পরিবেশ দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৭ এএম
রাজধানীর পরিবেশ দূষণ নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরেই চলছে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি হলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। উচ্চ আদালত থেকে শুরু করে পরিবেশবিদরা পরিবেশের উন্নয়নে বিভিন্ন নির্দেশ ও পরামর্শ দিলেও তা প্রতিপালিত হচ্ছে না। সিটি করপোরেশনসহ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থাকলেও যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে পরিবেশের কোনো ধরনের উন্নতি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। বরং দিন দিন দূষণ বেড়ে চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর বায়ুদূষণ বিশ্বের মধ্যে শীর্ষ তালিকায় থাকে। পরিবেশ দূষণ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত আবারও উস্মা প্রকাশ করেছেন। অবৈধ ইট ভাটা সংক্রান্ত এক রিটের শুনানিতে বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন, ঢাকার নদীগুলো দূষিত, বাতাস দূষিত এবং ঢাকা খুব বাজে অবস্থায় আছে। ঢাকার পরিবেশ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। আদালত বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্পায়নের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। তবে সেটা হতে হবে পরিবেশকে রক্ষা করে। দেশে অটিজম কী পরিমাণ বাড়ছে, সরকার কি তার হিসাব রাখে? এক্ষেত্রে পরিবেশ দূষণের প্রভাব রয়েছে। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে আদেশ বাস্তবায়ন না করা প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেন, আমরা সাজা দিতে পারি। কিন্তু সাজা দিয়েই কি সব হয়? আমরা বিব্রতবোধ করি যে, কতবার এসব নিয়ে ডিরেকশন দেবো?
জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন সারাবিশ্বের জন্য বড় হুমকি হয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে। এই পরিবর্তনের সাথে পরিবেশ দূষণ ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। রাজধানীসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরসহ নদ-নদী এবং পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। রাজধানীতে সবধরনের দূষণই বিদ্যমান। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়সহ নোংরা পরিবেশ বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে। বিশ্বের সবচেয়ে অবাসযোগ্য ও অসভ্য নগরী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। বায়ুদূষণ এতটাই মারাত্মক আকার ধারণ করেছে যে, তাতে নগরবাসী নানা ধরনের মারাত্মক রোগবালাইতে আক্রান্ত হচ্ছে। ধুলোবালি, কার্বনডাই অক্সাইড, মনোঅক্সাইড, শিষাসহ অন্যান্য বিষাক্ত পার্টিক্যালস বাতাসকে ভারি করে তুলেছে। কারো পক্ষে বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়ার জো নেই। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, শিশু ও বৃদ্ধরা। তারা শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগে সহজেই আক্রান্ত হচ্ছে। সুস্থ মানুষও দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ময়লা-আবর্জনার শহর হিসেবে ঢাকা অনেক আগে থেকেই পরিচিত। যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলা ও জমে থাকা নিত্যকার ঘটনা। সিটি করপোরেশন যথাযথভাবে এসব আবর্জনা পরিস্কার করতে সক্ষম হচ্ছে না। গাড়ির কালো ধোঁয়া, কলকারখানার বর্জ্য, রাজধানীর আশপাশের ইটভাটার ধোঁয়া পুরো পরিবেশকে দূষিত করে রেখেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ ও স্থাপনা নির্মাণের সময় যে বিপুল ধুলোবালির উদ্ভব ঘটে তা বাতাসে মিশে দূষিত করছে। স্বাভাবিক সময়ে রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় ধুলার স্তর কুয়াশার মতো ঢেকে রাখতে দেখা যায়। উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে সড়কের দুই পাশের বৃক্ষরাজিও কাটা পড়ছে। এতে পরিবেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি রাজধানীর উষ্ণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ মানুষের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ পরিবেশ মানুষকে রোগবালাই থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। উন্নত বিশ্বে পরিবেশ সুস্থ রাখার উপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়। শুধু উন্নত বিশ্ব নয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে সবধরনের ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। সিঙ্গাপুর পরিবেশ দূষণে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এজন্য রয়েছে কঠোর আইন ও তার বাস্তবায়ন। নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া কেউ কোথাও সামান্যতম আবর্জনা ফেলতে পারে না। আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলেও রাজধানীর পরিবেশের উন্নয়ন ঘটাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছি। সড়কে ধুলোবালি ও নোংরা পরিবেশ তো রয়েছেই, এমনকি ফ্লাইওভারগুলোও নোংরা হয়ে থাকে। ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে ঠিকই, তবে এগুলোর যতœ নেয়া হচ্ছে না। এগুলোতে ধুলোবালি জমে থাকাসহ বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। এতে ফ্লাইওভারের পাশের বাড়িঘর যেমন ধুলোবালিতে দূষিত হচ্ছে, তেমনি এর ধুলো নিচে পড়ে পরিবেশ দূষণ করে চলেছে। উন্নত বিশ্বের কথা বাদ দিয়েও বলা যায়, মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ডের ফ্লাইওভারগুলো ঝকঝকে অবস্থায় থাকে। কোনো ধরনের দূষণ সেখানে নেই।
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় যে পরিবেশের দূষণ কমাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। এ মন্ত্রণালয়ের কাজ নগরবাসী খুব কমই প্রত্যক্ষ করেছে। বরং এর দুর্নীতি ও লুটপাটের খবরই বেশি জেনেছে। এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি। তিনি একজন পরিচ্ছন্ন, মেধাবী, সৎ ও কর্মঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে সুপরিচিত। দেশের মানুষ আশা করে, তিনি রাজধানীসহ সারাদেশের পরিবেশ উন্নয়নে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবেন। এমন উদ্যোগ নেবেন যা সকলের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে, যেমনটি স্মরণীয় হয়ে আছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মরহুম আনিসুল হকের কিছু উদ্যোগ। তিনি রাজধানীর যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যা আজও মানুষ তাকে স্মরণ করে। আমরা আশা করি, সাবের হোসেন চৌধুরীও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতে যুগান্তকারি পদক্ষেপ নেবেন। বলা বাহুল্য, পরিবেশ দূষণের ক্ষতি তাৎক্ষণিকভাবে উপলব্ধি করা যায় না। এর নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। নীরব ঘাতক হয়ে মানুষকে অসুস্থতার দিকে ঠেলে দেয়। এই নীরব ঘাতক প্রতিহত করতে সাবের হোসেন চৌধুরী কার্যকর উদ্যোগ নেবেন, এটাই প্রত্যাশা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে