মিয়ানমারে নাজেহাল সরকারি বাহিনী
২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম
মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠিগুলোর সঙ্গে সামরিক বাহিনী বা সরকারের সংঘাতের ইতিহাস পুরনো হলেও এখন সেটা আরও বিস্তৃত হয়ে উঠেছে। এই গোষ্ঠিগুলোর সঙ্গে এখন সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে শুরু করেছে গণতন্ত্রপন্থী যোদ্ধারা। সীমান্ত বা দূরবর্তী অঞ্চলগুলো এক সময় সংঘাতপ্রবণ হলেও এখন সেই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলেও।
পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, মিয়ানমারে এখন যে অবস্থা চলছে, তাতে অচিরেই দেশটি একটি পুরোদস্তুর গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। মিয়ানমারের এই সংঘাতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ এবং ভারতেও। বাংলাদেশের ঘুমধুম ও উখিয়া সীমান্ত এলাকায় অব্যাহত গোলাগুলির কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে আছে।
দেশজুড়ে সংঘাত পরিস্থিতিতে রাজধানী নেপিডো এবং আশপাশের শহরগুলোয় রাতে কার্ফু জারি করতে হয়েছে জান্তাকে। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ও সংবাদ সংস্থাগুলোর খবর অনুযায়ী, হিংসাপ্রবণ এলাকাগুলো ছাড়াও মিয়ানমারের অসংখ্য শহরে কার্ফু এবং মানুষজনের চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রেখেছে সামরিক বাহিনী।
ইরাওয়ার্দি জানিয়েছে, সহিংসতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের শীর্ষ সাতটি সশস্ত্র গোষ্ঠির সদস্যরা সম্প্রতি ওয়া রাজ্যের পাংসাংয়ে বৈঠকে বসেন। কোভিড মহামারির পর এই প্রথম এসব গোষ্ঠির নেতারা একত্রে বৈঠকে বসেন। এসব গোষ্ঠির প্রায় ৩০ হাজার সদস্য রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। আরাকান আর্মির একজন মুখপাত্রের ভাষ্য মতে, প্রয়োজনের কারণেই তাদের এই বৈঠকে বসা এবং তাদের মূল লক্ষ্য নিজেদের মধ্যে একতা আরও বৃদ্ধি করা।
সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, এখন উত্তর রাখাইন, চীন রাজ্য, শান ও কাচিন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে বার্মিজ সেনাবাহিনী। তারা ভারী অস্ত্র ও ট্যাঙ্কের সহায়তায়, অনেক শহরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তারা সেখানকার একাধিক গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে এবং গ্রামে গ্রামে অভিযান চালাচ্ছে। সাধারণ জনগণের ওপর সামরিক বাহিনীর ভারী অস্ত্র ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সামরিক সরকারের রণকৌশলে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে সম্প্রতি এই হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মান জাতিগোষ্ঠির সদস্য। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে এই জাতিগোষ্ঠির মানুষের সংখ্যাই বেশি। ফলে এদের মধ্যে থেকে বিদ্রোহী তৎপরতা শুরু হওয়ায় বোঝা যাচ্ছে সামরিক সরকারের প্রতি তাদের মনোভাব বদলে যাচ্ছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত এলাকা থেকে আরাকান আর্মির কয়েকটি ঘাঁটি তারা দখল করে নিয়েছে। যদিও সংবাদ সংস্থার পক্ষ থেকে এসব তথ্য নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। রাখাইনের মংডু এবং পালেতয়া শহর ঘিরে সড়ক এবং নৌপথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ফলে সে-সব এলাকায় খাবার ও জরুরি সামগ্রীর সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সামরিক বাহিনীর অভিযানের ফলে মিয়ানমারের লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন দেশের সংঘাতময় পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব পিস। মিয়ানমারের সংঘাতের পুরো ঘটনা তারা একটি বিস্তারিত প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে ব্যাপক সহিংসতার সূত্রপাত হয় ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যখন গণতন্ত্রপন্থী অং সান স্যু কি’র সরকারকে উৎখাত করা হয়। কিন্তু দেশের জনগোষ্ঠির বড় একটি অংশ আর আগের মতো সামরিক শাসনে ফিরে যেতে চায়নি। ফলে তারা দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও আন্দোলন করতে শুরু করে, যেখানে অংশ নিয়েছিল প্রধানত তরুণ গোষ্ঠি আর গণতান্ত্রিক সরকারের কর্মীরা। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় ক্ষমতাচ্যুত ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির নির্বাচিত অংশটি।
স্থানীয় বিভিন্ন জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠি, নাগরিক সমাজ, ক্ষমতাচ্যুত জনপ্রতিনিধি আর বিদ্রোহী গোষ্ঠিগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সরকার গঠন করে, যার নাম দেওয়া হয়, এনইউজি। তাদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রকাশ্যে দেখা করেছেন আসিয়ান ও মালয়েশিয়ার বিদেশমন্ত্রী। মতপার্থক্য নিরসন করে সরকারবিরোধী আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এনএলডি, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি আর সরকারবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠি ও জাতিগত গোষ্ঠি মিলে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিতে আরেকটি জোট গঠন করে, যার নাম দেওয়া হয় ন্যাশনাল ইউনিটি কনসালটেটিভ কাউন্সিল, এনইউসিসি। কিন্তু গণতন্ত্রপন্থীদের ওপর যখন সামরিক বাহিনী দমন-পীড়ন শুরু করে, তখন তাদের অনেকে দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে তারা জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠিগুলোর কাছে সহায়তা ও সামরিক প্রশিক্ষণ নেয়। এরপর তারা সারা দেশের গণতন্ত্রপন্থীদের সংগঠিত করে একটি বাহিনী গঠন করে, যার নাম দেওয়া হয় পিপল্স ডিফেন্স ফোর্স, পিডিএফ।
মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় এলাকাগুলোর শহর, নগর আর গ্রামে তারা সামরিক শাসনের ও স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ২০২১ সালের অক্টোবর নাগাদ দেশের সব শহর এলাকায় নিজেদের অবস্থান তৈরি করে পিডিএফ। এই অস্থিরতার সুযোগে মিয়ানমারের আরাকান, কাচিন, কারেন, শান এবং ওয়া বাহিনীর মতো ১১টি জাতিগত গোষ্ঠি, যারা বহুদিন ধরে মিয়ানমারের স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতার দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, তারা নিজেদের আধিপত্য এবং দখল বাড়ানোর জন্য নতুন করে লড়াই শুরু করে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে সামরিক অভিজ্ঞতা লাভ করে পিডিএফের যোদ্ধারাও। সব মিলিয়ে যে বাস্তবতা দাঁড়িয়েছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে মিয়ানমারজুড়ের গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে