অর্থনীনৈতিক ধস ঠেকাতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে
২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম
দেশের অর্থনীতিতে সুখবর নেই। সব খাতেই নেতিবাচক প্রবণতা। জ্বালানি ও ডলার সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, কলকারখানায় উৎপাদন ও আমদানি-রফতানি কমে যাওয়া, রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাস, বিনিয়োগে মন্দা, বেকারত্ব বৃদ্ধি, সাধারণ মানুষের আয় কমে যাওয়া, বৈরি আবহাওয়া ইত্যাদি অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। সরকার অর্থনীতি ঠিক আছে বললেও পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন খাতের দুরবস্থার যে চিত্র উঠে আসছে, তা কোনোভাবেই তার যথার্থতা নির্দেশ করছে না। দিন দিন অর্থনীতির প্রায় সবসূচক নিচে নেমে যাচ্ছে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করেও আশানুরূপ লাভ করতে পারছে না। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা ও কর্মরতদের খরচ কুলিয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান লোকবল নিয়োগের পরিবর্তে ছাঁটাই করছে। ব্যবসা সম্প্রসারিত করার পরিবর্তে সংকুচিত করতে হচ্ছে। দেশের প্রধান রফতানি খাত গার্মেন্ট সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদন কমে গেছে। অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কারখানা সময়মতো অর্ডার অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে পারছে না। এতে সেগুলো ক্ষতির মুখে পড়ছে। আবাসন খাতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ডলার সংকটের কারণে কাঁচামাল আমদানি হ্রাস পাওয়ায় রড, সিমেন্টের উৎপাদন যেমন কমেছে, তেমনি দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ফ্ল্যাট বিক্রি অনেকটা শূন্যের কোঠায় নেমেছে। ফ্ল্যাট তৈরি করে প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রি করতে পারছে না। তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ আটকে পড়ে আছে। অন্যান্য শিল্পকারখানায় উৎপাদন কমে অর্ধেকে নেমেছে। যেসব কারখানায় দিনে ৪০ থেকে ৫০ টন পণ্য উৎপাদন হতো, সেগুলোর উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি এক মহাসংকটের মধ্যে নিপতিত হয়েছে।
অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা কৃষি খাতেও দেখা দিয়েছে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ফসলের চলতি মৌসুম ক্ষতির মুখে পড়েছে। তীব্র শীতের কারণে এবং কোথাও কোথাও বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ফসলের জমিতে বিভিন্ন পোকার উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এতে ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়া এবং খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। দরিদ্র মানুষের দিন আন্তে পান্তা ফুরাচ্ছে। নি¤œ ও মধ্যবিত্তরা আয়ের সাথে ব্যয় সংকুলান করতে পারছে না। তাদের অনেক প্রয়োজনীয় পণ্য বাদ দিয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অনেক কলকারখানা বন্ধ ও উৎপাদন কমে যাওয়ায় অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে যাচ্ছে। অনেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং বেকার হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের হাতে টাকা না থাকায় তাদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। সন্তানের লালনপালন ও শিক্ষা খরচসহ সংসার চালানো তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কর্মহীন হয়ে অনেকে অকূল সাগরে পড়ে গেছে। অর্থনীতির এই মন্দাবস্থা কবে দূর হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। যেসব আলামত দেখা দিয়েছে, তা সহসা দূর হবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। মানুষের উপার্জনের বড় উৎস কর্মসংস্থান। এজন্য উৎপাদনশীল খাত গতিশীল থাকা আবশ্যক। দেখা যাচ্ছে, নতুন শিল্পকারখানা চালু হওয়া দূরে থাক, বিদ্যমান কারখানাগুলোই নানা সংকটে ধুঁকছে। যেসব নতুন কারখানা চালু হওয়ার কথা, সেগুলো ডলার ও জ্বালানি সংকটের কারণে স্থগিত রাখা হয়েছে। গতকাল একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরজুড়ে গ্যাস সংকট থাকবে। এতে পুরো শিল্পখাতে স্থবিরতা নেমে আসবে। উৎপাদন সক্ষমতা হারিয়ে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর বহুমাত্রিক নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিকে কাবু করে ফেলছে। বিনিয়োগে চরম মন্দাবস্থা চলছে। সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৩০ শতাংশ কমে যাওয়ায় উৎপাদন ও বিনিয়োগের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় শিল্পকারখানাগুলোতে শ্রমিক ও কর্মরতদের বেতন দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসার খরচ চালাতে না পারায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। কর্তৃপক্ষ খরচ কুলিয়ে উঠতে না পেরে কারখানা যেমন বন্ধ করে দিচ্ছে, তেমনি হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ছে।
অর্থনীতির চতুর্মুখী সংকট মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ যে খুব একটা কাজে আসছে, তা প্রতীয়মান হচ্ছে না। গ্যাস সংকট নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে দুয়েক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে বললেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। উল্টো তা বছরজুড়ে থাকবে বলে পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে। ডলার সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক দফায় দফায় নানা উদ্যোগ নিয়েও সুরাহা করতে পারছে না। এ সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা প্রতিকূলতার শিকার হচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব আমদানি-রফতানিতে পড়েছে। পুরো উৎপাদন ব্যবস্থায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এর জেরে পণ্যমূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব বৃদ্ধি, মানুষের আয় কমে যাওয়া, রেমিট্যান্স ঋণাত্মক হওয়া, অর্থপ্রবাহ সংকুচিতসহ সার্বিক অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর সাথে রয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শঙ্কা। বলা বাহুল্য, সরকারের একার পক্ষে অর্থনীতির সার্বিক এই ধস ঠেকানো সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বিত পরিকল্পনা, উদ্যোগ এবং জরুরি ভিত্তিতে তা বাস্তবায়ন করা। সরকারকে মানুষের দুর্দশার বিষয়টি সবার আগে বিবেচনায় নিতে হবে। কিভাবে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়, এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। শিল্পকরাখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যমান সমস্যা ও সংকট দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে