ক্রেতাস্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
ক’মাস আগেও পেঁয়াজ কেজি ২৫ টাকা ছিলো। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও ৮০/৯০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়। দু’দিনের ব্যবধানে কেজি ২শত টাকারও উপরে উঠে যায়। এদিকে কাঁচামরিচ, বেগুন ও অন্যান্য সবজির দামও বাড়তির দিকে। ৩০ টাকার শসা বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। আর মাছ-মাংসের দামতো আগে থেকেই বেড়ে আছে। ইলিশের দাম চড়া। অনেকে এবার দামের কারণে একবারের জন্যও ইলিশ ঘরে নিতে পারেনি। কেজি প্রতি পাঙ্গাস ১৮০-২০০, সিলভার কার্প ১৮০-২২০, শিংমাছ ৬০০-৮০০, তেলাপিয়া ১৮০-২২০, দেশি মাগুর ৬০০-৮০০, চায়না পুঁটি ১৫৫-১৯০, দেশি আলু ৫০, নতুন আলু ১২০, করলা ৬০-৮০, পটোল ৬০, কাকরোল ৫৫-৬০, চিচিঙ্গা ৫০-৬০, মিষ্টি কুমড়া (কাটা পিস) ২৫-৪০, লাউ ৫০-৬০, কচুর লতি ৫০-৬০, গাঁজর ৫০-৮০, পেঁপে ৩০-৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এটাই বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের হালচিত্র।
চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও তার সুফল অনেক সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় পরিবহন চাঁদাবাজি ও মজুদদারির কারণে। আগে বাজার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। দ্রব্যমূল্য এবং চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তাতেও কি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আছে? বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আর জেলা প্রশাসনের তাবৎ হুমকি ধমকিকে কি পাত্তা দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা? উল্টো পেঁয়াজের দামে আগুন লাগিয়ে ছেড়েছে।
বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ভারত থেকে রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৭৭ দশমিক ১০০ শতাংশ। পত্রিকার সংবাদ থেকে জানা যায়, এক/দুই দিনের ব্যবধানে এক কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা বেড়েছে। অনেক দোকানে পেঁয়াজ নাই, ক্রেতারা বলেছে আরও বেশি দামে বিক্রি করবে, তাই দোকনদাররা পেঁয়াজ সরিয়ে ফেলেছে। অনেক দোকানে পেঁয়াজের মূল্য তালিকায় নাই। কিছু দোকানে মূল্য তালিকা আছে ১৫০ টাকা, বিক্রি করছে ২১০/২২০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২১০-২২০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ১৮০-১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছে।
অর্থনীতিতে একটা কথা আছে, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন যতো কম হবে পণ্যের দাম বাজারে ততো বেশি হবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সহজ কাজ নয়। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও চারদলীয় জোট সরকার এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সময় দেখেছি, যতবার পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, ততবার বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা সরকারকে বারবার আশ্বাস দিচ্ছে, পণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু বাস্তবে তা তামাশা মাত্র! তার কোনো প্রভাব কখনই বাজারে পড়ে না। দেশব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য অসৎ ব্যবসায়ী সব সময়ই বেপরোয়া। তারা মন্ত্রী, সচিব, ডিসি, এসপিদের ছোঁড়া হুংকারকে দিব্যি ধিক্কার দিয়ে চলে। অসৎ বৃহৎ ব্যবসায়ীদের একটি গোষ্ঠী বরাবরই পণ্যমূল্য বাড়িয়ে তাদের পকেট স্ফীত করে চলেছে। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সরকারকে যেকোনো মূল্যে করতেই হবে। এভাবে অহেতুক পণ্যমূল্য বাড়ার ঘটনা বোধকরি কোনো সভ্য সমাজে ঘটে না। অন্য কোনো দেশেও তার নজির নেই। এভাবে আর চলতে পারে না। দ্রব্যসামগ্রী অর্থাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসমূহের মূল্য স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে বর্তমান পরিস্থিতিতে যা করা দরকার তাহলো, বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে নেয়া পদক্ষেপগুলো সরকারকে কার্যকর করতে হবে। যেকোনো মূল্যে মধ্যসত্ত্বভোগীদের কারসাজি বন্ধ করতে হবে। দোকানদারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজি বন্ধের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবহন খাতের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। বাজারে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি, তা বেশি করে যোগান দিতে হবে। পাইকারি বাজার থেকে ভোক্তা বাজারের মাঝখানে কেউ যাতে স্বার্থ হাসিল না করতে পারে, তার ব্যবস্থা নিতে হবে। আরো বেশি করে সরকারি বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে বণ্টনের ব্যবস্থা করতে হবে।
আমরা জানি, ভোক্তাস্বার্থ রক্ষা করতে সরকারের বহু সংস্থা কাজ করছে। এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি সেল, মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কৃষি মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বিএসটিআই, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথা উল্লেখ করা যায়। তারপরও বাজারে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হয়নি। তাহলে কি গোড়ায় গলদ? এদেশের সিন্ডিকেটবাজরা বড়ই প্রভাবশালী। সরকারের লোকজনের সাথে তাঁদের সখ্য অনেক। তাই হয়তো তাদের রোধ করা যায় না কিংবা রোধ করা হয় না। এভাবে বাজার ছেড়ে দিলে কিংবা সিন্ডিকেটবাজদের রেয়াত দিলে ক্রেতাস্বার্থ কখনোই নিশ্চিত হবে না।
লেখক: সাংবাদিক, সমাজ গবেষক।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
২৬ সেপ্টেম্বর নিয়ে কেন এত আগ্রহ?
সেপ্টেম্বরের ২৪ দিনেই ডেঙ্গু রোগী আট মাসের চেয়ে বেশি
যশোর শহরে এক দোকানীকে মারপিট ও ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি : থানায় অভিযোগ
ভারতীয় সাংবাদিকদের জোরপূর্বক ড. ইউনূসের লিফটে ঢোকার চেষ্টা...
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সাথে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ
ফলে গেল মাস্কের ভবিষ্যদ্বাণী, অলিম্পিকে রুপাজয়ী শুটার এখন ‘ভিলেন’
যশোরে নিখোঁজ সবিতা রানীর লাশ সেফটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার করছে পুলিশ
এক রকেটে আটটি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠালো চীন
আবু সাঈদের মৃত্যুর কারণ মাথার আঘাত নয়- ডা. রজিবুল
সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন গ্রেপ্তার
বাংলাদেশকে সেমিতে তুলল ভারত
গেইলের ছক্কার রেকর্ড ভাঙলেন পুরান, হুমকিতে রিজওয়ানের রেকর্ডও
পাকিস্তান দলে ফিরলেন ৩৭ বছর বয়সী নোমান
বদলে গেল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের ভেন্যু
লিগ কাপে সিটি ও চেলসির জয়
আনচেলত্তির মাইলফলক ম্যাচ জয়ে রাঙাল রিয়াল
৩০ পেরোনোর আগেই ফুটবলকে বিদায় বলে দিলেন জিদানপুত্র
ব্রুকের সেঞ্চুরিতে অজিদের জয়রথ থামিয়ে টিকে থাকল ইংল্যান্ড
বাংলাদেশকে পূর্ণ সমর্থন বাইডেনের
পাবর্ত্য চট্টগ্রামে দুর্গম পাহাড়ি সেনা ক্যাম্প পরিদর্শন সেনা প্রধানের