ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

খ্রিস্টীয় নববর্ষ

Daily Inqilab ইনকিলাব

০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

আজ পয়লা জানুয়ারি, খ্রিস্টীয় ২০২৪ সালের প্রথম দিন। শুভ নববর্ষ। প্রথম দিনের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কালের গর্ভে হারিয়ে গেলো আরো একটি বছর। এমন একটি সময়ে খ্রিস্টীয় নববর্ষ এসেছে, যখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে নানামুখী সংকট, সমস্যা, বিরোধ, সংঘাত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আমাদের জাতীয় জীবনেও সংকট-সমস্যার শেষ নেই। রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক সংকট, জ্বালানি সংকট, ডলার সংকট, রিজার্ভ সংকট, ব্যাংকে তারল্য সংকট, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার সংকট, চরম আয়বৈষম্য, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি গোটা দেশ-জাতিকে মহাবিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। স্বাধীনতার এত বছরে এরূপ সর্বমুখী সংকটে আমাদের কখনো পড়তে হয়নি। আন্তর্জাতিক পরিম-লে ইউক্রেন ও গাজাযুদ্ধের কারণে ব্যাপক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান। জ্বালানি সংকট, খাদ্য সংকট প্রভৃতির পাশাপাশি প্রভাববলয় ভাংচুর, সম্পর্কের নতুন মেরুকরণ ইত্যাদি বিশ্বকে অস্থির-অস্থিতিশীল করে তুলেছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন সংকট-সমস্যার পেছনে বিশ্বপরিস্থিতিরও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। নতুন বছরে বিগত বছরের সাফল্য-ব্যর্থতা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ করা একটা রেওয়াজ। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের পথনকশা তৈরি করার জন্যই এটা অপরিহার্য। সন্দেহ নেই, জাতীয় জীবনে আমাদের অনেক স্বপ্ন-প্রত্যাশাই অনর্জিত রয়ে গেছে। নতুন নতুন সংকট-সমস্যার জন্ম হয়েছে। নতুন বছরে সেগুলো প্রলম্বিত হতে পারে, স্বাভাবিক কারণেই। মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ বেড়েছে। অর্থনীতি মারাত্মক চাপে পড়েছে। বিনিয়োগ-শিল্পায়ন-কর্মসংস্থান কাক্সিক্ষত হারে বাড়েনি। রফতানি আয়, জনশক্তি রফতানি, রাজস্ব আদায়Ñ সবকিছুই কমেছে। দুর্নীতি-দুষ্কৃতি ও অর্থপাচার বেড়েছে। একই সঙ্গে নাগরিক নিরাপত্তার অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর মানুষের আস্থা বাড়ার মতো কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগ দেখা যায়নি। বরং, গণঅনাস্থা সম্প্রসারিত হয়েছে। সুশাসনের অভাব ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিস্তৃত হয়েছে। হত্যা, ধর্ষণ ও অপমৃত্যুর ঘটনা পুরো সমাজকে বিচলিত-উদ্বিগ্ন করেছে।

বিগত বছরটিতে অর্থনীতি যেমন নানাবিধ সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে, একইভাবে রাজনীতিতেও কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হয়নি। তবে আর্থিক সংকট সত্ত্বেও উন্নয়ন কর্মকা- চলমান রয়েছে। চালু হয়েছে মেট্রোরেলের পরের অংশ। বহু সড়ক-মহাসড়ক খুলে দেয়া হয়েছে। কর্ণফুলী টানেলের উদ্বোধন হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও অন্যান্য মেগা প্রকল্পের কাজও এগিয়ে চলেছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকার বিপুল সম্ভাবনা জাগিয়ে তুললেও এর সুফল জনগণ কীভাবে, কতটা পাবে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক কারণে দারিদ্র্য বেড়েছে। দরিদ্র আরও দরিদ্র হয়েছে। অনেক নি¤œবিত্ত দরিদ্র হয়ে গেছে, মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্তে পরিণত হয়েছে। সব মিলিয়ে দরিদ্রের সংখ্যা দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে পড়েছে। সীমিত আয়ের মানুষের জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আশা করা হয়েছিল, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান হবে। একটি স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে আশা হতাশায় পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরো ঘনীভূত হয়েছে। আরো একটি একতরফা নির্বাচনের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে দেশে রাজনীতি আছে কিনা, তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি। বিরোধী দলগুলোর রাজনীতি বলতে কিছু ছিল না। তবে নির্বাচনের আগের বছর হিসেবে গত বছর প্রায় পুরো সময়েই বিরোদী দল তৎপর ছিল। বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়নও ছিল নজিরবিহীন। এ প্রেক্ষিতে, গণতন্ত্র, সুশাসন, আইনের শাসন, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা সংকোচন তীব্র হয়েছে। এ নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন জরিপের ফলাফলে সব ক্ষেত্রেই সূচক নি¤œগামী হয়েছে। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এমন এক পর্যায়ে গিয়েছে যে, সেটা উল্লেখ করতেও লজ্জা হয়। দেশে সহনশীলতার অভাব তীব্র হয়ে উঠেছে। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সেটা আরো চরমে উঠেছে।

রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সুশাসন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি হলেও তা আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষ শান্তি চায়, নিরাপত্তা চায়, সব রকম গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার চায়, ভোটাদিকার চায়। একই সঙ্গে চায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি। কোনো বিশৃংখলা, সংঘাত-সহিংসতা তারা দেখতে চায় না। মানুষের এই চাওয়া অপূর্ণই থেকে যাচ্ছে। তাদের প্রত্যাশা এবং আন্তর্জাতিক মহলের তাকিদ অগ্রাহ্য করে ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে তার পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবধি নেই। এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কখনোই দেখা দিত না, যদি কাক্সিক্ষত নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা হতো এবং জনগণ তাদের অবাধ ভোটের মাধ্যমে রায় দিতে পারতো। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বিশেষভাবে নির্ভর করে। তার অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কমিটমেন্টের প্রতি মানুষের আস্থা আছে। মনে রাখতে হবে, তার বয়স হয়েছে, তার ক্যাবিনেট কলিগদেরও বয়স হয়েছে। কেউই চিরদিন থাকে না। তাদের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হবে না। তাই তাদের এমন কিছু রেখে যেতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের স্মরণ করে। জাতি আজ সম্পূর্ণ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একে অপরের মুখোমুখী দাঁড়িয়ে গেছে। এমনটা আগে কখনো হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ও তার দল আওয়ামী লীগের অনিবার্য দায়িত্ব হয়ে পড়েছে, জাতিকে বিভক্তি ও সংঘাত থেকে রক্ষা করা। রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সকল পর্যায়ে সকলের পার্টিসিপেশন নিশ্চিত করা। পরিশেষে, আগামী দিনগুলো সকলের জন্য শুভ, কল্যাণময় ও নিরাপদ হোক, এই কামনা করি। খ্রিস্টীয় নববর্ষের এই দিনে আমরা পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান