মা-বাবার প্রতি অবহেলা অমার্জনীয়
২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম
সম্মান, যশ, প্রতিপত্তি সব পেয়ে আমরা সুখী নই, সবাই অসুখী, অসুস্থ। আমাদের এ অসুস্থতা মনে। তাই সামাজিকভাবে আমরা যতটুকু এগোচ্ছি তার চেয়ে মনের দিক দিয়ে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছি। মন-মানসিকতার এহেন পশ্চাদগামিতায় বর্তমান সময়ে মানবিক মূল্যবোধের অভাব প্রকটতর হয়ে উঠছে। সমাজবিজ্ঞানীদের গবেষণা এটা প্রমাণ করছে যে, আধুনিক শিক্ষাদীক্ষা মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি বিকশিত করছে, কিন্তু সামাজিক অবক্ষয়রোধে যে মূল্যবোধের প্রয়োজন তার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে সর্বত্র। শিক্ষা মানুষকে প্রজ্ঞাবান করলে বিবেকবান করতে অনেকাংশে ব্যর্থ। ফলে কখনো কখনো আমরা এমন আচরণে অভ্যস্ত হয়ে উঠি, যা আমাদের সমস্ত জ্ঞান গরিমাকে সমাজের চোখে বেমানান করে তোলে।
আধুনিক শিক্ষিত সমাজের অনেকে মা-বাবার প্রয়োজনীয়তা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। জীবনের পড়ন্ত বেলায় আপন সন্তানের চরম অবহেলা-অনাদরে নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছে, এমন হতভাগ্য মা-বাবার সংখ্যা এ দেশে নেহাৎ কম নয়। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে সন্তানের কাছে বৃদ্ধ মা-বাবা বোঝাস্বরূপ, মন্তব্যটি শতকরা ১০০ ভাগ সত্য। যদিও আমরা চক্ষুলজ্জায় এ ধরনের অপ্রিয় সত্যকে প্রকাশ্যে স্বীকার করতে পারি না, তবু বলতে বাধা নেই যে, সন্তানের দ্বারা বৃদ্ধ বাবা-মা আচরণে লাঞ্ছিত হচ্ছে। আর শিক্ষিত সন্তানদের মধ্যে এ অসামাজিক প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। কারণ, মূল্যবোধহীন শিক্ষা এ সব স্বশিক্ষিতদের নৈতিকতাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। ফলে অবচেতন মনে তারা মা-বাবার কথা ভাবতে পারে না। অথচ, আত্মকেন্দ্রিক সন্তানের চরম অবহেলাকে নিত্যসঙ্গী করে বেঁচেও মা-বাবা একটি ক্ষণের জন্য সন্তানকে ভুলতে পারে না। কারণ, তাদের পক্ষে নাড়ির সম্পর্ক, রক্তের সম্পর্ককে কোনো অবস্থায় বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয় না।
মা-বাবার অনাবিল স্নেহ-মমতায় আমরা বড় হলাম, একটি সময়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা পেলাম স্বমহিমায়, কিন্তু তারপর স্বার্থপরের মতো ভুলে গেলাম তাদের কথা, যারা আমাদের পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখাল, নিজে না খেয়ে আমাদের খাওয়াল, আমাদের মানুষ করার জন্য যারা নিজেদের আরাম-আয়েশকে পায়ে ঠেলে দিলো, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের শুভ চিন্তায় উদগ্রীব থাকল। এত কিছুর পর রিক্ত হাতে চলে যাওয়া মা-বাবাকে ন্যূনতম একটু প্রীতি-ভালবাসা তাদের শেষ জীবনে দিতে পারি না আমরা। এ থেকে বড় স্বার্থপরতা আর কী হতে পারে? পূর্বে উল্লেখ করেছি, তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত সন্তানের দ্বারা মা-বাবারা বেশি অবহেলিত। ব্যক্তিগতভাবে আমি দেখেছি, বহু সন্তান রয়েছে, যারা জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়ে নিজের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে বিদেশ বিভুইয়ে বছরের পর বছর মা-বাবা ছেড়ে দিব্যি রয়েছে। একবারও মা-বাবাকে দেখার বা খবর নেয়ার প্রয়োজন বোধ করে না, তাগিদ অনুভব করে না। অথচ, একদিনের জন্য প্রিয়তমা স্ত্রী চোখের আড়াল হলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অসংখ্য অশীতিপর মা-বাবা রয়েছে, যারা নিজ সন্তানকে মানুষ করে শেষ জীবনে সন্তানের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে অনেক শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত এবং অশিক্ষিত মানুষ আছে, যারা মা-বাবাকে দেখবালের দায়িত্ব নিতে চায় না। এমনকি স্ত্রীর প্ররোচণায় মা-বাবাকে নির্যাতন করে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়, এমন মানবরূপী দানবদেরও দেখেছি। আশ্চর্যের বিষয়, হাজারো নিপীড়ন-নির্যাতন সত্ত্বেও মা-বাবা বলে, আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে। বিভিন্ন স্থানে দেখেছি, ছেলে নিজের আলাদা সংসারে চিত্তসুখে দিন কাটাচ্ছে, অথচ মা অন্যের বাড়িতে ঝি-এর কাজ করে এক মুঠো ভাতের সন্ধান করছে। এ ধরনের অসংখ্য উদাহরণ চোখের সামনে রয়েছে। এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করলে দস্তুর মতো একটি বই লেখা যাবে। কিন্তু এসব চূড়ান্ত নিলর্জ্জতার কাহিনী লিখে ঘুণে ধরা সমাজকে বদলানো সম্ভব নয়। কারণ, আমরা যারা শিক্ষার দম্ভে বড়াই করে মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাচ্ছি অথবা বিদেশ থেকে বছরে কিছু টাকা পাঠিয়ে মা-বাবার আকুল সান্নিধ্য থেকে দূরে থাকছি তাদের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। কারণ, অসভ্যরা আজ সমাজকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাই মূল্যবোধের কথা বলে অযথা কালি, কাগজ এবং নিউজপ্রিন্ট নষ্ট করে লাভ নেই। নৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন ধর্মীয় শিক্ষা। কিন্তু দুঃখের বিষয় সে শিক্ষা আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেয়া প্রায় হচ্ছেই না। আমাদের বুঝতে হবে, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়।
ব্যক্তিগত উপলব্ধি থেকে বলছি, আমাদের সমাজে এমন অনেক সন্তান রয়েছেন, যারা বিয়ের পূর্বে থাকে মা-বাবার একান্ত অনুগত। কিন্তু বিয়ের উত্তরকালে সবকিছু বেমালুম ভুলে যায়। এ কথা আমি বলছি না যে, মা-বাবা থেকে সন্তানকে সরিয়ে দেবার মূলে স্ত্রীর ভূমিকা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দায়ী আমাদের ছেলেরা। কেননা, আমি যদি আমার বিবেক এবং দায়বদ্ধতার দরজায় তালা লাগিয়ে দেই তা হলে অন্যের দোষ কোথায়?
যাক, সবকিছুর পর এ কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, চরম নির্যাতিত হয়েও সন্তানের বিরুদ্ধে মা-বাবারা মুখ খোলে না অথবা আইন সচেতন নয়। নাহলে আইন অনুসারে প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক সন্তান মা-বাবাকে প্রতিপালন করতে বাধ্য। সন্তান প্রতিপালনে অবাধ্য হলে বিভিন্ন ফৌজদারি কার্যবিধির ধারায় আইনী পথে খোরপোশ আদায় করতে পারে অক্ষম-অসহায় মা-বাবা।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে