যুদ্ধ, প্রপাগান্ডা এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে জন পিলজারের কণ্ঠস্বর
১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম
ঘটনাবহুল গত বছরের শেষদিন অনুসন্ধানী সাহসী সাংবাদিকতা ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা জন পিলজারের মৃত্যু সংবাদ পাওয়া গেল। অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণকারী এই সাংবাদিক ৮৪ বছর বয়েসে ৩০ ডিসেম্বর লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেছেন। বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে তৃতীয় বিশ্বের রাজনৈতিক বির্বতনের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা এবং জনমত গঠনে জন পিলজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। একাত্তুরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে কয়জন খ্যাতিমান সাংবাদিক রণাঙ্গনে অবস্থান করে খুব কাছ থেকে যুদ্ধ ও রাজনৈতিত ঘটনাবলী প্রত্যক্ষ করেছিলেন, জন পিলজার তাদের অন্যতম। পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদের প্রভাব বলয়ে থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী আঞ্চলিক যুদ্ধগুলোকে যেমন তিনি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে যুদ্ধবিরোধী জনমত গঠনে কাজ করেছেন। একইভাবে রাশিয়া ও চীনের প্রভাবাধীনে বিভিন্ন দেশে গজিয়ে ওঠা বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা এবং স্বৈরতান্ত্রিক শাসকদের উত্থান-পতনের ইতিহাসের সাথেও তিনি বিশ্বকে পরিচিত করে তুলতে কাজ করেছেন। জন পিলজারের অনুসন্ধানী কলম ও সাহসী ক্যামেরার সক্রিয় তৎপরতা না থাকলে কম্বোডিয়ায় খেমাররুজ বিদ্রোহ এবং জেনারেল পলপটের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অনেক কিছুই হয়তো বিশ্বের সামনে অজানা থেকে যেতো। জন পিলজারের দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো রাজনীতি নিরপেক্ষ ছিল না, কাজের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রবল শক্তির প্রতিকূলে দাঁড়িয়ে সত্য উচ্চারণের মত সাহসী মানুষেরা যুগে যুগে সভ্যতার অগ্রগতির পক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। অনেক প্রলোভন এড়িয়ে হুমকি ও ঝুঁকি গ্রহণ করেই পিলজারদের মত মানুষদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে নিপীড়িত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হয়। আজকে আমরা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ কিংবা এডওয়ার্ড ¯েœাডেন যে ঝুঁকি নিয়ে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের নীল নকশাগুলো বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন, তা আগামী দিনের মুক্তবিশ্বের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবেই গণ্য হবে। দুই দশক আগে ইরাকের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসন এবং মধ্যপ্রাচ্যের তৎকালীন বাস্তবতা প্রসঙ্গে ২০০৩ সালে অনলাইনে একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের টিভি উপস্থাপিকা কিম হিল। অবান্তর প্রশ্ন করা এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে তেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করতে না পারায় জন পিলজার বলেছিলেন, আমার সাক্ষাৎকার নিতে তোমার তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই! তুমি আমার সম্পর্কে আরো জানো এবং আমার বইগুলো পড়। শুধু শুধুই তুমি আমার সময়ের অপচয় করেছো।
ঐতিহাসিক সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক সময় কবির কলম শাসকের দুর্গের ভীত নাড়িয়ে দিতে সক্ষম হওয়ার অনেক উদাহরণ আছে। রাজা-মহারাজা, জননন্দিত মহানায়ক, স্বৈরশাসক, নায়ক-খলনায়ক, দুর্দোন্ড প্রতাপ সেনাপতি, অসংখ্য যুুদ্ধজয়ী বীর, মল্লযোদ্ধা, জ্ঞানতাপস, ধনকুবের কিংবা ধূর্ত যাদুকর কেউই পৃথিবীতে চিরস্থায়ী নয়। কঠিন সময়ে প্রতিপত্তীশালী শাসকের বিরুদ্ধে সত্য উচ্চারণকারীরাই প্রকৃত বীরত্বগাঁথা রচনা করে মানুষের হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন করে নিতে সক্ষম হন। সেই খৃষ্টপূর্ব যুগে গ্রীসের সক্রেটিসকে কেউ ভুলে যায়নি। শাসক ও বিচারকের আসনে বসে যারা তাকে মিথ্যা আদালত সাজিয়ে মৃত্যুদন্ডের মত সাজা দিয়ে বিজয়ের হাসি হেসেছিল, তাদের কেউ মনে রাখেনি, তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। স্পেনিশ ঔপনিবেবেশ বিরোধী লড়াইয়ের বীর যোদ্ধা ল্যাটিন আমেরিকার সাইমন বলিভার, ফিলিপাইনের জোসে রিজাল বিশ্বের স্বাধীনতা ও জনগণের মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাসে যে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন তা দেশ ও জাতির গ-ি পেরিয়ে চিরন্তন ত্যাগ ও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। সত্য উচ্চারণ কিংবা সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে কবি নজরুল, চে’গুয়েভারা, নেরুদা, আলেন্দের মত মানুষদের এক কাতারে সামিল করেছে। বিংশ শতকের খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জন পিলজার, হাওয়ার্ড জিন, রবার্ট ফিস্ক, গ্লেন গ্রিনওয়াল্ড, রানা আইয়ুব, রোহিঙ্গা গণহত্যার হুইসেল ব্লোয়ার সাংবাদিক ওয়া লোনের নাম মানুষ চিরদিন মনে রাখবে। রাজাদের প্রতিপত্তি, শান-শওকত প্রতিপত্তির কথা মানুষ একদিন ভুলে গেলেও রাজতন্ত্রে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের কথা বলতে গিয়ে সউদি বংশোদ্ভুত মার্কিন সাংবাদিক জামাল খাশোগির নির্মমভাবে নিহত হওয়ার ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না। অত:পর সে ঘটনা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্লেইম গেম ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের গোপণ সমঝোতার কথিত দর কষাকষির অনুদঘাটিত ইতিহাসও একদিন হয়তো বেরিয়ে আসবে।
এক অসম ও ভারসাম্যহীন প্রচারযুদ্ধের দ্বারা বর্তমান বিশ্বের গণমাধ্যম ও জনমত অনেকটাই প্রভাবিত হচ্ছে। সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের মধ্য দিয়ে যে মুক্তির বার্তা তৃতীয় বিশ্বের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল, জোসেফ স্তালিনের একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থা সে সম্পর্কে নতুন ভাবধারা তৈরী করে দেয়। মার্কিন লেখক, জর্জ অরওয়েল তার এনিমেল ফার্ম নামক উপন্যাসিকায় প্রাণী জগতের রূপকল্পে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অনুশাসনের যে প্রেক্ষাপট তৈরী করেছিলেন, সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে পশ্চিমা প্রোপাগান্ডায় তা বিশেষ অবদান রেখেছিল। উপন্যাসের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত করার মত অনেক মূল্যবান বক্তব্য পাওয়া যায়, যা গ্রন্থটিকে সাহিত্যরস এবং মানুষের মানবিক মর্যাদা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামের উপজীব্য করে তুলেছে। অ্যানিমেল ফার্মের বিখ্যাত উক্তি- ‘অল অ্যনিমেলস আর ইকোয়াল, বাট সাম এনিমেলস আর মোর ইকোয়াল দ্যান আদার্রস’। আমাদের আজকের সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতায় যখন আইনের শাসন ভূলুন্ঠিত। সাম্য, মৈত্রী ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অঙ্গীকারগুলো বার বার দুর্বল ও হীনস্বার্থ প্রভাবিত শাসকদের দ্বারা অগ্রাহ্য করার পেছনে কাজ করছে কিছু মানুষের অস্বাভাবিক ধনসম্পদের মালিক ও ক্ষমতাধর হয়ে ওঠার নেপথ্য কারসাজি। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনৈতিক প্রক্রিয়ায় কুক্ষিগত রেখে এরা নিজেদেরকে আইনের স্বাভাবিক ¯্রােতধারা ও জবাবদিহিতা থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হচ্ছে। সভ্য দুনিয়ায় এটিই সম্ভবত সবচেয়ে বড় অবিচার ও অসভ্যতার উৎস। মানুষকে তার মূল ¯্রােতধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে এবং ভুল তথ্যপ্রবাহের মধ্য দিয়ে একটি মনস্তাত্তি¦ক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদ কিংবা আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তি অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্র ও জাতিগুলোকে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে পদানত রাখার কৌশল গ্রহণ করছে। সাবেক পশ্চিমা উপনিবেশগুলোর রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য চুক্তি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির বিশ্বায়ণের গোলক ধাঁধায় আজকে আমরা যে পরিস্থিতির সম্মুখীন,দেশের সচেতন নাগরিক, রাজনীতিবিদরা তা বুঝতে ব্যর্থ হলে তা থেকে উত্তরণের আর কোনো পথ নেই। চাপিয়ে দেয়া মগজ ধোলাই ও প্রোপাগান্ডা মেশিনারিজম আমাদেরকে একটি মনস্তাত্ত্বিক দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে সদা সক্রিয় রয়েছে।
মার্কিন মানবাধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের সেই বিখ্যাত উক্তিকে মনে রাখতে হবে। তিনি বলেছিলেন, ‘স্বৈরতান্ত্রিক শাসকরা স্বেচ্ছায় কখনো জনগণের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয় না। এটা অবশ্যই জনগণকে আদায় করে নিতে হয়। যদি ওরা সহজেই ফ্রিডম অব স্পিচকে কেড়ে নিতে পারে, তাহলে আমরা নি:শব্দ ভেড়ার পালের মত হয়ে যাব, যেভাবে ভেড়াগুলোকে কসাইখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। যারা ভ্রান্তভাবে বিশ্বাস করে যে তারা মত প্রকাশে স্বাধীন তারাই সবচেয়ে বেশি দাসত্বের শিকার হয়ে পড়ে।’ গত আগস্টের শেষ দিকে আইসিএইচ অনলাইনে প্রকাশিত জনপিলজারের একটি লেখা একটি নিবন্ধের শিরোনাম- ‘সাইলেন্সিং দ্য ল্যাম্বস; হাউ প্রোপাগান্ডা ওয়ার্কস’। সত্তুরের দশকের শুরুতে পিলজার কেনিয়ায় অবস্থানকালে হিটলারের নাৎসী প্রোপাগান্ডা প্রোগ্রামের কর্মী লেনি রেইফেনস্থালের সাথে সাক্ষাতের সময় তিনি বলেছিলেন, তার চলচ্চিত্রের বিষয়গুলোর মূল উপজীব্য ছিল জার্মানীর সচেতন নাগরিকসহ সাধারণ মানুষ। বিশেষত উদার, শিক্ষিত জনগোষ্ঠিকে লক্ষ্য করেই তারা তাদের প্রোপাগান্ডার বয়ান তৈরী করতো বলে সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সেই তিরিশের দশকের বিশ্ববাস্তবতা থেকে আমরা এখন অনেকটা পথ পেরিয়ে এলেও হিটলারের জার্মানীর প্রোপাগান্ডা প্রকল্পের বিকল্প হিসেবে আমরা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী স্বার্থের প্রোপাগান্ডা প্রকল্পের টার্গেটে পরিনত হয়েছি। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের ছবক বিলাচ্ছে। পিলজার নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বলছেন, তার জীবদ্দশায় মার্কিন প্রশাসনকে অন্তত ৩০টি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নির্বাচনব্যবস্থায় নগ্ন হস্তক্ষেপ করতে, ৩০টি দেশের দরিদ্র নিরস্ত্র মানুষের উপর বোমা ফেলতে দেখেছেন। ৫০টি দেশের সরকার প্রধানকে সরিয়ে দেয়ার অপপ্রয়াস এবং অন্তত ২০টি দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে দাবিয়ে রাখার প্রয়াসে যুক্ত থাকতে দেখেছেন। আজকে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বায়ণ ও বহুমাত্রিকতার দাবি করলেও পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোর প্রথম সারির সবগুলো এবং ইন্টারনেট, গুগোল, ফেইসবুক, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও মালিকানা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। তারা নিজেদের ইচ্ছা ও পরিকল্পনা মাফিক দীর্ঘমেয়াদে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষের জন্য মগজধোলাই ও সুনির্দিষ্ট বয়ান তৈরী করতে পারে। নোবেল বিজয়ী বৃটিশ লেখক-নাট্যকার হ্যারোল্ড পিন্টার মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত রূঢ ভাষায় অসম সাহসী সত্য উচ্চারণ করেছেন। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন, দীর্ঘ পরিকল্পনা অনুসারে কিভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একেকটি দেশকে পঙ্গু, অকার্যকর করে তুলেছে। হ্যারল্ড পিন্টারের তথ্যভিত্তিক বিশদ বক্তব্যের সুত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সা¤্রাজ্যবাদী যুদ্ধ ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন থেকে ইউক্রেনে বিস্তৃত হয়ে কিভাবে এসব দেশের শক্তি ও সম্ভাবনা নস্যাৎ করা হয়েছে তার উদাহরণ দিয়েছেন পিলজার।
পরাশক্তির ভূরাজনৈতিক খেলায় বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবার গুটি হয়ে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেন থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার এজেন্ডা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। যে সময় জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সবেচেয় বেশি প্রয়োজন তখন জাতিকে বিভক্ত করে ফেলার ফল খুব খারাপ হতে পারে। আমাদের গণতন্ত্র মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির চাকা নিয়ে যদি আমাদের রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্র পরিচালকদের কাছে তাদের ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, সেখানে আমাদের জনগণের স্বার্থ ও নিরাপত্তার চেয়ে মার্কিনী ও পশ্চিমাদের ভ’রাজনৈতিক স্বার্থের মূল্য বেশি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সাম্প্রতিক দুই দশকের আমাদের পারিপার্শ্বিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, ভারত, রাশিয়া, চীন কিংবা আমেরিকা কেউই বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা কিংবা রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মুক্তির প্রত্যয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, রোহিঙ্গা গণহত্যা এবং বাংলাদেশের উপর চেপে বসা রোহিঙ্গা ক্রাইসিস নিয়ে ভারত ও চীনের ভ’মিকা বন্ধুসুলভ নয়। তবে এবারই সম্ভবত প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা ও প্রত্যাশার সাথে তাল মিলিয়ে দেশে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা ও অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব আরোপ করে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। ক্ষমতার অতি পিচ্ছিল পথ এবং আঞ্চলিক ভূরাজনীতির খেলায় ক্ষমতাসীনরা অত্যন্ত ঔদ্ধত্ত্বের সাথে পশ্চিমাদের প্রত্যাশা, চাপ ও দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষাকে অগ্রাহ্য করে দেশে আরেকটি একতরফা ভোটারবিহিন নির্বাচনী প্রহসন মঞ্চস্থ করেছে। চীন-রাশিয়ার খপ্পরে পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের সাথে টেক্কা দিয়ে দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার কোনো বিকল্প ব্যবস্থা কিংবা সক্ষমতা আমাদের নেই। অন্যকোনো দেশ বা পরাশক্তির জন্য নয়, বাংলাদেশের আশিভাগ মানুষকে নিপীড়িত, বঞ্চিত ও সংক্ষুব্ধ করে দেশের কোনো শাসকদল দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। রাষ্ট্রীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাস্তবতার আলোকে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে একটি স্থিতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আইনগত নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতা নিশ্চিত করতে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি জাতীয় সংলাপ ও সমঝোতার পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬
সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন
ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান
জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু
আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক
যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার
গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান
সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’
বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল
১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল