জমি অধিগ্রহণকৃত দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে
০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম
পদ্মাসেতু বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের যোগাযোগ খাতে এক নতুন মাইলফলক স্থাপিত হয়েছে। তবে এই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে দুর্নীতি-অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। সেতু প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিক তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝে পাননি। পক্ষান্তরে একটি দালালচক্র এ খাতের শত শত কোটি টাকা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদনে পদ্মাসেতু প্রকল্পে মাদারিপুর জেলা পরিষদের এলএ শাখায় শত শত কোটি টাকার অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জনৈক কেএম নাসিরের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা দালাল চক্র ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সাথে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, জেলাপরিষদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ অনেকেই জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। অন্যের জমি নিজের নামে জাল দলিল করে এবং সরকারি খাস জমির ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে দালালচক্র বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিলেও অধিগ্রহণের কারণে প্রকল্পে ভূমি হারানো বেশকিছু ভুক্তভোগী বছরের পর বছর ধরে জেলা প্রশাসকের এলএ শাখায় ঘুরেও ক্ষতিপূরণ পায়নি। প্রতারণা ও জালজালিয়াতির মাধ্যমে দালালচক্র টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এখন নড়চড়ে বসলেও আদতে তাদের সহযোগিতা ছাড়া এত বড় দুর্নীতি হওয়া সম্ভব নয়।
প্রকাশিত খবরে জানা যায়, মাদারিপুরের শিবচর উপজেলার ১০-১৫ মৌজার ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে। জাল-জালিয়াতির অভিযোগ ও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃত ভূমি মালিকদের অনেকে ক্ষতিপুরণ না পাওয়ার ঘটনায় জেলাপ্রশাসনের পক্ষ থেকে কথিত দালালচক্রের ২০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বলে জানা যায়। শিবচরের ভাইয়ার চর মৌজা, কেরানিরহাট মৌজা, মাগুরখন্ড মৌজা, সতেররশি মৌজা, পাচ্চর মৌজায় অধিগ্রহনে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের প্রতিটি এলএ কেস নাম্বারের বিপরীতে কোটি কোটি কোটি টাকা দালালচক্রের সদস্যদের হাতিয়ে নেয়া এবং কোন কোন ব্যাংক একাউন্টে কিভাবে এসব টাকা প্রত্যার্পণ করা হয়েছে তার বিশদ বিবরণ ইনকিলাব প্রতিনিধিরা খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছেন। দালাল চক্রের মূল হোঁতা নাসিরসহ সংশ্লিষ্টদের রাতারাতি শূন্য থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার এই প্রক্রিয়ার সাথে মাদারিপুর জেলার তৎকালীন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা প্রখর রঞ্জন ঘটক, তৎকালীন সার্ভেয়ার মোস্তাফিজুর রহমানসহ জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় কর্মরত আরো কয়েক জনের নাম উঠে এসেছে। স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা এবং দালালচক্রের যোগসাজশে ভূমি অধিগ্রহণের শত শত কোটি টাকা বেনামে লোপাট করার চিত্র এখন অনেকটাই স্পষ্ট।
গত দেড় দশকে শত শত প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্নীতি-অনিয়ম, অস্বচ্ছতা এবং প্রকৃত মালিকদের হয়রানির বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। এ প্রেক্ষিতে, সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃত মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝিয়ে দেয়া। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি-অনিয়মের স্বচ্ছ তদন্ত এবং জালজালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে শাস্তি ও অর্থ ফেরত আনার কোনো দৃষ্টান্ত নেই। মাদারিপুরের জালিয়াতচক্রের অনেকেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে এবং কেউ বিদেশে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছে বলে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়। সরকার লাখ লাখ কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। অনিয়ম-অস্বচ্ছতা, অতিরিক্ত ব্যয় এবং জালজালিয়াতির মাধ্যমে এসব প্রকল্পের হাজার হাজার কোটি টাকা একটি শ্রেণী নানাভাবে বিদেশে পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কখনো কখনো ভূমি অধিগ্রহণের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকেও চাকরিচ্যুতিসহ বড় ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। তিন লক্ষাধিক টাকা ব্যয়সাপেক্ষ কক্সবাজারের ৭২টি মেগাপ্রকল্পের মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের অভিযোগ তদন্ত করতে নেমে দুদক কর্মকর্তা স্থানীয় রাজনীতিবিদ, জেলা প্রশাসকসহ সরকারী কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জালিয়াতচক্রের দেড়শতাধিক সদস্যের নাম শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। দুদকের সেই কর্মকর্তার তদন্তকে অগ্রাহ্য করে পুন:তদন্তের নির্দেশ এবং সাহসী কর্মকর্তা শরিফ হোসেনকে চাকরিচ্যুত করার ঘটনা ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পদ্মাসেতুর ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত দুর্নীতি মূলত হিমশৈলির চূড়া মাত্র। আরও অনেক প্রকল্পেই এ ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এবং থাকা অস্বাভাবিক নয়। দুর্নীতিবাজরা জালজালিয়াতির মাধ্যমে জমির প্রকৃত মালিককে বঞ্চিত করেছে এবং করছে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্ত করা দরকার। প্রকৃত মালিকরা যাতে তাদের জমির মূল্য বুঝে পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। যারা এসব দুর্নীতির সাতে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার
রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি
দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়
যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের
রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা
বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে
টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে
জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে
৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা
আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি
পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই
তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা
ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের
উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি
২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট
২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের
কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু
১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে
বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো
তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান