রাজনৈতিক সহাবস্থান ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে
১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১২ এএম
বহুল আলোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার দ্বিতীয় দিনেই নব নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ এবং তৃতীয় দিনে ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন মন্ত্রীসভার অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। সংসদ ও সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে সংসদ সদস্যদের গেজেট প্রকাশ, শপথ গ্রহণ এবং নতুন মন্ত্রীসভা গঠনের বিষয়টি চোখে পড়ার মত। বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে টানপোড়েন থাকার পাশাপাশি খোদ সরকারি দলের স্বতন্ত্র ও ডামি প্রার্থীদের অনেকে ভোটে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। নির্বাচনোত্তর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ ও অংশগ্রহনমূলক না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে। গত বুধবার হোয়াইট হাউজে নিয়মিত ব্রিফিংকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের স্ট্রাটেজিক কমিউনিকেশনের সমন্বয়ক জন কিরবি বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাংখা অনুসারে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক না হলে ভিসানীতিসহ সম্ভাব্য সব প্রক্রিয়া প্রয়োগের সতর্কবার্তা আগেই জারি করা হয়েছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করার অভিযোগে র্যাব-পুলিশের কিছু শীর্ষ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা, বিভিন্ন পেশার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার বার্তাও পাওয়া গেছে। নির্বাচনের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছিল। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কাউন্সিলর ভোলকার তুর্ক বাংলাদেশ সরকারের প্রতি রাজনৈতিক গতিপথ পরিবর্তন করে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরীর আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশি-বিদেশি সব দাবি, আহ্বান ও চাপ উপেক্ষা করে একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চম বারের মত সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করতে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা রইল। একই সঙ্গে নতুন সরকারের সামনে বিদ্যমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক না হওয়া এবং পশ্চিমা বাণিজ্য ও উন্নয়ন অংশীদারদের অব্যাহত আহ্বান উপেক্ষা করার পরিনতি সম্পর্কে নিস্পৃহ থাকার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সংহত করার ক্ষেত্রে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক প্রতিবেশী দেশ ভারতের নেতিবাচক ভূমিকা এখন অনেকটাই দৃশ্যমান। প্রতিবেশী কোনো দেশের সাথেই ভারত আস্থাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেনি। ভারত, চীন এবং রাশিয়ার বাংলাদেশের সাথে বিশাল অংকের বাণিজ্যিক সর্ম্পক থাকলেও আভ্যন্তরীণ-আঞ্চলিক সংকটের ক্ষেত্রে তাদের কোনো ইতিবাচক ভূমিকা দেখা যায়না। রোহিঙ্গা সংকট এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রশ্নে ভারত-চীন ও রাশিয়াকে প্রায় অভিন্ন ভূমিকায় দেখা গেছে।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নিউজ ম্যাগাজিন দ্য ডিপ্লোম্যাট চলতি সংখ্যায় বাংলাদেশের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে। দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় প্রতিবেদনটি বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক গত কয়েক বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম, সরকারের ধর-পাকড়, হামলা-মামলা এবং ৭ জানুয়ারির একপাক্ষিক নির্বাচনের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট ও তৎপরতার বিশদ বিবরণ উঠে এসেছে। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত, বর্ষিয়ান কূটনীতিক ও রাইট টু ফ্রিডমের প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম বি মাইলাম এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ায় বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। নির্বাচন বর্জনকারী রাজনৈতিক দলগুলোও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা জারি রেখেছে। সরকার অনেকটা বেপরোয়া মনোভাব পোষণ করলেও বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে ভিসা ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ধরণের ব্যবস্থার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা অগ্রাহ্য করা যাবে না। এমনিতেই দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। মূল্যস্ফীতি ও মন্দাভাব কাটিয়ে ওঠার আপাত কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এহেন বাস্তবতায় পশ্চিমা বাণিজ্য অংশীদার ও আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পক্ষ তথা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দাবিকে অগ্রাহ্য করে দেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরনো অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রীকে বাদ দিয়ে নতুন মন্ত্রী সভায় চমক দেখিয়েছেন। তার সাহসিকতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশ এক নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাতে পারে। সে জন্য রাজনৈতিক সমঝোতা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণ এবং মানবাধিকার ও সুশাসনের মতো ইস্যুগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনুসরণ করতে হবে। সমস্যা সমাধানে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সহাবস্থান ও সমঝোতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বলা বাহুল্য, এজন্য সর্বাগ্রে সার্বিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬
সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন
ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান
জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু
আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক
যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার
গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান
সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’
বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল
১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল