ঢাকা   বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১০ আশ্বিন ১৪৩১

পশ্চিমাদের আলোর নিচে অন্ধকার

Daily Inqilab ড. মো. কামরুজ্জামান

২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম

আধুনিক যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। বিগত বিশ বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রযুক্তির আশির্বাদে বর্তমানে গোটা পৃথিবী একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞান আজ বিশাল ভূপৃষ্ঠকে কব্জা করে নিয়েছে। সাগরের তলদেশ দখল করার পর মহাকাশ জগতকেও বশে আনতে যাচ্ছে বিজ্ঞান। নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে মানুষের দৈনন্দিন কাজ সহজতর হচ্ছে। আর এসব ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের অবদানকেই মানুষ বড়ো করে দেখছে। প্রাচীন বহু সভ্যতা ডিঙ্গিয়ে আমরা নতুন সভ্যতায় পা রেখেিেছ। ইতোমধ্যেই একবিংশ শতাব্দির ২৩টি বছর আমরা অতিক্রম করেছি। নতুন সভ্যতা আমাদের নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আমরা এ সময় পশ্চিমাদেরই নতুন সভ্যতার নির্মাতা মনে করছি। মনে করছি, পশ্চিমারাই সহনশীলতার প্রাণকেন্দ্র, পশ্চিমারাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের ¯্রষ্টা। সত্য বটে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে তারা অভূতপূর্ব অবদান রেখে চলেছে। নব নব আবিষ্কারে তারা তাদের প্রাধান্যের সাক্ষর রেখে চলেছে। এসব কারণে আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীরা পশ্চিমা সভ্যতার প্রতি অন্ধ আনুগত্য পোষণ করছে। তাদের আবিষ্কার ও সভ্যতার প্রতি বর্তমান প্রজন্ম প্রবলভাবে আকৃষ্ট হয়েছে। তারা তাদের জ্ঞন ও প্রযুক্তির কাছে নিজেদের সমর্পণ করেছে। কিন্তু মুসলিমদের যে এক সোনালি অতীত ছিল; এটা নতুন প্রজন্ম জানেই না। মুসলিমদের সোনালি অতীতের বিপরীতে পশ্চিমাদের আছে এক কালো অধ্যায়। নতুন প্রজন্ম সে সম্পর্কেও কিছু জানে না। তাদের অতীতটি নিকষকালো অন্ধকারে ঢাকা এক পঙ্কিলময় ইতিহাস। তাদের বর্তমান সভ্যতা নির্মিত হয়েছে প্রবল এক লালসার উপর। এ সভ্যতার পেছনে রয়েছে ঘৃণীত এক বর্ণবাদী মানসিকতা। শুধু পেছনের ইতিহাস নয়, বর্তমানেও তাদের সভ্যতা ঘৃণ্য মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত। লাখ লাখ নিরপারধ মানুষ হত্যা তাদের কাছে কিছুই নয়। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে আর ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণই এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আর ফিলিস্তিনিদের সাথে তাদের কাপুরোষিত আচরণই বলে দেয় তাদের উদ্দেশ্য কী! তারা দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্তরালে অশান্তি সৃষ্টিকারী একটি শক্তি। মূলত একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠি। এ ব্যাপারে আল্লাহর বাণী প্রণিধানযোগ্য। ‘তাদেরকে যখন বলা হয়, তোমরা পৃথিবীতে সন্ত্রাস সৃষ্টি করো না, উত্তরে তখন তারা বলে, আমরাইতো পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী!’ (আল বাক্বারা: ১১) বর্তমানে গোটা দুনিয়ায় এরাই গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের ফেরি করে চলেছে।

দুঃখজনক সত্য হলো, জ্ঞান আর প্রযুক্তি যখন উন্নত হচ্ছে আমরা তখন পেছনের দিকে যাচ্ছি! দুনিয়ার তাবৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আজ পশ্চিমাদের একক নিয়ন্ত্রণাধীন। বিশ^মিডিয়াও আজ তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের কুকীর্তি সম্পর্কে আধুনিক প্রজন্ম কোনো ধারণাই রাখে না। তাদের সৃষ্ট চোখ ধাঁধানো প্রযুক্তি আমাদের নতুন প্রজন্মকে নির্বোধ বানিয়ে দিচ্ছে। এ নির্বোধ প্রজন্ম পশ্চিমাদের অন্ধ অনুসারী হয়ে গেছে। ধর্ম, সংস্কৃতি ও মননশীলতায় পশ্চিমা সভ্যতার গোলামে পরিণত হয়ে পড়েছে। আমাদের পাঠশালাগুলো আজ শুধুই কারুকার্য খচিত দামী নির্মাণশৈলীর নিদর্শন! বিশ^বিদ্যালয়গুলো এখন শুধুই গবেষণার মিথ্যে ফানুস। বইয়ের বদলে তাই বিশ^বিদ্যালয়ের হলগুলোতে শোভা পায় সারি সারি মদের বোতল! নিয়ম করে রুটিনমাফিক সেখানে বসে জুঁয়ার আড্ডা। বাঙালি মুসলিমের স্বাধীন সত্তা আজ বিলীন হওয়ার পথে! পশ্চিমা মিডিয়া সর্বক্ষণ সম্প্রীতির নামে সাম্প্রদায়িকতা প্রচার করে চলেছে। তারা অপপ্রচার করে বলছে, মুসলিমরা হচ্ছে সবচেয়ে অসভ্য। তাদের মিডিয়াগুলো মুসলিমদের নিয়ে নানা মিথ্যে কাহিনী ভাইরাল করছে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে বানোয়াট গল্প সাজিয়ে মিডিয়ায় উপস্থাপন করছে। এসব মিথ্যে প্রচারের মাধ্যমে নিজেদের অন্ধকার দিকগুলোকে ঢাকবার চেষ্টা করছে। কিন্তু সত্য কখনও চাপা থাকে না। তাদের চেপে রাখা ইতিহাসের অতি সামান্যই তুলে ধরার ক্ষুদ্র এক প্রয়াসই হলো এ প্রবন্ধ।

সৃষ্টির শুরু থেকে লজ্জা নিবারণ করা মানুষের অতি সহজাত স্বভাবেরই অংশ। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানবজাতি মাত্রই লজ্জা নিবারণের এ কাজটি করে থাকে। কিন্তু পশ্চিমারা এর বিপক্ষে ‘নো-প্যান্ট ডে’ নামক এক উলঙ্গ নীতির অনুসরণ করে থাকে। প্রতিবছরের ১০ জানুয়ারি পশ্চিমা দেশগুলোর তরণ-তরুণীরা উলঙ্গ থাকে। দিনের বেলা তারা পাতাল রেলে প্যান্ট খুলে ঘোরাফেরা করে। এটা আধুনিক মানব সভ্যতার সবচেয়ে কুৎসিৎ একটি দিক। এক্ষত্রে তাদের কোনোভাবেই সভ্য জাতি বলা যায় না। পশ্চিমাদেশের আরেকটি অসভ্য দিক হলো, তাদের পুরুষেরা বীর্য বিক্রি করে! এ বীর্য থেকে একজন পশ্চিমা নাগরিক শত শত সন্তান জন্ম দিয়ে থাকে। একজন ব্রিটিশ পুরুষ তার বীর্য থেকে ৮০০ সন্তানের জন্মের কথা স্বীকার করেছে। বিষয়টি রুচিশীল পাঠকদের ব্যাখ্যা করার জন্য পেশ করা হলো। পৃথিবীতে ৪ হাজারের বেশি ধর্ম রয়েছে। প্রতিটি ধর্ম মাতৃত্বকে সম্মানের সাথে দেখে থাকে। আর মাতৃত্বের মৌলিক সম্মানের জায়গা হলো মায়ের গর্ভ। মায়ের গর্ভের মতো গোপন ও মর্যাদাপূর্ণ স্থান দ্বিতীয়টি নেই। কিন্তু পশ্চিমা প্রায় সবদেশের সব মানুষের কাছে এ গর্ভের কোনো সম্মান নেই। পশ্চিমের অধিকাংশ দেশে মেয়েরা তাদের গর্ভ ভাড়া দিয়ে থাকে! তাদের রুচি এমন নি¤œ স্তরে পৌঁছেছে যে, নিজের মা পর্যন্ত সন্তানের কাছে গর্ভ ভাড়া দেয়! নিজ পুত্রের বীর্য দিয়ে মায়ের গর্ভধারণকে পশ্চিমা নারীরা গর্ব অনুভব করে! এছাড়া পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশ পরিবারের নিজেদের মধ্যেই যৌনতাকে বৈধতা দিয়েছে। এতে বাবা তার কন্যার সাথে, মা তার ছেলের সাথে ইচ্ছেমতো যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। আর এটা তাদের রাষ্ট্রীয় আইনে বৈধ। ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশে এ জাতীয় বৈধতা বর্তমানেও লক্ষণীয়! এটা কী ধরনের সভ্যতা, তা পাঠকগণই বিবেচনা করুন! আধুনিক নারীরা পশ্চিমাদেরই একমাত্র তাদের জীবন ও মনের মডেল মনে করে। তারা তাদেরই নারী অধিকার ও ক্ষমতায়নের প্রবক্তা মনে করে থাকে। অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে ধর্ষণপীড়িত হলো এই পশ্চিমা দেশগুলো। এক জরিপে দেখানো হয়েছে, যৌন হয়রানিমূলক শীর্ষ ১০ রাষ্ট্রের তালিকার ১০টিই পশ্চিমা দেশের অন্তর্গত। এ তালিকায় একটি মুসলিম রাষ্ট্রের নামও খুঁজে পাওয়া যায় নাই। আমেরিকা একটি ধর্ষণপ্রবণ দেশ। এফবিআই-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমেরিকাতে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ৯৫ ভাগ ধর্ষণ সংঘটিত হয় মাতাল অবস্থায়। আর এমতাবস্থায় বাবা তার মেয়ের সাথে, ছেলে তার মায়ের সাথে ও ভাই তার বোনের সাথে যৌনকর্মে মিলিত হয়। পরিসংখ্যান বলছে, ধর্ষণের দায়ে সাজাপ্রাপ্তরা জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর প্রায় শতকরা ৯৫ ভাগই তারা আবার ধর্ষণে লিপ্ত হয়। এক জরিপে বলা হয়েছে, নারী ধর্ষণে সবচেয়ে এগিয়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সুইডেন, এরপর বৃটেন, জার্মানি, ফ্রান্স ও কানাডা। অথচ সভ্যতার দাবিদার এই আমেরিকা!
যৌনতার রুচিতে পশ্চিমারা পশুত্বকেও হার মানিয়েছে। এক্ষেত্রে তারা একটি শিয়াল বা কুকুরের রুচিকেও ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ যে কাজটি একটি কুকুর করে না, সেই কাজটি এখন পশ্চিমারা করে! পশুর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করাকে তারা সুসভ্যতা মনে করে। কুকুর, গাঁধা, ঘোড়া ইত্যাদির সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা তাদের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার। ইউরোপ-আমেরিকায় এটি রাষ্ট্রীয় আইনে স্বীকৃত। শুধু তাই নয়, সেগুলো নিয়ে পর্নোগ্রাফি তৈরি করে সেগুলো বাজারজাতকরণও বৈধ। যুক্তরাষ্ট্র, ফিনলান্ড, জার্মানি, মেক্সিকো, রোমানিয়া ও ডেনমার্কে এ জাতীয় অশ্লীলতার নিদর্শন রয়েছে। এছাড়া লাশের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করাটাও পশ্চিমা বিশ্বের অন্যতম নোংরা কাজ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানাসহ চারটি রাজ্যে লাশের সাথে সেক্স করা আইনত বৈধ। পশ্চিমাবিশ্ব অবৈধ সন্তানের এক অবাধ মার্কেট। আমেরিকার জনৈক বিশেষজ্ঞ মুহানি বিশ্বকে চমকে দেয়ার মতো এক তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, শ্বেতাঙ্গ লোকদের মধ্যে অবৈধ সন্তানের ব্যাপকতা অনেক। তিনি বলেছেন, এই অবৈধ নোংরামি বন্ধ করা না হলে দ্রুতই আমেরিকার পরিবার প্রথা ধ্বংস হয়ে যাবে। টাইমস-এর একটি পরিসংখ্যানে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক অবৈধ সন্তানের সংখ্যা ২৫ লাখ।

আমেরিকায় পারিবারিক প্রথা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। সেখানে প্রতি ১৮ সেকেন্ডে একজন স্ত্রী বা মহিলা মারা যায় স্বামীর হাতে। আমেরিকায় প্রায় ৮৫% বিবাহিত ব্যক্তি শারীরিক দিক থেকে সন্তান প্রজননে অক্ষম। (টাইমস ২০০০) আমেরিকান নারীরা মাতৃত্ব এবং ঘর সামলানোর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে বহু বছর আগেই। প্রতিবছর আমেরিকায় ২৫ লাখ অবিবাহিত মেয়ে মা হয়। আমেরিকাতে দৈনিক চার হাজার গর্ভপাত ঘটানো হয়। তার মধ্যে ৬৫ ভাগ মহিলাই অবিবাহিত। আমেরিকাকে এখন বিশে^ তালাকের রাজধানী বলা হয়ে থাকে। আমেরিকায় প্রতি এক মিনিটে গড়ে দুইটি করে তালাক সংঘটিত হয়। শুধু লস এঞ্জেলসেই প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার তালাক সরকারিভাবে নথিভুক্ত করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ১৮টি বিয়ের মধ্যে একটি তালাক কার্যকর হতো। কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোতে এই হার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। একটি পরিসংখ্যানে জানা যায়, আমেরিকায় বার্ষিক তালাকপ্রাপ্ত নারীর সংখ্যা ১৫ লাখের বেশি।
পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ আমেরিকা। অথচ, সেখানে সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংগঠিত হয়। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, প্রতি ১২ সেকেন্ডে আমেরিকাতে একটি অপরাধ সংগঠিত হয়। প্রতি ঘণ্টায় একজন লোক খুন হয়। প্রতি ২৫ মিনিটে একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। প্রতি এক মিনিটে সেখানে একটি চুরির ঘটনা ঘটে। প্রতি ৫ মিনিটে একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। প্রতি মিনিটে একটি হত্যাকা- ও আটটি চুরির ঘটনা ঘটে। মাসে ২৫ হাজার প্রাইভেট কার চুরি হয়।

আমেরিকার প্রতি পাঁচজনেই একজন পাগল। আমেরিকার সাড়ে চার কোটি মানুষ মস্তিষ্কের ব্যাধিতে আক্রান্ত। ইউরোপ ও আমেরিকায় পরিবার প্রথা একেবারেই ভেঙে গেছে। শুধু জ্ঞান-বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে হাজার বছর এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাদের উন্নত এ প্রযুক্তি তাদেরকে ধ্বংসোন্মূখ সভ্যতায় পরিণত করতে চলেছে। ধ্বংসন্মুখ এ সভ্যতা ভেঙ্গে দিয়েছে মা-সন্তানের শ্রদ্ধার দেয়াল। পিতাকে কাছে না পাওয়ায় সন্তানের শয্যাসঙ্গী হচ্ছে মা। অসৎ পিতার যৌন লালসা পূরণে আপন কন্যা হচ্ছে শয্যাসঙ্গিনী! যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে যৌন অপরাধ বাড়ছে মহামারী আকারে। এ ব্যাধি নিয়ন্ত্রণের নানা উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসেনি। যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ লাখ সামরিক বাহিনীর ৭ শতাংশ হচ্ছে নারী। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। এ সমস্ত ঘাঁটিতে পুরুষ সৈন্যের সাথে নারী সৈন্যরাও রয়েছে। এ সমস্ত ঘাঁটিতে নারী নির্যাতন এবং যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। এ অনৈতিকতার ছোবলে আজ ক্ষতবিক্ষত পশ্চিমা জগত। সেখানকার নির্যাতিত ও ক্ষত-বিক্ষত মানুষগুলো শান্তির জন্য ঘুরছে হন্য হয়ে! সাপ্তাহিক টাইমস-এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমেরিকা এখন আত্মহত্যাপ্রবণ একটি দেশ। সেদেশে ১০ থেকে ২০ বছর বয়সীদের আত্মহত্যার হার দ্রুত বেড়ে চলেছে। গত শতকে সেদেশে প্রতি লাখে ৬০ জন যুবক আত্মহত্যা করেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে। উক্ত রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, প্রতি বছর সেখানে ১৩ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৫ হাজার যুবক আত্মহত্যা করে। বিগত ১০ বছরে ইচ্ছাকৃত আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা ৩৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

জাতিগতভাবে পশ্চিমারা উপনিবেশবাদে বিশ^াসী। উপনিবেশবাদ হলো, অবৈধভাবে অন্য দেশের উপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। এক্ষেত্রে তাদের উদ্দেশ্যই হলো, অন্য দেশ ও জাতিকে দাস-দাসিতে পরিণত করা। অন্যদেরকে অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিকভাবে গোলাম বানানোই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। বিগত দশকে এই পশ্চিমারা বিভিন্নদেশ ও মহাদেশে উপনেবিশবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল। উদাহরণস্বরূপ এখানে তাদের কতিপয় ঔপনিবেশক শোষণের ইতিহাস এখানে উল্লেখ করা হলো:

পঞ্চদশ শতকে তারা স্পেনে ঔপনিবেশক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। তারা এখানে দীর্ঘ ৪০০ বছর ধরে সা¤্রাজ্যবাদী শাসন পরিচালনা করে। এ শাসন প্রতিষ্ঠা করতে তারা প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে হত্যা করে। স্পেনের রাজা এ সময় ইহুদী ও মুসলিমদের খ্রিস্টান বানাতে উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদেরকে খ্রিস্টান হতে অথবা দেশ ত্যাগের ফরমান জারি করে। এ ঘোষণার পর লাখ লাখ মুসলিম ও ইহুদী স্পেন ত্যাগ করে। এ দেশ ত্যাগের সময় অনেকের সলিল সমাধি ঘটে। অনেকে নিরুপায় হয়ে বাহ্যত খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে। কিন্তু তাতে তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। ধর্ম পালনে সামান্য ব্যত্যয় ঘটলে নওমুসলিমদের চরম শাস্তি দেয়া হতো। শাস্তি হিসেবে তাদের মাথা চূর্ণ বিচূর্ণ করা হতো। তাদের হাঁটু ও পায়ের হাড় ভেঙ্গে দেয়া হতো।

১৫৩৪ থেকে ১৯৮০ সালের কথা। ফরাসিরা এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা ও আমেরিকায় তাদের ঔপনিবেশন শাসন প্রতিষ্ঠা করে। নেপোলিয়নের নেতৃত্বে তারা হাইতিতে এক পৈশাচিক দৃশ্যের অবতারণা করে। তারা দাসত্বপ্রথার জন্ম দেয়। তারা আফ্রিকা থেকে অসংখ্য বনি আদমকে দাস বানিয়ে আমেরিকা পাচার করে। তাদের সাথে অমানবিক আচরণ করা হয়। তাদের অনাহারে থাকতে বাধ্য করা হয়। তারা যাতে কোনো কিছু না খেতে পারে সেজন্য তাদের মুখে লাগাম পরিয়ে দেয়া হয়। তাদের কেউ পালাবার চেষ্টা করলে ধরে এনে কড়াইয়ের টগবগে ফুটন্ত আগুনে সিদ্ধ করে কাবাব বানানো হয়। ফরাসীরা তাদের ৪০০ বছরের শাসনামলে এক কোটির বেশি মানুষকে নানা ধরনের নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে।

১৮৬৫ সালে পশ্চিমা রাজা লিওপল্ড আফ্রিকার একটি বিশাল এলাকা দখল করে। এ ঔপনিবেশনকালের সময়সীমা ছিল ৭৭ বছর। রাজা কর্তৃক সে সময়ের নৃশংসতার কাহিনি গা শিউরে উঠার মতো। বেলজীয় রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ড এ সময় কঙ্গো দখল করে। গোটা কঙ্গোবাসীকে লিওপোল্ড দাস-দাসিতে রূপান্তর করে। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কঙ্গোর প্রত্যেকটি গ্রামের প্রত্যেকটি মানুষকে কৃষিকাজে বাধ্য করে। কাজে সামান্য সময় বিশ্রাম নিতে চাইলে তাদের হাত-পা কেটে দেয়া হয়। নারীদের অত্যন্ত নিকৃষ্টভাবে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। সর্বশেষ ৫০ বছরে পশ্চিমার এ অসভ্য রাজা প্রায় ১ কোটি নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে।

এ আলোচনা এটাই প্রমাণ করে যে, পশ্চিমারা দেখতে মানুষ হলেও তাদের ভিতরের মানুষটা এখনও অমানুষ। পশুত্বের স্বভাবে ভরা তাদের সার্বিক আচরণ। তাদের চোখ ধাঁধানো আবিষ্কার সাময়িক কৃতিত্বের দাবি রাখলেও মানবিক ও টেকসই দৃষ্টিকোণে সেটি অতিশয় ক্ষয়িষ্ণু। তাদের সামগ্রিক জীবন এক অনৈতিক ও দুর্বল ফ্রেমে বন্দি। একটি দমকা হাওয়াতে তা ভেঙ্গে যেতে পারে যে কোনো সময়।

লেখক: অধ্যাপক, দা›ওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া ও নির্বাহী সদস্য (জাশিপ)
[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

জাস্টিন ট্রুডোর সাথে বৈঠক করেছেন ড. ইউনূস

জাস্টিন ট্রুডোর সাথে বৈঠক করেছেন ড. ইউনূস

চীন-সুইস অবাধ বাণিজ্য চুক্তির আপগ্রেড আলোচনা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু

চীন-সুইস অবাধ বাণিজ্য চুক্তির আপগ্রেড আলোচনা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু

২৬ সেপ্টেম্বর নিয়ে কেন এত আগ্রহ?

২৬ সেপ্টেম্বর নিয়ে কেন এত আগ্রহ?

সেপ্টেম্বরের ২৪ দিনেই ডেঙ্গু রোগী আট মাসের চেয়ে বেশি

সেপ্টেম্বরের ২৪ দিনেই ডেঙ্গু রোগী আট মাসের চেয়ে বেশি

যশোর শহরে এক দোকানীকে মারপিট ও ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি : থানায় অভিযোগ

যশোর শহরে এক দোকানীকে মারপিট ও ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি : থানায় অভিযোগ

ভারতীয় সাংবাদিকদের জোরপূর্বক ড. ইউনূসের লিফটে ঢোকার চেষ্টা...

ভারতীয় সাংবাদিকদের জোরপূর্বক ড. ইউনূসের লিফটে ঢোকার চেষ্টা...

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সাথে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সাথে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ

ফলে গেল মাস্কের ভবিষ্যদ্বাণী, অলিম্পিকে রুপাজয়ী শুটার এখন ‘ভিলেন’

ফলে গেল মাস্কের ভবিষ্যদ্বাণী, অলিম্পিকে রুপাজয়ী শুটার এখন ‘ভিলেন’

যশোরে নিখোঁজ সবিতা রানীর লাশ সেফটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার করছে পুলিশ

যশোরে নিখোঁজ সবিতা রানীর লাশ সেফটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার করছে পুলিশ

এক রকেটে আটটি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠালো চীন

এক রকেটে আটটি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠালো চীন

আবু সাঈদের মৃত্যুর কারণ মাথার আঘাত নয়- ডা. রজিবুল

আবু সাঈদের মৃত্যুর কারণ মাথার আঘাত নয়- ডা. রজিবুল

সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন গ্রেপ্তার

সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন গ্রেপ্তার

বাংলাদেশকে সেমিতে তুলল ভারত

বাংলাদেশকে সেমিতে তুলল ভারত

গেইলের ছক্কার রেকর্ড ভাঙলেন পুরান, হুমকিতে রিজওয়ানের রেকর্ডও

গেইলের ছক্কার রেকর্ড ভাঙলেন পুরান, হুমকিতে রিজওয়ানের রেকর্ডও

পাকিস্তান দলে ফিরলেন ৩৭ বছর বয়সী নোমান

পাকিস্তান দলে ফিরলেন ৩৭ বছর বয়সী নোমান

বদলে গেল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের ভেন্যু

বদলে গেল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের ভেন্যু

লিগ কাপে সিটি ও চেলসির জয়

লিগ কাপে সিটি ও চেলসির জয়

আনচেলত্তির মাইলফলক ম্যাচ জয়ে রাঙাল রিয়াল

আনচেলত্তির মাইলফলক ম্যাচ জয়ে রাঙাল রিয়াল

৩০ পেরোনোর আগেই ফুটবলকে বিদায় বলে দিলেন জিদানপুত্র

৩০ পেরোনোর আগেই ফুটবলকে বিদায় বলে দিলেন জিদানপুত্র

ব্রুকের সেঞ্চুরিতে অজিদের জয়রথ থামিয়ে টিকে থাকল ইংল্যান্ড

ব্রুকের সেঞ্চুরিতে অজিদের জয়রথ থামিয়ে টিকে থাকল ইংল্যান্ড