শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন
০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। গত রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তার দল আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় অর্জিত হওয়ার প্রেক্ষিতে ফের তার প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিশ্চিত। সে মোতাবেক সবমিলে পঞ্চমবারের মতো তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হবেন। একটানা চারবার নির্বাচনে জিতে তার দল আওয়ামী লীগ যেমন বিরল ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, তেমনি দলপ্রধান হিসেবে এতবার প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হয়ে তিনিও অভূতপূর্ব রেকর্ডের অধিকারী হয়েছেন। বিশ্বে একাধিক্রমে চারবার এবং সবমিলে পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নজির নেই। এও উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে বিদেশে থাকা অবস্থায় তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বহাল আছেন। কোনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে একটানা এত বছর কারো দায়িত্ব পালনও নজিরবিহীন। দলনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি অসাধারণ কৃতিত্ব ও সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন। আমরা তাকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানাই। নির্বাচন যে রকম হোক, যেভাবে হোক, হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে আরো একদফা সরকার গঠন ও দেশ পরিচালনার সাংবিধানিক বৈধতা লাভ করেছে। উল্লেখ্য, এই নির্বাচনকে ঘিরে গত এক বছর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত ও উত্তেজনাকর। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সারাবছর আন্দোলন করেছে। সরকার এবং আওয়ামী লীগও ক্ষমাতসীন দলীয় সরকারে অধীনে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করার প্রতিজ্ঞায় অটল থেকেছে। এ ব্যাপারে দু’পক্ষের মধ্যে সংলাপ-সমঝোতা না হওয়ার প্রেক্ষিতে বিএনপি ও তার পক্ষীয় দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে। সরকার ও আওয়ামী লীগ বিরোধী পক্ষকে বাদ রেখেই একপক্ষীয় নির্বাচনের পথ বেছে নিয়েছে। একতরফা নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হলেও ক্ষমতাসীন সরকার ও দলের পথনকশা অনুযায়ী নির্বাচন হয়েছে। ফলাফল যা হওয়ার, তাই হয়েছে।
পর্যবেক্ষক মহল আশংকা প্রকাশ করেছিল, নির্বাচনের পরে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট আরো ঘনীভূত ও জটিল হয়ে উঠতে পারে। স্থিতিশীলতা ব্যহত হতে পারে। বলা বাহুল্য, যে কোনো বিবেচনায় দেশকে স্থিতিশীল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শান্তি, নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য এর বিকল্প নেই। আগামীতে গঠিত সরকারের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যার মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জই প্রধান। গত বছর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিরোধী দলগুলোর ওপর সরকারের দমন-পীড়ন, হামলা, মামলা, সাজা ইত্যাদি যা কিছুই হয়েছে, তার জন্য দেশে-বিদেশে সরকারকে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ আশংকাও ব্যক্ত হয়েছে, নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন আরো বাড়তে পারে। সরকারের এই আশংকার দিকটি আমলে নিতে হবে। বিরোধ-সংঘাতের আর্বত থেকে রাজনীতিকে বাইরে আনতে হবে। রাজনৈতিক সহাবস্থানের পরিবেশ নির্মাণ করতে হবে। এক্ষেত্রে যে কোনো ব্যর্থতা সরকারের সহজ পথচলাকে কঠিন করে দিতে পারে। দেশের অর্থনৈতিক সংকট প্রকট। ডলার সংকট, রিজার্ভ সংকট, ব্যাংকিংখাতে তারল্য সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আমদানি-রফতানি হ্রাস, রফতানি আয় ও র্যামিটেন্সে কমতি ইত্যাদি সামগ্রিক অর্থনীতির যে নাজুক চিত্র তুলে ধরে তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায় নেই। আগামীতে অর্থনৈতিক সংকট আরো শোচনীয় হয়ে উঠতে পারে বলে অর্থনীতিবিদদের আশংকা। নিত্যপণ্যের লাগাতার মূল্যস্ফীতি দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবনযাপন দুর্বিষহ করে তুলেছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সামনে রমজান। মাসব্যাপী এবাদত-বন্দেগির এই সময়ে পণ্যমূল্য ক্রয়সীমার মধ্যে থাকলে মানুষের মধ্যে স্বস্তি থাকে। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, রমজানের সময় দফায় দফায় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে এবং ক্রেতাসাধারণকে অনেকটা নিরূপায় হয়েই প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হয়েছে। এবারও দু’মাস আগেই রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে। সেসব পণ্যের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। সরকারের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কাজটি অবিলম্বে শুরু করতে হবে। রাজনৈতিক সহনশীলতা ও স্থিতি রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে মানবাধিকার, সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকারকে মনোনিবেশ করতে হবে। এ নিয়ে দৈশিক ও আন্তর্জাতিক মহলের উৎকণ্ঠ যথেষ্ট। মানবাধিকার লংঘন, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংস্থা বিরতিহীনভাবে এ ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়ে যাচ্ছে। সমালোচনা করে যাচ্ছে। এদিকে নজর দিতে হবে। তাদের অভিমতকে গ্রাহ্যে আনতে হবে। মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজনের বিরুদ্ধে ক’বছর আগে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, এখনো তা প্রত্যাহার করেনি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশকে লক্ষ রেখে ঘোষিত মার্কিন ভিসানীতির কথাও উল্লেখ করা যেতে পারে। এ ধরনের আরো বিধিনিষেধ আসতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা আগেই আশংকা প্রকাশ করেছেন। এদিকটি মোটেও আবহেলা করা যাবে না। মানবাধিকার, সুশাসন, ন্যায়বিচার ইত্যাদির ক্ষেত্রে নিজেদের সার্টিফিকেট তেমন কার্যকর হয় না। বাইরের সার্টিফিকেট ও অভিমতই গুরুত্ব পায়। সুতরাং সেটা মনে রাখতে হবে এবং যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে। না দিলে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা থাকবে। সরকারকে এ সবের পাশাপাশি অর্থনীতি মেরামতের কাজটি দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে করতে হবে। মুদ্রাকেন্দ্রিক সংকট দূর করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার আগম ও মজুত বাড়াতে হবে। রফতানি ও র্যামিট্যান্স বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাংকিংখাত সংস্কার করতে হবে। সকল প্রকার অনিয়ম, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তাচার রহিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৌশল, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রতি মানুষের আস্থার অভাব নেই। তাদের বিশ্বাস, তিনি আশংকিত সকল সংকট কৃতিত্বের সঙ্গে মোকাবিলায় সফলকাম হবেন।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬
সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন
ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান
জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু
আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক
যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার
গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান
সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’
বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল
১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল