রাজস্ব আয় বাড়াতে আর্থ-সামাজিক পরিবেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম

প্রতি বছরই বাজেটে রাজস্ব আয় বেশি করে নির্ধারণ করা হয়। বলা হয়, নির্ধারিত রাজস্ব আয় অর্জন করা অসম্ভব হবে না। কিন্তু কোনো বছরই কথা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হয় না। অনেক সময় মাঝ পথে রাজস্ব আয়লক্ষ্য কমিয়ে দেয়া হয়। এই কমিয়ে দেয়া রাজস্ব আয়লক্ষ্যও শেষ পর্যন্ত অর্জিত হয় না। গত অর্থ বছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। আদায় হয় ৩ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আদায় পরিস্থিতি ভালো না হওয়ার প্রেক্ষাপটে ইতোমধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এই নতুন লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। কারণ, অর্থ বছরের ৬ মাস পার হয়ে গেলেও আদায় আশাব্যঞ্জক হয়নি। উল্টো ঘাটতি হয়েছে ২৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। বাকী ৬ মাসে এ ঘাটতি পূরণ করে মোট আয়লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব। রাজস্ব আয়ে ঘাটতি হলে সরকার ঋণ করে সেই ঘাটতি পূরণ করে থাকে। এবার সরকারের অবস্থাও ভালো নয়। ঋণ নিতে নিতে তার ঋণের দরজাও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। রাজস্ব আয় সরকারের আয়ের বড় উৎস। উন্নয়নসহ যাবতীয় কার্যনির্বাহের জন্য রাজস্ব আয় বাড়ানোর অপরিহার্যতা প্রশ্নাতীত। কেন এবার রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি এতটা নাজুক, সেটা ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নয়। তাদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচন, ডলার সংকট ও ডলারের উচ্চমূল্য, আমদানি-রফতানিতে ধস, জ্বালানি সংকট ও উৎপাদনে তার বিরূপ প্রভাব ইত্যাদি কারণে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি গভীর সংকটের আর্বতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। যেহেতু অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে এবং এর উপর আইএমএফ’র শর্ত পূরণের ব্যাপারও রয়েছে। ফলে কোনো কিছুই আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। অর্থনীতির এমন কোনো সূচক নেই, যার ক্রমাবনতি ঘটছে না। ডলার সংকটের কারণে আমদানিনির্ভর অর্থনীতি রীতিমত ধসে গেছে। ব্যবসায়ীরা শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি প্রয়োজন মতো আমদানি করতে পারছেন না। ফলে তাদের পণ্যোৎপাদন কম বা ব্যাহত হচ্ছে। জ্বালানি সংকটও উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই বাস্তবতায় অনেক শিল্প মালিক বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি শিল্পের মালিকেরা রীতিমত অস্তিত্ব-সংকটে পতিত হয়েছে। শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংবা শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই করার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে ডলার সংকটে ভোগ্যপণ্য আমদানিও কম বা ব্যাহত হচ্ছে। এতে আমদানি পণ্যের দামেও অস্বভাবিক বৃৃদ্ধি ঘটছে। মূল্যস্ফীতি বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে স্বল্প আয়ের মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্তরা পর্যন্ত বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

যদি অর্থনীতি ভালো না থাকে, আমদানি-রফতানি, ব্যবসা-বাণিজ্য মসৃণ ও গতিশীল না হয়, মানুষের আয়-রোজগার ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি না পায় তবে রাজস্ব আয় বা আদায় কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উপনীত হতে পারে না। আমরা এখন এটাই প্রত্যক্ষ করছি। এ পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ জন্য সর্বাগ্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সুরক্ষার পাশাপাশি সামাজিক অস্বস্তি ও অস্থিরতা দূর করতে হবে। সমাজে দারিদ্র্যের বিস্তার, আয়বৈষম্য, নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং অন্যায়, অবিচার, অনাচার, জুলুম ও অপশাসন এমন শোচনীয় অবস্থানে উপনীত হয়েছে যে, তা রোধ করার বিকল্প নেই। সামাজিক শান্তি, নিরাপত্তা ও অভয়পরিবেশ অর্থনীতিসহ সকল উন্নয়ন-অগ্রগতির পূর্বশর্ত। আর্থিক খাতে অনেকদিন ধরেই সুশাসনের অভাব বিদ্যমান রয়েছে। শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষমতাসীন মহলের বৃত্তাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ব্যাংকিংখাতে দুর্নীতি-লুটপাট সীমা ছাড়িয়ে গেছে। অর্থপাচার অতি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আর্থিক ও ব্যাংকিংখাতে যে ধরনের সংস্কার প্রয়োজন ছিল, তা হয়নি কায়েমী স্বার্থবাদী মহলের কারণে। সিন্ডিকেট সংস্কৃতির ব্যাপক প্রসার হয়েছে। সিন্ডিকেট সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। শিল্প স্থাপনের চেয়ে আমদানি-রফতানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। এতে শিল্পে বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে। বিনিয়োগ পরিস্থিতি অনেকদিন ধরেই নেতিবাচক। বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়তে পারে না। কর্মসংস্থান না বাড়লে মানুষের আয়-রোজগারও বাড়ার প্রশ্ন ওঠে না। শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের আয় বাড়লে রাজস্ব আয়ও আদায় বাড়তে বাধ্য।

রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্জন করতে হলে সামাজিক পরিস্থিতির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগ ও শিল্প কারখানা স্থাপনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। দেশের অর্থনীতি, মানুষের অর্থনীতি, কোনোটাই যেহেতু এখন স্বাভাবিক ও গতিশীল নেই। সুতরাং, দেশব্যাপী কর্মের একটা জোয়ার তৈরি করতে হবে। এ জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন জোরদার করতে হবে। শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান বাড়লে রাজস্ব আয় সংক্রিয়ভাবেই বাড়বে। প্রসঙ্গত বলা আবশ্যক, রাজস্ব আদায়লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ার পেছনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ব্যর্থতাও কম দায়ী নয়। এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা, আন্তরিকতা ও দক্ষতা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন রয়েছে। অতএব, তাদের কাজের তত্ত্বাবধান ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

অবৈধ পার্কিং নগরের ক্যান্সার
শক্তিশালী প্রতিরক্ষা শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি
ভারত নিয়ে বিএনপির অবস্থান যা হওয়া উচিত
জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসকে স্বাগত
হামাস আরো শক্তিশালী হবে
আরও
X

আরও পড়ুন

চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করা পর্যন্ত বিএনপির সকল নেতাকর্মীকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে-বাদল

চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করা পর্যন্ত বিএনপির সকল নেতাকর্মীকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে-বাদল

নতুন পদ্ধতিতে রেলের টিকিটিং ব্যবস্থা, তবে কি এবার রোধ হবে কালোবাজারি?

নতুন পদ্ধতিতে রেলের টিকিটিং ব্যবস্থা, তবে কি এবার রোধ হবে কালোবাজারি?

রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে ঃ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে ঃ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

সরকারকে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আহ্বান তারেক রহমানের

সরকারকে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আহ্বান তারেক রহমানের

বাংলাদেশ বিরোধী চক্রান্তে  লিপ্ত  হলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে  ঃ  মামুনুল হক

বাংলাদেশ বিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত হলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে ঃ মামুনুল হক

নাগরিকত্ব আইন বদলে ফেলতে এ বার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ ট্রাম্প

নাগরিকত্ব আইন বদলে ফেলতে এ বার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ ট্রাম্প

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কষ্ট আমরা বুঝি' -  ড. ফায়েজ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কষ্ট আমরা বুঝি' - ড. ফায়েজ

সিদ্ধিরগঞ্জে জালকুড়ি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ৮ দোকান পুড়ে ছাই

সিদ্ধিরগঞ্জে জালকুড়ি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ৮ দোকান পুড়ে ছাই

লাখো রোহিঙ্গাদের ইফতার স্থানে প্রবেশের হুড়োহুড়িতে নিহত ১  আহত ২

লাখো রোহিঙ্গাদের ইফতার স্থানে প্রবেশের হুড়োহুড়িতে নিহত ১ আহত ২

ভূরুঙ্গামারীতে নদ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন

ভূরুঙ্গামারীতে নদ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন

বাংলাদেশের ব্যবসায়িদের ফল-মিষ্টি দিলেন আগরতলা পৌরসভার মেয়র

বাংলাদেশের ব্যবসায়িদের ফল-মিষ্টি দিলেন আগরতলা পৌরসভার মেয়র

পতিত স্বৈরাচারের দোসররা একেক সময় একেক নামে আবির্ভাব হচ্ছে: খায়ের ভূঁইয়া

পতিত স্বৈরাচারের দোসররা একেক সময় একেক নামে আবির্ভাব হচ্ছে: খায়ের ভূঁইয়া

আল হিকমাহ ইসলামিক অলিম্পিয়াড পুরুষ্কারে ভূষিত হলো নোয়াখালী মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা

আল হিকমাহ ইসলামিক অলিম্পিয়াড পুরুষ্কারে ভূষিত হলো নোয়াখালী মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা

মাগুরায় শিশু আছিয়ার নির্মম মৃত্যু: রাবি শিক্ষক ফোরামের বিচার দাবি

মাগুরায় শিশু আছিয়ার নির্মম মৃত্যু: রাবি শিক্ষক ফোরামের বিচার দাবি

কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন মার্ক কার্নি

কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন মার্ক কার্নি

ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে, নইলে সংকট বাড়বে:  শিপন

ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে, নইলে সংকট বাড়বে: শিপন

কয়েকজন ছাত্রনেতা মনে করে ৫ আগষ্টের আগে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রই ছিলো না: ইশরাক

কয়েকজন ছাত্রনেতা মনে করে ৫ আগষ্টের আগে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রই ছিলো না: ইশরাক

ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত থাকলে কেউ ক্ষতি করতে পারবে না - আমিনুল হক

ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত থাকলে কেউ ক্ষতি করতে পারবে না - আমিনুল হক

আল-আকসা মসজিদে ৮০ হাজার মুসল্লির জুমার নামাজ আদায়

আল-আকসা মসজিদে ৮০ হাজার মুসল্লির জুমার নামাজ আদায়

থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই শুরু মেয়েদের

থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই শুরু মেয়েদের