মামলার জটে বিচারের বাণী নীরবে কাঁদবে আর কতকাল?

Daily Inqilab জামালউদ্দিন বারী

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম

ঈদশ এগিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেন দেশের শাসক শ্রেণী। যে দল যখন ক্ষমতায় আসে, সে দল দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার দাবিদার বনে যান। দেশ কতটা এগিয়েছে বা এগোচ্ছে তার সত্যিকারের মানদ- কি? এমন প্রশ্নের সদুত্তোর তাদের কাছ থেকে কখনোই পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক বক্তৃতাবাজি করেই সবাই কৃতিত্ব জাহির করতে পারঙ্গম। সমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতির মৌলিক মানদ- হতে পারে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি গণমুখী শিক্ষা-সংস্কৃতির ঔৎকর্ষ, মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তার মধ্যে। সাবেক ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলোতে প্রতিশ্রুত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবাধ বিকাশের ধারা সেসব দেশের মানুষের প্রত্যাশিত সুশাসন নিশ্চিতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর বিপরীত চিত্র হচ্ছে, দু:শাসন তথা বিচারহীনতার সংস্কৃতি। একটি বহুল প্রচলিত ইংরেজী প্রবাদ হচ্ছে, ‘জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড’। বৈধ বা আইনী প্রক্রিয়ায় অপরের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ও সংক্ষুব্ধ কোনো নাগরিককে তার প্রার্থিত বিচার থেকে বঞ্চিত করার কোনো আইনগত ব্যবস্থা না থাকলেও বিচার প্রাপ্তির অধিকারকে অস্বাভাবিকভাবে ব্যাহত ও প্রলম্বিত করার মাধ্যমে মানুষকে সত্যিকার অর্থে বিচার থেকে বঞ্চিত করা সম্ভব। আমাদের বিচার ব্যবস্থায় এ প্রক্রিয়াটিই দশকের পর দশক ধরে অনুসৃত হয়ে চলেছে। এক সময় সমাজে একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয়-সামাজিক মূল্যবোধ এখনকার চেয়ে প্রখর ছিল। সামাজিক নেতৃত্বের অগ্রভাগে থাকা বয়জেষ্ঠ্য মুরুব্বিরা সামাজিক-পারিবারিক পর্যায়ের সাধারণ বিরোধ-বিসম্বাদ মিমাংসা ও নিরসন করে সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের পরিবেশ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতেন। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ণের যাঁতাকলে সবকিছু নিস্পিষ্ট হয়েছে। পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের মূল কারণ রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন। রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের অধিকাংশ নিজেরাই দুর্নীতিবাজ, অপরাধ প্রবণ, দখলবাজ-দাঙ্গাবাজ প্রকৃতির। কিছু এমপি, মন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় থাকা এসব ব্যক্তিরা স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর কর্মকর্তার প্রশ্রয়ে আরো বেপরোয়া ও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা- জেলাশহর থেকে বিভাগীয় ও রাজধানী শহর পর্যন্ত এদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আস্ফালন আমাদের চিরায়ত সামাজিক সংস্কৃতি ও ন্যায়বোধের মানদন্ডকে তিরস্কৃত করছে। পাড়া-মহল্লা থেকে শিক্ষাঙ্গণ, বিচারাঙ্গণ পর্যন্ত সমাজ ও রাষ্ট্রের কোনো সেক্টর এই দুর্বৃত্তায়িত চক্রের আগ্রাসন থেকে মুক্ত নয়। দেশের উচ্চ শিক্ষার যে সব ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান জাতির আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশার সোপানকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতো, এখন সেসব প্রতিষ্ঠান শান্তিপ্রিয় মানুষের মানসপটে এক প্রকার ঘৃণ্য-আতঙ্কের অধ্যায় রচনা করে চলেছে। দেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক পরিচয়ে চাঁদাবাজ-দাঙ্গাবাজ, সন্ত্রাসী, অপরাধী, মাদক কারবারী ও ধর্ষণের মত ভয়াবহ অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সামাজিক নিরাপত্তা ও মূল্যবোধের দুর্ভীক্ষ ও মহামারির শিকার হয়েছে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ। নতুন করোনাভাইরাস মাহামারিতে ব্যাপক মৃত্যুর মুখোমুখী মানুষও একসময় টীকা ও প্রতিষেধক উদ্ভাবন করে তার প্রতিকার খুঁজে নিতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জেঁকে বসা বিচারহীনতা ও দুর্বৃত্তায়নের মহামারির কবলে পড়া কোটি মানুষকে উদ্ধারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

দেশের আদালতগুলোতে এই মুহূর্তে অন্তত ৪২ লাখ মামলার জট। বর্তমান গতিতে চললে এসব মামলা নিস্পত্তি করতে শত বছর লেগে যাবে। গত ১৫ বছরে দেশের আদালতগুলোতে মামলার জট দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। গত বছরের আগস্টে আইন মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৮ সালে যেখানে দেশের আদালতগুলোতে জমে থাকা মোট মামলার সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার সেখানে ২০২২ সালে এসে তা ৪২ লাখে দাঁড়িয়েছে। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বহুবিধ মেগা প্রকল্প গ্রহণ এবং দেশকে ডিজিটালাইজড ও স্মার্ট করার নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও দেশের মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের বদলে তা আরো প্রলম্বিত করার ব্যবস্থাকেউ যেন পাকাপোক্ত করা হয়েছে। দেশে অপরাধ বাড়ছে, অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা কাজে না লাগিয়ে তাদেরকে নানাবিধ রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক কাজে ব্যস্ত রেখে দেশকে অপরাধিদের অভয়ারণ্যে পরিনত করা হচ্ছে। দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকার বাড়ে, ডাক্তার বাড়ে, ইঞ্জিনিয়ার বাড়ে, কোটিপতি আমলা ও ব্যবসায়ীর সংখ্যা যে হারে বাড়ে সে হারে বিচারকের সংখ্যা ও আদালতের সংখ্যা বাড়ে না। আইন কমিশনের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বৃটেনে জনসংখ্যা অনুপাতে বিচারকের সংখ্যা ৩ হাজার এবং আমেরিকায় প্রায় ১০ হাজার। সেখানে প্রতিবেশি দেশ ভারতে প্রতি ৪৭ হাজার মানুষের জন্য ১ জন এবং পাকিস্তানে তা প্রায় ৫০ হাজার। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ৯৪ হাজার ৪৪৪ জনের বিপরীতে একজন বিচারক বরাদ্দ রয়েছে। মামলাজট ও বিচারের সময়সীমা কমিয়ে আনতে আদালত ও বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বিচার ব্যবস্থার আমূল সংস্কার, আইনের সংস্কার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিশেষত পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে অস্বাভাবিক কালক্ষেপণ ও সাক্ষি হাজির করতে না পারার কারণে মামলায় সুবিচার পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ছে। নিজ ফ্ল্যাটে সাংবাদিক সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনী হত্যাকা-ের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অপরাধীদের ধরে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দেশের পুলিশ বাহিনী চাইলে অসম্ভবকে সম্ভব করার অনেক উদাহরণও আমাদের সামনে আছে। পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি, সিআইডির হাত ঘুরে শতবার সময় নিয়েও অদ্যাবধি সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত রিপোর্ট ও চার্জশিট জমা দিতে পারেনি বাংলাদেশ পুলিশ। দুর্মুখেরা বলেন, এ দলের সরকার ক্ষমতায় থাকতে এ হত্যাকা-ের বিচার নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। আমরা তা বিশ্বাস করতে চাইনা।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছাড়া প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মানুষ সত্যিকার অর্থে রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিরাপত্তা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারেনা। আর যে কোনো স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে সততা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ধারণ করতে হয়। ঔপনিবেশিক আমলে এবং পরবর্তী সময়েও এ দেশের বিচার বিভাগ সত্যিকার অর্থে স্বাধীন ছিল না। স্বাধীনতার তিন দশক পেরিয়ে এসে বাংলাদেশের শাসকশ্রেণী বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নটিকে মূলত রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তা না হলে যখন থেকে বিচারবিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক ও স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হলো, তখন থেকে বিচার বিভাগ কার্যত আগের চেয়ে বেশি স্থবির ও সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে উঠার অভিযোগ উঠেছে। আইন কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগ কখনোই সরকারের কাছ থেকে যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। পুলিশ ও দুদকের মত বিচার বিভাগকেও রাজনৈতিক ক্ষমতারস্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে সরকার। দেশে চলমান মামলাজটের পেছনে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্বৃত্তায়নের যেমন ভূমিকা রয়েছে, তেমনি বিরোধীদল ও মত দমনে পুলিশ ও বিচার বিভাগকে একচ্ছত্রভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে বিরোধী দলের প্রায় সব শীর্ষনেতা থেকে শুরু করে লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়ে কারাগারে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি কারাবন্দী আটক এবং এর ৫০ গুণ মানুষকে রাজনৈতিক মামলার আসামি বানিয়ে দেশের প্রতিটি আদালত প্রাঙ্গণ থেকে কারাগারগুলোকে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিনত করা হয়েছে। যেখানে পুলিশ শতবার সময় নিয়েও একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার তদন্ত রিপোর্ট বা চার্জশিট দিতে পারেনা। বছরের পর বছর ঘুরেও বিচার প্রার্থীরা ন্যায্য বিচার পায়না। সেখানে রাত পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম অব্যাহত রেখে পুলিশের মামলায় পুলিশের সাক্ষি নিয়ে রাতারাতি শত শত বিএনপি নেতাকর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়ার নজির নির্বাচনের আগে আমরা দেখেছি। দেশে সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র থাকলে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকলে, অর্ধকোটি মামলার এমন বিভীষিকাময় স্তুপ জমতো না। ফৌজদারী ও দেওয়ানি অপরাধের শিকার হওয়া লাখ লাখ পরিবার ন্যায্য বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে দশকের পর দশক ধরে বঞ্চিত হতো না। এ ধরণের সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি রাষ্ট্র প্রগতির পথে সামনের দিকে এগোতে পারে না। এ ধরণের পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আস্থার সংকট দেখা দেয়। যেনতেন প্রকারে দেশত্যাগ, অর্থ পাচার, পুঁজি পাচারের মাধ্যমে দেশকে দেউলিয়া করে তোলার মহাতৎপরতা এভাবেই শুরু হয়।

কিছু রাষ্ট্রীয় সংস্থা এবং এক শ্রেণীর বেপরোয়া স্বার্থান্ধ মানুষের মামলাবাজির শিকার হচ্ছে সব শ্রেণীর সাধারণ মানুষ। দুর্নীতির দুষ্টচক্র ধনীকে আরো ধনী, গরিবকে আরো গরিব করে দিচ্ছে। গত ১৮-০২-২০২৪ তারিখে দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মামলার জালে বন্দী অসংখ্য অসহায় মানুষের দুর্দশা ও হাহাকারের একটি প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক ব্যয় ও মূল্যবৃদ্ধির যাঁতাকলে নিস্পিষ্ট গরিব মানুষ দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা সুদে ঋণ করে নির্যাতন-নিপীড়িন ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গাছের সাথে বেঁধে যুবককে নির্যাতনের ছবিটি আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতার চেপে রাখা দৃশ্যপটকেই উন্মোচিত করেছে। বিপদে পড়ে কৃষিঋণ গ্রহণের পর সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় কৃষকের কোমড়ে দড়ি বেধে আদালতে হাজির করা হলেও হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে দেয়া ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় দিব্যি কোটি টাকা মূল্যের গাড়ী হাকিয়ে দুর্দন্ড দাপটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাদক সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভূমি দস্যুতার কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে অসংখ্য মধ্যবিত্ত পরিবার। বিদেশে শ্রম দিয়ে রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার সৈনিক রেমিটেন্স যোদ্ধাদের অনেকেই কষ্টার্জিত অর্থে দেশে একখ- জমি কিনে ভূমিদস্যুদের দখলবাজির শিকার হচ্ছে। মিথ্যা অংশীদার ও ভূয়া দলিল সৃষ্টি করে পরের জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দখল ও চাঁদাবাজির কৌশল পুলিশ প্রশাসন ও বিচার সংশ্লিষ্টদের অজানা নয়। ম্যাজিস্ট্রেট এসব দখলবাজ ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে মামলা করে প্রতিকার পেতে ১০-২০ বছর লেগে যায়। নিজের কষ্টার্জিত টাকায় সম্পত্তি কিনে জবরদখলের শিকার হয়ে মামলায় লাখ লাখ টাকা খরচ করতে না পারলেই কেবল সম্পত্তি রক্ষা করা যায়। জাতির ললাটে এ এক দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা। দেশকে প্রগতির পথে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে তথাকথিত ডিজিটাল কিংবা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার আগে আদালতের মামলাজট নিরসন এবং বিচার প্রাপ্তি দ্রুতায়িত করার সর্বোচ্চ উদ্যোগ প্রয়োজন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশ অ্যাক্ট (১৮৬১), ১৮৯৮ সালের সিআরপিসি বা ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধি গণতান্ত্রিক ও একবিংশ শতকের স্বাধীন বাংলাদেশের উপযোগী করার উদ্যোগের মধ্য দিয়েই তা শুরু করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিগত সরকারের আইন মন্ত্রীর ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩’ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি দখলবাজ ভূমিদস্যুদের জন্য নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। এই আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সঠিক প্রয়োগ ভূমি দখলবাজির মামলায় ১০-২০ বছর পার করে দেয়ার গতানুগতিক হতাশাজনক বাস্তবতায় নতুন আলোর পথ দেখাচ্ছে। দেশের আদালতগুলোতে বিদ্যমান ৪২ লক্ষাধিক মামলার প্রায় ৮০ ভাগই জমিজমার বিরোধ সংক্রান্ত। বিচারক, আইনজীবী ও পুলিশ প্রশাসনকে ভূমি অপরাধ প্রতিকার আইনের সফল প্রয়োগের মধ্য দিয়ে সমাজ পরিবর্তনের অগ্রবর্তী যোদ্ধা হয়ে ওঠার শপথ নিতে হবে।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

নিরঙ্কুশ ব্যবধানে টানা তৃতীয়বারের মতো লন্ডনের মেয়র সাদিক খান

নিরঙ্কুশ ব্যবধানে টানা তৃতীয়বারের মতো লন্ডনের মেয়র সাদিক খান

যাকাত ফরজ হওয়ার পর আদায় না করে মৃত্যুবরণ করা প্রসঙ্গে।

যাকাত ফরজ হওয়ার পর আদায় না করে মৃত্যুবরণ করা প্রসঙ্গে।

আট দফা কমার পর বাড়ল সোনার দাম

আট দফা কমার পর বাড়ল সোনার দাম

অবশেষে ময়মনসিংহে বৃষ্টি: জনজীবনে স্বস্তি

অবশেষে ময়মনসিংহে বৃষ্টি: জনজীবনে স্বস্তি

সরকার চিকিৎসা খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করে যাচ্ছে -ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল এমপি

সরকার চিকিৎসা খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করে যাচ্ছে -ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল এমপি

সাগরদাঁড়িতে জলন্ত চুলায় পড়ে দু ' শিশু দগ্ধ, এক শিশুর করুণ মৃত্যু

সাগরদাঁড়িতে জলন্ত চুলায় পড়ে দু ' শিশু দগ্ধ, এক শিশুর করুণ মৃত্যু

সুন্দরবনে ভয়াবহ আগুন, শুরু হয়নি অগ্নি নির্বাপনের কাজ

সুন্দরবনে ভয়াবহ আগুন, শুরু হয়নি অগ্নি নির্বাপনের কাজ

আবারো লন্ডনের মেয়র হিসেবে বিজয়ী সাদিক খান

আবারো লন্ডনের মেয়র হিসেবে বিজয়ী সাদিক খান

বিএনপির ডাকা চলমান আন্দোলনের অংশ হিসাবে ৮মে প্রথম ধাপার উপজেলা নির্বাচন বয়কটের দাবিতে কেশবপুর পৌর শহরে লিফলেট বিতরণ

বিএনপির ডাকা চলমান আন্দোলনের অংশ হিসাবে ৮মে প্রথম ধাপার উপজেলা নির্বাচন বয়কটের দাবিতে কেশবপুর পৌর শহরে লিফলেট বিতরণ

ইসলামী ছাত্র মজলিসের উদ্যোগে প্রাক্তন প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ইসলামী ছাত্র মজলিসের উদ্যোগে প্রাক্তন প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত

নির্বাচিত হলে লৌহজংয়ে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ও হাসপাতাল গড়ে তুলবো: বিএম শোয়েব

নির্বাচিত হলে লৌহজংয়ে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ও হাসপাতাল গড়ে তুলবো: বিএম শোয়েব

আদানি পাওয়ারের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ৩০ শতাংশ

আদানি পাওয়ারের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ৩০ শতাংশ

সুন্দরবনে আগুনের খবর শুনে বনে ছুটে গেলেন ইউএনও তারেক সুলতান

সুন্দরবনে আগুনের খবর শুনে বনে ছুটে গেলেন ইউএনও তারেক সুলতান

সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় চান আমলারা, যা বলছেন নেটিজেনরা

সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় চান আমলারা, যা বলছেন নেটিজেনরা

ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সামার ২০২৪ সেমিস্টারের ওরিয়েন্টেশন

ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সামার ২০২৪ সেমিস্টারের ওরিয়েন্টেশন

ক্ষমতাসীনদের ইশারায় সারাদেশে লুটপাট হচ্ছে: মোনায়েম মুন্না

ক্ষমতাসীনদের ইশারায় সারাদেশে লুটপাট হচ্ছে: মোনায়েম মুন্না

মির্জাপুরে তীব্র পানির সংকট নিরসনে শহরের ব্যস্ততম চারটি স্থানে এমপি শুভর নলকূপ স্থানের উদ্যোগ

মির্জাপুরে তীব্র পানির সংকট নিরসনে শহরের ব্যস্ততম চারটি স্থানে এমপি শুভর নলকূপ স্থানের উদ্যোগ

ব্রাহ্মণপাড়ায় পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার নিশ্চিতে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা

ব্রাহ্মণপাড়ায় পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার নিশ্চিতে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা

শ্রমিকদের নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা - বদিউজ্জামান সোহাগ

শ্রমিকদের নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা - বদিউজ্জামান সোহাগ

যুদ্ধ সভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে: ভিসি ড. মশিউর রহমান

যুদ্ধ সভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে: ভিসি ড. মশিউর রহমান