পেঁয়াজের বেপরোয়া মূল্যবৃদ্ধি
১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম
রাতারাতি পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। যে পেঁয়াজ আগের দিন প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রী হয়েছে, তা-ই ২০০ টাকার ওপরে চলে গেছে। পেঁয়াজের চাহিদা কি হঠাৎ করে বেড়ে গেছে? সরবরাহে কি কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে? না, এর কোনোটাই ঘটেনি। তবু দাম বেড়েছে অবিশ্বাস্যভাবে। তবে হ্যাঁ, গত ৭ ডিসেম্বর ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় চলতি ডিসেম্বর থেকে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ৮ ডিসেম্বর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। ভারত পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করেছে, শুধু এই কারণে আমাদের দেশে পেঁয়াজের বাজারে এই দুর্ঘট নেমে এসেছে। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে আমরা কি ভারতের ওপর এতটাই নির্ভরশীল যে, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে বলে আমাদের দেশে পেঁয়াজের দাম লাফ দিয়ে দুগুণেরও বেশি হয়ে যাবে? এ দেশেও যথেষ্ট পরিমাণে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। জানা যায়, পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৫ লাখ টনের মতো। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ৩৪ লাখ টন। চাহিদার তুলনায় প্রায় ৯ লাখ টন বেশি উৎপাদিত হয়েছে। তবে মজুদ সুবিধার অভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এই ক্ষতি পোষাতে সাড়ে ৬ লাখ টন পেঁয়াজ ইতোমধ্যে আমদানি করা হয়েছে। বাজারে নতুন পেঁয়াজও কিছু কিছু উঠতে শুরু করেছে। এসব তথ্য থেকে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, দেশে পেঁয়াজের তেমন কোনো ঘাটতি নেই। আড়তে, গুদামে, বাজারে, দোকানে পেঁয়াজের ছড়াছড়ি, কোনো অভাব নেই। তাই এভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো যুক্তি নেই। তারপরও যেভাবে দাম বেড়েছে এবং ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে, তার একটাই অর্থ দাঁড়ায়, ভারতে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তকে পুঁজি করে এ দেশের ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১৯ সালের অক্টোবরও একবার ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছিল। ওই সময় আমাদের দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৫০ টাকা কেজি। নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেটবাজদের দৌরাত্ম্যের কথা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা শুনি এবং বলি। এখন পেঁয়াজের দামে যে উল্লম্ফন তা সেই সিন্ডিকেটেরই কারসাজি, সেটা বলা বাহুল্য।
খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপণ্যাদির দাম এখন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে অপ্রতিরোধ্য গতিতে সামনে ধাবমান। চাল, আটা, ডাল, তেল, নুন, দুধ চিনি, মশলাপাতি, মাছ-মুরগী, শাকসবজি, তরিতরকারীসহ এমন কোনো পণ্য নেই, যার দাম নি¤œ ও মধ্যম আয়ের মানুষের নাগালের মধ্যে আছে। গতমাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশের ওপরে। নি¤œ ও মধ্যম আয়ের মানুষের আয় একটাকাও বাড়েনি। ক্ষেত্র বিশেষ আয় কমেছে। অনেকে কর্ম হারিয়ে বেকারের খাতায় নাম লিখিয়েছে। বৃষ্টি-বাদলের মধ্যেও টিসিবির ট্রাকের পেছনে নারী-পুরুষ-শিশুর দীর্ঘ লাইন থেকে বুঝা যায়, সাধারণ মানুষ কি অবস্থায় আছে। বাজারে কোনো জিনিসেরই অভাব নেই। বিক্রেতাদের হাঁকানো দামে যত ইচ্ছা পণ্য কেনা যায়। সমস্যা হয়েছে সাধারণ মানুষের। তাদের কেনার ক্ষমতা নেই। সামর্থের অভাবে সাধারণ মানুষ যতটা প্রয়োজন ততটা পণ্য কিনতে পারছে না। কম করে কিনছে। কম করে খাচ্ছে। এতে পুষ্টিবঞ্চিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে পুষ্টিহীনতা উদ্বেগেজনক হারে বেড়েছে বা বাড়ছে। ন্যায়সঙ্গত দামে যাবতীয় পণ্য কেনার অধিকার মানবিক অধিকারও বটে। কিন্তু এ অধিকার অন্যান্য মানবিক অধিকারের মতোই এখন লাপাত্তা হয়ে গেছে। সরকার নাগরিকদের ন্যায্যমূল্যে পণ্য কেনা নিশ্চিত করতে পারেনি। সুনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থাপনা বলতে যা বুঝায়, তা নেই। বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে মজুদদার, আড়তদার, ব্যবসায়ী, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও আমদানিকারকরা। পণ্যপিছু ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের সিন্ডিকেট গড়ে উঠছে। এই সব সিন্ডিকেট বাজারে পণ্য সরবরাহ ও পণ্যমূল্য নির্ধারণ করে। তারা যখন তখন নানা অজুহাতে এবং কখনো কখনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দিয়ে নির্বিচার মুনাফা লুটে নেয়। আমাদের ‘ব্যবসায়ী বান্ধব’ সরকার চেয়ে চেয়ে দেখে, কিছু করতে পারে না কিংবা করে না ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যের কারণে। সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের কোনো দাম আছে বলে মনে হয় না।
খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপণ্যের অধিকাংশের জন্য আমরা বিদেশের ওপর নির্ভরশীল। অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে দাবি করি। অথচ, সেই পণ্যই আমদানি করি। তখন ওই দাবির অসারতা প্রমাণিত হয়। চালের ক্ষেত্রে এটা বিশেষভাবে প্রয়োজ্য। এক সময় চিনিতে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছিল। এমনকি রফতানিও করা হয়েছিল। এখন চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়। চিনিকলগুলোর অধিকাংশই বন্ধ হয়ে গেছে। ইউরিয়া সারের কথা উল্লেখ করা যায়। ইউরিয়া সার আমাদের আমদানি করতে হতো না। এখন বছরে শত শত কোটি টাকার ইউরিয়া আমদানি করতে হয়। কারখানাগুলো উৎপাদনহীন অবস্থায় পড়ে আছে। প্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য বেশি আমদানিনির্ভরতা, বিশেষ করে কোনো দেশের ওপর নির্ভরতা অনেক ক্ষেত্রে বুমেরাং হয়ে দেখা দেয়। আমরা বিভিন্ন সময় সেটা লক্ষ করেছি। আমাদের নিত্যপণ্যের অধিকাংশই ভারত থেকে আমদানি করা হয়। ভারত কখনো কারণে, কখনো বা অকারণে কোনো কোনো পণ্যের রফতানি বন্ধ করে দেয়, তখন আমাদের বিপাকে পড়তে হয়। চালের ক্ষেত্রে, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে, মরিচের ক্ষেত্রে, এমন কি গরুর ক্ষেত্রে আমরা সেটা দেখছি। ভারতের গরু রফতানি বন্ধ আমরা সামাল দিয়েছি। বাকীগুলো আর সামাল দিতে পারছি না। এজন্য উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। অতএব, খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, শতভাগ ভারতনির্ভর না থেকে অন্যান্য দেশ থেকে পণ্যাদি আমদানি করতে হবে। উৎপাদন, বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি, টেকসই ও উন্নত বাজার ব্যবস্থাপনা এবং সিন্ডিকেটবাজি সম্পূর্ণ অকার্যকর করা এখন সময়ের অন্যতম বড় দাবি। এসব দাবির বাস্তবায়ন বাজারকে স্থিতিশীল ও জনবান্ধব করে তুলতে পারে বলে আশা করা যায়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬
সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন
ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান
জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু
আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক
যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার
গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান
সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’
বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল
১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল