মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম
যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে সরকারের নানা উদ্যোগ দৃশ্যমান হলেও দুর্ঘটনা প্রতিরোধের মাধ্যমে মানুষের স্বচ্ছন্দ্য চলাচলে এসব উদ্যোগ তেমন কোনো কাজে আসছে না। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা মোটেও কমছে না। নিরাপদ সড়কের দাবিতে নাগরিক আন্দোলন এবং বিভিন্ন সময়ে দেয়া হাইকোর্টের নির্দেশাবলীও তেমন কার্যকর হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তা এর জন্য দায়ী। সড়ক-মহাসড়কে প্রাণহানি ও বিশৃঙ্খলা কমিয়ে আনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত এক দশকে বিভিন্ন সময়ে উচ্চ আদালত থেকে যে সব রুল ও নির্দেশনা জারি করা হয়েছে তার প্রায় সবই উপেক্ষিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি মো: আতাউল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ একটি রিট পিটিশনের শুনানি শেষে মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা বাজারসহ সব অবৈধ স্থাপনা এবং অননুমোদিত-অবৈধ যানবাহন অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের গতিশীলতা, যাত্রী ও পথচারিদের নিরাপত্তায় ঝুকি সৃষ্টিকারী অবৈধ বাস-ট্রাক স্ট্যান্ড, বিভিন্ন ধরণের বাজার ও স্থাপনা অপসারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণ দর্শাতে চার সপ্তাহের সময় দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, রোডস এ- হাইওয়েজ বিভাগের সচিবদেরকে ৩ মাসের মধ্যে কাজের অগ্রগতির রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা দিতে বলা হয়েছে। ইংরেজী দৈনিক নিউএজ পত্রিকায় এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশাবলী বাস্তবায়ন না হওয়ার ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে।
প্রথমমারের মত বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে ২০২৩ সালে সড়ক-মহাসড়কে পরিবহন দুর্ঘটনায় হতাহতের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। যদিও বিআরটিএ’র প্রদত্ত পরিসংখ্যান দুর্ঘটনার শিকার হওয়া মানুষের প্রকৃত সংখ্যাকে নির্দেশ করে না। বিআরটিএ’র হিসাবে গত বছর প্রতিদিন গড়ে ১৪জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। তাদের হিসাবে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৫,০২৪জন। রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে এ সংখ্যা ৬,৫২৪জন এবং যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে ৭,৯০২ জন। বিআরটিএ’র তথ্য অনুসারে সড়ক -মহাসড়কে দুর্ঘটনা কবলিত বিভিন্ন ধরণের যানবাহনের মধ্যে সর্বোচ্চ ২২,২৯ ভাগই হচ্ছে মটরবাইক। এর পরের অবস্থান ট্রাক/কাভার্ড ভ্যানের ১৭.৭২ ভাগ। তবে এসব পরিসংখ্যান সামগ্রিক চিত্র নয়। প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের তরফ থেকে ৫.০৮৪জনের মৃত্যুর হিসাব পাওয়া গেলেও গত ১৩ ডিসেম্বরে প্রকাশিত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে ২০২১ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১.৫৭৮জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। পুলিশ বা অন্যান্য বেসরকারি সংস্থার সংখ্যার চেয়ে এ সংখ্যা অন্তত কয়েকগুণ বেশি। সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধের দাবিতে বছরের পর বছর ধরে নাগরিক আন্দোলন ও সরকারের নানা উদ্যোগ ও প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও দুর্ঘটনায় হতাহত কমিয়ে আনতে না পারার নেপথ্য কারণগুলো খতিয়ে দেখা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। হাইকোর্টের এ নির্দেশনায় সে বার্তাই দেয়া হয়েছে।
প্রতিদিন সড়ক-মহাসড়কে মানুষের মৃত্যু এবং আহত-পঙ্গুত্ব বরণের পরিনতি খুবই উদ্বেগজনক ব্যাপার। যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে প্রতি বছর সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করলেও সড়কে বিশৃঙ্খলা, দুর্ঘটনার কারণে এ খাতে অর্জনের চেয়ে ব্যর্থতা ও বিশৃঙ্খলাকে বড় করে দেখছেন অনেকে। সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের দুর্নীতি ও জবাবদিহিতামুক্ত বেপরোয়া মনোভাবের কারণেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকায় নির্মিত ঢাকার ফ্লাইওভারগুলো লক্ষ্য অর্জনে কতটা ভূমিকা রাখছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উপরন্তু সংশ্লিষ্টদের নজরদারিবিহিন ও অরক্ষিত ফ্লাইওভারগুলো নানাভাবে যাত্রী ও পথচারিদের জন্য রাহাজানি, প্রাণহানি ও ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহাসড়কে অবৈধ-অননুমোদিত ত্রি-হুইলার, নসিমন-করিমনের মত পরিবহন যেমন বন্ধ করা হয়নি। তেমনি ফ্লাইওভারে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় একদিকে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের হাতে সর্বস্ব ও প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। ফ্লাইওভার ও নির্মীয়মান প্রকল্প এলাকায় উপর থেকে ইট, রড, পাথর ও কংক্রিটের ব্লক পড়ে প্রায়শ হতাহত হচ্ছে মানুষ। পরিচ্ছন্নতার অভাবে জমে থাকা ধুলোবালির কারণে পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা শত শত কাঁচাবাজার, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারি ও আদালতের নির্দেশনাসমূহ যেমন উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। একইভাবে রাজধানীর ফুটপাথ দখল, যত্রতত্র বাস-ট্রাক স্ট্যান্ড, স্টপেজ ও হকার বসিয়ে চাঁদাবাজির কোটি কোটি টাকার ভাগবাটোয়ারার রাজনৈতিক-প্রশাসনিক যোগসাজশ বন্ধ না হওয়ায় যানজট ও দুর্ঘটনায় লাগাম টানা যাচ্ছে না। বিআরটিএ কর্মকর্তারা ঘুষের বিনিময়ে অদক্ষ চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও লক্কড়ঝক্কড় গাড়ীর ফিটনেস সার্টিফিকেট ও রুট পারমিট দিয়ে যানজট ও দুর্ঘটনায় ভূমিকা রাখছে। সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে হলে এসব ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে নজর দিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ অফিসার নিহত অপর এক ঘটনায় নিহত ২
আখাউড়ায় রেলওয়ের জায়গা থাকা ৪০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬
সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন
ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান
জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু
আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক
যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার
গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান
সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’
বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল
১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে