অর্থনীতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে
১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম
নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের কিছু অগ্রগতি রয়েছে। ২০২৩ সালেও বড় কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষে হয়েছে। মেট্রোরেল চালু হয়েছে, চালু হয়েছে এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রাম চালু হয়েছে বঙ্গবন্ধু ট্যানেল এবং ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি ট্রেন। তবে শিল্প খাতে কোনো অগ্রগতির দেখা নেই। বিশেষ করে ইসপাত, সিমেন্ট, রড, কারখানায় কোনো সুখবর নেই।
সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাড়ছে না। দেশে টিআইএন-ধারী করদাতা আছে ৯৩ লাখের মতো। অথচ, ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ২৩ লাখ ৫০ হাজার ব্যক্তি ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছে। যার মাধ্যমে আদায় হয়েছে ৪৩০৫ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের রাজস্ব আশানুরূপ না বাড়ায় সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ে ভীষণ টান পড়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে খরচ হয়েছে মাত্র ৪৬৮৫৭ কোটি টাকা, যা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
গত বছরের শুরুতে নিত্যপণ্যের দাম যেমন ছিল তা দফায় দফায় বৃদ্ধি পেয়ে শেষেও তা ঊর্ধ্বমুখীই থেকে গেছে। শাক, আলু, পেঁয়াজ, টমেটো, পেঁপে, কপি, কাঁচামরিচ, করলা, লাউ, বেগুনসহ নিত্যপণ্যের দাম এতো বেড়েছে যে, তাতে ভোক্তা সাধারণ অসহনীয় কষ্টে দিনাতিপাত করছে। গত ঋণের বছর, বড় কষ্টের বছর। অন্তত নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুয়ের জন্য পুরো বছরটি ভালো যায়নি। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড গড়েছে। গত আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রথম বারের মতো দুই অঙ্কের ঘর স্পর্শ করে, যা গত একদশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরের তিনমাস মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে অক্টোবরে ছিল ১২.৫৬ শতাংশ, যা ছিল গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাজার নিয়ন্ত্রণের জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা দফায় দফায় তদারকি করলেও খুব বেশি সুফল আসেনি।
বছর জুড়ে আলোচনায় ছিল ব্যাংকখাত। খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময় হার নিয়ে বছর জুড়ে আলোচনা ছিল। ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ হিসাবও বলছে, জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়ে গেছে। এপ্রিল-জুন/২০২৩ সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। জানুয়ারি-জুন/২০২৩ ছয় মাসে বেড়েছে ৩৫ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি, সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। খেলাপি গ্রাহকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বিশেষজ্ঞগণ ঋণ খেলাপি ট্রাইবুনাল গঠনের কথা বলেছেন।
বছর জুড়ে আলোচনায় ছিল ডলারের দর। বর্তমানে রেমিটেন্সে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা থাকলেও ব্যাংকগুলো ডলার কিনছে ১২০-১২২ টাকায়। ডলারের রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার এর নিচে চলছে অনেকদিন ধরে। ডলারের দাম ২০২৩ সালে টাকার বিপরীতে অনেক বেড়েছিল। টাকার অবমূল্যায়ন ঘটেছে ২৫-৩০ শতাংশ । এ প্রেক্ষাপটে আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে হয়েছে ৪.৭০ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে আমরা ২ কিস্তি ঋণের ডলার পেয়েছি।
ডলার সংকটের কারণে একদিকে যেমন রিজার্ভ কমতে শুরু করে, পাশাপাশি কড়াকড়ির কারণে কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়ে রপ্তানি খাতে। আমাদের যে পরিমাণ রপ্তানি হয় সে অনুযায়ী ডলার দেশে না এসে পাচার হয়ে যায়। সে বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, রাজস্ব আদায়ে, যে নিম্নহার, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো খাতে বিনিয়োগ করতে না পারা, বৈদেশিক খাতের আয় বিনিয়োগের ভঙ্গুর অবস্থা, রিজার্ভের খারাপ অবস্থাসহ সব সূচকই নেতিবাচক হয়ে পড়ছে।
বৈশি^ক মন্দায় রপ্তানি শিল্পের কাঁচামাল আমদানি জুলাই-আগস্ট (২০২৩) কমেছে ২৮ শতাংশ ও এলসি খোলা কমেছে ১৭ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়েছিল ৩৪.৩৮ শতাংশ। গত অর্থ বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ৬.৬৭ শতাংশ। ১ বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। গত অর্থ বছরের জুলাই-আগস্টের তুলনায় চলতি অর্ধবছরের এ সময়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। রেমিটেন্সের দিকে তাকালে দেখা যায়, এ বছর জুনে রেমিট্যান্স এসেছে ২২০ কোটি ডলার, জুলাইয়ে তা কমে ১৬৭ কোটি ডালার, আগস্টে তা আরও কমে ১৬০ কোটি ডলার এসেছে। ৩ মাসের হিসাবে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৭৭ কোটি ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছিল ১৫.১২ শতাংশ। গত অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে এসেছিল ১২.২৭ শতাংশ। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের একই সময়ে বাড়ার পরিবর্তে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৩.৫৬ শতাংশ। বৈদেশিক অনুদানের গতিও নিম্নমুখী ছিল।
সর্বোপরি বলা যায়, ২০২৩ সাল ছিল অর্থনৈতিকভাবে ভীষণ অনিশ্চয়তার বছর, অস্থিতিশীলতা ছিল সর্বত্র। অর্থনীতির মূল কাঠামো থেকে বিচ্যুতি দেখা গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতিও বেড়ে চলেছে। নতুন বছরে সরকার নতুন করে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বদলের জন্য সঠিক নীতি না নিলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য মনিটরিং ব্যবস্থা জোরধার করতে হবে। সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন, শ্রম মন্ত্রণালয়, বেপজা, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ বেশকিছু বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন ।
লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬
সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন
ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান
জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু
আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক
যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার
গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান
সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’
বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল
১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল