ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

লোক দেখানো গণতন্ত্রের পরিণতি ভালো হয় না

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম

আমাদের স্বাধীনতার অন্যতম উপাদান ছিল গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্র নির্দিষ্ট কিংবা নিজস্ব সংজ্ঞার কোনো গণতন্ত্র ছিল না। বৈশ্বিক এবং সর্বস্বীকৃত গণতন্ত্র অর্জনের জন্যই দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। এই গণতন্ত্রের উপাদান হচ্ছে, মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ভোট প্রদান, মুক্তভাবে কথা বলা, মানবিকার, স্বাধীন গণমাধ্যম, আইনের শাসন, সুশাসন, ন্যায়বিচার, জনগণের কাছে সরকার ও তার প্রতিষ্ঠান এবং বিরোধীদলের জবাবদিহিতা, ব্যক্তি অধিকারের প্রতি সচেতনতা, একে অন্যের অধিকারকে সম্মান করা ইত্যাদি। খ্রীস্টপূর্ব পাঁচ শতকে দার্শনিক ক্লিসথেনিস যে অ্যাথেনিয়ান গণতন্ত্রের সূচনা করেছিলেন, কালক্রমে মানুষের অধিকারকে আরও উন্নত ও সুসংহত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে নবরূপ দিয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন থেকে শুরু করে বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ ও লেখক বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন মানুষের অধিকার রক্ষায় গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। লিংকনের ‘গভর্নমেন্ট অফ দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল’ সংজ্ঞাটি সবচেয়ে বেশি স্বীকৃত এবং সার্বজনীন। জনগণের কল্যাণে গণতন্ত্রের উন্নয়নে এর আদি রূপ বা ধারণা ঠিক রেখে পরিবর্তন করা যায়। তবে এমন পরিবর্তন কাম্য নয়, যা গণতন্ত্রের মূল অণুরনন বা এর ভিত্তি পরিবর্তন করে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে, যা উপরে উল্লেখিত উপাদানগুলোকে খর্ব ও বিলুপ্ত করতে হবে। কিংবা মাথা থাকবে, মস্তিষ্ক থাকবে না। আমাদের স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হওয়ার পর গণতন্ত্রের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো ভিত্তি লাভ দূরে থাক, এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সংজ্ঞাটিকেই বদলে দেয়া হচ্ছে। গণতন্ত্রের উপাদানগুলোকে সংকুচিত, কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিগত দেড় দশক ধরে গণতন্ত্রের মূল সংজ্ঞা বদলে ফেলার একটি প্রবণতা জোরালো হয়ে উঠেছে। এ সংজ্ঞায় ভোটাধিকার হরণ করে নামকাওয়াস্তে নির্বাচন দেখানো, রাষ্ট্রের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ থেকে শুরু করে প্রকৃত বিরোধী রাজনীতি উচ্ছেদকরণ, বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিতকরণ, আইনের অপশাসন, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ণ, দুর্নীতি, কর্তৃত্ববাদী আচরণ, একদলের শাসনব্যবস্থা কায়েম প্রবণতাসহ গণতন্ত্রের সবগুলো মৌলিক অধিকার প্রান্তিক পর্যায়ে ঠেলে দেয়ার আয়োজন চলমান। এ থেকে প্রশ্ন জাগে, যে আইয়ুব খানের স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত হয়ে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য উপাদান প্রতিষ্ঠায় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, আমরা কি আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছি? বিগত দেড় দশক ধরে সেই ধারাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে এই দুই শাসনাকালের মধ্যে নীতিগত তেমন কোনো পার্থক্য নেই।

দুই.
স্বাধীনতার পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, মানুষ তার অধিকার ফিরে পাবে এবং মুক্তভাবে কথা বলতে পারবে, এটাই প্রত্যাশা ও আকাক্সক্ষা ছিল। পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতার পর থেকে জনগণের এই আকাক্সক্ষায় ব্যাঘাত ঘটতে শুরু করে। বিরোধী রাজনীতি উৎপাটর করে একদলীয় শাসন প্রবর্তণ এবং স্বাধীন গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চারটি পত্রিকা বাদে অন্যসব পত্রিকা নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। অর্থাৎ সরকারের ভুল-ত্রুটি, সমালোচনা করার মূল দুটি প্ল্যাটফর্ম বিরোধী রাজনীতি ও সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পরিবর্তীতে ঘটনা পরম্পরায় সামরিক শাসন পার হয়ে নব্বইয়ের শুরুতে গণতন্ত্রের নবযাত্রার সূচনা হয়। নানা রাজনৈতিক বিরোধ থাকা সত্ত্বেও নব্বই থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রায় দেড় দশক সময়কালকে দেশের গণতন্ত্রের সুবর্ণ সময় ধরে নেয়া যায়। কারণ, প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে অবিশ্বাস ও প্রতিহিংসা বিরাজমান, এর মধ্যে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালা বদল এবং পারস্পরিক রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্ক সংস্কারের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এ সিদ্ধান্ত ছিল দূরদর্শী। দেখা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে যে চারটি নির্বাচন হয়েছে তার প্রত্যেকটির মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতার পালাবদল যেমন হয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা ও প্রতিহিংসার রাজনীতি কম ছিল। ক্ষমতায় থাকাকালে যে দল দেশ চালাতে ব্যর্থ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর অন্যায্যভাবে দমন-পীড়ন করেছে, পরবর্তী নির্বাচনে জনগণ তাদের বিদায় করে দিয়েছে। এ সময় গণতন্ত্রের যে মূলমন্ত্র জনগণের মতামত, তার বেশ মূল্য ছিল। দুঃখের বিষয়, ২০০৮ সালের পর থেকে যে সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে, সে সরকার ধীরে ধীরে গণতন্ত্রের ছন্দপতন ঘটাতে শুরু করে। প্রথমেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে বাতিল করে দেয়া হয়। যুক্তি হিসেবে দ্বার করায়, এ পদ্ধতি অগণতান্ত্রিক এবং উন্নত বিশ্বের গণতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক। অর্থাৎ উন্নত বিশ্বে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তিত হয়। আমাদের দেশেও এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে হবে। এ যুক্তি অকাট্য। তবে এ চিন্তা করা হয়নি, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হলে যে, ক্ষমতাসীন দলের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হয়, এমন নজির অতীতে আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। প্রধান দুই দলের মধ্যেও এমন কোনো রাজনৈতিক আস্থা ও বিশ্বাস গড়ে উঠেনি যে, একে অপরের অধীনে বিনাবাক্যে নির্বাচনে যাবে। এ কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত ও প্রবতর্ণ করা হয়েছিল। এ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে বিরোধীদলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা এবং উন্নত বিশ্বের মতো নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে চলার মতো আস্থার পরিবেশ সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ এবং সদিচ্ছা পরিলক্ষিত হয়নি। এ পরিবেশ বা গণতান্ত্রিক আচরণ প্রতিষ্ঠা না করেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করার নিগূঢ় অর্থ হচ্ছে, জনগণের ইচ্ছা নয়, ক্ষমতাসীনদলের ইচ্ছা অনুযায়ী নির্বাচন করে নিজের অনুকূলে ফল এনে ক্ষমতায় থাকার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন দুটি তার জ্বলন্ত উদাহরণ। ২০২৪-এর ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেটিও তার ধারাবাহিকতা বলে ইতোমধ্যে বিশ্লেষকরা আগাম বলে দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অগণতান্ত্রিক এবং অবৈধ আখ্যা দিলেও এ কথা বলে না, ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করেই সে ক্ষমতায় এসেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি অবৈধই হয়ে থাকে, তাহলে সেই সরকারের অধীনে তার ক্ষমতাসীন হওয়াকে কি বলা যায়?

তিন.
বিগত দেড় দশক ধরে ক্ষমতাসীনদল শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে নিজের অধীনে অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন করেছে। এর বিপরীতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে দমন-পীড়ন করে উন্নয়নকে সামনে তুলে ধরেছে। এর মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো প্রচেষ্টা ছিল বলে প্রতীয়মান হয় না। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, বিশ্ব গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশকে ‘হাইব্রিড’ শ্রেণীভুক্ত করা থেকে। ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গ বর্তমান সরকার পরিচালনাকে কর্তৃত্ববাদী ও একব্যক্তির শাসন হিসেবে অভিহিত করেছে। এই শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে ভারত নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। বলা বাহুল্য, ভারত এ কাজ করছে, তার নিজ স্বার্থে। বাংলাদেশে যদি তার উপর নির্ভরশীল এবং ক্ষমতা হারানোর ভয়ে থাকা একটি দুর্বল দলকে ক্ষমতায় রাখা যায়, তাহলে সে যা চাইবে, তাই পাবে। আক্ষরিক অর্থে তাই হয়েছে। ভারত তার চাওয়ার সবই পেয়েছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও বলা হয়েছে, ভারতকে যা দেয়া হয়েছে, তা সে চিরকাল মনে রাখবে। ফলে এরকম অনুগত সরকার যদি চিরকাল রাখা যায়, তাহলে ভারতেরই লাভ। সরকারও ক্ষমতার লোভে বা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তার প্রতি চিরকাল নমনীয় হয়ে থাকবে। অর্থাৎ ভারতের প্রেসক্রাইবড একটি শাসন ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করেছে। এর বিপরীতে দেশের মানুষ যাতে গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলার সাহস না পায়, এজন্য কঠোর পন্থা অবলম্বন করছে। জনগণের কথা বলার জায়গা বা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে দমন-পীড়ন করে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে, তাদের জন্য স্বাভাবিক রাজনীতি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারের অনুকূলে ফল নির্ধারিত হওয়া আগামী নির্বাচনের পর বৃহৎ বিরোধীদল বিএনপিকে যদি নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়, তাতে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। কারণ, ইতোমধ্যে তার একটি গ্রাউন্ড তৈরি করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের পক্ষ থেকে বিএনপিকে সন্ত্রাসীদল হিসেবে আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধের দাবি করা হয়েছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও ক্রমাগত একই কথা বলে আসছে। বিএনপিকে রাজনীতির ‘বিষফোঁড়া’ হিসেবে অভিহিত করা থেকে শুরু করে এমন কথাও বলা হয়েছে, বিএনপি নামে কোনো দলের অস্তিত্ব থাকবে না। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশন থেকে জামায়েতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচনের পর যদি দ্রুত সময়ে এই দুই দলকে নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। যদি তা করা হয়, তাহলে জনগণের কথা বলার জায়গা থাকবে না এবং তারা দুর্বল হয়ে আধুনিক দাসে পরিণত হবে। সরকার হবে আধুনিক যুগের জমিদার, যেখানে গণতন্ত্র বলে কিছু থাকবে না, থাকলেও তা থাকবে সরকারের মুখে মুখে ও কাগজে কলমে, প্রজার স্বাধীন চিন্তা বা কথা বলার অধিকার থাকবে না, জমিদারের ইচ্ছাই হুকুম হিসেবে মেনে নিতে হবে। যেভাবে রাখা হবে, সেভাবে থাকতে হবে। টুঁ শব্দ করা যাবে না। এই যে, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের দিন আনতে পান্তা ফুরাচ্ছে, তাদের জীবনযাপন অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে, তা নিয়ে কি ক্ষমতাসীন দলের কোনো বিকার আছে? তাদের জীবনযাপন সহজ করার জন্য কি কোনো উদ্যোগ নিয়েছে? নেয়নি। এর অর্থ হচ্ছে, যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে, চলতে হবে। এখানে জমিদারের পাইক-পেয়াদা, তোষামোদকারিরা রাজত্য করবে, দাপট দেখাবে। যেভাবে রাখা হবে, সেভাবেই থাকতে হবে। কোনো কথা বলা যাবে না। বললেও তা শোনা হবে না। জনগণের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা যদি গণমাধ্যমের দিকে তাকাই তাহলে দেখব, অনেক চ্যানেল ও পত্রিকা রয়েছে। এগুলো স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারছে বা এর যে দায়িত্ব তা পালন করতে পারছে, তা বলা যায় না। এগুলোর মধ্য দিয়ে নিজস্ব নীতি প্রকাশিত না হয়ে সরকারের নীতি প্রকাশিত হচ্ছে।

চার.
এটা এখন স্পষ্ট, গণতন্ত্রে ভিন্নমতের যে কদর থাকে, তা নিঃশেষ করে দেয়ার প্রক্রিয়া সরকার চলমান রেখেছে। আসন্ন নির্বাচনের প্রার্থীদের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, সেখানে ভিন্নমতের, যারা ক্ষমতাসীনদলের প্রার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে, তেমন কোনো প্রার্থী নেই। আছে ক্ষমতাসীন দলের নিজের ও নিজের দলের ডামি প্রার্থী, তার অনুগত ও অনুকম্পার এবং ক্ষমতাসীন দলের নীতিতে চলে সেসব দলের প্রার্থী। এসব প্রার্থীদের মধ্যে যে প্রার্থীই পাস করুক, সে-ই হবে ক্ষমতাসীন দলের। ইতোমধ্যে অনুগ্রহপ্রাপ্ত বিরোধীদল নিজের জয় নিশ্চিত করার জন্য ক্ষমতাসীনদলের কাছে আসন চেয়ে নিয়েছে। এদের প্রার্থী জিতলেও ক্ষমতাসীনদলের, না জিতলেও যে জিতবে সেও ক্ষমতাসীন দলেরই হবে। গণতন্ত্র ধ্বংসের এ যেন এক চূড়ান্ত ধাপ। এর মাধ্যমে দেশকে দুইভাগে বিভক্ত করে দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এর এক অংশে রয়েছে ক্ষমতাসীনদলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও অনুগত বিরোধীদল। অপর অংশে নির্বাচন বর্জন করা বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সাধারণ মানুষ যারা আক্ষরিক অর্থে কোনো দলের সমর্থক নয়। এই সংখ্যাটি মোট জনসংখ্যার কমপক্ষে ৬০-৬৫ শতাংশ। এই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে বাদ দিয়েই একটি লোকদেখানো নির্বাচন করা হচ্ছে। গণতন্ত্রে প্রতিযোগিতামূলক ও জনসমর্থন রয়েছে, এমন রাজনৈতিক দল নিয়ে যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা অপরিহার্য সরকার তা উপেক্ষা করেছে। গণতন্ত্রে নির্বাচন অন্যতম উপাদান হলেও সরকার তা করছে বটে, তবে সেটা নামকাওয়াস্তে। ফলাফল যে ঠিক হয়ে আছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। বিশ্বের অনেক দেশেই স্বৈরশাসক ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য এবং নিজেকে গণতান্ত্রিক দেখানোর জন্য এ ধরনের নির্বাচন করেছে। তাতে তাদের স্বৈরশাসনকে মুছে দিতে পারেনি। ইতিহাসে স্বৈরশাসক হিসেবেই ঠাঁই পেয়েছে। সরকার যেন সেই ধারা অবলম্বন করে নিজের মতো করে, যার সাথে বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্য গণতন্ত্রের মিল নেই, তা দেখাতে চাচ্ছে। এটা তার নিজের তৈরি গণতন্ত্র ছাড়া কিছু নয়।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান