পরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে

Daily Inqilab সরদার সিরাজ

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম

জার্মানির মিউনিখে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি। এটা ৬০তম সম্মেলন। আলোচনার মাধ্যমে বিশ্বশান্তির লক্ষ্যে এ সম্মেলনের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৩ সালে মিউনিখে। তারপর থেকে প্রতিবছর এ সম্মেলন হচ্ছে। এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক দেশের শীর্ষ নেতা/উচ্চতর প্রতিনিধি ও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন। এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় জাতিসংঘের মহাসচিব ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের স্থায়ী সমাধান এবং মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তা অর্জনের জন্য দুই-রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলেন। তাঁর কথার প্রতিধ্বনি করেন ইইউ, সৌদি আরব, ভারত, জার্মান, মিশর, চীন ও কাতারের প্রতিনিধিরা। এছাড়া, সম্মেলনে ইইউ’র ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও শঙ্কা প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউয়ের প্রতিনিধিরা। তাতে অনেকেই ন্যাটো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতির কঠোর সমালোচনা করেন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখ-ের অখ-তাকে সম্মান করা উচিত, জাতিসংঘ সনদের নীতিমালা মেনে চলা উচিত, বিভিন্ন দেশের যুক্তিসঙ্গত উদ্বেগকে সম্মান করা উচিত। শান্তিপূর্ণভাবে সংকট সমাধানের প্রচেষ্টাকে সমর্থন দেয়া উচিত। এ সম্মেলনের এক প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু অর্থায়ন ছাড় করার ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য তহবিলকে সরিয়ে আনার লক্ষ্যে অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করার এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানান।র এছাড়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কার্বন নিঃসরণে নগণ্যতম (বৈশ্বিক নিঃসরণের ০.৪৮%) দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বোচ্চ হুমকির মুখে থাকা দেশগুলোর অন্যতম। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তহবিলের জোগান ক্রমেই কমে আসছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন ও সহনশীলতা অর্জনে এ দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত তহবিল নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

এবারের মিউনিখ সম্মেলনে নিরাপত্তা নিয়ে যে আলোচনা ও শঙ্কা প্রকাশিত হয়েছে তা যথার্থ। কারণ, সম্প্রতি যুদ্ধাভাব বিরাজ করছে বিশ্বব্যাপীই। উপরন্তু কোথাও কোথাও ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। তাতে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হচ্ছে! ফিলিস্তিনে চলছে ইসরাইলের ব্যাপক হত্যাকা- ও ধ্বংস, যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়ন। ইইউর গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতাকে হলোকাস্টের সঙ্গে তুলনা করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা। যা’হোক, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও যুদ্ধজয়ের আশায় নিত্য নতুন শক্তিশালী যুদ্ধাস্ত্র আবিষ্কার এবং তা ব্যাপকভাবে তৈরি ও বাজারজাত হচ্ছে। ফলে বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় বাড়ছে। গত ২৪ এপ্রিল’২৩ প্রকাশিত স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের বার্ষিক সামরিক ব্যয় প্রতিবেদন মতে, ২০২২ সালে বিশ্বে সামরিক খাতে ব্যয় হয়েছে ২.২৪ ট্রিলিয়ন ডলার, যা গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালে এ ব্যয় আরো বেড়েছে! সর্বোপরি সম্প্রতি রাশিয়া ঘোষণা করেছে, সে মহাকাশের অস্ত্র ধ্বংস করার অস্ত্র তৈরি করছে।তাই আরো কিছু দেশ এই কাজ করবে নিঃসন্দেহে। এছাড়া, কয়েকটি দেশের কাছে অনেকগুলো করে পরমাণু বোমা রয়েছে। উপরন্তু কয়েকটি দেশ পরমাণু বোমা তৈরি করছে। তাই যেকোন একটি দেশ পরমাণু বোমা ব্যবহার করলেই সাথে সাথে পরমাণু যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে বিশ্বব্যাপী। সেটা হলে তার পরিণতি কী হবে তা দেখার মতো কেউ বেঁচে থাকবে না বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। তাই বিপুল ব্যয়ে ব্যাপক মারণাস্ত্র তৈরি করে লাভ কী? এসব পরিহার করে সব সংকট আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করা দরকার। তাতে বৈশ্বিক শান্তি ও উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্তর্জাতিক আহ্বান ইসরাইলের মন্ত্রিসভা প্রত্যাখ্যান করেছে সম্প্রতি। তাই ইসরাইলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। তবেই দেশটি বাধ্য হবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায়। তবেই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।

এবারের নিরাপত্তা সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোকে কপ-২৮ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করে বার্ষিক সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো ক্ষতি মোকাবেলা করতে পারছে না। তাতে সেখানে দারিদ্র্য ও সংঘাত বাড়ছে, যার ব্যাপক প্রভাব পড়ছে বৈশ্বিক শান্তি ও উন্নতিতে। তাই সামরিক ব্যয় কমিয়ে সে অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোকে দেওয়া দরকার। পাশাপাশি বায়ুম-লের উঞ্চতা বৃদ্ধি রোধ করা প্রয়োজন। অন্যথায় ধরিত্রীকে বাঁচানো যাবে না। সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পঙ্গপালের প্রাদুর্ভাব হতে পারে, যা জাতিসংঘের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক কীট। তবুও বায়ুম-লের উঞ্চতা বাড়ছেই! সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাড়তে থাকা উষ্ণতার কারণে সদ্য রেকর্ডকৃত ইতিহাসের উষ্ণতম জানুয়ারির অভিজ্ঞতা হয়েছে বিশ্বের। এর আগে ২০২৩ এই গ্রহের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হয়েছিল। সংস্থাটির এক কর্মকর্তা বলেন, রেকর্ডের উষ্ণতম জানুয়ারির পাশাপাশি ১২ মাস ধরে আমরা প্রাক-শিল্পযুগের সময়ের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি থামানোর একমাত্র পথ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন দ্রুত হ্রাস করা। উপরন্তু মার্কিন বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি বলেছেন, পূর্ববর্তী বছর থেকেও ২০২৪ সাল উষ্ণ হওয়ার খুব আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই বায়ুম-লের উঞ্চতা কমানো অত্যাবশ্যক।

অপরদিকে, গরিব দেশগুলোর শুধু ধনী দেশগুলো থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ নিয়েই ক্ষান্ত হলে চলবে না, নিজেদেরও কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে। বাস্তবে তা হচ্ছে না। সম্প্রতি প্রকাশিত ব্রাজিলের ফেডেরাল ইউনিভার্সিটি অব সান্তা ক্যাটারিনা পরিচালিত এক গবেষণা রিপোর্ট মতে, অ্যামাজন রেইনফরেস্টের ক্ষয়ক্ষতি ২০৫০ সালের মধ্যে এমন এক চূড়ান্ত পর্যায় পৌঁছাবে যেখান থেকে এর পুনরুদ্ধার অসম্ভব হবে, যার ভয়ানক প্রভাব পড়বে এর পাশের অঞ্চলগুলোতে। জলবায়ু পরিবর্তন সামাল দেওয়ার সক্ষমতাও হারাবে পৃথিবী। ৬৫ মিলিয়ন বছর ধরে প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে টিকে আছে অ্যামাজন। কিন্তু বনাঞ্চল ধ্বংস ও মানব সৃষ্ট জলবায়ু সংকট বনের পরিবেশের ওপর নতুন মাত্রার চাপ যোগ করেছে। আমাজন এখনো পৃথিবীর প্রায় ১৫-২০ বছরের সমপরিমাণ কার্বন ধারণ করে। অর্থাৎ পৃথিবীর ‘ফুসফুস’ হিসেবে খ্যাত আমাজন অপমৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়েছে। এটা কিন্তু বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষের নানা অপকর্মের কারণেই হচ্ছে! একই অবস্থা বাংলাদেশেও। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ৭ম। তাই বাংলাদেশ সুযোগ পেলেই ক্ষতিপূরণ প্রদানের ও বায়ুম-লের উঞ্চতা কমানোর আহ্বান জানায়। অথচ, নিজ দেশেই কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ব্যাপক। বাতাসের দূষণের মাত্রার বৈশ্বিক সূচকে ঢাকার অবস্থান শীর্ষে থাকছে প্রায়ই, যার অন্যতম কারণ শিল্প, যানবাহন ও ইটভাটার ব্যাপক কালো ধোঁয়া এবং বিভিন্ন বস্তুকণা। পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রেও তথৈবচ! কারণ, পরিবেশ রক্ষার জন্য সব দেশেই মোট আয়তনের ২৫% বনাঞ্চল থাকতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের পরিবেশমন্ত্রী গত ৬ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টে বলেন, ‘দেশের মোট আয়তনের ১৫.৫৮% এলাকায় বনভূমি রয়েছে’। অর্থাৎ বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় বনাঞ্চল নেই। উপরন্তু যেটুকু আছে তাতেও প্রয়োজনীয় বৃক্ষ নেই। ফলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। তবুও এদিকে গুরুত্ব নেই! দ্বিতীয়ত: বাংলাদেশের নদী, খাল, বিল, হাওর, পুকুর, দীঘি ইত্যাদির অবস্থা নাজুক। নৌ প্রতিমন্ত্রী গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টে বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট নদীর সংখ্যা ১,০০৮টি। তন্মধ্যে ৩০৮টি নদী নাব্যতা হারিয়েছে। খবরে প্রকাশ, পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনকে ঘিরে রাখা ৫৩ নদী নাব্য হারিয়েছে। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে খুলনা অঞ্চলের নদীগুলোর প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অন্য এক খবরে প্রকাশ, উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রাকৃতিক জলাধার চলনবিল। নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার সাতটি উপজেলা নিয়ে এ বিলের বিস্তৃতি। আত্রাই, করতোয়াসহ ৪৭টি নদ-নদী, ছোট-বড় বিল ও জলাধারসমৃদ্ধ বৃহৎ এ জলরাশি। এরই একটি শাখা বিল নাটোরের হালতি, যা প্রাকৃতিক মাছের প্রজননস্থল হিসেবে বিখ্যাত। আর চলনবিলকে বলা হয় দেশের শস্য ও মৎস্যভা-ার। নানা কারণে বিপন্ন এ বিল দুটিকে পরিবেশ অধিদপ্তর প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণার কথা ভাবছে। এসব হচ্ছে ফারাক্কার পানি চুক্তির পরও। কারণ, চুক্তি আছে কিন্তু পানি নেই। যেমন: ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি চুক্তির পর বাংলাদেশে গঙ্গার পানির অংশ দাঁড়িয়েছে সেকেন্ডে ২০ হাজার ঘনফুটের কম। অথচ, ফারাক্কা বাঁধ চালুর আগে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ প্রায় ৭০ হাজার কিউসেক পানি পেত। অথচ, ফারাক্কা চুক্তিকে ঐতিহাসিক চুক্তি বলে কতই না ডঙ্কা বাজানো হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের তিস্তা ও তার অববাহিকার অবস্থাও করুণ। গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত খবর হচ্ছে, ‘তিস্তার বর্তমান চিত্র মরুভূমির মতো। চারদিকে ধু-ধু বালুচর। হেঁটে পার হওয়া যায়’। ‘বগুড়ায় মৃতপ্রায় করতোয়ার বুকে চলছে চাষাবাদ’। তবুও তিস্তা চুক্তি করবে বলে ভারত বারংবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা করছে না। আবার চীনের প্রস্তাবিত তিস্তা মহা পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না ভারতের আপত্তির কারণে! অর্থাৎ ভারতের পানি আগ্রাসন ও দাদাগিরির কারণে দেশের সর্বনাশ হচ্ছে। একই অবস্থা ব্রহ্মপুত্র নদীর ক্ষেত্রেও। সরকার কোন জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে না ভারত ও চীনের প্রতি চরম নতজানুতার কারণে! স্মরণীয় যে, এ দেশের সব আন্তর্জাতিক নদীর উৎস ভারত ও চীনে। কিন্তু তারা সে নদীগুলোতে অনেক বাঁধ দিয়ে পানি ডাইভার্ট এবং বহু পানিবিদ্যুৎ করার কারণে নদীগুলোর পানি ঠিকমতো আসছে না ভাটিতে। ফলে বাংলাদেশের সব নদী এবং নদী সৃষ্ট সব পানিস্থল শুকিয়ে যাচ্ছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ইরান বেতারে প্রকাশ, ‘গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের নদীর সংখ্যা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। বর্তমানে দূষণ ও ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনের পাশাপাশি অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, নগরায়ন, আবাসন এবং সেতু, কালভার্ট ও স্লুইসগেট নির্মাণের ফলে ছোটবড় আরও অনেক নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন দশায় পতিত হয়েছে। বাংলাদেশে একদা ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ ছিল, এখন অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৬ হাজার কিলোমিটারের মতো। হারিয়ে যাওয়া নৌপথের তালিকায় ক্রমেই যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। এতে দেশের খাল, বিল, হাওর ইত্যাদির সর্বনাশ হচ্ছে। দেশ প্রায় মরুভূমিতে পরিণত হয়ে কৃষি, জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সর্বনাশের বাকীটা হচ্ছে, নদী, খাল, বিল ইত্যাদি নিয়মিত সংস্কার না করায় মজে যাওয়ার ফলে। উপরন্তু ব্যাপকভাবে দখলও হচ্ছে। সর্বোপরি যেটুকুতে পানি আছে তার অধিকাংশের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন, প্লাস্টিক ও নানা দূষিত বর্জ্যের কারণে। এসবের জন্য বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দায়ী নয়। দায়ী ভারত ও চীন এবং অভ্যন্তরীণ নানা অপকর্ম। ইদানিং কিছু কিছু নদী পুনঃখনন করা হয়েছে ও হচ্ছে।কিন্তু সেটা সঠিকভাবে না হওয়ায় তার সুফল মিলছে না। মানুষের জীবনমানের উন্নতি, জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বায়ুম-লের উঞ্চতা হ্রাসের জন্য পরিবেশের সুরক্ষা অবশ্যই সর্বাধিকারযোগ্য। তা করতে হবে বৈশ্বিক বিষয় বৈশ্বিকভাবে, আঞ্চলিক বিষয় আঞ্চলিকভাবে ও অভ্যরীণ বিষয় অভ্যন্তরীণভাবে। নতুবা ধরিত্রী ধ্বংস হয়ে যাবে। কোনো মারণাস্ত্রতেই রক্ষা হবে না।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গুরুতর অসুস্থ প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার স্বামী নিক জোনাস! রাতারাতি বাতিল সব কনসার্ট

গুরুতর অসুস্থ প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার স্বামী নিক জোনাস! রাতারাতি বাতিল সব কনসার্ট

দৌলতপুরে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচন নিয়ে শিক্ষক মহলে নানা গুঞ্জন ও ক্ষোভ

দৌলতপুরে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচন নিয়ে শিক্ষক মহলে নানা গুঞ্জন ও ক্ষোভ

ভোলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ২৫

ভোলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ২৫

কোভিড টিকায় ক্ষতির অভিযোগ, মামলা জয়ে এগিয়ে গেল ভুক্তভোগী

কোভিড টিকায় ক্ষতির অভিযোগ, মামলা জয়ে এগিয়ে গেল ভুক্তভোগী

উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাড়ালেন চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন

উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাড়ালেন চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন

স্কুলে নিয়োগ পরীক্ষায় টাকা নেওয়ার অভিযোগ

স্কুলে নিয়োগ পরীক্ষায় টাকা নেওয়ার অভিযোগ

বাংলাদেশে নতুন করে বিজিপি সদস্যসহ ৩৬ মিয়ানমার নাগরিকের প্রবেশ

বাংলাদেশে নতুন করে বিজিপি সদস্যসহ ৩৬ মিয়ানমার নাগরিকের প্রবেশ

ক্যান্সারে নিভে গেল ইবি শিক্ষকের প্রাণ

ক্যান্সারে নিভে গেল ইবি শিক্ষকের প্রাণ

ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাচন   চেয়ারম্যান প্রার্থী খান আরিফকে শোকজ চার অভিযোগের লিখিত ব্যাখ্যার নির্দেশ

ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাচন চেয়ারম্যান প্রার্থী খান আরিফকে শোকজ চার অভিযোগের লিখিত ব্যাখ্যার নির্দেশ

পেঁয়াজের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ভারত

পেঁয়াজের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ভারত

সড়ক ছাড়লেন শ্রমিকরা, যান চলাচল স্বাভাবিক

সড়ক ছাড়লেন শ্রমিকরা, যান চলাচল স্বাভাবিক

নোয়াখালীতে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষঃ নিহত ৪

নোয়াখালীতে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষঃ নিহত ৪

কলাপাড়া যুবলীগ নেতার খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ

কলাপাড়া যুবলীগ নেতার খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ

কোন বিচারক পাবলিক কোন স্টেটমেন্ট দিতে পারবেননা : মৌলভীবাজারে প্রধান বিচারপতি

কোন বিচারক পাবলিক কোন স্টেটমেন্ট দিতে পারবেননা : মৌলভীবাজারে প্রধান বিচারপতি

শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেন মুফতি মাও: মুজির উদ্দিন  ভোলা

শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেন মুফতি মাও: মুজির উদ্দিন ভোলা

উপজেলা নির্বাচন হবে প্রভাবমুক্ত- দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান

উপজেলা নির্বাচন হবে প্রভাবমুক্ত- দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান

চীনের সাহায্যে চাঁদে পাড়ি দিল পাকিস্তানের প্রথম চন্দ্র-উপগ্রহ!

চীনের সাহায্যে চাঁদে পাড়ি দিল পাকিস্তানের প্রথম চন্দ্র-উপগ্রহ!

যুক্তরাজ্যে স্থানীয় নির্বাচনে লেবার পার্টির বড় জয়, সুনাকের দল ধরাশায়ী

যুক্তরাজ্যে স্থানীয় নির্বাচনে লেবার পার্টির বড় জয়, সুনাকের দল ধরাশায়ী

উপজেলা নির্বাচনী প্রচারণায় এগিয়ে জাহিদুল ইসলাম জুয়েল

উপজেলা নির্বাচনী প্রচারণায় এগিয়ে জাহিদুল ইসলাম জুয়েল

ইরানকে যেভাবে নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় সাহায্য করছে চীন

ইরানকে যেভাবে নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় সাহায্য করছে চীন