বিএসএফ’র সীমাহীন ঔদ্ধত্য
২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৮ এএম
তীব্র শীতে উত্তরের জনপদ যখন কাঁপছে, তখন শান্ত, নিরাপদ সীমান্তে বিএসএফ এর গুলিতে প্রাণ গেল বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি সদস্যের। সোমবার ভোর রাতে বেনাপোলের ধান্যখোলা সীমান্তে যশোর বিজিবির ৪৯ ব্যাটালিয়নের সদস্য রইস উদ্দিন নিয়মিত টহলের সময় ভারতীয় গরু পাচারকারীদের ধাওয়া করতে গিয়ে ঘন কুয়াশায় বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হন। বিএসএফ’র গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর ভারতের বনগাও হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনরা অনবরত ভারতের সাথে বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতির বন্দনাগীত গেয়ে চললেও সীমান্তে একদিনের জন্যও বিএসএফ’র ত্রাস বন্ধ হয়নি। প্রতিনিয়ত বিএসএফ’র গুলিতে নিরীহ-নিরস্ত্র বাংলাদেশী হতাহত হচ্ছে। সীমান্তে কাঁটাতারে ঝুলে থাকা কিশোরী ফেলানির লাশ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের একটি ব্যঞ্জনাময় প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফুলপুর উপজেলার উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে সাব পিলারের পাশ দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে বাবার সাথে দেশে ফেরার সময় বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হলে কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানির লাশের ছবিটি গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও ফেলানি হত্যার বিচার পায়নি তার পরিবার। এভাবে প্রতি বছর সীমান্তে শত শত মানুষকে হত্যা করছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এসব হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ বা প্রতিকার করতে বিজিবি কিংবা সরকারের সংশ্লিষ্টরা স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বের অনন্য উচ্চতার কথা বলে ভারতের সর্বোচ্চ স্বার্থ হাসিলের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত হত্যাকান্ড শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা এবং লিথ্যাল ওয়েপন ব্যবহার বন্ধে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রতিশ্রুতি এবং সমঝোতা হলেও কখনোই এর বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়নি।
ভারতের সাথে দীর্ঘ স্থল সীমান্ত, হাজার হাজার কোটি টাকার সীমান্ত বাণিজ্য এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব রয়েছে। বছরে হাজার কোটি ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশই ভারতের অনুকুলে। বিশেষত খাদ্য ও কৃষি পণ্যে ভারতীয় কৃষকের স্বার্থ এবং বাংলাদেশি ভোক্তাদের চাহিদার একটি সমান্তরাল বাজার সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে বিভিন্ন ধরণের মাদক দ্রব্য, অবৈধ পণ্যের চোরাচালান আমাদের সমাজ ও অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি। ভারতীয় পণ্যের অবাধ প্রবেশের কারণে আমাদের কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের যথেচ্ছ বাজার নিয়ন্ত্রণ, রফতানি বন্ধের ঘোষণা আমাদের নিত্যপণ্যের বাজারকে যখন তখন অস্থিতিশীল করে তোলে। এহেন বাস্তবতায় সীমান্ত চোরাচালান বন্ধে বিজিবি’র দায়িত্ব পালন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সীমান্ত পথে ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধের পর বাংলাদেশের কৃষক ও খামারিরা গরু-মহিষ ও পশুসম্পদ উন্নয়ন ও উৎপাদনে মাইলফলক অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, সব ধরণের কৃষিপণ্যে ভারতনির্ভরতা কাটিয়ে স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জন করা সম্ভব। সীমান্তপথে ভারতীয়দের চোরাচালান বন্ধ করা বাংলাদেশের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সীমান্তে চোরারালান বন্ধে বিএসএফ-বিজিবি’র মধ্যে সমঝোতা ও সহযোগিতার চুক্তি রয়েছে। এমনকি বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী এই সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফ’র মধ্যে সম্প্রীতির রাখী বন্ধন এবং মিষ্টি বিতরণের ছবিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বাস্তব ক্ষেত্রে বিএসএফ’র আচরণ যুদ্ধরত শত্রুবাহিনীর মত। বিজিবি সদস্য ভারতীয় গরু চোরাচালানিদের ধাওয়া করতে গিয়ে বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশিদের প্রতি বিএসএফ’র বেপরোয়া ঔদ্ধত্যেরই প্রতিফলন দেখা গেল।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন এক জটিল সমীকরণে প্রবেশ করেছে। ভারতীয় শাসকদল বিজেপির সাম্প্রদায়িক আধিপত্যবাদী নীতির কারণে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভারতকে আর বন্ধু রাষ্ট্র বলে ভাবতে পারেনা। মুসলমানদের প্রতি তাদের বৈষম্যমূলক নীতিকৌশল নানাভাবে বাংলাদেশকে সরাসরি আক্রান্ত করছে। অভিন্ন নদীর পানি বন্টনে ভারতের অনীহা এবং পানি আগ্রাসন থেকে শুরু করে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং অখন্ড ভারতের রূপরেখায় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের পটভ’মি সম্পর্কে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যথেষ্ট সচেতন ও প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার প্রতিফলন দেখা গেছে। কিন্তু দেশের সরকার এবং সীমান্তরক্ষি বাহিনী জনগণের আকাঙ্খা ও প্রত্যাশার সাথে তাল মিলাতে বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছে। জনগণের রাজনৈতিক আন্দোলন দমনে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে সরকারের দলীয় ক্যাডার বাহিনীর ভ’মিকায় জনগণের উপর গুলি চালিয়ে বীরত্ব দেখাতে দেখা গেলেও বিএসএফ’র আগ্রাসন মোকাবেলায় তাদের নিস্ক্রীয় ভ’মিকা দেখে দেশের মানুষ হতাশ ও সংক্ষুব্ধ। বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি ভারতীয় শাসক শ্রেণীর আগ্রাসন ও অবজ্ঞা এখন আর ধামাচাপা দেয়া যাচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া তারই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। বাংলাদেশের কৃষকদের স্বার্থ, শিল্প এবং ভোক্তার নিরাপত্তা ও ভারতীয় আগ্রাসন মোকাবেলার স্বার্থেই ভারতীয় পণ্য বর্জন করে আত্মনির্ভরতা অর্জন নিশ্চিত করতে হবে। দুই দেশের শাসকশ্রেণী নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থে জনস্বার্থকে অগ্রাহ্য করে কোনো টেকসই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে না। দেশের মানুষ এখন ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অনেক সচেতন ও প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। সীমান্তে চোরাচালান বন্ধ এবং সীমান্তবর্তী জনপদের মানুষ এবং নিজেদের আত্মরক্ষায় বিজিবি’র ব্যর্থতা অমার্জনীয়। বিএসএফ’র গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্য রইসউদ্দীনের আত্মার শান্তি কামনা করছি। এই হত্যাকান্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে