ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

হুতিদের উপর ইঙ্গ-মার্কিন হামলা উদ্বেগজনক

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম

ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করার অভিপ্রায়ে ইসরাইল গাজায় যে বর্বর হামলা ও গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, তার প্রতিক্রিয়া পুরো মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা অনেক আগেই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। তাদের এ আশঙ্কা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো বরাবরই এ যুদ্ধে ইসরাইলকে ইন্ধন দিয়ে আসছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরাসরি যুদ্ধে জড়ালো। গত বৃহস্পতিবার ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। হুতি যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে দেশ দুটিকে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। হুতিদের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আল-ইজি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে এই নির্লজ্জ আগ্রাসনের জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। হুতি কর্মকর্তা আব্দুল কাদের আল-মোর্তাদা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক্স-এ জানিয়েছেন, ইয়েমেনজুড়ে হামলা চালানো হয়েছে। রাজধানী সানা, হুদায়দাহ গভর্নরেট, সাদা ও ধামারে বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে। হুতিদের লোহিত সাগর বন্দরের শক্ত ঘাঁটি হুদায়দাতে হামলা করা হয়েছে। হামলার পরপরই ইরান-সমর্থিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গতকাল তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে আরও হামলার নির্দেশ দিতে তিনি সংকোচ বোধ করবেন না। উল্লেখ করা প্রয়োজন, গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধের দাবিতে লোহিত সাগরে ইসরাইল অভিমুখী ও ইসরায়েলি মালিকানার জাহাজে গত দুই মাস ধরে হুতিরা বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। এদিকে, এই হামলার বিষয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে লোহিত সাগরে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে গঠিত মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত ১০ দেশ। দেশগুলো হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিবৃতিতে হুতিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ‘ব্যাপক ঐকমত্যে’র কথা উল্লেখ বলা হয়েছে, ইয়েমেনে বহুপাক্ষিক এই হামলাগুলো একক এবং যৌথ আত্মরক্ষার অধিকার থেকে চালানো হয়েছে। নিখুঁত এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য এবং বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পানিপথে আন্তর্জাতিক নাবিকদের জীবন হুমকির জন্য হুতিরা যে ক্ষমতা ব্যবহার করে, তা ব্যাহত এবং অবনমিত করা। উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের একটি জাহাজ আটক করে। অন্যদিকে, নেদারল্যান্ডসের হেগে গত বৃহ¯পতিবার আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার গণহত্যা মামলার প্রথম দিনের শুনানি হয়েছে। এদিন আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবী আদিলা হাসিম বলেন, ফিলিস্তিনিদের জীবন ধ্বংস করা এবং তাদের দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দেয়াই ইসরাইলের টানা বোমাবর্ষণের লক্ষ্য। দক্ষিণ আফ্রিকা গত বছরের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছিল।

বিগত কয়েক মাস ধরে ইসরাইল গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়ে নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ যেভাবে হত্যা করে চলেছে, তা ইতিহাসে বিরল। ইতোমধ্যে দশ লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। সেখানে তীব্র খাদ্য ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্ভিক্ষাবস্থা চলছে। খাদ্য ও পানীয়র অভাবে এক অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইসরাইল যুদ্ধের কোনো নিয়মনীতি না মেনে হামলা চালিয়ে পুরো গাজাকে ধ্বংসস্তুপ ও মৃত্যুপুরিতে পরিণত করেছে। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও ইসরাইল কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে ক্রমাগত হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করে চলেছে। ইসরাইলকে বরাবরের মতো যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো সব ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইল শুধু গাজায় হামলা চালিয়ে ক্ষান্ত থাকছে না, সে লেবাননের হিজবুল্লাহর উপরও হামলা চালিয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট ইসরাইল উস্কানি দিয়ে গোটা অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের উপর হামলার প্রতিবাদে হুতিরা লোহিত সাগরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, এতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাবিশ্বের আঁতে যেন ঘা লেগেছে। অথচ ইসরাইল যে গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে, এ ব্যাপারে প্রতিবাদ দূরে থাক উল্টো অন্ধ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলের হয়ে হুতিদের উপর হামলা চালিয়েছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের সচেতন নাগরিক এমনকি মডারেট ইহুদিরাও গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। বলা বাহুল্য, যুক্তরাষ্ট্র ওয়ার অন টেরোরিজমের নামে বিভিন্ন মুসলমান দেশে হামলা ও যুদ্ধ চালিয়ে মুসলমানদের যেমন হত্যা করেছে, তেমনি সমৃদ্ধ ওই দেশগুলোকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে। এখন আবার দেখা যাচ্ছে, নতুন করে তার মিত্রদেশগুলোও তাতে জড়িয়ে পড়ছে। মুসলিম দেশ ও মুসলমানদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করেছে। কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন মধ্যপ্রাচ্য সফর করেও সমস্যার কোনো ইতিবাচক সমাধান বের করতে পারেননি। এটা এক ধরনের লোকদেখানো সফর ছাড়া কিছুই নয়। গাজায় গণহত্যার দায়ে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক আদালতে যে মামলা করেছে, তাতে আদালতের ভূমিকা কেমন হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে আদলতকে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে দেখা গেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়।

বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক ও প্রভাব-প্রতিপত্তির ক্ষেত্রে এখন একটি ক্ষয়িষ্ণু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। দেশটি যুদ্ধ লাগাতে পারলেও তা থামাতে পারে না। যুদ্ধ থামানোর ক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না। বরং দেখা গেছে, যেখানে সে উসকানি, সমর্থন ও হামলা চালিয়েছে, সেখান থেকে তাকে পরাস্ত হয়ে ফিরতে হয়েছে। বিগত কয়েক দশকে বিশ্বের কোথাও তার বিজয়ী হওয়ার নজির নেই। সর্বশেষ আফগানিস্তান থেকে তাকে রাতের আঁধারে পালিয়ে আসতে হয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, দেশটি আগুন লাগাতে পারে, আগুন নেভাতে পারে না। এখন হুতিদের উপর হামলা চালিয়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে দেয়ার যে আগুনে খেলা খেলছে, তার প্রভাব সুদূর প্রসারি। এর খেসারত তাকে দিতে হবে। পরিবর্তিত বিশ্বে এখন যে, যুক্তরাষ্ট্রের এককভাবে দাদাগিরি করার সামর্থ্য ও শক্তি নেই, তা ইতোমধ্যে পরিলক্ষিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে এ বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশ ও মুসলমানদের টার্গেট করে নতুন করে যুদ্ধ লাগানো ও হত্যা করার মিশন থেকে তাকে সরে আসতে হবে। গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা যেমন বন্ধ করতে হবে, তেমনি একটি বড় রকমের যুদ্ধের পথ থেকে সরে আসতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল