বিদ্যুৎ-গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করুন
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
গ্রাহক পর্যায়ে আবার বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। গত কিছুদিন ধরেই এ নিয়ে গুঞ্জন ছিল, গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল ইনকিলাবসহ সহযোগী অন্যান্য দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার গ্রাহক পর্যায়ে ইউনিট প্রতি সর্বোচ্চ ৭০ পয়সা বাড়বে বিদ্যুতের দাম। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপণ জারির পর আগামি ১ মার্চ থেকে তা কার্যকর হবে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক বাস্তবতা উপেক্ষা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির এ ঘোষণায় জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম হলেও সরকার ধারাবাহিকভাবে ধাপে ধাপে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার আগাম ঘোষণা দিয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় বাড়তি অর্থের চাহিদা পুরণ এবং আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের শর্ত মোতাবেক বিদ্যুতখাতে ভর্তুকি বন্ধের উদ্দেশ্যে সরকার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। তবে গত দেড় দশকে সরকার ভোক্তা পর্যায়ে অন্তত ১৪ বার বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়েও ভর্তুকি কমাতে পারেনি, সেবার মানও বাড়াতে পারেনি। গ্রাহকরা ক্রমবর্ধমান হারে বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করেও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পাচ্ছে না। সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প হিসেবে গত ১৫ বছরে দেশের বিদ্যুত খাতে লক্ষকোটি টাকার বিনিয়োগ করা হয়েছে। সরকারি হিসেবে দেশের চাহিদার চেয়েও বিদ্যুতের উৎপাদনসক্ষমতা অনেক বেশি হলেও জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এ সক্ষমতা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। উপরন্তু, রেন্টাল,কুইক-রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্রের সাথে অস্বচ্ছ-অন্যায্য চুক্তির আওতায় ক্যাপাসিটি চার্জের নামে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ না নিয়েও বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলার গচ্চা দিতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি সব ধরণের পরিবহনসহ কৃষি, খাদ্যোৎপাদন, শিল্পোৎপাদন, শিক্ষা ও সামাজিক অগ্রগতিতে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে থাকে। দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েই চলেছে। ধনী আরো ধনী, গরীব আরো গরিব হওয়ার বাস্তবতায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন হয়ে পড়েছে। মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে পিষ্ট সাধারণ মানুষ যখন সন্তানের খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষার মত মৌলিক চাহিদা পুরণ করতে পারছে না, তখন বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ‘মরার উপর খাড়ার ঘাঁ’র মত। আমাদের নাগরিক জীবনযাত্রায় গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ এখন একটি মৌলিক চাহিদার অংশ। আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের চাপে কিংবা বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে এভাবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই। জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আগে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের অংশগ্রহণে বিইআরসি’র গণশুনানীর বাধ্যবাধকতাকে অগ্রাহ্য করে নির্বাহী আদেশে মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য ও মূল্যস্ফীতির প্রবণতাকে আরো লাগামহীন করে তুলেছে। গ্যাস-বিদ্যুতখাতে লাগামহীন দুর্নীতি, অবৈধ সংযোগ, অস্বচ্ছতার মাধ্যমে মাত্রাহীন অপচয়, ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রক্রিয়া বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করে শুধুমাত্র ভোক্তার পকেট থেকে টাকা তুলে নেয়া ভালো নজির নয়। অব্যাহত গতিতে মূল্য বাড়ানো হলেও বিদ্যুৎ ও গ্যাসের কোনো পর্যায়ের গ্রাহকই নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পাচ্ছে না। গত বছর ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টগুলোতে দুই দফায় ২০০ ভাগ দাম বাড়ানোর পরও তারা নরিবচ্ছিন্ন গ্যাস পাচ্ছে না বলে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়।
গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা, উৎপাদন, ঘাটতি ও লোকসানের পরিসংখ্যানের সামগ্রিক মূল্যায়ন ও বিধি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অর্থনৈতিক সংকটকালে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে সাধারণ দরিদ্র মানুষ। দেশে নতুন বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থান নেই, বৈদেশিক কর্মসংস্থানে রেমিটেন্স প্রবাহে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি নেই। এহেন বাস্তবতায় শুধুমাত্র গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে কোটি কোটি গ্রাহকের জীবনযাত্রাকে আরো দুর্বিষহ করে তোলার সরকারি পদক্ষেপ সমর্থনযোগ্য হতে পারেনা। গ্যাস সংকটের কারণে দেশের শিল্পোৎপাদন এবং আবাসন শিল্পে এক ধরণের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। নিয়মিত গ্যাসবিল পরিশোধ করলেও ২৪ ঘন্টায় চারঘন্টাও গ্যাস পাচ্ছে না ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের আবাসিক গ্রাহকরা। ২৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেও ১৪ হাজার মেগাওয়াটের চাহিদা পুরণ করতে না পেরে বিদ্যুতে প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ ঘন্টা লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি আরো খারাপ। এখন গ্রামীণ অর্থনীতিও বিদ্যুৎ নির্ভর হয়ে পড়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ছাড়া বিভিন্ন ক্ষুদ্র উদ্যোগ ও উৎপাদন টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। রফতানিমুখী পোশাক শিল্প থেকে শুরু করে প্রান্তিক মানুষের কর্মসংস্থান, জীবনযাত্রা ও উৎপাদন ব্যবস্থায় গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন চাহিদার ঘাটতি সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে দুষ্টক্ষত সৃষ্টি করছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং একদিকে যেমন কৃষি উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। সামনেই রমজান মাস এবং ঈদ, তারপর আসছে গ্রীষ্মকাল । বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বেই। এ সময় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং লোডশেডিংয়ের বাস্তবতা জনজীবনে বড় ধরণের দুর্ভোগ ডেকে আনবে। সরকারের গৃহিত সিদ্ধান্ত অনুসারে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের মূল্য কয়েক ধাপে বর্তমান মূল্যের দ্বিগুণ করার কথা বলা হয়েছে। আবাসিকে ইউনিট প্রতি বাংলাদেশের চেয়ে অর্ধেকের কম মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ খাতে প্রফিট করলেও বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়েও গত ১৫ বছরে লোকাসান ও ভর্তুকির পরিমান কয়েকগুণ বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে সেবার মানবৃদ্ধির কোনো উদ্যোগ না থাকা দু:খজনক। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অস্বচ্ছতা ও ইমুউনিটির সংস্কৃতি বন্ধ করে সরকারকে দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইউনাইটেডের আরও এক লজ্জার রাত
গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
সিরিজ নিশ্চিতের অভিযানে শান্ত-হৃদয়রা
খুলনায় কাটলো তাপদাহ, নামলো বৃষ্টি
কুষ্টিয়ায় বিয়ের গাড়ি আটকে ভাঙচুর , আটক ৪
কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড মীরসরাই
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
নিজ কক্ষে মিললো আওয়ামী লীগ নেতার ঝুলন্ত লাশ
বজ্রপাতে তিন জেলায় ৪ জনের মৃত্যু
মধুখালি ডুমাইনের পঞ্চপল্লীতে দুই সহোদর হাফেজ খুন,স্বজনরা উল্টো আতঙ্কে কেটে গেল ১৮ প্রহর
প্রশ্ন : প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা ঋণ নিয়ে হজ্জ করা প্রসঙ্গে।
আমেরিকা ও ইউরোপের বহিষ্কৃত ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেবে ইরান
একটানা ৩৭ দিন তাপপ্রবাহে অতিষ্ট চুয়াডাঙ্গাবাসীর ভাগ্যে অবশেষে মিললো স্বস্তির শিলা বৃষ্টি
বজ্রপাতে মাদারীপুরে পৃথক স্থানে দুই জন নিহত
শম্ভুগঞ্জ ইউসি উচ বিদ্যালয়র সভাপতি মোক্তার হোসেনর বিরুদ্ধ দূর্নীতির অভিযাগ: ছয় সদস্যের পদত্যাগ
সিলেটে কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি : বাড়ছে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের পরিমান
অপহরণের ১৩ ঘণ্টা পর চুয়েট স্কুলছাত্র উদ্ধার
বরগুনায় গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধে কর্মশালা
গৌরনদীতে লোডশেডিং ও তীব্র গরমে কদর বেড়েছে হাতপাখার
নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে টাকা বিতরণ করায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা