শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে
২১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
শীতের তীব্রতা মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্মকে ব্যাহত করে। শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় বৃদ্ধ ও শিশুরা। পশু-পাখি, জীবজন্তুর কষ্ট অপরিসীম। অনেকেই আছে শীতে অতিরিক্ত কাবু হয়ে পড়ে। কিছুতেই বিছানা ছেড়ে উঠতে চায় না। আমাদের দেশে শহর-নগরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা প্রাকৃতিক কারণেই বেশি। গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষের জন্য তা বয়ে এনেছে বাড়তি কষ্ট ও দুর্ভোগ। বিশেষ করে চরাঞ্চলে। শীতের তীব্রতা বাড়ায় বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সেচনির্ভর বোরো আবাদের ভরা মৌসুমে কৃষকরা অনেক কষ্টে জমিতে কাজ করছে। গ্রামের হাটবাজার ও শহরে লোকসমাগম কমে গেছে। শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের ভিড় লক্ষ করা গেছে হাসপাতালে। শীতে উচ্চবিত্ত আর মধ্যেবিত্তদের তেমন কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু নিম্নবিত্ত এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য এই শীত নিয়ে এসেছে এক ভয়াবহ দুর্ভোগ। তারা প্রয়োজনীয় কাপড় না থাকার কারণে শীতে প্রচণ্ড রকমের কষ্ট করে। বিশেষ করে, গৃহহীন মানুষ, পথশিশুদের কষ্টের কোনো শেষ নেই এই শীতকালে।
আমাদের প্রত্যেকের উচিত, নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য চেষ্টা করা। তাহলে হয়তো এই শীতার্ত মানুষগুলোর কষ্ট কিছুটা কমে আসবে। আমাদের সমাজে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য শীতকাল হলো এক ধরনের অভিশাপ। সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো গ্রীষ্মকালে বা গরমের দিনে ফুটপাথ, রেলস্টেশন ও বস্তিতে থাকতে পারে। কিন্তু শীতকালে তাদের জন্য ফুটপাথ কিংবা রেলস্টেশনে থাকা খুবই কষ্টকর বা অসহনীয়। তাছাড়া শীতে তাদের মাঝেমধ্যে না খেয়েও থাকতে হয়। শৈত্যপ্রবাহের রুষ্টতা থেকে রক্ষা পাওয়ার ন্যূনতম ব্যবস্থাপনাও তাদের থাকে না। ফলে অসহায় ও হতদরিদ্রদের কষ্ট কেবল বেড়েই যায়। বৃদ্ধ, শিশু ও ফুটপাথের গরিব মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে মারাও যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। শৈত্যপ্রবাহ আর ঠান্ডা দেশের উত্তরাঞ্চলের নিম্নআয়ের মানুষ অত্যন্ত কষ্টে দিনাতিপাত করছে। সেই সঙ্গে ডায়রিয়া, জ্বর, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এক্ষেত্রে শীতার্তদের জন্য আমাদের অনেক কিছুই করণীয় আছে। তাই আসুন, অসহায় ও আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করি।
রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে সবুজ রঙের পোশাক পরাবেন। খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। পানি পান করালে জান্নাতের শবরত পান করাবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ : ১৬৮২)। হতদরিদ্র মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানবসেবা। এটা সওয়াবের কাজও বটে। বদর যুদ্ধের বন্দি হজরত আব্বাস (রা.)-কে রাসুল (সা.) পোশাকের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। রাসুল (সা.)-এর কাছে মুদার গোত্র থেকে গলায় চামড়ার আবা পরিহিত বস্ত্রহীন কিছু লোক আগমন করল। তাদের করুণ অবস্থা দেখে রাসুল (সা.)-এর চেহারা বিষণ্ন হয়ে গেল। তিনি নামাজ শেষে সাহাবায়ে কেরামদের (রা.) লক্ষ করে দান-সদকার জন্য উৎসাহমূলক বক্তব্য দিলেন। ফলে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এত অধিক পরিমাণ দান করলেন যে, খাদ্য ও পোশাকের দুটি স্তূপ হয়ে গেল। এ দৃশ্য দেখে রাসুল (সা.) অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। অভাবীকে বস্ত্র দানের গুরুত্ব প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) এরশাদ করলেন, ‘কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে কাপড় দান করলে যতক্ষণ ওই কাপড়ের টুকরো তার কাছে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দানকারী আল্লাহর হেফাজতে থাকবে।’ (জামে-তিরমিজি : ২৪৮৪)।
চলতি শীতে করোনা ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তা ছাড়া এ সময়ে সর্দি-কাশি, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত থাকে বেশিরভাগ মানুষ। তাই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি অসহায় মানুষের চিকিৎসাসেবা প্রদানে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা উচিত। প্রভাবশালী হাসপাতাল মালিকরা অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে ফ্রি চিকিৎসা সহায়তা দিতে পারেন। কারণ, মানুষের অসুস্থতার আপদ দূর করলে আল্লাহতায়ালা দুনিয়া-আখেরাতে তার বিপদাপদ দূর করে দেন। এ হাড়কাঁপানো শীতে যে বিপুল জনগোষ্ঠী বর্ণনাতীত দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দ্বীনি দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়াবি সমস্যাগুলোর একটি মোচন করবে, যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহতায়ালাও তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন।’ (মুসলিম : ২৬৯৯)।
অসহায় মানুষের দুর্দিনে সাহায্য, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মানসিকতা যাদের নেই, তাদের ইবাদত-বন্দেগি আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। সুতরাং নামাজ-রোজার সঙ্গে কল্যাণের তথা মানবিকতা ও নৈতিকতার গুণাবলি অর্জন করাও জরুরি। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে কোনো পুণ্য নেই। তবে পুণ্য আছে কেউ আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতারা, সব কিতাব এবং নবিদের প্রতি ঈমান আনলে। আর আল্লাহপ্রেম আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির, সাহায্য প্রার্থীদের এবং দাস মুক্তির জন্য অর্থ দান করলে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করলে ও জাকাত প্রদান করলে। সর্বোপরি প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করলে, অর্থ-সংকটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করলে। এরাই তারা, যারা সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাকি।’ (সূরা বাকারা : ১৭৭)। তাই আসুন, আমাদের যার যতটুকু সামর্থ্য আছে, তাই নিয়ে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই।
লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে