ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

বিরোধী দলের পরাজয় কি কখনো হয়েছে?

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১২ এএম

নির্বাচনের আগের দিন সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে বসেছিলাম। আমার ঘনিষ্ট এক সাংবাদিক কণ্ঠস্বর টেনে জিজ্ঞেস করলেন ‘কি’? তিনি কেন এই ‘কি’ বললেন, তা বুঝতে অসুবিধা হলো না। এর অর্থ একাধিক। প্রথম যে অর্থ দাঁড়ায়, তা হচ্ছে, নির্বাচন তো হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, বিএনপি তো নির্বাচন ঠেকাতে পারল না। উত্তরে বললাম, আপনারা তো পরাক্রমশালী। তিনি হেসে চলে গেলেন। তার সাথে এর আগেও নির্বাচন নিয়ে আলাপ হয়েছে। সে আলাপে তার একটি কথা ছিল, বিএনপি তো নির্বাচনে এলো না। না এলে সরকার কী করবে? দেখলাম, একটি বিশেষ ঘরানার প্রায় সব সাংবাদিকের মধ্যে এ মনোভাব প্রবল। অনেকদিন ধরেই তাদের এ কথা শুনছিলাম। আর ভাবছিলাম, তারা এখন যুক্তি দাঁড় করাতে চাচ্ছে। শুনতে শুনতে একদিন বললাম, নিজেরা নিজেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মধ্যে গৌরবের কিছু নেই। আওয়ামী লীগও ’৯৬ সালের নির্বাচনে যায়নি। আন্দোলনে ছিল। তাদের যুক্তি, বিএনপি আন্দোলন করে সরকারকে বাধ্য করতে পারেনি। তখন আওয়ামী লীগ বিএনপি সরকারকে আন্দোলন করে বাধ্য করেছিল। বললাম, তা ঠিক। তবে দুই বিরোধীদলকে দুই ভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছিল। এখন যেমন বিএনপিকে শুধু আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে না, একই সঙ্গে রাষ্ট্রযন্ত্রকেও মোকাবেলা করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের সাথে কারো পক্ষেই পেরে ওঠা সম্ভব নয়, যদি সেই রাষ্ট্রযন্ত্র স্বংক্রিয়ভাবে একটি দলের পক্ষাবলম্বন করে। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে শুধু বিএনপিকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র থাকলেও তা বিগত দেড় দশকের মতো বিরোধীদল দমনে এত তীব্রভাবে ব্যবহার করা হয়নি। তখন শুধু রাষ্ট্রযন্ত্র সংঘাতময় পরিস্থিতি সামালের দায়িত্ব বেশি পালন করেছে। বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের এন্তারভাবে গুম, খুন, হামলা, মামলা, গ্রেফতার, সাজা এমনকি বাড়িতে থাকতে না পারার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়নি। রাষ্ট্রযন্ত্র ও ক্ষমতাসীনদল এক হয়ে যায়নি। সরকার ব্যবহার করলেও তার একটা লিমিট ছিল। এই যেমন ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে যেভাবে লগি-বৈঠা দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে এবং পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনার সময় পুলিশের ভূমিকা কী ছিল? তাদের দিকে কি গুলি ছুঁড়েছিল কিংবা ছত্রভঙ্গ করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিল? যারা এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছিল, তাদের কাউকে কি পুলিশ গ্রেফতার করেছিল? কেউ কেউ বলতে পারেন, গত বছরের ২৮ অক্টোবরও তো পিটিয়ে পুলিশ মারা হয়েছে। তবে তা নিয়ে যেমন বিতর্ক রয়েছে, তেমনি পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে কাউক কাউকে গ্রেফতারও করেছে। ’৯৬ সালে ক্ষমতাসীন বিএনপিও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে চেয়েছিল। আওয়ামী লীগ ও তার জোটসহ সব বিরোধীদল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করেছে। যেহেতু সংবিধানে তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছিল না, তাই বিএনপিকে ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্বাচন করতে হয়েছিল। সেই নির্বাচন একতরফা হয়েছিল বটে, তবে তা করা হয়েছিল সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংযোজিত করার জন্য। বিএনপি তাই করেছে এবং দেড় মাসের মাথায় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচন দিয়েছে। বিএনপি যদি চাইত, এ সময়ের মতো রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বিরোধীদলের উপর দমন-পীড়ন, গুম, খুন, হামলা-মামলা চালিয়ে আন্দোলন দমাতে, তাহলে কি সে পারত না? তখন রাজনীতির মধ্যে কিছুটা হলেও বিরোধীদলের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং তাদের আন্দোলন ও দাবির প্রতি সহনশীলতা ছিল। একইভাবে ২০০৭ সালে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করা নিয়ে যে কৌশল অবলম্বন করেছিল, তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও তার জোট যে আন্দোলন করেছে, সেই আন্দোলন যদি বিএনপি রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে দমিয়ে তার মতো করে একতরফা নির্বাচন করত, তাহলে কি ভিন্ন রকম রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না? বিএনপি তা করেনি। ফলে ওয়ান ইলেভেনের মতো অগণতান্ত্রিক সরকার এসেছিল। সেই সরকারকে আওয়ামী লীগ তার ‘আন্দোলনের ফসল’ বলে দাবি করেছিল। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছে, ২০০৮ সালে সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেই তো দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতায় এসে সেই সরকারকে অগণতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে বাতিলও করে দিয়েছে। বাতিল করেছে, ভাল কথা, নিজের অধীনে করা নির্বাচনগুলো কেমন হয়েছে, তা নতুন করে কি কিছু বলার আছে? এর সন্তোষজনক জবাব তারা দিতে পারেনি।

দুই.
বাংলাদেশের ইতিহাসে সরকারবিরোধী আন্দোলন করে বিরোধীদলের পরাজয়ের ইতিহাস নেই। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন এবং ’৯৬ সালে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগসহ ও অন্যান্য বিরোধীদলের সরকারবিরোধী আন্দোলনকে সফল বলা যায়। এছাড়া ২০০৬- ২০০৭ সালে বিরোধীদল যে আন্দোলন করেছে, তাতে তৃতীয় শক্তির হস্তক্ষেপের কারণে থমকে গেলেও তা সরকারবিরোধী আন্দোলনের সূত্র ধরেই এসেছে। একেও বিরোধীদলের সাফল্য হিসেবে ধরা যায়। স্বাধীনতার আগে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন শুধু সফল হয়নি, পরবর্তীতে দেশের স্বাধীনতাও এনে দিয়েছিল। সুদূর অতীতের দিকে তাকালে দেখা যায়, বৃটিশরা দুইশ’ বছর ভারত উপমহাদেশ শাসন করলেও তার বিরুদ্ধে আন্দোলন থেমে থাকেনি। দীর্ঘ সময় ধরে বৃটিশবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। ১৭৫৭ সালে উপমহাদেশে বৃটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১০০ বছর ধরে সশস্ত্র লড়াইয়ের পর ১৮৫৭ সালের ১০ মে সিপাহী বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়। বৃটিশদের বৈষম্যমূলক শাসন ও আচরণের কারণে কৃষক ও সিপাহীদের সমন্বয়ে এ বিদ্রোহ গড়ে উঠেছিল। এর আগে যেসব লড়াই হয়েছিল তার কোনোটি সফল হয়েছিল, কোনোটি ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু এ লড়াই কোনোদিন থেমে যায়নি। এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৪৭ সালে বৃটিশরা উপমহাদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, সরকারবিরোধী বা আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলন-লড়াই কখনো পরাজিত হয় না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪২ সালের আগস্টে হিটলার রাশিয়া দখলের জন্য তার যে ষষ্ঠ মিলিটারি ফোর্স পাঠিয়েছিল, তা স্ট্যালিনগ্রাদ শহরে সোভিয়েত রেড আর্মির কাছে বাধাপ্রাপ্ত হয়। হিটলারের উদ্দেশ্য ছিল রাজধানী মস্কো দখল করা। ভয়াবহ যুদ্ধে হিটলার বাহিনী পরাস্ত হয়। ইতিহাসের শিক্ষা এই যে, ক্ষমতা এবং আগ্রাসন কখনো চিরস্থায়ী হয় না। জোর করে স্বৈরশাসন বা অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা দীর্ঘায়িত করা যায়, তবে তার ফল শুভ হয় না। হিটলার, মুসেলিনির মতো দোর্দ- প্রতাপশালী ও স্বৈরশাসকরা মেরেকেটে ক্ষমতা দীর্ঘয়িত করার চেষ্টা করলেও তাদের পরিণতি অত্যন্ত শোচনীয় হয়েছিল। ইতিহাসে তারা একনায়ক ও স্বৈরশাসক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। মানুষ তাদেরকে নেতিবাচক চরিত্র হিসেবেই দেখে। তাদের অসংখ্য ফলোয়ার্স থাকলেও তার লেশমাত্র এখন নেই। আমাদের দেশে যখন প্রতাপশালী স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় ছিলেন, তখন তার নেতাকর্মীর অভাব ছিল না। নির্বাচন দিলেই তার দল অবধারিতভাবে বিজয়ী হয়েছে। এখন তার গড়া দলকেই অন্যের করুণার পাত্র হয়ে থাকতে হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদলের লেজুড়বৃত্তি করা ছাড়া তার কিছু করার নেই। নিজে চলার মতো সক্ষমতা নেই। জনসম্পৃক্ততা বলে কিছু নেই। ক্ষমতাসীনদলের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর তাকে নির্ভর করতে হচ্ছে। নির্বাচনে তাকে আসন চেয়ে নিতে হয়। প্রকৃত বিরোধীদল নয়, ক্ষমতাসীনদলের পুতুল বিরোধীদলে পরিণত হওয়া নিয়ে তার নেতাদের আগ্রহের সীমা নেই।

তিন.
অনেকে বলে থাকেন বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে ভুল করেছে। প্রথম ভুল করেছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করে। দ্বিতীয় ভুল করেছে এ বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে। তাদের যুক্তি হচ্ছে, বিরোধীদলগুলো বিশেষ করে বিএনপি নির্বাচনে এলে সরকার চাপে পড়ত। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বাধ্য হতো। তারা ইনিয়ে-বিনিয়ে বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে অন্তত ৫০-৬০টি কিংবা তার বেশি আসন নিয়ে সংসদে বিরোধীদলের আসনে বসতে পারত। অর্থাৎ ক্ষমতাসীনদলের অধীনে নির্বাচন করলে সেই জিতবে ও সরকার গঠন করবে, অন্যদিকে বিরোধীদলের সরকার গঠন করার সম্ভাবনা নেই, তাই যে কয়টি আসন পায়, তা নিয়েই সংসদে আসা উচিত। তাদের এ ধরনের কথা থেকে এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না, ক্ষমতাসীনদলের অধীনে নির্বাচন মানে, সেই দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে ক্ষমতায় থাকবে এবং বাকি আসনগুলো বিরোধীদলগুলোর মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হবে। এবারের নির্বাচনেও তাই দেখা গেছে। ক্ষমতাসীন দল নিজের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিশ্চিত করে বিরোধীদলগুলোকে ছাড় দিয়ে বণ্টন বা ভাগাভাগি করে দিয়েছে। তারা এটা ভাবে না, প্রকৃত কোনো বিরোধীদল, যে কয়েকবার ক্ষমতায় ছিল, যার ব্যাপক জনসমর্থন ও নির্ধারিত একটা ভোট ব্যাংক এবং ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা সবসময়ই থাকে, তার পক্ষে কি এ ধরনের ভাগাভাগি বা সিলেক্ট করে দেয়া আসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সম্ভব? কখনোই সম্ভব নয়। ক্ষমতাসীনদল যদি বিরোধীদলে থাকত, তাহলে তার পক্ষেও কি তা মেনে নেয়া সম্ভব ছিল? তার নেতাকর্মীরা কি তা কল্পনা করতে পারে? যদি তা না হয়, তাহলে বিএনপি তা মানবে কেন? এটা সত্য, বিএনপি আন্দোলন করে কোনো নির্বাচনই ঠেকাতে পারেনি। বস্তুত, আন্দোলন করে নির্বাচন ঠেকানোর ইতিহাস বাংলাদেশে নেই। তৃতীয় শক্তির হস্তক্ষেপ ছাড়া যেভাবেই হোক এবং তা গ্রহণযোগ্য না হলেও, ক্ষমতাসীনদল নির্বাচন করেছে। তাই বলে বিরোধীদল পরাজিত হয়েছে, তা বলা যায় না। তারা দীর্ঘ সময় আন্দোলন চালিয়ে গেছে এবং এক সময় সরকারের পতন হয়েছে। যেমনটি দেখা গেছে এরশাদের শাসনামলে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধীদল সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছে, আপাত দৃষ্টিতে অসফল মনে হলেও, তা যে সফল হবে না, নিশ্চিত করে বলা যায় না। এক্ষেত্রে বিএনপি ও বিরোধীদলগুলোর সরকারবিরোধী আন্দোলনের কৌশলে গলদ রয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপি যে আন্দোলন করে আসছে, তা ক্ষমতাসীনদের সূক্ষ্ম কৌশলের কাছে হেরে যাচ্ছে। এই যেমন এবারের নির্বাচন ঠেকানোর কথা বলেও ক্ষমতাসীনদলের কৌশল ও দাপটের কারণে ঠেকাতে পারেনি। অনেকের মতে, এবারের আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিএনপি ও বিরোধীদলগুলোর যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল ছিল। এসব দেশ চাপ দিয়ে হলেও সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবে বলে ধরে নিয়েছিল। তারা এটা ভাবেনি, এসব দেশ যেমন সরকারের উপর বিরূপ ছিল, তেমনি সরকারের পক্ষে সমর্থন দেয়ারও দেশ ছিল, যারা বরাবরই সরকারকে নানা কায়দায় টিকিয়ে রেখেছে। সরকারের সাথে তারা দীর্ঘসময় ধরে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরাসরি যুক্ত। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদেশগুলো সরকার বা বিরোধীদলগুলোর নির্বাচনী কৌশলের ক্ষেত্রে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল না, অভিজ্ঞতাও ছিল না। ফলে সরকার সমর্থক দেশগুলোর সাথে কৌশলের কাছে তারা পরাস্ত হয়েছে। এই কৌশলের প্রভাব বিরোধীদলের আন্দোলনের ওপর পড়েছে।

চার.
রাজনীতি কৌশলের খেলা। কৌশল দিয়েই তা মোকাবেলা করতে হয়। কৌশলের কাছে একবার মার খেলে তা কাটিয়ে ওঠা অনেক কঠিন। অনেকে বলে থাকেন, বিএনপির আন্দোলনের কৌশল ও পরিকল্পনায় যথেষ্ট ভুল রয়েছে। আন্দোলন সফল করতে না পারা থেকে এ ধারণা পোষণ করা অমূলক নয়। বিরূপ পরিস্থিতিতে কী কৌশল নিতে হবে এবং তা কাজে লাগাতে হবে, তা বিএনপি নিতে পারেনি বা পারছে না। শুধু মাঠের আন্দোলনে সীমাবদ্ধ থাকলেই সফল হওয়া যায় না। যেমন, ২০০৭ সালে বিএনপির অধীনে ২২ জানুয়ারির নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ নমিনেশন জমা দিয়েছিল। ১১ জানুয়ারি ওয়ান-ইলেভেন সরকার আগমনের আগের দিন ১০ জানুয়ারি নমিনেশন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। এগুলো ছিল আওয়ামী লীগের কৌশল। বিএনপির আন্দোলন দেখলে বোঝা যায়, সে একরৈখিক মাঠের আন্দোলনে বেশি জোর দিচ্ছে। এর বাইরে, ভেতরের সূক্ষ্ম কৌশল বলে কিছু নেই। থাকলেও তা কাজ করছে না। চরম বিতর্কিত ও বিনাভোটের নির্বাচন করে এবং বিরোধীদলের উপর স্টিমরোলার চালিয়ে দিয়ে তো এ সরকার মেয়াদ কাটিয়ে দিয়েছে। পরের নির্বাচনও রাতে করে কাটিয়ে দিয়েছে। বিএনপি ও অন্যান্য দলগুলো কি তা ঠেকাতে পেরেছে। বিএনপি ও বিরোধীদলগুলোকে এ বিষয় বিশ্লেষণ ও অনুধাবন করে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা বা আন্দোলনের কৌশল অবলম্বন করা উচিত। তাদের মনে রাখতে হবে, দীর্ঘসময় লাগলেও বিরোধীদলের ন্যায়সঙ্গত ও যৌক্তিক আন্দোলন বৃথা যায় না।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল

ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

মেজর জে. অব. তারেক সিদ্দিকসহ ১০ জনের নামে মামলা

মেজর জে. অব. তারেক সিদ্দিকসহ ১০ জনের নামে মামলা

বহিঃশক্তি শকুনের মত শিল্প কলকারখানায় থাবা দেয়ার চেষ্টা করছে : শিমুল বিশ্বাস

বহিঃশক্তি শকুনের মত শিল্প কলকারখানায় থাবা দেয়ার চেষ্টা করছে : শিমুল বিশ্বাস

বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বরদাশত করা হবে না: আইন উপদেষ্টা

বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বরদাশত করা হবে না: আইন উপদেষ্টা