চাঁদাবাজি দখলবাজি মাদক ব্যবসা রুখতে হবে
১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
তৃতীয়বারের মত বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। এসব একপাক্ষিক নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীদের রাজনীতিক কর্মকা-ের চেয়ে প্রশাসনের পক্ষপাতই মূখ্য ভূমিকা রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বেশকিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে গত ১৫ বছরে অবকাঠামো খাতে দেশে দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এতে কারো কোনো সন্দেহ বা দ্বিমত নেই। উন্নয়ন ও ডিজিটালাইজেশনের প্রচারণা চালিয়ে দেশের মানুষের মনোজগতকে প্রলুব্ধ ও বিভ্রান্ত করতে এক সময় কেউ কেউ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে কম্প্রোমাইজ করার কথাও বলতে চেয়েছেন। দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে সম্মিলিতভাবে সরকারের ব্যর্থতা যখন ক্রমেই প্রগাঢ় হয়ে উঠেছে, তখন তারা বেশি উন্নয়ন কম গণতন্ত্রের ছবক দিতে চেষ্টা করেছেন। এভাবে শুধু গণতন্ত্র নয়, মানবাধিকারের প্রশ্নেও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিস্ক্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলন থেকে পরপর বাদ পড়া, মানবাধিকার প্রশ্নে দেশের এলিট ফোর্স র্যাব কর্মকর্তাদের উপর স্যাংশন এবং তারই ধারাবাহিকতায় ভিসানীতি আরোপের মত মার্কিন সিদ্ধান্তগুলোর সবটা কাক্সিক্ষত মাত্রায় কাজ না করলেও স্যাংশান পরবর্তী সময়ে র্যাবের হাতে বিচার বহির্ভুত হত্যাকা-ের অভিযোগ অনেকটা কমে যাওয়ার বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না। দেশের মানুষের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার বিরুদ্ধে কোনো ধরণের নিষেধাজ্ঞা দেশের মানুষের কাছে প্রত্যাশিত কিছু হতে পারে না। তবে মানুষ তার নিরাপত্তা ও অধিকারের প্রশ্নে যাদের উপর নির্ভর করে, তারা যদি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে বিশেষ কোনো দল বা গোষ্ঠির পক্ষে বিরোধী মত দমনে বেআইনী-অনৈতিক তৎপরতায় লিপ্ত থাকে এবং দেশের আইন-আদালত ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ভূমিকা যদি অকার্যকর হয়ে পড়ে, তাহলে এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থা বা পরাশক্তির ভূমিকাকে মানুষ স্বাগত জানাতে কুণ্ঠিত হয়না। দেড় দশকে তৃতীয়বারের মত জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা পূরণ না হওয়া এবং রাজনৈতিক সহাবস্থানের পরিবেশ না থাকায় বর্তমান সময়টি দেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে অস্বস্তিকর। ক্র্যাকডাউন, গণগ্রেফতার ও দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে বিরোধীদলগুলোকে নির্বাচনের বাইরে রাখার মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল অনেকটা আগেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। শুধু ভোটার উপস্থিতিকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিল সরকার। ভোটে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সে চ্যালেঞ্জেও ব্যর্থ হয়েছে। একতরফা নির্বাচনের পর সম্ভাব্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক সংকট, এমনকি দেশে একটি দুর্ভিক্ষের মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কথা সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আগেই বলা হয়েছে। দেশের মানুষের প্রত্যাশার কথা ক্ষমতাসীনদের অজানা নয়। রাষ্ট্রের মালিক জনগণের আকাক্সক্ষাকে অগ্রাহ্য করে এত ঝুঁকি নিয়ে একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার শেষ পরিনতি নিয়ে কোনো শান্তিপ্রিয় মানুষ নিরুদ্বেগ থাকতে পারে না।
যদিও নির্বাচনী ইশতেহার প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি। তথাপি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার সরকারের পক্ষ থেকে দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি কাক্সিক্ষত পরিবর্তনের আভাস বা প্রতিশ্রুতি হিসেবে গণ্য হতে পারে। নির্বাচনের পর নতুন সরকারের শপথ ও ক্ষমতাগ্রহণের প্রথম সপ্তাহে দেশের সামগ্রিক বাস্তবতা আমাদেরকে ’মর্নিং শোজ’ দ্য ডে’ এই ইংরেজী প্রবাদের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। দ্বাদশ নির্বাচনের আগে সরকারী দল গত ১৫ বছরের অবকাঠামো উন্নয়নের ফিরিস্তি নিয়ে অনেক কথা বললেও আদতে নির্বাচনে এসব উন্নয়ন তেমন প্রভাব সৃষ্টি করেনি। জনগণ যথার্থভাবে মনে করে, জনগণের রাজস্ব আয় থেকে রাষ্ট্রের অবকাঠামো উন্নয়ন রাষ্ট্রের একটি স্বাভাবিক ও সাধারণ কর্ম প্রক্রিয়া। জনগণের মূল চাহিদা হচ্ছে, রাষ্ট্রের উপর তাদের মালিকানার ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা। জনগণের মূল আকাক্সক্ষা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সমুন্নোত করা। অর্থনৈতিক বৈষম্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর করা এবং সুশাসন, জননিরাপত্তা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই রাষ্ট্র ও সরকারের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে জনগণ মনে করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের এ পাল্স ও প্রত্যাশা বুঝতে অক্ষম নন। এ কারণেই এবারের প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনেও জনপ্রত্যাশার এ দাবিগুলো পূরণের প্রতিশ্রুতি সন্নিবেশিত করেছিলেন। যদিও আওয়ামী লীগের ২৪ দফা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে যে ১১টি অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছিল, তার প্রথমটি হচ্ছে, দ্রব্যমূল্য সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এবং ১১তম অগ্রাধিকার হচ্ছে, সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো। এতে বোঝা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর অগ্রাধিকারের মধ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুরক্ষা ও চর্চা নিশ্চিত করার বিষয়টি সর্বনি¤েœ অবস্থান করছে। অথচ দেশের সাধারণ মানুষ ও সব বিরোধী রাজনৈতিক দল যথার্থভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়নকেই রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মুক্তি ও সুশাসন নিশ্চিত করার মূল সোপান বলে মনে করে। একটি ভাল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারের তুল্যমূল্য থাকলেও একতরফা নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ইশতেহার সাধারণ মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব পাওয়ার কথা নয়। যে নির্বাচনী ইশতেহার সামনে রেখে আওয়ামী লীগ দ্বাদশ নির্বাচনের বৈতরণী পার হলো, সেসব প্রতিশ্রুতি কতটা পুরণ হচ্ছে, তার মূল্যায়ণের সময় যদিও এখন নয়, তথাপি দ্রব্যমূল্য সকল মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা সুর্দঢ় করা, আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা এবং সুবিচার নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হলেও নির্বাচনোত্তর সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতায় তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
দশম জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের আগে ২০১২-১৩ সালে বাংলাদেশে গরুর গোশতের মূল্য ছিল ৩০০ টাকা কেজি। ভারতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেখানে গোরক্ষকদের তৎপরতা সহিংসতায় রূপ নেয়। তারা ভারতে গরুর গোশত খাওয়া বন্ধের উদ্যোগের পাশাপাশি বাংলাদেশেও তা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ হিসেবে বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ করে দেয়। এ অজুহাতে দেশের গোশত ব্যবসায়ীরা কয়েক মাস পরপর গোশতের দাম বাড়াতে বাড়াতে ২০২৩ সাল নাগাদ প্রতি কেজি গোশতের মূল্য ৮০০ টাকা করেছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রতি কেজি গোশতের মূল্য ২০০ টাকার নিচে, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ অন্যান্য দেশে মূল্য আরো কম। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও পাকিস্তানে গরুর গোশতের দাম ৪০০ টাকার নিচে। অথচ বাংলাদেশে গরুর গোশতের মূল্য বছরের পর বছর ধরে সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরেই থাকছে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক সংকটকালে সাধারণ মানুষ গরুর গোশত কেনা অনেকটা কমিয়ে দেয়। বাজারের যে গোশতের দোকানটি প্রতিদিন ৫টি গরু জবাই করতো এখন সে ২টিও বিক্রি করতে পারে না। গত বছরের শেষদিকে হঠাৎ করেই ঢাকার শাহজাহানপুরের এক গোশত ব্যবসায়ী গোশতের দাম আড়াইশ’ টাকা কমিয়ে ৫৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা শুরু করলে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে শোরগোল শুরু হয়। বাধ্য হয়ে শহরের সব দোকানদার গরুর গোশতের দাম কমিয়ে সাড়ে ৬০০টাকা নির্ধারণে বাধ্য হয়। গরুর গোশতের দোকানে আবার সাধারণ নি¤œ আয়ের মানুষের ভীড় বাড়তে থাকে। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সব ঠিকমতই চলছিল। ৭ জানুয়ারী নির্বাচনের ২ দিন পর ঢাকা শহরে গরুর গোশতের দাম কেজিতে একলাফে ৫০ টাকা বেড়ে যায়। একজন গোশত ব্যবসায়ীর সাহসী পদক্ষেপে যখন গোশতের দাম ৬০০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছিল, তখন ভোক্তা অধিকারের কর্তাব্যক্তিদের মুনাফাবাজ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের স্বার্থ রক্ষায় বিশেষ তৎপরতা শুরু করতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের দুইদিন পর গরুর গোশতের দাম ৫০ টাকা বেড়ে গেলেও সরকারের কোনো এজেন্সি বা ভোক্তা অধিকারের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। তাহলে, ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহার ও প্রতিশ্রুতি কি শুধুই কথার কথা? সামনে রমজান মাস। নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রধানমন্ত্রী নতুন মন্ত্রীসভার সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাজারে কতটা প্রভাব রাখতে পারে তা দেখার অপেক্ষায় দেশের মানুষ। গত সোমবার একটি পত্রিকার প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, গত দই সপ্তাহে কুষ্টিয়ার খাজানগরে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। নির্বাচনের পরও পণ্যমূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
আমাদের রাজনৈতিক বিবর্তন ও স্বাধীনতার ইতিহাস সাক্ষী, এ দেশের মানুষ অবকাঠামো উন্নয়ন কিংবা জিডিপি প্রবৃদ্ধির চেয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার, সুশাসন ও সামাজিক-অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের মানদ-কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্ব ও আন্তজার্তিক সম্প্রদায়ও তাদের বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব, কূটনৈতিক সম্পর্ক ও ভিসানীতির মত বিষয়গুলোর মানদ- আরোপের ক্ষেত্রে এসব বিষয়কেই প্রাধান্য দিচ্ছে। রাষ্ট্রের মালিক জনগণের রাজস্বে পরিচালিত রাষ্টীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আইনগত নিরপেক্ষতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তাদের জনগণের সেবকের ভূমিকায় দেখতে চায়। শপথ অনুসারে সরকারি কর্মকর্তা কিংবা আদালতের বিচারকদের কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠি বা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের প্রতি অন্ধ আনুকূল্য ও পক্ষপাতিত্ব কিংবা বেষম্য-বিরাগ হয়ে ভূমিকা পালনের সুযোগ নেই। গত ১৫ বছরে সেসব প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয় দেশকে এক চরম অনিরাপদ ও বসবাসের অযোগ্য জনপদে পরিনত করেছে। দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে শুরু করে সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কিছু সংখ্যক অলিগার্ক রাজনৈতিক দুর্বৃত্তের খপ্পরে পড়ে গেছে। এ থেকে উত্তরণ ছাড়া জাতির মুক্তির কোনো পথ নেই। ইতিহাসের পাঠ ভুলে গেলে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। দেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতা যে অনিশ্চয়তার দোলাচল দেখা দিয়েছে, একটি রাজনৈতিক সমঝোতা, সব সংকীর্ণ বিভক্তি ও ভেদরেখা মুছে দিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য, সংহতি, জনগণের ক্ষমতায়ণ ও সুশাসনের নিশ্চয়তাই উত্তরণের একমাত্র পথ। নির্বাচনপূর্ব ২৮ অক্টোবরে বিএনপি’র রাজনৈতিক সমাবেশে বিচ্ছিন্ন নাশকতা ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে সহ¯্রাধিক মামলায় লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে আসামী করে প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ১৫ বছরে লক্ষাধিক মামলায় ৪০ লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। একটি পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিটি যখন ১০-২০টি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার কিংবা হয়রানির শিকার হয়, তখন সেই পরিবারটির কি অবস্থা হয় তা সহজেই অনুমেয়। অর্থাৎ রাজনৈতিক মামলার কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের কয়েক কোটি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এ সমস্যা এতটা প্রগাঢ় আকার ধারণ করেছে যে, অভিযুক্ত একজনকে গ্রেফতার করতে না পেরে তার সন্তান কিংবা ভাইকে গ্রেফতার করার অনেক নজির স্থাপিত হওয়ায় রাজনৈতিক মামলায় পুরো পরিবারের সকলকেই সন্ত্রস্ত থাকতে হচ্ছে। এভাবেই গণতান্ত্রিক রাজনীতির অনুপস্থিতির কারণে দেশের কোটি কোটি মানুষ স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকা- থেকে ছিটকে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। এ ধরণের বাস্তবতা সামনে রেখে কোনো দেশ অর্থনৈতিকভাবে সামনে এগিয়ে যেতে পারেনা।
বিষাক্ত ও দুবৃর্ত্তায়িত রাজনৈতিক পরিবেশ এখন ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরেও একটি অন্তর্ঘাতমূলক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বছরের পর বছর ধরে আইনের শাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকায় এখন তারা শুধু সমাজের জন্যই নয়, নিজ দলের জন্যও ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে পরিনত হয়েছে। বিরোধীদলগুলোর নির্বাচন বর্জনের কারণে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখাতে বিরোধীদল থেকে লোক ভাগিয়ে এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্য থেকে স্বতন্ত্র ও ডামি প্রার্থী বাছাই করে ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন করা হয়েছে, তা নিয়ে যখন দেশে-বিদেশে তুমুল বিতন্ডা শুরু হয়েছে, তখন দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারী দলের বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থী-কর্মীসমর্থকরা রক্তাক্ত সংঘাতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। নোয়াখালিতে নৌকার সমর্থকদের হাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টকে গুলি করে হত্যার খবর পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। নির্বাচনের ২ দিন পর ৯ জানুয়ারি ঢাকার দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ থানার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আফতাবউদ্দিন রাব্বী’র মাদক ব্যবসাও চাঁদাবাজির সদস্য সাইফুল ইসলাম রাসেলকে রাতভর নির্যাতন করে নৃশংসভাবে হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ঘটনার ৫ দিনেও অভিযুক্ত রাব্বীসহ আসামিরা গ্রেফতার হয়নি। হত্যাকারী রাব্বীর সাথে একজন পুলিশ কর্মকর্তার অন্তরঙ্গ আড্ডার ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয় চাঁদাবাজ, মাদক কারবারি ও ভূমিদস্যুতার সাথে পুলিশের এক শ্রেণীর কর্মকর্তার যোগসাজশ সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আওয়ামী লীগের দলীয় পদধারি এক শ্রেণীর চিহ্নিত চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যু চক্র বেপরোয়া হয়ে সমাজকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলতে শুরু করেছে। এদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে আইনের আওতায় আনার মধ্য দিয়ে সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে। এটাই এই মুহূর্তে দেশের সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ অফিসার নিহত অপর এক ঘটনায় নিহত ২
আখাউড়ায় রেলওয়ের জায়গা থাকা ৪০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬
সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন
ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান
জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু
আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক
যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার
গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান
সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’
বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল
১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে