ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

কথা কম, কাজ বেশি

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম

গত রোববার ছিল নতুন সরকারের মন্ত্রীদের প্রথম কর্মদিবস। সব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ওইদিন সচিবালয়ে অফিস করেছেন বলে খবরে প্রকাশ। তারা তাদের স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মত বিনিময় করেছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, নির্বাচন নিয়ে বিদেশি চাপ ছিল। এখনো আছে। এছাড়া অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে বিবিধ চ্যালেঞ্জ। তারা তাদের দায়িত্ব পালনের শুরুর দিনেই দলীয় নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তাবায়নে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি অগ্রাধিকারের বিষয়ে অভিমত দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা সমাধান করতে হবে। তবে সব কিছু রাতারাতি করা সম্ভব নয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে বলেছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা সময় দরকার। এটা অর্থমন্ত্রণালয় একা পারবে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হবে। অর্থপাচার দেশের জন্য একটা গুরুতর সমস্যা। অর্থমন্ত্রী তা রোধে কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন। টাকার মূল্যমান কমে যাওয়া বিষয়ে কাজ করা হবে বলেও উল্লেখ করেছেন। সবাই মিলে একযোগে দক্ষতা ও জবাবদিহির সঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন তিনি। পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম দুর্নীতির অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে বলেছেন, এটা হুট করে ঠিক করা যাবে না। তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি এনে পাইপ লাইনে আটকে থাকা ঋণের অর্থ ছাড়ের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রার প্রবাহ বাড়ানোর ওপর অগ্রাধিকার দিয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির বিষয়ে বলেছেন, বাস্তবায়ন দ্রুত করতে হবে। এও বলেছেন, বিলম্ব করলে প্রকল্পের ব্যয় ও এস্ট্যাবলিশমেন্টের খরচ বেড়ে যায়। জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ক্যাডার বৈষম্য দূর করার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। বলেছেন, এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অর্গানোগ্রাম যুগোপযোগী করার কথাও বলেছেন তিনি। প্রকল্পের শেষে পরিবহন পুলে গাড়ি জমা না দেয়ার বিষয়ে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চরণ করে বলেছেন, যথাসময়ে গাড়ি জমা না দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, চলমান প্রকল্পের গুণগতমান বজায় রেখে দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। সকল দফতরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপরও তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্তলাল সেন বলেছেন, সারাদেশে স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে দুর্নীতি রোধে জিরোটালারেন্স প্রদর্শন করা হবে। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী অগ্রগতি টেকসই করতে দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করার ওপর জোর দিয়েছেন। স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।

যেসব মন্ত্রীর বক্তব্য এখানে উল্লেখ করা হয়েছে এবং যাদের হয়নি তাদের সবার বক্তব্যই ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বক্তব্য, অঙ্গীকার প্রতিশ্রুতি যা তারা দিয়েছেন, তা ইথারে মিলিয়ে যায়নি। তা রেকর্ড, এমন কি ভিডিও রেকর্ডও হয়েছে। তাই এসব ভুলে গেলে তাদের চলবে না; কথা রাখতে হবে। তারাও জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নয়, মনে রাখতে হবে। ‘বাগাড়ম্বর’ বলে বাংলায় একটি শব্দ আছে, যার অর্থ বড় বড় কথা। তাদের কথা যেন বাগাডম্বরে পরিণত না হয়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। নতুন সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অনেকেই বলেছেন, সরকারের প্রধান তিনটি চ্যালেঞ্জ হলো : রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক। বলা বাহুল্য ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি, বরং সমস্যা আরো বেড়েছে। বিরোধীদলগুলো তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে আগামীতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে দেশ পরিচালনা জন্য প্রত্যেক সরকারের জন্যই শান্ত ও স্থিতিশীল পরিবেশ দরকার। সরকারকেই সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের বিষয়টি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলেন নির্বাচন নিয়ে বিদেশি চাপ ছিল, এখনো আছে, তখন কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের বিষয়টি উপলদ্ধি করা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যেও এটা স্পষ্ট। পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচন নিয়ে পরাশক্তিগুলো দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে, যা দেশের জন্য মোটেই সুখকর নয়। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’Ñ এই নীতি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ, এটাই আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা। দেশের অর্থনীতির অবস্থা গত ১৫ বছরের মধ্যে শোচনীয়। উৎপাদন, আমদানি, রফতানি, রেমিটেন্স, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি কোনো ক্ষেত্রেই সুখবর নেই। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, ডলার সংকট, টাকার মূল্যমান হ্রাস, ব্যাংকিং খাতের ভঙ্গুর দশা প্রভৃতি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। এই সমূহ সংকট থেকে কীভাবে উত্তোরণ ঘটতে পারে, সেটাই এখন বিবেচ্য বিষয়। অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ-আত্মসাৎ অনেক আগেই সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। মন্ত্রীদের বক্তব্যেও এটা উঠে এসেছে। তাদের সততা, দক্ষতা, যোগ্যতা ও বুদ্ধিমত্তার ওপর বর্ণিত তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সাফল্য নির্ভর করে।

অর্থনৈতিক সংকট যুদ্ধ ও বিশ্ব পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে চাপা দেয়া যাবে না। এর জন্য আমাদের কৃতকর্মই প্রধানত দায়ী। আমরা অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থপাচার ইত্যাদি রোধ করতে পারিনি। আমরা বিভিন্ন মেগা প্রকল্প হাতে নিয়ে কাড়ি কাড়ি অর্থ ব্যয় করেছি। এসব নিয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করেছি। অথচ, এসবের অধিকাংশের সুফল জনগণ পর্যায়ে পৌঁছেনি। জনগণ এখন উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে অসহায়-দিশাহারা। তাদের ‘অর্থনীতি’ বলতে গেলে নেই হয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে দেশ ও জনগণকে উদ্ধার করতে হবে, নিরচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে হবে। অনিয়ম, দুর্নীতি, অপচয় রহিত করতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সরকারকেই তা করতে হবে। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে জনমনের প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। তার এ নির্দেশের মধ্যে যে বার্তা রয়েছে, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যেহেতু মন্ত্রীদের নিয়েই সরকার, সুতরাং তাদেরই এ ক্ষেত্রে মূল ও অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। শুধু কথা বললে চলবে না, কাজ করতে হবে। ‘কথা কম কাজ বেশি’- এই নীতিতে অটল থাকতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ অফিসার নিহত অপর এক ঘটনায় নিহত ২

ভাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ অফিসার নিহত অপর এক ঘটনায় নিহত ২

আখাউড়ায় রেলওয়ের জায়গা থাকা ৪০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

আখাউড়ায় রেলওয়ের জায়গা থাকা ৪০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে