজীবীদের বেকার হওয়া, নতুন কর্মসংস্থান না হওয়া, ব্যাংকে আমানত কমে যাওয়া, নিম্নগামী রিজার্ভ, রেমিট্যান্স ও ডলার সংকট, বিনিয়োগে মন্দা, আমদানি-রফতানি হ্রাস ইত্যাদি অর্থনীতির নাজুক অবস্থার প্রমান বহন করে। প্রায় প্রতিদিনই পত্র-পত্রিকায় অর্থনীতি সংক্রান্ত যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, তাতে অর্থনীতির দুর্দশার চিত্র উঠে আসছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দিকে সরকারের দৃষ্টি আছে বলে মনে হয় না। সরকারের সব মনোযোগ এখন জাতীয় নির্বাচনের দিকে। সাধারণ মানুষের দৃষ্টি সেদিকে ঘুরিয়ে এ সংকট ঢেকে রাখার একধরনের অপচেষ্টা রয়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। অর্থনীতির যেসব খাত ধসে পড়ছে, তা ঠেকানোর কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোতে আমানত সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। আমানতের সুদের হার বাড়িয়েও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। সাড়া না পাওয়ারই কথা। যেখানে সাধারণ মানুষ আয় দিয়ে ব্যয় নির্বাহ করতে পারছে না, সেখানে সঞ্চয়ের কোনো কারণ নেই। তাদের হাতে টাকা নেই। সুদের হার যদি আরও বাড়ানো হয়, তাতেও সাধারণ মানুষের কিছু যায় আসে না। অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের এই দুর্দশার কথা সরকার স্বীকার করুক বা না করুক, তাতে যে ভয়াবহ ধস নেমেছে, এতে সন্দেহ নেই।
গতকাল বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কাজের সন্ধানে যেসব মানুষ বিদেশ যাচ্ছে, তাদের অনেকে কাজ পাচ্ছে না। লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে তাদের ফেরত আসতে হচ্ছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু)-এর এক জরিপে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের পর বিদেশ গিয়ে ফেরত এসেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। গত অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে জরিপ করা ২১৮ জন বিদেশ ফেরত কর্মীর ওপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য সংস্থাটি উপস্থাপন করে। সংস্থাটির এ জরিপের বাইরে আরও অনেকে রয়েছে, যাদের দেশে ফিরতে হয়েছে। এ চিত্র নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এই যে জমিজমা, ভিটামাটি বিক্রি করে মানুষ লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে ফিরে আসছে, তারা নিঃস্বে পরিণত হচ্ছে। দেশে যে নতুন করে কিছু করবে সেই সামর্থ্য হারিয়ে ফেলছে। অন্যদিকে, রফতানির সবচেয়ে বড় খাত গার্মেন্টে চলছে অশনি সংকেত। ইতোমধ্যে অনেক গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছে এবং হচ্ছে। তারা কোথায় যাবে? কি করবে? কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়ে পড়ায় কর্মপ্রত্যাশীদের সাথে তারা যুক্ত হয়ে বেকারের সংখ্যা হু হু করে বাড়িয়ে দিচ্ছে। দেশে এখন বেকারের সংখ্যা কত, তার সঠিক হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। তবে অনুমান করতে কষ্ট হয় না, এ সংখ্যা জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের মতো। এই বিপুল সংখ্যক বেকার অর্থনীতিতে বিশাল চাপ সৃষ্টি করেছে। বিশাল সংখ্যক হতাশাগ্রস্ত শ্রেণীর সৃষ্টি হয়েছে। হতাশা থেকে তাদের মধ্যে নানা ধরনের অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। এতে সমাজে নিরাপত্তাহীনতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এ পরিস্থিতি সামাল দেয়া সরকারের পক্ষে এক বড় চ্যালেঞ্জ।
সরকার পরিসংখ্যানগত উন্নয়নকে বেশি প্রাধান্য দেয়। পরিসংখ্যান দিয়ে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে। পরিসংখ্যান যে সবসময় বাস্তব ও সঠিক চিত্র নির্দেশ করে না, তা অর্থনীতিবিদরা বারবার বলেছেন। রিজার্ভ যে ক্রমাগত নিম্নগামী, এ তথ্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা এবং পত্র-পত্রিকা প্রকাশ করলেও সরকার তা স্বীকার করতে চায় না। প্রতিদিন ১৭২ কোটি টাকা কমছে, এ তথ্য পত্র-পত্রিকাগুলো দিলেও গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, রিজার্ভ ভাল অবস্থায় আছে। তার কয়েক দিন আগে তিনিই বলেছিলেন, তার ৩৫ বছরের কর্মজীবনে এমন দুর্দশা দেখেননি। এ ধরনের দ্বিমুখী বক্তব্য থেকে এটাই স্পষ্ট হয়, তিনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এক কোটি টাকার বেশি আমানতকারীর সংখ্যা এক লাখের বেশি। গতকাল একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানতকারির সংখ্যা ১৮২৪ যা গত বছরের চেয়ে ৩.৭৫ শতাংশ বেশি। হাতে গোনা কিছু মানুষের অর্থবৃদ্ধির সূচক এবং সাধারণ মানুষের সীমাহীন দুর্দশার চিত্র অর্থনীতির জন্য কোনো সুসংবাদ বহন করে না। অন্যদিকে, অর্থনীতির সব সূচকের নিম্নগামীতার প্রকৃত চিত্র আড়াল করার অপচেষ্টা দেশকে শোচনীয় পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়ার বার্তাই স্পষ্ট করে। সরকারের উচিত অর্থনীতির এই ধস ঠেকাতে অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে কীভাবে এবং কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায়, জরুরিভিত্তিতে তার পরিকল্পনা করা। তা নাহলে, চলমান সংকট লাগামহীন হয়ে পড়বে এবং তা সামাল দেয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার
রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি
দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়
যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের
রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা
বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে
টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে
জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে
৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা
আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি
পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই
তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা
ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের
উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি
২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট
২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের
কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু
১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে
বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো
তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান