মার্কিন নেতৃত্বে গাজায় গণহত্যা
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১৩ এএম
ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে ৭৫ বছরের বেশি সময় ধরে চলা আগ্রাসন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের প্রত্যাঘাত হিসেবে গত বছরের ৭ অক্টোবর অপারেশন আল আকসা ফ্লাড পরিচালিত হয়। এ অজুহাতে সাড়ে চার মাসের বেশি সময় ধরে গাজা ভূখন্ডের উপর নজির বিহীন ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল। বিশ্ববিবেক তাদের নির্বিচার বোমা হামলার বিরুদ্ধে দাঁড়ালেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই নেতানিয়াহুর আগ্রাসী বাহিনীকে শর্তহীন সমর্থন ও সামরিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। শত শত কোটি ডলারের অস্ত্র, কূটনৈতিক সমর্থনসহ জাতিসংঘের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যেতে নিতানিয়াহুকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। সাড়ে চার মাসের যুদ্ধে ইসরাইলীরা গাজায় অন্তত ৩০ হাজার মানুষকে হত্যা এবং ৭০ হাজার মানুষকে আহত করেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, নিহত ৩০ হাজারের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১২,৩০০ এবং নারীর সংখ্যা ৮,৪০০জন। গাজার উত্তর ও দক্ষিণাংশে ইসরাইলি বোমা হামলার ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অন্তত ৩টি পারমানবিক বোমা হামলার সমান বলে সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ইউরোপ-আমেরিকার প্রায় প্রতিটি বড় শহরে এবং সারা বিশ্বে ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে উঠলেও মার্কিন প্রশাসন জনমতের তোয়াক্কা না করে ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার পক্ষে তার শক্ত অবস্থান বার বার নিশ্চিত করছে।
গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আলজেরিয়ার আনা একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে ব্যর্থ হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য রাষ্ট্রের ১৩টি যুদ্ধ বিরতির পক্ষে এবং যুক্তরাজ্য ভোটদানে বিরত থাকলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর বিরোধিতা করে ভোট বা ভেটো দিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটিকে নস্যাৎ করে দেয়। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে তৃতীয়বারের মত গাজায় নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে নস্যাৎ হয়ে গেলো। নিজেদের মাতৃভূমি ও পবিত্র স্থানগুলোর মর্যাদা রক্ষার যুদ্ধে হামাসসহ ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ত্যাগ ও সক্ষমতার বিপরীতে বিশ্বজনমত থেকে বিচ্ছিন্ন ইসরাইলকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে গণহত্যা চালিয়ে যেতে পেছন থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে একের পর এক ভেটো প্রদান, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে আইসিজে’র ট্রাইবুনালের সম্ভাব্য রায়ের আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া থেকে ইসরাইলের গণহত্যার সমর্থনে তার অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। তারা লাখ লাখ ফিলিস্তিনের মানবিক বিপর্যয় ও হাজার হাজার হত্যার ধারাবাহিক ঘটনাগুলোকে অগ্রাহ্য করে ইসরাইলের নিরাপত্তার কথা বলে প্রকারান্তরে আইসিজে’র প্রতি হুমকি দেয়া হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নি:শর্ত সমর্থন পেয়ে যুদ্ধবাজ ইসরাইলীরা মানবতা ও যুদ্ধাপরাধের কোনো মানদন্ডের তোয়াক্কা করছে না। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্ব জনমত বিপক্ষে চলে যাওয়ার বিপদ আঁচ করে মাঝে মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও গাজায় মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির পক্ষে কথা বললেও নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতির বিপক্ষে তাদের কথাবার্তা অনেকটা আইওয়াশ মাত্র। গত চার মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে শত শত কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা নিয়ে পাশে দাড়ানোর পাশাপাশি যুদ্ধ বিরতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রয়াসগুলো তার ভেটোর কারণে বার বার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে।
নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। আলজেরিয়ার উত্থাপিত প্রস্তাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেটো না দিলে অনেক আগেই একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি সম্ভব ছিল। এর মধ্য দিয়ে গাজার হাজার শিশু ও নারী বেপরোয়া বিমান হামলায় মৃত্যু এবং লাখ লাখ ফিলিস্তিনি দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেত। এ কারণে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোকে গণহত্যার লাইসেন্স হিসেবে অভিহিত করছেন বিশ্ব নেতারা। সাড়ে সাত দশকের বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি দখলদারিত্ব, আগ্রাসন, গণহত্যার ধারাবাহিকতায় চলমান যুদ্ধকে হিটলারের ইহুদি নিধন বা হলোকষ্টের সাথে তুলনা করেছেন অনেকেই। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা গাজায় ইসরাইলের গণহত্যাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের হলোকষ্টের সাথে তুলনা করেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইল ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টকে অবাঞ্ছিত ঘোষণাসহ নানা রকম বাক্যবাণ ছুঁড়ে চলেছে। হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যার ধারাবাহিক যুদ্ধাপরাধ অব্যাহত রেখেও ইসরাইলের যুদ্ধবাজ নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছত্রছায়া ও পৃষ্ঠপোষকতায় ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যাচ্ছে। সভ্য দুনিয়ার জন্য এটি অনেক বড় দুর্ভাগ্য ও দুর্ভাবনার বিষয়। গাজাকে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করে, হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেও ইসরাইলীরা হামাসের কাছে থেকে কোনো পণবন্দীকে মুক্ত করতে পারেনি। উপরন্তু তারা অভাবনীয় ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ইসরাইলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যক্কারজনক সমর্থনের কারণে চীন-রাশিয়াসহ ফিলিস্তিনের প্রতি মানবিক ও সহানুভূতিশীল বিশ্বনেতাদেরকেও অর্থ, অস্ত্র ও কূটনৈতিক সহায়তা নিয়ে প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে পাশে থাকার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। পুরো অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া ও গণহত্যার বাস্তবতায় সহজে কোনো পক্ষের বিজয় নিশ্চিত হওয়া ক্রমেই দুরূহ হয়ে পড়ছে। এ বাস্তবতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলের দখলদারিত্বের অবসান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া ইসরাইলের নিরাপত্তা আশা করা এখন আর সম্ভব নয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সামার ২০২৪ সেমিস্টারের ওরিয়েন্টেশন
ক্ষমতাসীনদের ইশারায় সারাদেশে লুটপাট হচ্ছে: মোনায়েম মুন্না
মির্জাপুরে তীব্র পানির সংকট নিরসনে শহরের ব্যস্ততম চারটি স্থানে এমপি শুভর নলকূপ স্থানের উদ্যোগ
ব্রাহ্মণপাড়ায় পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার নিশ্চিতে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা
শ্রমিকদের নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা - বদিউজ্জামান সোহাগ
যুদ্ধ সভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে: ভিসি ড. মশিউর রহমান
সরকার হটাতে গণবিপ্লব ঘটাতে হবে : আমিনুল হক
নারী বিশ্বকাপের সূচির জন্য শেষ মুহূর্তের অপেক্ষা
বোর্নমাউথকে হারিয়ে শিরোপার লড়াইয়ে থাকল আর্সেনাল
ট্রেনভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও গণবিরোধী
ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যায় নিহত অন্তত ৩৯, নিখোঁজ ৬৮
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিও জিতে ব্যবধান ২-০ করার লক্ষ্য বাংলাদেশের
১৭ জন রোগীকে হত্যার অভিযোগে ৭০০ বছরের বেশি কারাদণ্ড নার্সের
১৭ জন রোগীকে হত্যার অভিযোগে ৭০০ বছরের বেশি কারাদণ্ড নার্সের
চীন সবসময় সার্বিয়ার সেরা অংশীদার: প্রেসিডেন্ট ভুসিক
ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসন রুখে দাঁড়াতে হবে
গাজায় যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে মিসরে ঐকমত্য
আন্তর্জাতিক উদ্ভাবন প্রতিযোগিতায় ইরানি শিক্ষার্থীদের সাফল্য
সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার
গোবিন্দগঞ্জে দুবৃর্ত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে যুবক নিহত\ আটক ২