ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

মিয়ানমারে সামরিক জান্তার পৃথিবী ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে

Daily Inqilab মুহাম্মদ শাহ আলম

০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম

সাড়ে পাঁচ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত মিয়ানমার বনজ ও খনিজ স¤পদে সমৃদ্ধ। তবে দেশটিতে সামরিক শাসন, গৃহযুদ্ধ, জাতিগত বিরোধ, সাম্প্রদায়িক সংঘাত, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস, ভিন্নমত দমন ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় দেশটির সাথে জড়িয়ে আছে। দেশটির জনগণ যুদ্ধ ও গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আজকের পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে ভারতবর্ষ শান্তিপূর্ণভাবে স্বাধীনতা লাভ করলেও তৎকালীণ বার্মা বা রেঙ্গুনের স্বাধীনতার বিষয়টি এত সহজ সরল ছিল না। দেশটির স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়েছে বিশ্বের অন্যতম দুই বৃহৎ শক্তি জাপান ও ব্রিটেনের সাথে দীর্ঘ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। বিদেশি শক্তির আগ্রাসন রুখতে সেই সময় কাচিন, কারেন, চিন, রাখাইনসহ ব্রিটিশ-বার্মার ছোট ছোট জাতিগোষ্ঠীকে সশস্ত্র লড়াই করতে হয়েছে। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি স্বাধীনতা লাভ করলেও ছোট ছোট জাতিগোষ্ঠীর স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে তৎকালীন ক্ষমতাসীন শাসকদের সাথে বিরোধের সৃষ্টি হয়। ফলে স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে কারেনরা তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীও এতে অংশগ্রহণ করে। বলতে গেলে দেশটির শুরু থেকেই অর্থাৎ প্রায় ৭৬ বছর সাবেক বার্মা বর্তমান মিয়ানমারে আঞ্চলিক ও জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সংঘাত চলে আসছে, এই সময়ের মধ্যে সামরিক শাসন থেকে খুব একটা নিষ্কৃতি পায়নি। সর্বশেষ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী সরাসরি ক্ষমতা দখল করে। সামরিক শাসন জারি করেন সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং। এর প্রতিবাদে মিয়ানমারের জনঘন রাজপথে নেমে আসে। বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে গোটা মিয়ানমার। গ্রেফতার করা হয় অং সান সু চিসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ গ্রহণকারী শত শত নাগরিককে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমাতে সামরিক জান্তা নির্বিচার গ্রেপ্তার ও চূড়ান্ত মাত্রার সহিংসতার আশ্রয় নেয়। প্রায় ২০ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিবাদকারী ব্যক্তিদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সেনারা ¯œাইপার রাইফেল দিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে। এই অবস্থায় ক্রমশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে রূপ নেয়। সৃষ্টি হয় মিয়ানমারে যুদ্ধের নতুন অধ্যায়। গঠিত হয় গণতন্ত্রপন্থী পিপলস ডিফেন্স ফোর্স। এর সাথে যোগ দেয় বেশ কয়েকটি সুসংগঠিত যুদ্ধ-মনোভাবাপন্ন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী। হাত মিলিয়েছে যারা বিগত কয়েক দশক ধরে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে আসছে।

মিয়ানমার রাষ্ট্রের তৎকালীন ক্ষমতাসীন শাসক গোষ্ঠী এক পর্যায়ে আরাকান রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে নাগরিকত্ব আইন পাশ করে। ওই আইনের আওতায় ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ফলে রোহিঙ্গারা ভোটাধিকারসহ সরকারি বেশকিছু সুযোগ সুবিধা হারিয়ে নিজ দেশে পরবাসী হয়ে যায়। নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মূলত রাষ্ট্রহীন করে ফেলে। একই সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী যুগ যুগ ধরে এই জাতিগোষ্ঠীর উপর বিভিন্ন অযুহাতে জঘন্যতম দমন-পীড়ন অব্যাহত রাখে। এক পর্যায়ে অং সান সুচির সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে রাখাইনে জঙ্গি, বিদ্রোহী এবং সন্ত্রাসবাদী দমনের নামে সাধারণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর সামরিক জান্তা বর্বরোচিত হামলা চালায় এবং ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুরু করে। এই অপারেশনে প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়। অসংখ্য রোহিঙ্গা আহত হয়। একইসঙ্গে গ্রামের পর গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। জীবন বাঁচাতে দলে দলে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ নদী, পাহাড় ও সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। রোহিঙ্গাদের প্রবেশের ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও একজন রোহিঙ্গাকে ও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। বরং রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আরও বেড়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭২ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও বর্তমানে সব মিলিয়ে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়েছে। বিগত ৭ বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার কোন অগ্রগতি হয়নি। আন্তর্জাতিক চাপে মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে কথা বললেও বিভিন্ন অজুহাতে তা বাধাগ্রস্ত করে চলেছে। বাংলাদেশের বন্ধুখ্যাত চীন, ভারত ও রাশিয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্বাসযোগ্য ভুমিকা পালন করছে, এমন কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

রোহিঙ্গাদের একটি অংশ খুন, হত্যা, অপহরণ, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি, ধর্ষণ ইতাদি নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গা ক্যা¤েপ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বশত্রুতার জেরে গোলাগুলির মত ভয়ংকর কা- ঘটিাচ্ছে। ২০২৩ সালে রোহিঙ্গা ক্যা¤েপ কমকরে হলেও ৬১টি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৭৪ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। রোহিঙ্গারা ক্যা¤পগুলোয় অস্ত্র ও মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত হয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর হুমকির সৃষ্টি করছে, যা দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উপর ক্রমাগত নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বঙ্গোপসাগর এবং নাফ নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম মোহনাবেষ্টিত আরাকান-ইয়োমা নামের দীর্ঘ পর্বতশৃঙ্গ নিয়ে আরাকান রাজ্য। ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত করে মিয়ানমার সরকার শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলার মাস্টার প্ল্যান নিয়ে পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা উচ্ছেদ শুরু করে। একই সঙ্গে বঙ্গোপসাগর এবং নাফ নদীর উপকূলীয় আরাকান রাজ্যের দিকে দৃষ্টি পড়ে আঞ্চলিক শক্তি সমূহের। তারা ওই রাজ্যে বিনিয়োগের আশায় মিয়ানমার সরকার এবং সেনাবাহিনীকে প্রচ্ছন্নভাবে সহযোগিতা করছে। ফলে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা নিধন এবং তাদের আবাসভূমি আরাকানকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করলেও প্রতিবেশী ভারত, চীন এবং রাশিয়া টু ঁশব্দ করেনি। বরঞ্চ মিয়ানমার জান্তা সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সমরাস্ত্রসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। চীন এবং ভারতের মিয়ানমারে নিজস্ব সার্থ ও বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ রয়েছে। পক্ষান্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ্ব মিয়ানমারের জণগণের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে চলেছে। একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক প্রভাব বলয় অক্ষুণè রাখার জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি বা আইপিএস ঘোষণা করেছেন। আমেরিকা যে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা আইপিএস ঘোষণা করেছে, সেখানে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, ফিলিপাইন, বাংলাদেশসহ এখানকার দেশগুলোকে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক, নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিকের কথা বলে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য অনুযায়ী, এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানো এবং চীনের প্রভাব কমানো। চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভসহ (বিআরআই) নানা উদ্যোগ নিয়ে সারাবিশ্বে তার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর এলাকার অর্থনৈতিক এবং ভূকৌশলগত গুরুত্ব বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপে গ্রহণ করেছে। এ ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘বার্মা অ্যাক্ট’ পাস করেছে। এই আইনের আওতায় মিয়ানমারে সামরিক শাসন অবসানের মাধ্যমে এ অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আরও সক্রিয় হয়ে উঠবে। মিয়ানমারের জনগণকে মানবিক সহায়তা প্রদান এবং গণতন্ত্রের সংগ্রামকে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দেবে। দেশটিতে বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে সহায়তা দেবে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা পুনুরুদ্ধারের জন্য বেশকিছু সশস্ত্র সংগঠন জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’। রয়েছে ইওএ ও বার্মা কমিউনিস্ট পার্টির (বিসিপি) পুনর্গঠিত সশস্ত্র সংগঠন এমএনডিএএ ছাড়াও অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো এমপি ও রাজনীতিকদের গঠন করা ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (এনইউজি) মদদপুষ্ট সশস্ত্র সংগঠন পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসের (পিডিএফ) সম্মিলিত শক্তি। সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে লড়াইয়ে বেশকিছু সাফল্য দেখিয়েছে। তিনটি সশস্ত্র সংগঠনের জোট ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যের দুটি প্রধান শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। একই সঙ্গে জান্তা বাহিনী থেকে ১২০টি সেনাছাউনি ও ঘাঁটি দখলে করেছে। ইতোমধ্যে বিদ্রোহীরা প্রায় ৮,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে নিয়েছে।মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় চীন সীমান্তবর্তী শান রাজ্য ও পশ্চিম রাখাইন রাজ্যের সেনা ফাঁড়িগুলোতে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জোটের সমন্বিত হামলার মুখে নাস্তানাবুদ হচ্ছে জান্তা বাহিনী। দেশটির সামরিক বাহিনীর শত শত সদস্য অসহায় আত্মসমর্পণ করছে। গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে কেবল এই রাজ্যেই ৬৫০ জনের বেশি সৈন্য বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। গত ২১ নভেম্বর দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, আড়াই বছর আগে ক্ষমতা দখলের পর থেকে সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে পড়েছে ‘তাতমাদাও’ নামে পরিচিত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামরিক জান্তা দেশটির সীমান্তবর্তী শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াই করছে। লড়াই তীব্র হওয়ায় সহিংসতার কারণে মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে যাচ্ছে, যা অভ্যন্তরীণ অস্থিরতাকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে সাহায্য করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্রোহীরা দেশটির উত্তরাঞ্চলের প্রায় শতাধিক ফাঁড়িতে আক্রমণ ও দখল করেছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ দখল করেছে। সম্প্রতি শান রাজ্যে অভিযান শুরু করেছে। এর পেছনে রয়েছে তিনটি জাতিগত বাহিনীর জোট। তাদের লক্ষ্য, সামরিক জান্তাকে উৎখাত করা এবং গণতান্ত্রিক শাসন পুনরুদ্ধার করা। তাদের অর্জন দেশের অন্যান্য স্থানে প্রতিরোধ বাহিনীকে উৎসাহিত করেছে। তারা বেশ কয়েকটি শহর দখল করেছে। সামরিক বাহিনী কর্তৃক নিযুক্ত প্রেসিডেন্ট মিন্ট সুয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সরকার যদি সীমান্ত অঞ্চলে সংঘটিত ঘটনাগুলো কার্যকরভাবে পরিচালনা না করে, তাহলে মিয়ানমার বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হয়ে যাবে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। জান্তা সরকার ইতোমধ্যে রাজধানী এবং এর আশপাশের এলাকা ছাড়া দেশের বৃহৎ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। লড়াইরত সশস্ত্র সংগঠনগুলো রাজধানীর দিকে ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে। চীনের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যের কোকাং অঞ্চলের লাউক্কাই জেলায় নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার চীনের নাগরিকদের সরে যেতে বলেছে মিয়ানমারে থাকা চীনের দূতাবাস। এই জেলাটিতে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। গত কয়েক মাস ধরে চলা সংঘর্ষে জান্তা বাহিনী একের পর এক ঘাঁটি হারাচ্ছে। সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা।

লেখক : আইন জীবী।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান