ই-কমার্সে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১০ এএম
তথ্য প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি ও ক্রমবিস্তারের সাথে সাথে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের প্রান্তিক সমাজের সর্বত্র এর প্রভাব ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠেছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ডিজিটালাইজেশন এখন রাজনৈতিক এজেন্ডায় পরিণত হয়েছে। গত দেড় দশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের রূপান্তরের ধারাবাহিকতায় যে নতুন সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে, তাতে সমাজে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে চলেছে। তথ্যপরিষেবা ও সরকারি-বেসরকারি সেবাখাতে অনলাইন সেবা থেকে শুরু করে অনলাইন মার্কেটিং বা ই-কমার্সের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও নির্ভরতা ক্রমেই বাড়ছে। এর পাশাপাশি ডিজিটাল তথ্য অনলানপরিষেবার ক্ষেত্রে ঝুঁকি, প্রতারণা ও আস্থাহীনতার সংকটও বেড়ে চলেছে। বিগত দশকের শুরু থেকেই সারাবিশ্বে অনলাইন মার্কেটিং দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক সেক্টরে পরিণত হলেও করোনা মহামারির সময়কার লকডাউনের কারণে সারাবিশ্বে ঘরবন্দি মানুষ নিত্যপণ্যসহ জরুরি পরিষেবার জন্য বহুলাংশে অনলাইন প্লাটফর্মকে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিল। এর ফলে এ অনলাইন পরিষেবা দ্রুত বিকশিত ও জনপ্রিয়তা লাভ করে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বহুমুখী সম্প্রসারণে আমাদের দেশে ২০২৫ সাল নাগাদ যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, করোনাকালীন বাস্তবতায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ২০২২ সালের মধ্যেই তা অর্জিত হয়ে যায়। তবে দেশের অর্থনীতিতে অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি ও প্রতারণা কোনো নতুন বিষয় নয়। অনেকটা হঠাৎ করেই দ্রুত বর্ধনশীল ই-কমার্সের ক্ষেত্রেও তা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে।
গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বর্তমানে ই-কমার্স মার্কেটের আকার ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ খাতের প্রবৃদ্ধি ও সম্ভাবনা অক্ষুণœ থাকলে ২০২৬ সাল নাগাদ ই-কমার্স মার্কেট ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজারে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তবে দ্রুত বর্ধনশীল, সম্ভাবনাময় এ খাতের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা ও দুর্নীতির অভিযোগ পুরো খাতের অগ্রগতির ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আস্থাহীনতার সংকট তৈরি করেছে। এ খাতের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে প্রথমেই এর দুর্বলতা, প্রতারণা ও আস্থার সংকট দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। রাতারাতি লাখো মানুষের আস্থা ও নির্ভরতার জায়গা দখল করে নেয়ার পর দেশের কয়েকটি বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা ও প্রতারণার অভিযোগ উঠে। করোনাত্তোর বাস্তবতায় দেশে দ্রুত বর্ধনশীল ই-কমার্স প্লাটফর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য ক্রয়ে গ্রাহকদের আগ্রহ যখন বাড়তে শুরু করে, তখন ই-ভ্যালি, আলেশা মার্টের মতো অগ্রগণ্য অনলাইন মার্কেটের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির অভিযোগ পুরো সেক্টরে গ্রাহকের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। তবে আশার কথা এই যে, গ্রাহকদের প্রতারণা মামলায় কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রভাবশালী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করার ঘটনায় অন্যদের জন্য এটা একটা শিক্ষা ও সতর্ক বার্তা দেয়া সম্ভব হয়েছে। তবে হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচার করে দেয়ার পর অভিযুক্তদের আটক ও বিচারের সম্মুখীন করা হলেও গ্রাহকের টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা না থাকায় বিষয়টি গ্রাহকদের আরো উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সরকার ডিজিটালাইজেশন ও ই-কমার্সের সম্ভাবনা নিয়ে রাজনৈতিক প্রচারণায় ব্যস্ত থাকলেও বিকাশমান এ খাতের নিরাপত্তায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার কারণেই তারা বিদেশে অর্থ পাচার করতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করেন প্রতারিত গ্রাহকদের অনেকে।
বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক মন্দার এই সময়ে গত কয়েক বছরে ই-মার্স সেক্টরে ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। নাগরিক জীবনে কর্মজীবী মানুষের ব্যস্ততা এবং অস্বাভাবিক যানজটসহ নানাবিধ বিড়ম্বনা এড়িয়ে অনলাইন প্লাটফর্মে ঘরে বসেই পণ্য অর্ডার করে হাতে পাওয়ার নির্ভরতা এই সেক্টরের সম্ভাবনাকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষ করে রমজান মাস এবং ঈদের বাজারে অনলাইন মার্কেটের কেনাবেচা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এ কথা ঠিক যে, নানাবিধ লোভনীয় অফারের র্ফাদে ফেলে অনলাইন মার্কেটের প্রতারকরা ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের লোভ ও অবাস্তব প্রত্যাশাও অনেকাংশে দায়ী। একজন প্রতারিত গ্রাহকের মামলায় ই-ভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতার ওয়ারেন্ট জারি হলে, তিনি জামিন লাভের জন্য আদালতে আবেদন করলে অর্থ ফেরত পাওয়ার শর্তে মামলার বাদী তা মেনে নিয়েছেন। একইভাবে আরেকটি শীর্ষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের প্রতারণার মামলায় চেয়ারম্যান মঞ্জুৃরুল আলম শিকদারের বিরুদ্ধে গত বছরের শুরুতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এসব কোম্পানির প্রতারণা, জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগগুলো তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনা জরুরি। তবে প্রতারিত গ্রাহকরা যেন তাদের অর্থ ফেরত পায়, সেদিকে লক্ষ রেখেই আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়ার মধ্য দিয়ে হাজার হাজার গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়। দ্রুত বর্ধনশীল বিপুল বিনিয়োগ ও লাখ লাখ কর্মসংস্থানে অসামান্য অবদান রাখার সম্ভাবনাময় এ খাতটিকে গ্রাহকের আস্থার সংকট থেকে রক্ষা করতে হলে এ খাতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ও আইনগত সুরক্ষার মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে সব পক্ষের সমন্বয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি, ই-ক্যাব এবং ভোক্তা অধিকারের সাথে জড়িতদের নিয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ অফিসার নিহত অপর এক ঘটনায় নিহত ২
আখাউড়ায় রেলওয়ের জায়গা থাকা ৪০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬
সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন
ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান
জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু
আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক
যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার
গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান
সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’
বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল
১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে