অর্থনৈতিক সঙ্কটের আশঙ্কা আমলে নিতে হবে
১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম
নতুন বছরে দেশের-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এক নতুন অনিশ্চয়তার মুখে পতিত হতে বলে পর্যবেক্ষকদের আশংকা। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনের আলোকে গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে চলতি অর্থবছরের পূর্বঘোষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস এবং সামনের দিনগুলোতে ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশংকার কথা বলা হয়েছে। গত বছর জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে চলমান অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৬দশমিক ২ শতাংশ। মঙ্গলবার রাতে গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস-২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক যে আভাস দিয়েছে, তাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ৫দশমিক ৬ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। অথচ চলতি অর্থবছরে সরকার সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ কমে যাওয়ার বাস্তবতা এবং তা আরো ঘণীভ’ত হওয়ার আশঙ্কা দেশের বিনিয়োগ ও অর্থনীতির জন্য একটি অশনি সংকেত। মূলত দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট এবং দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে নতুন আশংকা দেখা দিয়েছে। বিগত দুইটি বিতর্কিত নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে অনেকটা ছিটকে পড়া বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব থেকে নানাভাবে চাপ দেয়া হয়েছিল। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।সরকার ও নির্বাচন কমিশন বলেছিল, জনগণ ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিলেই তা অংশগ্রহণমূলক বলে বিবেচিত হবে। ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করাকেই তারা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিল। অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলো জনগণকে একতরফা-ডামি নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিল। নির্বাচনের সামগ্রিক বাস্তবতায় এটা পরিষ্কার যে, দেশের মানুষ ভোট দিতে আগ্রহ দেখায়নি।
নির্বাচনে ভোটার টার্নআউটের হার নিয়ে শুরুতেই বড় ধরণের বিতর্ক ও গড়মিল দেখা দিয়েছে। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার একঘন্টা আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ২৮ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তা ৪০ শতাংশের উপর উন্নীত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। আদতে এসব কোনো অংকই নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কাজ করছেন এমন একজন ভারতীয় গবেষক, শ্রীরাধা দত্ত গতকাল প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আওয়ামী লীগে আমাদের পরিচিত অনেকে বলেছেন, ভোট পড়েছে ২০ শতাংশের নিচে। তিনি আরো বলেছেন, তার চেনাজানাদের মধ্যে খুব কম মানুষই ভোট দিয়েছেন, ১০ শতাংশের বেশি মানুষ ভোট দেয়নি বলে তাঁর ধারণা। দুই বছর আগে লেখা এক নিবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ভঙ্গুর, এখন সেই অবস্থা আরো খারাপ হলো।’ নির্বাচন ঘিরে জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফ থেকে প্রায় অভিন্ন অবস্থান লক্ষ করা যাচ্ছে। নির্বাচনের বহু আগে থেকে তারা যেমনভাবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশার উপর জোর দিয়েছিল, নির্বাচনের পর সে অবস্থানে অটুট থেকেই তারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রত্যাশার কথা জারি রেখেছে। চীনা গণমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোষ্টে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ গতকাল দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় অনুবাদ করে প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘এই নির্বাচন গণতন্ত্রের কফিনে পেরেক, বিভক্ত দেশটির বিপদ ঘনিয়ে আসছে।’ দেশে ডলার সংকট, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, আমদানি ব্যয় মিটাতে ব্যাংকগুলোর অপারগতা এবং পশ্চিমা বিশ্বের তরফ থেকে যে কোনো নিষেধাজ্ঞার বার্তা সেই বিপদের আশঙ্কাকেই বাড়িয়ে তুলেছে।
বিশ্বব্যাংকের গ্লোবার ইকোনমিক প্রসপেক্টাসে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়াসহ মূল্যস্ফীতি ও বিনিয়োগ নিয়ে যে সব আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে, তা দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটেরই প্রভাব। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নির্বাচন প্রশ্নে আন্তর্জাতিক বিশ্ব বিভক্ত হয়ে পড়লেও মূলত যে সব পশ্চিমা দেশের উপর বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানি ও রেমিটেন্স প্রবাহ বহুলাংশে নির্ভর করে, সে সব দেশই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে কথা বলেছে। পক্ষান্তরে সরকারের অবস্থানের পক্ষে দাঁড়িয়েছে ভারত, রাশিয়া ও চীন। ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় পরাশক্তিগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও নিজেদের কৌশলগত স্বার্থে প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে আপস করেই চলে। ভারত, রাশিয় ও চীনের বাণিজ্যিক স্বার্থের দিকে দৃষ্টিপাত করলে তা অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায়। পশ্চিমাদের সাথে আমাদের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কাছ থেকে আমরা ডলার আয় করি এবং সেই ডলার ব্যয় করি ভারত, চীন ও রাশিয়া থেকে পণ্য কিনতে। পশ্চিমা, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র তার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রগুলোকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার মত ইস্যুগুলোকে নতুনভাবে তুলে ধরেছে। বাংলাদেশের দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন সময়ে তারই আগাম বার্তা পাঠিয়েছে। বিভিন্ন দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার ফলাফল সম্পর্কে আমরা জানি। কোনো দলের ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য দেশকে বড় ধরণের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়া মোটেই কাংখিত নয়। অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিরোধীদল দমন, রাজনৈতিক সভাসমাবেশে বাধা ইত্যাদি ইস্যুর সাথে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার শর্ত জড়িত। এসব যদি আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকে, তবে তা দেশের জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। আশংকার এই প্রেক্ষাপটে পশ্চিমাদের অবস্থান ও অভিমতের ব্যাপারে বেপরোয়া মন্তব্য ও মনোভাবের প্রকাশ সমীচীন নয়। অর্থনৈতিক সংকটের আশংকা অগ্রাহ্য করে দেশের অগ্রগতি, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা অসম্ভব।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬
সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন
ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান
জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু
আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক
যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার
গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান
সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’
বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল
১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল