অনলাইনে জুয়ার ফাঁদ রুখতে হবে
২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম
অনলাইনে জুয়া মারাত্মক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত সর্বত্র এই জুয়া ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণত খেলা, বিশেষ করে ক্রিকেট ও ফুটবলকে কেন্দ্র করে জুয়ার রমরমা কারবার গড়ে উঠেছে। অর্থ কিংবা পণ্যের বিনিময়ে প্রতিযোগিতা, লটারি, যে কোনো আর্থিক ঝুঁকিপূর্ণ খেলা ইত্যাদি এ জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, অনলাইনে শত শত জুয়ার সাইট রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটির নাম: ওয়ানএক্সবেট, বেটউইনার, বেট৩৬৫, প্যারিম্যাচ ইত্যাদি। এ ধরনের শতাধিক সাইট ইদানিং অধিকতর পরিচিতি লাভ করেছে। অনলাইনে জুয়ায় যারা আকৃষ্ট হচ্ছে, তাদের মধ্যে শিশু-কিশোর ও তরুণরাই প্রধান। এই অপরাধ ও অপকর্মে তাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জুয়ার সাইটগুলোতে জুয়ায় আকৃষ্ট করার জন্য আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দেশের কিছু বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং সামাজিক মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদিতে বিজ্ঞাপন প্রচারিত হতে দেখা যাচ্ছে। নন্দিত ক্রীড়াবিদ, ক্রিকেটার, বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বিজ্ঞাপনে অংশ দিতে দেখা যাচ্ছে। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, অভিনেত্রী জয়া আহসান, অপু বিশ্বাস প্রমুখের কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। ক্রীড়াজগৎ ও রূপালিজগতের মানুষেরা নানাভাবে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও তরুণদের আকৃষ্ট ও প্রভাবিত করে। এজন্য পণ্যাদির মতো জুয়ার বিজ্ঞাপনেও তাদের ব্যবহার করা হয়। তারা জেনে অথবা না জেনে বিজ্ঞাপনে অংশ নেয়। এ ব্যাপারে তাদের সতর্ক ও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এ ধরনের বিজ্ঞাপন যারা তৈরি করে, প্রচার করে তাদেরও সাবধান হওয়া দরকার। তারা যে একটা গুরুতর অপরাধে সহযোগীর ভূমিকা পালন করছেন, সেটা তাদের উপলব্ধি করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি আমলে নিতে হবে। যে কোনো মাধ্যমÑ তা টিভি চ্যানেলই হোক বা সামাজিক মাধ্যমই হোক জুয়ার বিজ্ঞাপন ডেডস্টপ করতে হবে। যারা এর সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত হবে বা থাকবে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
অনলাইন জুয়ায় অংশ নিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে অনেকে। জুয়ার অর্থ যোগাড় করতে গিয়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধে জড়িয়ে পড়া অস্বাভাবিক নয়। অর্থাভাব, পারিবারিক অশান্তি, মারামারি, হানাহানি এমন কি প্রাণ হানির ঘটনাও বিরল নয়। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের শিশু-কিশোর ও তরুণরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যারা জাতির আগামীর কাণ্ডারি হিসাবে পরিগণিত, তারা যদি মাদক কিংবা জুয়ায় ডুবে যায়, তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ও অন্ধকারময় হতে বাধ্য। উল্লেখ করা আবশ্যক, দেশময় মাদকের আগ্রাসনে সবচেয়ে বিপন্ন অবস্থায় পতিত হয়েছে শিশু-কিশোর ও তরুণরা। এদের মাদক ও জুয়া থেকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের দেশে যে কোনো ধরনের জুয়া আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও গোপনে-প্রকাশ্যে নানা ধরনের জুয়ার প্রচলন রয়েছে। এখন জুয়ার ক্ষেত্র ও মাধ্যম পরিবর্তিত হয়ে অনলাইনে ভর করেছে। এতে আড়াল বেড়েছে ও ঝুঁকি কমেছে। এ দেশেই কেবল নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনলাইন জুয়ার বিস্তার ঘটেছে। জুয়ার আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কও গড়ে উঠেছে। কিছুদিন আগে ভারতভিত্তিক একটি জুয়ার নেটওয়ার্কের বাংলাদেশি এজেন্ট আটক হয়েছে। জানা গেছে, জুয়ার অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়। এভাবে বিপুল অর্থ দেশ থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। দেশে ই-কমার্সের বিকাশ ঘটছে, এটা কারো অজানা নেই। ইতোপূর্বে ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছিল, বর্তমানে ই-কমার্স মার্কেটের আকার ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ২০২৬ সাল নাগাদ তা ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে। দ্রুত সম্প্রসারণমুখী এখাতের কতিপয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ও প্রতারণার কথাও সবারই জানা। ই-ভ্যালি, আলেশা মার্ট প্রভৃতি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অর্থ হাতিয়ে নেয়া, প্রতারণা করা ও বিদেশে অর্থপাচার করার অভিযোগ উঠেছে। কাউকে কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ই-কমার্স মার্কেটের বিস্তার ও বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিযোগ ও উদাহরণ নিশ্চিতভাবেই হুমকিস্বরূপ। অনলাইনে ব্যবসার নামে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ কিংবা অনলাইনে জুয়ার সাইট খুলে অর্থ লোপাট একই ধরনের অপরাধ। এ অপরাধ রোধ করতে যেমন ব্যবস্থা নেয়া দরকার, তেমনি অপরাধীদের উচিত শাস্তিও হওয়া দরকার।
জুয়া নিষিদ্ধ। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে জুয়াকে অন্যতম ঘৃণ্য ও শয়তানের কাজ বলে ঘোষণা করেছেন। সুতরাং জুয়ার পক্ষে বলার কিছু নেই। ই-কমার্সে গ্রাহক ঠকানোর কোনো এখতিয়ারও কারো নেই। এজন্য উপযুক্ত আইন ও তার যথাযথ প্রয়োগের বিকল্প হতে পারে না। ই-কমার্সের জন্য আইনী কাঠামো তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দ্রুত আইন হলে ই-কমার্স মার্কেট অনেকটাই নিরাপদ হবে। অনলাইনে জুয়া বন্ধের ব্যাপারে উপযুক্ত আইন নেই বলে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বলে থাকে। প্রশ্ন হলো, যে কোনো ধরনের জুয়া যেহেতু আইনে নিষিদ্ধ, কাজেই অনলাইন জুয়াও নিষিদ্ধ। সাধারণ জুয়ার আইনেই অনলাইন জুয়ার বিচার হতে পারে। অনলাইন জুয়ার হোতা ও জুয়াড়িদের গ্রেফতার ও বিচারে ‘আইন নেই’, এই অজুহাতে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী পুলিশ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারে যে ধরনের ‘দায়িত্ববোধ ও পারঙ্গমতা’র পরিচয় দিয়ে থাকে, অনলাইন জুয়ার সঙ্গে যুক্তদের পাকড়াও করতে সেই দায়িত্ববোধ ও পারঙ্গমতা কোথায় থাকে? এ ব্যাপারে আমাদের স্পষ্ট কথা: অনলাইনে জুয়া বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজন হলে আইন আরো কঠোর বা আলাদা আইন করতে হবে। উপসংহারে আমরা বলবো, জুয়া থেকে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা থেকে সবাইকে দূরে থাকতে হবে। জুয়া বা প্রতারণার ফাঁদে পড়ার একটা বড় কারণ লোভ। অস্বাভাবিক অর্থ লোভের ফলেই একজন ব্যক্তি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বা জুয়ার সাইটের কবলে পতিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত, প্রতারিত ও বঞ্চিত হয়। অতএব, যে কোনো ব্যক্তিকে লোভ সংবরণ করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে