গ্যাস সংকট মোকাবেলায় টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে
১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
সারাদেশে গ্যাসের সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। এলএনজি আমদানি করে চাহিদা মিটানোর উদ্যোগ নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপলাইন নির্মাণ করা হলেও এখন ডলার সংকটের কারণে এলএনজি আমদানি করাও সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় আমদানি করা গ্যাস দিয়ে শত শত কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতিপূরণ করাও সম্ভব নয়। এহেন বাস্তবতায় দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উন্নয়ন এবং নতুন নতুন গ্যাসফিল্ড অনুসন্ধান এবং নতুন আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র গ্যাস উত্তোলণ ও সরবরাহের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হলেও তা চাহিদা পূরণে অপ্রতুল। এমনিতেই দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও উৎপাদনব্যবস্থায় একধরনের স্থবিরতা ও মন্দা চলছে। গ্যাসের ক্রমবর্ধমান সংকট নাগরিক জীবন ও শিল্পোৎপাদনে বাড়তি দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষত অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতিতে নাকাল ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের জেলা শহরগুলোতে স্বল্প আয়ের মানুষ এখন গ্যাস সংকটে চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে। রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় আবাসিক লাইনে দীর্ঘদিন ধরেই মধ্যরাতে কয়েক ঘন্টার জন্য গ্যাস পাওয়া গেলেও দিনের বেশিরভাগ সময় চুলা জ্বলে না। শীতের সময় সাধারণত গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। গ্যাস সংকটের কারণে নগরবাসির রান্নাঘরের চুলা জ্বলে না। এমনিতেই আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন মূল্যস্ফীতির কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ খাদ্যসহ মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। তদুপরি, এখন গ্যাস সংকটের কারণে বাধ্য হয়েই অনেক মানুষকে সকালের নাস্তার জন্য রেস্টুরেন্টের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এখন স্কুল-কলেজ খুলে যাওয়ায় অভিভাবকরা সন্তানদের টিফিন থেকে শুরু করে খাবার রান্না করতে পারছে না। অফিসগামীদের না খেয়েই অফিস যেতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তাদের বাইরের খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। এতে তাদের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এক মানবিক পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গ্যাস সংকটের কারণে যমুনা সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদীর অধিকাংশ শিল্প কারখানার উৎপাদন কমে গেছে। বিদ্যুৎ ও শিল্পখাতে চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ করতে পারছে না গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলো। এ ধারা অব্যাহত থাকলে গ্যাস সংকটের কারণে আগামিতে কৃষি ও শিল্পোৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে। ডলার সংকটের কারণে যেখানে এলএনজি আমদানি করা যাচ্ছে না, সেখানে দেশীয় সার কারখানা বন্ধ রেখে আমদানি করে সারের চাহিদা পূরণ করা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। ইতোমধ্যে তীব্র শীতে কৃষি উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করেছে। সামগ্রিক বাস্তবতায় খাদ্য উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে তা চলমান মূল্যস্ফীতি আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহে ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ ও শিল্পখাতে সরাসরি প্রভাব সৃষ্টি করছে। সেই সাথে আবাসিক লাইনে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় কোটি কোটি স্বল্প আয়ের মানুষের প্রাত্যহিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অথচ গ্যাস না পেলেও তাদের গ্যাসের বিল নিয়মিত দিতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অগ্রাধিকারভিত্তিক সেক্টর হিসেবে গ্রহণ করেছিল সরকার। গত দেড় দশকে বিদ্যুৎ খাতের সক্ষমতা দ্বিগুণের বেশি বাড়লেও গ্যাস ও জ্বালানি সংকটের কারণে এ সক্ষমতা ব্যহত হচ্ছে। উপরন্তু রেন্টাল, কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাথে অস্বাভাবিক চুক্তির আওতায় ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। গ্যাস সংকটের বর্তমান অবস্থা হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। পর্যাপ্ত চাপ না থাকায় এক দশকের বেশি সময় ধরে শিল্প ও আবাসন খাতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকলেও অবৈধ লাইনে গ্যাস সংযোগ বৃদ্ধির সংখ্যা থেমে থাকেনি। বর্তমানে বৈধ গ্যাস লাইনের চেয়ে অবৈধ সংযোগের সংখ্যা কোনো অংশে কম নয়। গ্যাস সংকটের কারণে পোশাক খাতের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে লক্ষকোটি টাকা বিনিয়োগের উদ্যোগ নিলেও গ্যাসের চাহিদা পূরণে তেমন কোনো কার্যকর ও টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিস্পত্তির মধ্য দিয়ে ব্লু-ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলেও বঙ্গোপসাগরের ব্লকগুলোতে ত্রিমাত্রিক সার্ভে এবং তেল-গ্যাস উত্তোলণের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারায় দেশের জ্বালানি খাতের সংকট এখন চরম আকার ধারণ করেছে। চলমান সংকট সহসা কাটবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধি, নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়া, বিদ্যমান লাইনের সংস্কারের পাশাপাশি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে বৈধ লাইনে সরবরাহ বৃদ্ধির টেকসই পদক্ষেপ নিলে গ্রাহকরা কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে। গ্যাস ও জ্বালানি খাতের টেকসই উন্নয়ন, অপচয়-অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া সময়ের দাবি।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ অফিসার নিহত অপর এক ঘটনায় নিহত ২
আখাউড়ায় রেলওয়ের জায়গা থাকা ৪০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬
সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন
ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান
জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু
আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক
যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার
গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান
সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’
বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল
১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে