বই উৎসব সরকারের ইতিবাচক কর্মসূচি
০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
বছরের প্রথম দিনে সারাদেশের শিশুদের হাতে নতুন বই পৌঁছে যাচ্ছে। এর তাৎপর্য সুদূরপ্রসারী। একদিকে বিনামূলে বই বিতরণ কর্মসূচির মাধ্যমে নাগরিকদের একটি মৌলিক চাহিদা পূরণ, অন্যদিকে সেই মৌলিক চাহিদা পূরণকল্পে সরকারের বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনের পথে অগ্রসর হওয়া। সরকারপ্রধান যখন একটি কর্মসূচি উদ্বোধন বা নিজ হাতে চালু করেন, তখন তার গুরুত্ব বেড়ে যায় বহু গুণ। সেই গুরুত্বের অগ্নিস্ফূলিঙ্গ জনমনকে নাড়া দেয় অবশ্যম্ভাবীভাবে। বই উৎসবও ঠিক তেমনি। নতুন বছরের রৌদ্র-করোজ্জ্বল দিনে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের মাঝে পাঠ্যবই বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করে যে প্রদীপ্ত আলোর মশাল ছড়িয়ে দেন, তা দ্রুত বেগে সঞ্চারিত হয় দেশের সকল কচি প্রাণে এবং সেখান থেকে বড়োদের মনেও। বিনামূল্যে বই বিতরণ উৎসব দৃশ্যত একটি আনন্দের উপলক্ষ হলেও এর গূঢ় লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সুদূরপ্রসারী; তা হলো শিক্ষার বুনিয়াদ প্রাথমিক শিক্ষাকে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো। কারণ, প্রাথমিক শিক্ষাকে সহজলভ্য ও ফলপ্রসূ করতে না পারলে পরবর্তী ধাপের শিক্ষার ভিত্তিও নড়বড়ে হতে বাধ্য।
ওয়াকিবহাল মানুষের অজানা নেই, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু এক অধ্যাদেশবলে ৩৭ হাজার প্রাইমারি স্কুল জাতীয়করণ তথা সরকারি করেন। এছাড়া তাঁর সরকার ১১ হাজার প্রাইমারি স্কুল স্থাপন এবং ৪৪ হাজার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের চাকরি সরকারিকরণ করেন। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে দৃঢ়ভিত্তি দেওয়ার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়েই এটা করেছিলেন। এ লক্ষ্য দেশ স্বাধীনের আগেই তিনি লালন করতেন। তাইতো ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছিলেন: সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষাখাতে পুঁজি বিনিয়োগের চেয়ে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর কিছু হতে পারে না এবং নিরক্ষরতা অবশ্যই দূর করতে হবে। তাঁর এই সুনির্দিষ্ট অভিপ্রায়ই স্বাধীন দেশে তিনি বাস্তবরূপ দিতে শুরু করেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতের চেয়ে শিক্ষাখাতে ৭ শতাংশ অর্থ বেশি বরাদ্দ রেখেছিলেন শিক্ষাপ্রসারে তাঁর লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার প্রদানের কারণেই। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের ১৭নং অনুচ্ছেদে একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, সমাজের প্রয়োজনের সাথে শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করা এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন, যা এখনও প্রাসঙ্গিক এবং পালনীয়।
বঙ্গবন্ধুর এসব প্রয়াসেরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাইমারি স্কুল জাতীয়করণ করেন। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা সরকারি কর্মচারী হিসেবে সমাজে মর্যাদার সাথে অধিষ্ঠিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু-আমলের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনামূলে বই দেওয়ার কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারিত করেছেন। এখন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল-মাদ্রাসার সকল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই প্রদান করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের শুরুতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে বই তুলে দেন এবং সারাদেশে একযোগে বই পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এ সময় যে আনন্দ-উৎসবময় পরিবেশের সৃষ্টি হয় সারাদেশে, তা অভূতপূর্ব; এ উৎসব এখন ‘বই উৎসব’ নামে নন্দিত পরিচিতি লাভ করেছে এবং এটি এখন ‘জাতীয় উৎসবের’ মর্যাদা লাভ করেছে। এই কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের মাঝে যেমন প্রবল জ্ঞানস্পৃহা জাগ্রত করছে, তেমনি অভিভাবকদেরও সচেতন ও উৎসাহিত করছে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবার জন্য।
বিনামূল্যে বই বিতরণ, শিক্ষা-উপবৃত্তি প্রদান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংস্কার-আধুনিকায়ন ইত্যাদি পদক্ষেপ ছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষের দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নির্দেশনা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সতর্ক ব্যবস্থাপনায় তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এখন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পরিদর্শন-তদারকি-মনিটরিং-মূল্যায়ন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেগবান ও সিস্টেমেটিক হয়েছে। এই ব্যবস্থা প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সহায়তা করছে। শিক্ষার্থীদের জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ বিস্কুট বিতরণসহ অন্য নানাবিধ সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের বিদ্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট করার সর্বাত্বক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারেও সরকারের উদ্যোগ লক্ষণীয়। আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সংখ্যা প্রচুর। তাদের প্রশিক্ষণলব্ধ দক্ষতা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এখন প্রতিটি গ্রামেই প্রাইমারি স্কুল রয়েছে এবং অধিকাংশ প্রাইমারি স্কুলই সরকারিকরণ করা হয়েছে। দেশে প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮৯১টি এবং সেসব স্কুলের শিক্ষকের সংখ্যা ৬ লক্ষ ৯৭ হাজার ২০৩ জন। দেশজুড়ে প্রাইমারি শিক্ষাকে ঘিরে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে। শুধু সংখ্যায় নয় শিক্ষার মানও বেড়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হারও। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মহিলা শিক্ষকের সংখ্যা ৪ লাখ ৩ হাজার ১৯১ জন। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৩ কোটি ৮১ লক্ষ ২৭ হাজার ৬৩০ জন এবং বই বিতরণ করা হবে ৩০ কোটি ৭০ লক্ষ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি।
-পিআইডি ফিচার
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার
রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি
দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়
যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের
রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা
বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে
টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে
জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে
৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা
আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি
পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই
তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা
ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের
উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি
২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট
২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের
কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু
১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে
বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো
তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান