অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ থাকে না
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্রের শাসকরা ইতিহাস, দর্শন ও শিল্প-সাহিত্য থেকে শিক্ষা নিয়ে পথ চলেন। এসব বিষয়ের উপর অংশীদারিত্ব সকলের। অতএব, জাতির মননশীলতার পথ নির্মাণে শিল্পসাহিত্য ও রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের ঐতিহাসিক পাঠ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে ও এগিয়ে নিতে না পারলে পদস্খলন ও বিচ্যুতি অবধারিত। বাংলাদেশ আজ যে ক্রান্তিকালের এক চরম সীমারেখায় অবস্থান করছে, তা থেকে উত্তরণের যথেষ্ট উপায় থাকলেও শাসক রিজিমের গোয়ার্তুমি ও কূপমন্ডুকতায় এক অজানা বহুমাত্রিক শংকায় পুরো জাতিকে বিভ্রান্ত ও হতাশ ও বিক্ষুব্ধ করে তোলার পরিনতি শুভ হতে পারে না। বিশেষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদের কথা বাদ দিলেও দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাজনৈতিক বিতর্ক, অংশগ্রহণ ও গণতান্ত্রিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা সর্বকালের সর্বনি¤েœ ছিল। এসব নির্বাচনের দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়া এবং পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত চাপ সত্ত্বেও একটি সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও নির্বাচনী ধারা প্রতিষ্ঠার সার্বজনীন দাবিকে অগ্রাহ্য করে আরেকটি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের অনানুষ্ঠানিক অবলুপ্তির এই ধারাক্রম মুক্ত বিশ্বের চোখে স্পষ্টভাবেই ধরা পড়ছে। গত দেড় দশকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতাসীনদের দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিনত করার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষকে নিশ্চিহ্ন- নির্মূল করার রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মানবাধিকার ও আইনের শাসনের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলাকে পদদলিত করার অসংখ্য উদাহরণ তৈরী হয়েছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ণের কারণে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদ- ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার, পুঁজিবাজার ও ব্যাংকিং সেক্টরের লুন্ঠনের মচ্ছব চালু রেখেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং দেশে তথাকথিত একটি উন্নয়নের শ্লোগান তোলা হয়েছে। অলিগার্কিকদের কারসাজিতে অব্যাহত ও নিয়ন্ত্রনহীন মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে স্পিষ্ট দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ এখন আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন জীবনের ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে নিরবে মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।
আমরা এখন ইংরেজী বর্ষপঞ্জীর শেষ সপ্তাহে উপনীত হয়েছি। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুসারে, নতুন বছরের ৭ জানুয়ারী যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, যেনতেন প্রকারে তা বাস্তবায়নের সরকারি প্রয়াস চলছে। আমাদের ইতিহাস সাক্ষি, নির্বাচনকালীণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যতিরেকে, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে দলীয় কিংবা সেনা শাসনামলে নানা কিসিমের যেসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার অনেকগুলোতে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও জনগণের বর্জন সত্ত্বেও কোনো নির্বাচনই প্রতিহত করা যায়নি। এরশাদের ১৯৮৮, খালেদা জিয়ার ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬, শেখ হাসিনার ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জনের ডাকে জনগণ সাড়া দিয়ে ভোট কেন্দ্রে না গেলেও, দেশে-বিদেশে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও কোনো নির্বাচনই বন্ধ বা প্রতিহত করা যায়নি। অতীতের সেসব নির্বাচনের দিকে পশ্চিমা বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এতটা নিবদ্ধ ছিল না। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলোর দৌড়-ঝাঁপ, বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতি হুমকি ও আশঙ্কার মধ্যে এখন যে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তার ফলাফল নিয়ে বড় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক ঝুঁকি ও দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নানা মহলের আহ্বান, সতর্কতা, নিষেধাজ্ঞাসহ এতসব হুমকি বিপত্তি, ঝুঁকি ও হুমকি উপেক্ষা করে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাতে দেশের কোনো স্বার্থ নেই। নিজেদের মনগড়াভাবে যথেচ্ছ পরিবর্তিত সংবিধানের দোহাই দিয়ে সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক নিরপেক্ষতা ও ন্যায়পরায়ণতার রাজনীতি নিরপেক্ষ-জনবান্ধব বৈশিষ্ট্য পরিত্যাগ করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সাথে ক্ষমতাসীন দল, সরকার ও রাষ্ট্রের একাকার হয়ে পড়ার বাস্তবতা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্থলে একটি কর্তৃত্ববাদী অলিগার্কিক রিজিমের প্রতিষ্ঠাকেই নির্দেশ করে। আবহমান কাল ধরে এ দেশের রাজনৈতিক বিবর্তনের ঐতিহাসিক পটভূমিতেই বৈষম্যহীন একটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ও লক্ষ্য বিদ্যমান ছিল। ইংরেজের বিরুদ্ধে সিপাহী বিদ্রোহে এ দেশের হাজার হাজার দেশপ্রেমিক আলেম ও প্রতিবাদী মানুষ রাষ্ট্রশক্তির হাতে জীবন দিয়েছেন। হিন্দু-মুসলমানের হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেশভাগের প্রাক্কালে এক রক্তক্ষয়ী দাঙ্গায় পরিনত হয়ে কোটি কোটি মানুষের বাস্তুচ্যুতির মধ্য দিয়ে যে নতুন ডেমোগ্রাফিক মানচিত্রের ভূগোল গড়ে উঠেছিল, আঞ্চলিক রাজনৈতিক পক্ষপাতের মধ্য দিয়ে তাও নতুন বিভক্তির মধ্য দিয়ে বিশ্ব সভ্যতায় বাঙালি মুসলমানের একমাত্র স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের গৌরবময় উত্থানকে নিশ্চিত করেছিল। গণতন্ত্র, সাম্য ও মানবিক মর্যাদার শর্তে গড়ে ওঠা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ আজ প্রতিবেশী দেশের নীল নকশায় সা¤্রাজ্যবাদী স্বার্থের প্লে-গ্রাউন্ডে পরিনত হয়েছে। কোটি কোটি প্রবাসি বাংলাদেশী কর্মীর পাঠানো রেমিটেন্স ও গার্মেন্ট রফতানি থেকে অর্জিত হাজার হাজার কোটি ডলার দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক এজেন্ডায় উন্নয়নের ফানুসে উড়ে গিয়ে দেশ আজ অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বের খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে।
জাতীয় নির্বাচনের উপর নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সমূহকে ব্যবহার করে নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের করায়ত্ব করা বাংলাদেশের বাস্তবতায় একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সরকারের আইন ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা প্রয়োগের স্বাধীনতা ও ভারসাম্য না থাকায় উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মতো এখানে নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান কখনো সম্ভব হয়নি। এ কারণে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ দেশের অন্তত ৯০ ভাগ মানুষের ঐকান্তিক প্রত্যাশিত দাবি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে চিরস্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিলেন। নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে এই দাবিতে পরস্পর বৈরী আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামি এক টেবিলে বসে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়ন করে রাজপথ দখল করেও ৯৬’র ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। গণদাবি উপেক্ষা না করে সেই সংসদের নেতা বেগম খালেদা জিয়া ত্রয়োদশ সংশোধনী প্রস্তাবের মাধ্যমে নির্বাচনকালীণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সন্নিবেশিত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দুই মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনে গিয়ে শতাধিক আসন নিয়ে বিরোধীদলের আসনে বসেছিলেন। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কায়েম থাকার কারণে ২০০১ সালে (অষ্টম) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করার সুযোগ লাভ করে। এরই মধ্যে প্রমানিত হয়ে গেছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে প্রভাবিত করা ইনকামবেন্ট সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে হলে জনগণের প্রত্যাশিত শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের কর্মকা-ে সদিচ্ছার প্রতিফলন থাকতে হবে। এ দেশের জনগণ সবসময় ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের চেয়ে সামাজিক ন্যায়বিচার, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মত বিষয়গুলোকে অধিক মূল্যবান মনে করেছে। এ থেকে এ দেশের সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও অধিকারের প্রশ্নে হাজার বছরের সভ্যতা ও রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের ঐতিহাসিক প্রতিফলন পাওয়া যায়। প্রত্যেক কর্তৃত্ববাদী রিজিমকে অবকাঠামো উন্নয়নের মোড়কে রাজনৈতিক ও মানবাধিকারের বিষয়গুলোকে ধামাচাপা দিয়ে অগণতান্ত্রিক পন্থায় নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার কারসাজিতে লিপ্ত থাকতে দেখা গেছে। আইয়ুব খানের উন্নয়নের দশকের রাজনৈতিক বোলচাল বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার ডাকের কাছে কোনো পাত্তা পায়নি। এরশাদের স্বৈরশাসনেও রাস্তা ও অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জনগণের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশার দাবির কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছে। রিজিম প্রতিষ্ঠার আগে বর্তমান সরকারও ২০০৮ সালে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ভিশন ২০২১’, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা তুলে ধরেছিল। তবে সেসব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির চেয়ে আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তি ও আন্তর্জাতিক সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির গোপন সমঝোতায় সেই নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারিত হয়েছিল বলে জানা যায়। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে তা সম্ভব ছিল না। বিশেষ আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় পশ্চিমাদের নিরব সমর্থনে সেনাসমর্থিত বিশেষ সরকারের সময় সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের দিল্লী সফর, ঘোড়া কূটনীতির মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের সেই ধারা থেকে বের হতে না পারা আমাদের আজকের রাজনৈতিক বিপর্যয় ও জাতীয় সংকটের মূল কারণ।
দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, মানবাধিকার, বিচার ব্যবস্থা, আইনের শাসন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। গত দেড় দশক ধরে এসব বিষয় ব্যাপক চর্চিত-আলোচিত হলেও কাক্সিক্ষত পরিবর্তনের কোনো উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেনি। গণমাধ্যমের উপর সরকারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মত নির্বতনমূলক আইনের মাধ্যমে মুক্ত চিন্তা ও মানুষের মত স্বাধীনতাকে চরমভাবে পদানত করা হয়েছে। এই মুহুর্তে দেশের কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ বন্দী রয়েছে। লক্ষাধিক মামলায় বিরোধীদলের প্রায় অর্ধকোটি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তাদের পরিবারসহ কোটি কোটি মানুষ এখন রাষ্ট্রযন্ত্রের চরম বৈষম্য ও হয়রানির শিকারে পরিনত হয়েছে। মানুষ একটি কাক্সিক্ষত গণতান্ত্রিক পরিবেশ, অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য দেড়যুগ ধরে মুখিয়ে আছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিকে দাবিয়ে রাখতে নির্বতনের সব পথ ও পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক-রাজনৈতিক অগ্রগতির চাকা দুর্বৃত্তায়িত বেপরোয়া কর্তৃত্ববাদের চোরাবালিতে আটকে ডুবে যেতে বসেছে। ঘোলাটে, আশাহীন বাস্তবতাকে সামনে রেখে সরকার আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দেশে একটি দুর্ভিক্ষাবস্থার আশঙ্কা করলেও তা থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক সমঝোতা ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের সম্ভাবনার সব পথ রুদ্ধ করে দিয়ে চিরস্থায়ী ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। ¯œায়ুযুদ্ধোর ইউনিপোলার বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রণ কৌশলে কোনো রাখঢাক নেই। ভিসানীতি, বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সহযোগীতা এবং রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মত অস্ত্রগুলো দিয়ে তারা যে কোনো সম্ভাবনাময়, অগ্রসরমান অর্থনীতিকে ঘায়েল করে কয়েক দশক পিছিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। হাজার বছরের ধারাবাহিক সভ্যতার উত্তরাধিকার ও রাজনৈতিক বিপ্লবের সূতিকাগার ইরান পশ্চিমাদের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে সক্ষম হলেও, তেলসমৃদ্ধ ইরাক, লিবিয়া কিংবা ভেনিজুয়েলার মত দেশগুলো যখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনৈতিক মানবিক এড়াতে পারেনি। আমাদের অর্থনীতি পশ্চিমা রেমিটেন্স, গার্মেন্ট রফতানি, সামরিক বাহিনীর জাতিসংঘ শান্তি মিশনে অংশগ্রহণ, জনশক্তি রফতানি, শিক্ষাবৃত্তি, খাদ্য সহায়তাসহ নানাভাবে সরাসরি প্রভাবিত। অবাধ, সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে বিরোধীদলের সাথে সংলাপ-সমঝোতার আহ্বান এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সব দাবি উপেক্ষা করে যে নির্বাচনের আয়োজন চলছে তাতে পশ্চিমা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার সমুহ আশঙ্কা বিদ্যমান। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমারা এ বিষয়ে অব্যাহতভাবে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করছে। ভিসানীতি ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মত বিষয়গুলো শুধু সরকার কিংবা প্রশাসনের উপরই বিরূপ প্রভাব ফেলবে না, আমাদের পুরো সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় এর চরম বিরূপ প্রভাব দেখা দিতে পারে। নির্বাচন বিরোধী আন্দোলন ক্রমশ সহিংস হয়ে উঠতে শুরু করছে। ট্রেন-বাসে আগুন ও নাশকতার ঘটনাগুলো বরাবরই ব্লেইম গেমে পরিনত হয়েছে। ট্রেনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে কয়েকজন মানুষের মৃত্যুর পর আহত প্রত্যক্ষদর্শীর মুখে এ নিয়ে যে সব তথ্য পাওয়া গেছে তা নতুন কোনো বিষয় নয়। রাজনৈতিক আন্দোলনে নাশকতার দায়ে সরকারি মহলের অভিযোগ ক্রমেই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘মানুষ পুড়িয়ে নির্বাচন বন্ধ করা যাবে না’। রাজনীতির নামে মানুষ পোড়ানোর মত বিভৎস নাশকতা মেনে নেয়া যায়না। কিন্তু যে নির্বাচন দেশকে সামাজিক-রাজনৈতিক সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়, দেশকে পশ্চিমা ভিসানীতি, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়, দেশের কোটি কোটি মানুষকে সম্ভাব্য দুর্ভীক্ষের মুখোমুখি দাঁড় করায়, সে নির্বাচন কার স্বার্থে- কোন লক্ষ্যে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে? উটপাখির মত বালিতে মাথাগুঁজে বিপদ পার করার মানসিকতা পরিহার করতে হবে সব পক্ষকে। তিরিশের অন্যতম প্রধান কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ঊটপাখী কবিতার শেষ ছত্রে লিখেছেন;
“অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?
আমাকে এড়িয়ে বাড়াও নিজেরই ক্ষতি।
ভ্রান্তিবিলাস সাজে না দুুর্বিপাকে।
অতএব এসো আমরা সন্ধি ক’রে
প্রত্যুপকারে বিরোধী স্বার্থ সাধি;
তুমি নিয়ে চলো আমাকে লোকান্তরে,
তোমাকে, বন্ধু, আমি লোকায়তে বাঁধি।”
কবির সফল কাব্যভাষায় শব্দের গাঁথুনিতে কালোত্তীর্ণ বহুমাত্রিকতা থাকে। উটপাখী কবিতার এই কাব্যাংশের বক্তব্য আজকে আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। সেই সাথে সন্ধি ও সমঝোতার আহ্বানও রয়েছে। রাজনীতিতে শেষ কথা বা চিরস্থায়ী শত্রু-মিত্র বলে কিছু নেই। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসেও তার অনেক প্রমান রয়েছে। জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক সমঝোতা ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে চাইলে তা এখনো অসম্ভব নয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার
রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি
দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়
যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের
রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা
বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে
টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে
জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে
৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা
আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি
পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই
তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা
ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের
উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি
২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট
২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের
কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু
১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে
বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো
তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান