প্রসঙ্গ : নতুন শিক্ষা কারিকুলাম

Daily Inqilab আলহাজ্ব শাহ্ মোহাম্মাদ আহসানুজ্জামান

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম

বিগত কয়েক বছর শিক্ষা কারিকুলামে অবিরত পরিবর্তন সাধন করা হচ্ছে। সংযোজন, বিয়োজন চলছে। সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সংস্কৃতি, সাহিত্য, গণিত, ধর্ম শিক্ষা কোন বিষয়ই বাদ যায়নি, যেখানে পরিবর্তন হয়নি। ২০২৪ সালের নতুন শিক্ষা কারিকুলামে ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের শরীফ-শরীফার গল্পকে কেন্দ্র করে শিক্ষাঙ্গনসহ প্রায় সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইছে। প্রত্যেক শ্রেণির প্রতিটি বইয়ের কাগজ ও লেখার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বাংলাদেশের নামীদামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষকরাই হিমশিম খাচ্ছেন পাঠদান পরিকল্পনা নিয়ে। ঢাকা নারিন্দা মশুরীখোলা দরবার শরীফস্থ হযরত শাহ আহসানুল্লাহ (রহ.) কমপ্লেক্স পরিচালিত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এমপিও ননএমপিও মিলিয়ে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সভাপতি হিসেবে আমার কাছে গুণীজনেরা এসে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে পরার্মশ গ্রহণ করেন। বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে প্রায় সবাই অসন্তুষ্ট। এ দেশ হযরত শাহ জালাল, শাহ পরান, শাহ আমানত, শাহ মাখদুম ও শাহ আহসানুল্লাহ (রহ.) এর দেশ। এ দেশ পীর-আওলীয়ার দেশ। এই দেশে ভিন্ন চিন্তার সুযোগ নেই। কৌশল, সুকৌশল বা সূক্ষ্ম কৌশল যে ছিদ্র দিয়েই ট্রানসজেন্ডার বাস্তবায়নের চিন্তা করা হোক না কেন, এ দেশের সহজ, সরলমনা সচেতন ধর্মপ্রাণ মানুষ তা কার্যকর হতে দেবে না। এই মতবাদ পরিবার, মূল্যবোধ ও সমাজবিধবংসী। এ মতবাদের বিরুদ্ধে শংকিত হয়ে পশ্চিমা বিশে^র পিতামাতারা রাস্তায় নেমেছে। একটি জরিপে দেখা গেছে ও পশ্চিমা বিশে^র বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ সমকামিতায় আসক্ত। অনেক দেশে এর আইনি ভিত্তি প্রদান করা হয়েছে। ফলে পারিবারিক বন্ধন ছিন্নভিন্ন হয়ে অশান্তির দাবানলে জ¦লছে। রাসূল (সা.) এর নিকট প্রেরিত প্রথম ওহীতে আল্লাহতায়ালা পড়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন। প্রিয় হাবিব (সা.) শিক্ষার প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। শিক্ষা জাতির মেরুদ-। একটি জাতিকে ধবংস করতে শিক্ষা ব্যবস্থার ধবংসই যথেষ্ট। আফ্রিকার নামকরা একটি বিশ^বিদ্যালয়ের নাম ইউনির্ভাসিটি অব সাউথ আফ্রিকা, যার সিংহদ¦ারে লেখা রয়েছে, ‘কোন জাতিকে ধবংস করার জন্য পারমাণবিক হামলা কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দরকার নেই। বরং সেই জাতির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় প্রতারণার সুযোগ দিলেই হবে। কারণ, এভাবে পরীক্ষা দিয়ে তৈরি হওয়া ডাক্তারদের হাতে রোগীর মৃত্যু হবে। ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা দালান কোঠা, ইমারত ধবংস হবে এবং অর্থনীতিবিদদের দ্বারা আর্থিক খাত দেউলিয়া হবে। এ ছাড়া বিচারকদের হাতে বিচার ব্যবস্থার কবর রচিত হবে। সুতরাং শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার মানে হলো একটি জাতির অবলুপ্তি।’ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য সবাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, অভিজ্ঞ। আগের কারিকুলাম নিয়ে শিক্ষিত হয়ে তারা আজ দেশ পরিচালনা করছেন। আজকের কারিকুলামে শিক্ষিত হয়ে আগামী প্রজন্ম কি তাদের মতো দেশ পরিচালনা করতে পারবে? না, কখনো নয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ রইল, অতীতে আপনার উপর অর্পিত মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্বের পাশাপাশি সকল মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং করছেন আপনার তীক্ষè মেধা ও সূক্ষ্ম নজর দিয়ে। অনেক মন্ত্রী ব্যর্থ হওয়ার মুহূর্তে আপনি শক্ত হাতে হাল ধরলে মন্ত্রণালয় তার প্রাণ ফিরে পেত। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় আপনার গঠন মূলক চিন্তাধারা ও সুনজর অপরিহার্য। বর্তমান ফুসে উঠা পরিস্থিতি আপনিই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমার পরামর্শ:
১. নতুন শিক্ষা কারিকুলাম সংশোধন করে অধিকাংশ মানুষের চিন্তা চেতনা অনুযায়ী প্রণয়ন করতে হবে।
২. ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেÑ এমন কারিকুলাম প্রণয়ন করা যাবে না।
৩. শিক্ষা কারিকুলামের বিতকির্ত অংশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ডিভাইস নিভর্রতা ও পরীক্ষা না থাকাতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। তাই সকল শ্রেণিতে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু রাখতে হবে।

৪. এন্ড্রয়েড মোবাইল শিক্ষার্থীদের জীবন ধ্বংস করছে। একটা বয়স পর্যন্ত এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৫. দেশের দ্বীনদার জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিজীবী ও হক্বানি পীর-মাশায়েখ, ওলামায়ে কেরামের পরামর্শে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে। বারবার শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন করা যাবে না। এতে শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা তৈরী হয়।

৬. পত্রিকায় এসেছে, ইদানিং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় ৩৫০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে একজনও পাশ করতে পারেনি। দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাচ্ছে। মেধা প্রস্ফুটিত হতে পারে এমন কারিকুলাম প্রইয়ন করতে হবে।

লেখক: পীর সাহেব, মশুরীখোলা দরবার শরীফ


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

‘যুদ্ধবিরতি না হলে হামাস নেতৃত্বকে বহিস্কার’

‘যুদ্ধবিরতি না হলে হামাস নেতৃত্বকে বহিস্কার’

গাজীপুরে বহিষ্কৃত নেতার পক্ষে নির্বাচনী মাঠে বিএনপির স্থানীয় নেতারা

গাজীপুরে বহিষ্কৃত নেতার পক্ষে নির্বাচনী মাঠে বিএনপির স্থানীয় নেতারা

পাকিস্তানেও সাড়া ফেলছে ‘হীরামান্ডি’, কী বললেন পরিচালক?

পাকিস্তানেও সাড়া ফেলছে ‘হীরামান্ডি’, কী বললেন পরিচালক?

এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে আজ বন্ধ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ

এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে আজ বন্ধ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ

বিজেপি নেতার গোপন ভিডিও নিয়ে তোলপাড় পশ্চিমবঙ্গ

বিজেপি নেতার গোপন ভিডিও নিয়ে তোলপাড় পশ্চিমবঙ্গ

স্টপেজের দাবিতে ফরিদপুরে ঢাকামুখী চন্দনা কমিউটার ট্রেনের গতিরোধ

স্টপেজের দাবিতে ফরিদপুরে ঢাকামুখী চন্দনা কমিউটার ট্রেনের গতিরোধ

রোদে পুড়তে পারে ঠোঁটও, তার যত্ন নেবেন কীভাবে?

রোদে পুড়তে পারে ঠোঁটও, তার যত্ন নেবেন কীভাবে?

অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের কিশোরকে গুলি করে হত্যা করল পুলিশ

অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের কিশোরকে গুলি করে হত্যা করল পুলিশ

অস্ত্রোপচারে কয়েদির পেট থেকে বের হলো মোবাইল!

অস্ত্রোপচারে কয়েদির পেট থেকে বের হলো মোবাইল!

কানাডায় তিন ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাল নয়াদিল্লি

কানাডায় তিন ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাল নয়াদিল্লি

এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৩৯

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৩৯

সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে নৌ ও বিমান বাহিনী

সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে নৌ ও বিমান বাহিনী

রাঙামাটির কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড

রাঙামাটির কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ফের রাস্তায় নামলেন হাজার হাজার ইসরায়েলি

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ফের রাস্তায় নামলেন হাজার হাজার ইসরায়েলি

বাংলাদেশ সীমান্তে জান্তার গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি দখল আরাকান আর্মির

বাংলাদেশ সীমান্তে জান্তার গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি দখল আরাকান আর্মির

আজ ঢাকায় আসছেন আইওএম’র মহাপরিচালক

আজ ঢাকায় আসছেন আইওএম’র মহাপরিচালক

হাজীগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ বিএনপির দুই নেতা বহিষ্কার

হাজীগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ বিএনপির দুই নেতা বহিষ্কার

বাবা ছিলেন বাসচালক মা দরজি, ছেলে তৃতীয়বার লন্ডনের মেয়র হলেন

বাবা ছিলেন বাসচালক মা দরজি, ছেলে তৃতীয়বার লন্ডনের মেয়র হলেন

ইন্দোনেশিয়ায় ১.৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চলেছে মাইক্রোসফট

ইন্দোনেশিয়ায় ১.৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চলেছে মাইক্রোসফট