বাংলাদেশে কি ভারতের দাদাগিরির দিন ফুরিয়ে আসছে?
২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৩ এএম | আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৩ এএম
দক্ষিণ এশিয়ার মোড়ল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ভারত এখন যেন ক্রমেই প্রতিবেশীদের সবচেয়ে অপছন্দের দেশে পরিণত হচ্ছে। দেশগুলোতে ভারতবিদ্বেষী মনোভাব প্রবল হয়ে উঠেছে এবং প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছে। চীন ও পাকিস্তানের মতো বড় প্রতিবেশী দেশের সাথে আজন্মের শত্রুতার পাশাপাশি ছোট প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথেও ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপের মতো দেশে একসময় ভারত ‘দাদাগিরি’ ফলালেও এখন এসব দেশ প্রকাশ্যে রুখে দাঁড়িয়েছে। ভারতের এই ‘বসগিরি’ তারা মানতে নারাজ। স্বাধীন দেশ হিসেবে তারা ভারতের মুখের উপর সরাসরি ঝামটা দিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি মালদ্বীপ যেভাবে প্রকাশ্যে ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়েছে, তা ভারতের জন্য অভাবনীয় বা অবাক করা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজু ক্ষমতায় এসেই তার দেশ থেকে ভারতের সৈন্যসামন্ত সরিয়ে নেয়ার কথা বলেছেন, যা ভারতের জন্য অনেকটাই চপেটাঘাত তুল্য। গত ১৪ জানুয়ারি মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ভারতকে ১৫ মার্চের মধ্যে ভারত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জে মোতায়েন করা সব ভারতীয় সামরিক কর্মী প্রত্যাহার করতে বলেছেন। উল্লেখ করা প্রয়োজন, মালদ্বীপে বর্তমানে ডর্নিয়ার ২২৮ সামুদ্রিক টহল বিমান এবং দুটি এইচএএল ধ্রুব হেলিকপ্টারসহ প্রায় ৭০ জন ভারতীয় সেনা রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, উপমহাদেশে ভারত বছরের পর বছর ধরে যে আগ্রাসী ও আধিপত্যবাদী নীতি চালিয়ে আসছে, তা ক্ষয়ীষ্ণু হয়ে পড়েছে।
দুই.
একমাত্র বাংলাদেশেই ভারত এখন পর্যন্ত তার আধিপত্য ধরে রাখতে পেরেছে। এটা যে, বাংলাদেশের জনগণের পছন্দে বা স্বার্থে সম্ভব হয়েছে, তা নয়, বরং ক্ষমতাসীনদলের ক্ষমতায় থাকার স্বার্থ এবং নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ভারতের এই আধিপত্য বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। বিগত বছরগুলোতে ভারতের আধিপত্যবাদী ও স্বার্থপর আচরণ বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষকে বিক্ষুদ্ধ ও ভারতবিদ্বেষী করে তুলেছে। এতদিন তাদের মধ্যে শুধু ভারতসরকারবিরোধী মনোভাব থাকলেও এখন তা দুই দেশের জনগণ পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। গত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের পরাজয়ে বাংলাদেশের মানুষের আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণের মধ্য দিয়ে এর প্রকাশ বিশেষভাবে লক্ষ করা গেছে। এটা অস্ট্রেলিয়ার বিজয়ের আনন্দ ছিল না, ছিল ভারতের পরাজয়ের আনন্দ। বাংলাদেশের জনগণের এই আনন্দ প্রকাশ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এতে ভারতীয় জনগণও বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করে। অনেকে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশকে ভারতের সহায়তার কথা উল্লেখ করে বলে, কেমন অকৃতজ্ঞ বাংলাদেশের জনগণ! আবার পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ভ্রমণ ও চিকিৎসা করতে যাওয়া বাংলাদেশিদের অনেককে তখন হেনস্থার শিকার হতে হয়। এমন বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এক ভিডিওতে দেখা যায়, কলকাতায় এক ভারতীয় এক বাংলাদেশীকে বলছে, এখান থেকে চলে যাও, আর কখনো এখানে আসবে না। এসব ঘটনা থেকে এটাই বোঝা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক যে বিদ্বেষ জন্ম নিয়েছে, তার জন্য দুই দেশের সরকারের নীতিই দায়ী। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, ভারত সরকারের কিছু কিছু নীতি এই মনোভাবকে প্রবলভাবে ইন্ধন দিয়েছে। তাদের কথা, আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব থাকতে পারে। তবে সেই প্রভাব যদি জনগণের সার্বভৌম অধিকারকে ক্ষুণœ করে, তাহলে জনগণের মধ্যে তার প্রভাব পড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তারা মনে করেন, গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা ছিল আরেকটি একদলীয় নির্বাচন, যখন বিরোধীদল কারাগারে বন্দি ছিল। ভারত গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ ও প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, নিজেদের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষমতা এখন আর বাংলাদেশের নাগরিকদের হাতে নেই। এই ধরনের ধারণা আরও জোরদার হয়, যখন এক বাংলাদেশি মন্ত্রী বলেন, যেকোনো মূল্যে হাসিনা সরকারের টিকে থাকা নিশ্চিত করার জন্য তিনি ভারতকে অনুরোধ করেছেন এবং ভারত তার অনুরোধটি আমলে নিয়েছে। বাংলাদেশি বিশ্লেষকরা দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন এবং বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ স¤পর্ক ভারতের পক্ষে একতরফা হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শাসনামলে ভারত তার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্রোহ দমন, বাংলাদেশে ট্রানজিট সুবিধা, বঙ্গোপসাগরের দুটি প্রধান বন্দরে স্থায়ী প্রবেশাধিকার, জ্বালানি চুক্তি, বঙ্গোপসাগরে নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপন করেছে। এর বিপরীতে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য বাংলাদেশের অনুরোধ কয়েক দশক ধরে ভারত বারবার উপেক্ষা করে যাচ্ছে। এছাড়া, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সবচেয়ে সহিংস সীমান্তে পরিণত হয়েছে। বিএসএফ সীমান্তে পাখি শিকারের মতো নিরীহ বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা করছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি আকাশ-পাতাল হয়ে গেছে। বাংলাদেশে প্রায় দশ লাখের বেশি ভারতীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ভারতের রেমিট্যান্স আহরণের ক্ষেত্রে তৃতীয় শীর্ষ দেশ এখন বাংলাদেশ। বছরে প্রায় দশ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স ভারত বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সমাধানে ভারতের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা বাংলাদেশ পায়নি, পাাচ্ছে না। উল্টো ভারতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি। কেবল ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি পেয়েছেন। এসব যৌক্তিক কারণে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব আগের চেয়ে বেড়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ভারত সরকারের ভুল নীতির কারণে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের একতরফা সমর্থনে বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিন.
গত নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো একদিকে এবং রাশিয়া, চীন ও ভারত আরেক দিকে অবস্থান নেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আহ্বান জানায়। এর বিপরীতে চীন-রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে বাংলাদেশের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করে। নির্বাচন বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে ভারত প্রকারন্তরে সরকারকে সমর্থন জানায়। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, বাংলাদেশ পরাশক্তিগুলোর কাছে এক ধরনের ‘শ্যাডো ব্যাটল ফিল্ড’ বা ছায়া যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। রাশিয়া ও চীনের অবস্থানের সাথে সরকারও যোগ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অনেকটা তুলোধুনা করেছে। ভারত এবার কথা কম বলে তার অবস্থান অপরিবর্তিত রেখে ভেতরে ভেতরে বেশি কাজ করেছে, যা চীন ও রাশিয়ার অবস্থানের পক্ষে গেছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশে ভারতের সা¤্রাজ্যবাদী নীতির পাশাপাশি এখন চীন-রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রও একই নীতি অবলম্বন করছে। এদের প্রতিপক্ষে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাবিশ্ব। এই শক্তি এমন সময়ে বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে প্রবেশ করেছে, যখন দেশ চরম অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত কোনো দেশে সাম্রাজ্যবাদ প্রবেশ করবে কি করবে না, তা নির্ভর করে সে দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তির দুর্বলতার উপর। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে এই ভিত্তিগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে সবাই সুযোগ নিচ্ছে। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছিলেন, বাংলাদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রাজত্ব শেষ এবং সেটা ফিরে আসার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। এখন দেখা যাচ্ছে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ফিরে আসছে। এজন্য দায়ী বাংলাদেশে ভারতের সা¤্রাজ্যবাদী নীতি। বাংলাদেশে ভারতের অতি খবরদারি পরোক্ষভাবে চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত করে দিয়েছে। চীন ধীরে ধীরে বাংলাদেশে তার প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়াও ঢুকে পড়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে তার অংশগ্রহণ বেড়েছে। বাংলাদেশে পরাশক্তিগুলোর স্বার্থ এতটাই বিস্তৃত হয়েছে যে, তা প্রতিযোগিতায় রূপ নিয়েছে। বহু বছর ভারত এককভাবে বাংলাদেশে তার ‘দাদাগিরি’ ফলিয়েছে এবং তার সকল স্বার্থ হাসিল করে নিয়েছে। এখন সেই স্বার্থে রাশিয়া ও চীন ভাগ বসিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও এগিয়ে আসছে। ফলে বাংলাদেশে ভারতের একচেটিয়া স্বার্থ এখন খর্ব হওয়ার পথে। রাশিয়া ও চীন নিজ নিজ স্বার্থ হাসিলে ভারতকে ছাড় দেবে, তা মনে করার কারণ নেই। যদিও ভারত তার চাওয়া-পাওয়ার সবই ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে আদায় করে নিয়েছে। তবে তার ব্যবসা-বাণিজ্য আদায়কৃত স্বার্থ এবং ভবিষ্যত স্বার্থ রক্ষা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে, দেশের মানুষের মধ্যে ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রবণতা লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। অনেকে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছে। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, কসমেটিক সামগ্রী থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সব ভারতীয় পণ্য বর্জন করার ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, আমরা আমাদের দেশে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার করব। এতে দেশে আমাদের শিল্পকারখানার যেমন প্রসার লাভ করবে, তেমনি উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। প্রয়োজনে আমরা কম পণ্য ব্যবহার করব। এ থেকে বোঝা যায়, ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের মনোভাব কতটা বিরূপ হয়েছে। এর পেছনে প্রকৃত কারণ, বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন, বাকস্বাধীনতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ইত্যাদি হরণে ভারতের সমর্থন। অন্যদিকে এসবের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অবস্থান নেয়ায় জনমত সেদিকে ঝুঁকেছে। এটা এখন ভারতের বুদ্ধিজীবী মহল বুঝতে পারলেও তাদের সরকার বোঝেনি। এতে ভারতের উভয় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশের মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা শূন্যে নেমে এসেছে এবং তা পুনরুদ্ধার করা কঠিন। দ্বিতীয়ত, চীন ও রাশিয়া তার স্বার্থে ভাগ বসিয়েছে ও একচেটিয়া আধিপত্যে অনেকাংশে ছেদ টেনেছে। এতে যেমন বাংলাদেশে ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তেমনি ভূরাজনীতিও খর্ব হওয়ার মুখে পড়েছে। সর্বক্ষেত্রে ভারতের আধিপত্য হুমকির মুখে পড়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রতিবেশি কিংবা বন্ধুপ্রতীম দেশ কোনো দেশের জনগণকে অসন্তুষ্ট করে সে দেশে সাফল্য পায় না। যেমনটি ঘটেছে এবং ঘটছে ভারতের ক্ষেত্রে। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান সর্বশেষ মালদ্বীপ তার বলয় থেকে বের হয়ে গেছে শুধু তার একতরফা স্বার্থ ও আধিপত্যবাদের কারণে।
চার.
যেকোনো দেশের বৈদেশিক স¤পর্ক হয় দেশের সাথে, জনগণের সাথে। তা যদি একতরফা ও কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে হয় তখন জনগণ ক্ষুদ্ধ হয়। বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ সবসময়ই মনে করে ভারত বাংলাদেশের জনগণের সব ধরনের অধিকারের উপ হস্তক্ষেপ করছে শুধু তার স্বার্থের জন্য। তারা মনে করে, প্রতিবেশি দেশ হিসেবে ভারতের সাথে সুসম্পর্ক থাকবে, তবে তা একতরফা হবে না। ভারতকে যেমন আমাদের প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি ভারতেরও আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে, আমাদের চেয়ে তার স্বার্থ অনেক বেশি। অথচ ভারত এ সম্পর্ককে ‘দাদাগিরি’র মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে, যার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের জনগণ তার প্রতি বিরূপ হয়ে উঠেছে। এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ স¤পর্ক ভারতের পক্ষে একতরফা হয়ে গেছে, যা বাংলাদেশের জনগণ মনে করে ভারত তাদের সার্বভৌম অধিকারকে ক্ষুণœ করছে। বাংলাদেশের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবেই অসাম্প্রদায়িক। তারা ধর্ম দিয়ে মানুষকে বিচার করে না। পারস্পরিক সহবস্থানে বিশ্বাসী। অথচ ভারতে মুসলমানদের উপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করা হচ্ছে। এসব বিষয় ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষকে ভারতবিদ্বেষী করে তুলেছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের জনগণকে অসন্তুষ্ট ও বিরূপ করে ভারত তথাকথিত ‘সুসম্পর্ক’ ধরে রাখতে পারবে, তা মনে করার কারণ নেই। ভারতের অন্যান্য প্রতিবেশি যেভাবে তার আধিপত্যের শেকল থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে, বাংলাদেশও তার জনগণের ভারতবিরোধী মনোভাবের কারণে এই আধিপত্য থেকে বের হয়ে আসবে। তার আলামত এখন দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ বর্তমান বৈশ্বিক রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে গেছে। এখানে কোনো দেশের পক্ষে এখন আর একতরফা আধিপত্য ধরে রাখা সম্ভব নয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে