মন্ত্রীদের ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে হবে

Daily Inqilab সরদার সিরাজ

২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৩৭ এএম | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৩৭ এএম

নতুন মন্ত্রিসভার যাত্রা শুরু হয়েছে গত ১১ জানুয়ারি। তার পর থেকে মন্ত্রীরা নানা ঘোষণা দিয়েছেন ও দিচ্ছেন মিডিয়ায়। যার কয়েকটির শিরোনাম হচ্ছে: দুর্নীতি সহ্য করা হবে নাÑ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কৃষিপণ্যের মধ্যস্বত্বভোগীদের ধ্বংস করে দেওয়া হবেÑ কৃষিমন্ত্রী। অবৈধ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছিÑ স্বাস্থ্যমন্ত্রী। দ্রুত ন্যায়বিচার করে জনগণের হয়রানি ও দুর্ভোগ কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরকার উদ্বিগ্নÑ প্রাণিসম্পদমন্ত্রী। জনগণের ভোগান্তি কমাতে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার পদ্ধতি সহজ করা হবে। বায়ু দূষণকারী ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবেÑ পরিবেশমন্ত্রী। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল অবদান রাখুন। কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিবন্ধন বিহীন মোবাইল ফোনগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবেÑ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী। অগ্রাধিকার পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেÑ অর্থমন্ত্রী। শিক্ষাবর্ষ মাত্র শুরু হয়েছে। ধারাবাহিক মূল্যায়নের কাজগুলোও শুরু হয়েছে। কাজ করতে গিয়ে যদি কোনো সমস্যা মনে হয় তাহলে পরিবর্তন অবশ্যই আসবেÑ শিক্ষামন্ত্রী। সরকারি যেকোনো কাজে মান নিয়ে ছাড় নয়Ñ স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইত্যাদি। নিবন্ধের স্থান সংকুলানের স্বার্থে সব মন্ত্রীর ঘোষণার বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়। তাই শুধুমাত্র দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কিছু আলোচনা করবো। এ দু’টি বিষয় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সুশাসনের অভাবে দুর্নীতি বাড়তে বাড়তে দুর্নীতি নেই কোথায় তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। দেশের ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে যে যেখানে সুযোগ পাচ্ছে সেখানেই দুর্নীতি করছে সাধ্য মতো। তবে, শিক্ষিত লোকদের দুর্নীতির পরিমাণ ও ক্ষতি বেশি। কিন্তু দেশের শান্তি ও উন্নতির প্রধান অন্তরায় হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণে বছরে গড়ে প্রায় ৪-৫% প্রবৃদ্ধি কম হচ্ছে। উপরন্তু দুর্নীতিকৃত অর্থের বিরাট অংশ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে সেখানে দামি বাড়ি-গাড়ি, বিরাট ব্যবসা, রাজকীয় জীবন যাপন ইত্যাদি হচ্ছে। তাই দুর্নীতি বন্ধ করা অপরিহার্য। প্রধানমন্ত্রী সে নির্দেশনাও দিয়েছেন। কিন্তু তা কার্যকর করবে কে? দুর্নীতি, অনিয়ম বন্ধ করতে হবে সরকারি প্রশাসন ও গণপ্রতিনিধিদের। কিন্তু তাদেরই বিরাট অংশ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাই তাদেরকেই আগে দুর্নীতিমুক্ত করা আবশ্যক। যার প্রথম ধাপ হচ্ছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কাস্টিং ভোটের হার নির্ণয়ের অনিয়ম নিয়ে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪১.৮% ভোট কাস্ট হয়েছে, যা দেশ-বিদেশের কেউ বিশ্বাস করছে না। নির্বাচনোত্তর নির্বাচনের অনেক প্রার্থী কীভাবে কেন্দ্র দখল করে সিল মারা হয়েছে তার বিশদ বর্ণনা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ, দেশ-বিদেশের কিছু পন্ডিত, প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া এ নিয়ে নানা কথা বলেছে। যার প্রধানতম হচ্ছে: দ্য গার্ডিয়ানের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য খারাপ দিন। ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার বলছে ৪০% ভোট পড়েছে, আন্তর্জাতিক সূত্র ও সাংবাদিকরা বলছেন ২৭%। কিন্তু আওয়ামী লীগ পন্থি আমাদের পরিচিত অনেকে বলেছেন ভোট পড়েছে ২০ শতাংশের নিচে। টিআইবি বলেছে, নির্বাচনের ৫০টি আসনের ওপর চালানো একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানে ৫১% কেন্দ্রে বুথ দখল, জাল ভোট প্রদান ও প্রকাশ্যে সিল মারার মতো ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন অবাধ হয়নি এবং সেটি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য অশনি সংকেত। নির্বাচনে ভোটের হার বিস্ময়করÑ সুজন। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ম্লান হয়েছেÑ ফরেন পলিসিতে নিবন্ধ। আন্তর্জাতিক অনেক মিডিয়ায় বহু ফাঁকা ভোট কেন্দ্রের ছবি প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বহু দেশ এবং অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা বলেছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। দেশের বিরোধী দলগুলো বলেছে, ৪-৫ শতাংশ ভোট কাস্টিং হয়েছে। তারা এবং বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা নতুন করে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দাবি করেছে। অর্থাৎ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি ও ফল নিয়ে বড় রকমের দুর্নীতি হয়েছে বলে দেশ-বিদেশের সকলেরই বিশ্বাস। কিন্তু সরকার ও ইসি এসব অস্বীকার করে বলেছে, নির্বাচন খুব ভালো হয়েছে। তাই বহু দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে, অভিনন্দন জানিয়েছে। সব দেশের সাথে কাজ-কর্ম চলছে। হ্যাঁ, নতুন সরকার অনেক স্বীকৃতি ও অভিনন্দন পেয়েছে সত্য কথা। কিন্তু পর্যবেক্ষকদের মতে, এসব কূটনৈতিক শিষ্টাচার মাত্র। যতক্ষণ পর্যন্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত দেখা-সাক্ষাৎ ভালো-মন্দ কথা-বার্তা ইত্যাদি চলে। এটাই বিশ্ব রীতি-নীতি। তাই নির্বাচন নিয়ে দেশগুলোর পর্যবেক্ষণ বা অবস্থানে কোনও পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না। যেমন: জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ডোজারিক গত ২২ জানুয়ারি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘ মহাসচিব একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানকে পুননির্বাচিত হলে মহাসচিব যেভাবে চিঠি পাঠান, এটা তেমনিভাবে পাঠানো হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের ডামি নির্বাচন এবং ক্ষমতাসীন সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘের আগের অবস্থান এবং মানবাধিকার হাইকমিশনার যা বলেছেন, তার কোনো পরিবর্তন হয়নি, অপরিবর্তিতই রয়েছে।’

অর্থাৎ একতরফা ও তামাসার নির্বাচনে দেশের গণতন্ত্র দুর্বল হয়েছে এবং বহির্বিশ্বে দেশের মর্যাদার চরম ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন আহ্বান জানিয়েছে। তাই বিষয়টি দ্রুত নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদের যাত্রা শুরু করা দরকার। দুর্নীতি বিরোধী জিহাদের দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীরা যে হলফ নামা দাখিল করেছেন, তাদের অনেকের সম্পদ আগের নির্বাচনের সময় থেকে বেড়েছে শতগুণ, হাজারগুণ এবং ততোধিক। আয়-সম্পদ বৃদ্ধি হওয়া মুক্ত অর্থনীতিতে দোষণীয় নয়। কিন্তু সেটা অবৈধভাবে হলে অবশ্যই দোষণীয়। তাই দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী যাদের সম্পদ অত্যধিক বেড়েছে, তাদের সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়টি দ্রুত নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দেখা দরকার। উপরন্তু এসব তদন্তে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে দেশের দুর্নীতিবাজের হৃৎপিন্ড কেঁপে উঠবে। দুর্নীতি কমে যাবে। এছাড়া, দুদককে পূর্ণ স্বাধীন ও শক্তিশালী এবং সেখানে নিরপেক্ষ, সৎ ও দক্ষ লোক নিয়োগ দিয়ে নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করতে হবে। তবেই দুর্নীতি কমবে। সার্বিক উন্নতি তরান্বিত হবে। আয় ও সম্পদ বৈষম্য হ্রাস পাবে।

নতুন মন্ত্রীদের ঘোষণার মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তাছাড়া নতুন মুদ্রানীতিতে সুদাহার বাড়ানো হয়েছে টাকা সরবরাহ কমিয়ে পণ্যমূল্য কমানোর লক্ষ্যে। দ্রব্যমূল্য, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্য কমানোর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট মতে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার সর্বাধিক। পাকিস্তানে ১৮%, দ্বিতীয় বাংলাদেশে ১২%, ভারতে ৩% এর নিচে এবং দেউলিয়া ঘোষিত শ্রীলংকায় ২% এর নীচে। দ্বিতীয়ত: দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার যেভাবে বেড়েছে, মানুষের উপার্জন সেভাবে বাড়েনি। বরং বেশিরভাগ মানুষের উপার্জন কমেছে।ফলে,তারা বাধ্য হয়ে খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। বহু মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশের ৭৩% মানুষের পুষ্টিকর খাদ্য ক্রয়ের সক্ষমতা নেই। তাই দেশে পুষ্টিহীনদের সংখ্যা বাড়ছে, যা উন্নতির চরম অন্তরায়। স্মরণীয় যে, চলতি আমনের ভরা মওসুমেও চালের মূল্য অনেক বেড়েছে বাম্পার ফলন হওয়া সত্ত্বেও। গোশতের মূল্য কিছু কমে কয়েকদিন পর পুনরায় বেড়েছে অনেক। সবজির ভরা মওসুমেও মূল্য আকাশচুম্বী। অন্য খাদ্যপণ্যের মূল্যও তাই। গত ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে যেসব দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার অতিমাত্রায় বেড়েছিল তার মধ্যে অনেক দেশেই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশে তেমন একটা কমছে না। এখানে খুব সামান্যই কমেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত সিপিডির গবেষণা রিপোর্ট মতে, উৎপাদনস্থলের দামের চেয়ে ঢাকার বাজারে দামের ফারাক ৬-৭ গুণ বেশি। এর জন্য প্রধান দায়ী মধ্যস্বত্বভোগী ও ব্যাপক চাঁদাবাজি! অন্যদিকে, রিজার্ভ সংকটের কারণে আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এতেও পণ্যমূল্য বেড়েছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা জরুরি। কাজটা বলা যত সহজ বাস্তবায়ন করা তত সহজ নয়। তবে, নিয়মিত বাজার তদারকি করে খাদ্য পণ্যের সিন্ডিকেটধারী, অতি মুনাফালোভী ও চাঁদাবাজদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হলে পণ্য মূল্য কিছু কমবে। ইতোমধ্যেই মজুদদার চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিয়ান চালিয়ে অনেকের বিপুল অর্থ জরিমানা করায় চালের মূল্য কিছু কমেছে। ফলে মিলারদের অতি মুনাফা কিছু কমেছে। কিন্তু এ কারণে চালকল মালিকরা ষড়যন্ত্র করে চাল উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে প্রতিশোধ নিতে পারে। সেটা হলে অভিযান বুমেরাং হবে, চালের মূল্য অনেক বেড়ে যাবে। তাই সেদিকে কড়া নজর রাখা দরকার। যা’হোক, চালের ন্যায় সব খাদ্যপণ্যের মজুদ ও মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে মূল্য বৃদ্ধিকারকদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গত ২২ জানুয়ারি বলেছেন, ‘দুরভিসন্ধিমূলকভাবে চালসহ নিত্যপণ্য মজুত করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে’। সরকারের এ নীতি কার্যকর হলে পণ্যমূল্য কমবে বলে আশা করা যায়। এছাড়া, খাদ্যপণ্যের মূল্য কমানোর জন্য টিসিবির ও ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য পণ্য বিক্রি এবং সব শ্রমিককে স্বীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রেশন কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য পণ্য প্রদান করা হলে সংশ্লিষ্টদের অনেক কল্যাণ হবে। পণ্যমূল্যও কিছু কমবে। জাতীয় তথ্য সেবা নাম্বার ৩৩৩ এর সঠিক ব্যবহার এবং খাদ্য পণ্যের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার/হ্রাস করা হলেও মূল্য কমবে।

অবশ্য, খাদ্যপণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের কাক্সিক্ষত পর্যায়ে আনা কঠিন। কারণ, দেশ আমদানি নির্ভর। চাল, মাছ, গোশত ও সবজি ছাড়া খাদ্যপণ্যের বেশিরভাগ আমদানি করতে হয়, যা করা হয় মার্কিন ডলারে। কিন্তু সেই ডলারের মূল্য আকাশচুম্বী হয়েছে। আর টাকার মান কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে, যার ব্যাপক প্রভাব পড়ছে খাদ্য পণ্যের মূল্যের উপর। এছাড়া, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আরো কারণ হচ্ছে: সরকার ব্যবসায়ীবান্ধব, রিজার্ভ সংকটের কারণে আমদানি অনেক নিয়ন্ত্রণ করা, জ্বালানি সংকটের কারণে অভ্যন্তরীন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ঘটনা এবং যুদ্ধ ও সহিংসতার কারণে বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া ইত্যাদি। তাই খাদ্যপণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার জন্য দেশে প্রকৃত চাহিদা সঠিকভাবে নিরূপণ করে সে অনুসারে খাদ্যপণ্য উৎপাদন করে দেশকে আত্মনির্ভর করতে হবে। সে জন্য সব চাষযোগ্য জমিতে ফসল চাষ এবং ভাসমান চাষ, মাচা চাষ,ছাদ কৃষি, শস্য বহুমুখীকরণ ইত্যাদি বৃদ্ধি,সাগরে মৎস্য আহরণ বৃদ্ধি, সব ফসলেই সর্বাধুনিক হাইব্রিড ও পুষ্টিসমৃদ্ধ বীজ ব্যবহার, কৃষি খাতকে সম্পূর্ণ যান্ত্রিকরণ, কৃষি উপকরণের মূল্য হ্রাসকরণ, সব কৃষককে সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে চাহিদা মাফিক ঋণ প্রদান, সব ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা, ট্রেনে খাদ্য পরিবহন বৃদ্ধি ও পণ্য মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ক্রেতাদের সোচ্চার হওয়া ইত্যাদি করতে হবে।উপরন্তু চাহিদা মাফিক কৃষি-শিল্প গড়ে তুলতে হবে। খাদ্যপণ্যের রফতানি আপাতত বন্ধ করতে হবে। তবেই, ফলন বেশি হবে, উৎপাদন ব্যয়, অপচয় ও নষ্ট হওয়া কমবে এবং এতে খাদ্যপণ্যের মূল্য হ্রাস পাবে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ওয়াহিদুজ্জামান

সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ওয়াহিদুজ্জামান

ইউরোয় গ্রুপ পর্ব পার হওয়া ফ্রান্সের জন্য কঠিন হবে: দেশ্যম

ইউরোয় গ্রুপ পর্ব পার হওয়া ফ্রান্সের জন্য কঠিন হবে: দেশ্যম

জায়েদ খানের ফোন পানিতে ছুড়ে ফেললেন সাকিব, যা বলছেন নেটিজেনরা

জায়েদ খানের ফোন পানিতে ছুড়ে ফেললেন সাকিব, যা বলছেন নেটিজেনরা

বনানীতে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট

বনানীতে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট

গণমাধ্যমকে নানা কারণে আত্মসমর্পন করতে হয় : বাংলাদেশ ন্যাপ

গণমাধ্যমকে নানা কারণে আত্মসমর্পন করতে হয় : বাংলাদেশ ন্যাপ

পান্ডিয়া হবে বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়: আগারকার

পান্ডিয়া হবে বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়: আগারকার

গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা, ২৪ ঘণ্টাও শেষ হয়নি উদ্ধার অভিযান

গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা, ২৪ ঘণ্টাও শেষ হয়নি উদ্ধার অভিযান

দুর্নীতির দায়ে নিষিদ্ধ থমাস

দুর্নীতির দায়ে নিষিদ্ধ থমাস

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আশাবাদী বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আশাবাদী বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া

ছেলের কবরে বেড়া দিতে গিয়ে মারা গেলেন বাবাও

ছেলের কবরে বেড়া দিতে গিয়ে মারা গেলেন বাবাও

১৪ মে চট্টগ্রাম থেকে হজযাত্রা শুরু

১৪ মে চট্টগ্রাম থেকে হজযাত্রা শুরু

এপ্রিল মাসে প্রযুক্তি সংস্থাগুলি থেকে ‘গলাধাক্কা’ খেয়েছেন সাড়ে ২১ হাজার কর্মী

এপ্রিল মাসে প্রযুক্তি সংস্থাগুলি থেকে ‘গলাধাক্কা’ খেয়েছেন সাড়ে ২১ হাজার কর্মী

কঙ্গোতে বাস্তুহারাদের শিবিরে হামলা, শিশুসহ নিহত ৯

কঙ্গোতে বাস্তুহারাদের শিবিরে হামলা, শিশুসহ নিহত ৯

চাঁদের পানে যাত্রা শুরু করলো চীনের ছ্যাং’এ-৬

চাঁদের পানে যাত্রা শুরু করলো চীনের ছ্যাং’এ-৬

শ্রীপুরে ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত

শ্রীপুরে ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত

শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে আন্দোলনের হুমকি, যা বলছেন নেটিজেনরা

শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে আন্দোলনের হুমকি, যা বলছেন নেটিজেনরা

৭ দিনের মধ্যে চুক্তিতে সম্মত না হলে হামলা : হামাসকে ইসরাইল

৭ দিনের মধ্যে চুক্তিতে সম্মত না হলে হামলা : হামাসকে ইসরাইল

সালথায় মানবপাচার মামলায় নারী গ্রেপ্তার

সালথায় মানবপাচার মামলায় নারী গ্রেপ্তার

বিয়ের আসরে কনেকে ইমরান খানের ছবি উপহার দিল বর

বিয়ের আসরে কনেকে ইমরান খানের ছবি উপহার দিল বর

ব্রিকসভুক্ত অন্যান্য দেশের সাথে চীনের বাণিজ্য বেড়েছে

ব্রিকসভুক্ত অন্যান্য দেশের সাথে চীনের বাণিজ্য বেড়েছে