রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির সঙ্গে জনগণের সরাসরি সম্পর্ক বাড়াতে হবে
০১ মার্চ ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪, ১২:১২ এএম
বাংলাদেশে অল্প শিক্ষিত মানুষ রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির সঙ্গে সরাসরি ব্যক্তিক সংযোগ সম্পর্কে সজাগ নয়। গ্রামাঞ্চল কিছুটা পশ্চাৎপদ এবং শিক্ষার হার তুলনামূলকভাবে কম বিধায় ওই অসংযোগ প্রকটতর। কীভাবে বাজেট বরাদ্দের অর্থে একজন ব্যক্তির প্রদত্ত শুল্কের টাকা অন্তর্ভুক্ত আছে বা রাষ্ট্রের গৃহীত ঋণের কিয়দাংশ সে পরিশোধ করে চলেছে সেটি তারা ওয়াকিবহাল নয়। তদ্রুপ রাষ্ট্রকে প্রদেয় ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রাপ্তি তাদের নিকট স্পষ্ট নয়। ফলে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের মাঝে সম্পর্কের জবাবদিহিতায় ফারাক বিদ্যমান।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো বেশ শক্ত। বিশ্বে যুদ্ধবিগ্রহ, কোভিড-১৯ বা দেশে রাস্তা অবরোধ, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে ঝাঁকাতে পারে না। বাংলাদেশের অর্থনীতির বৃহদাংশ গ্রামীণ, যা সরকার কর্তৃক গৃহীত রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক কর্মকা-ে সন্নিবেশিত নয়। গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মকা-ের একটি ক্ষুদ্রাংশ মাত্র বাংলাদেশের জিডিপির হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। হিসাবকৃত ৪১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ১৭০ মিলিয়ন মানুষের বর্তমানে দৃশ্যত জীবনযাত্রা মানের জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়। জনগোষ্ঠীর বৃহদাংশ সরকারের প্রণীত বাজেট এবং গৃহীত প্রকল্পসমূহে প্রত্যক্ষ অংশীদার নয় এবং হিসাবে ৬.৩০ কোটি মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বেঁচে আছে এবং দৈনিক ২.০ মার্কিন ডলার আয়নির্ভর বাস্তব অবস্থা বর্ণনা করে না। গৃহ-অর্থনৈতিক-কর্মকা-, যা অতিবৃহৎ, সামগ্রিক দেশীয় অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে অন্তর্ভুক্ত হয় না এবং জিডিপি বাস্তবে হিসবাকৃত জিডিপি অপেক্ষাকৃত বৃহৎ। গ্রামীণ অর্থনীতি সরকার কর্তৃক গৃহীত রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি দ্বারা সামান্যই প্রভাবিত হয়। বাংলাদেশে অর্থনীতি জনগণকেন্দ্রিক হয়ে উঠেনি। বাংলাদেশে জনগণ ও সরকারের মাঝে বিদ্যমান ফারাক অতি বৃহৎ।
জনগণ ও রাষ্ট্র অবিচ্ছেদ্য, সরকার একটি স্বল্পস্থায়ী প্রতিষ্ঠান মাত্র এবং জনগণের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কই রাষ্ট্রীয় কর্মকা-ে সরকারের বৈধতা দেয়। তাই জনগণের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্ক সুদৃঢ় ও স্বচ্ছ হওয়া একান্ত প্রয়োজন। সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ওই দৃঢ়তা, স্বচ্ছতা বিধানের মাধ্যম। সরকারের রাষ্ট্রীয় কর্মকা- জনগণকেন্দ্রিক এবং সকল জনগণের জন্য সমভিত্তিক হতে হবে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পদ্ধতিই জনগণ, রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যেকার সম্পর্ক ও জবাবদিহি অধিকতর নিশ্চিত করে বলে বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত ধ্যান-ধারণা। যদিও গণতন্ত্র বর্তমানে দলতন্ত্রে পরিণত হয়েছে, বিভিন্ন দূষণে দুষ্ট এবং বিশ্বব্যাপী ব্যর্থতায় পর্যবসিত। এটা জনগণের শোষণের হাতিয়ার, পুঁজিবাদের ধারক, বাহক ও পৃষ্ঠপোষক। পুঁজিবাদ অর্থ ও সম্পদের কেন্দ্রীভূতির সুপ্ত উদ্দেশ্যের সাথে সাথে সকল অর্থনৈতিক কর্মকা- কেন্দ্রীভূতকরণে সচেষ্ট। এর সৃষ্ট অসম বণ্টন বর্তমান বিশ্বে একটি দুষ্টগ্রহ। জনগণ ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য এই রাহুগ্রাস থেকে নিষ্ক্রিতি নিশ্চিত করা জরুরি।
দ্রুত ও অধিকতর অর্জনের জন্য বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নাই। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হতে হলে বাংলাদেশের দ্রুত সার্বিক উন্নয়ন অর্জন করতে হবে। নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বিকেন্দ্রীকরণ ও সার্বিক উন্নয়নের সোপান হতে পারে। এই উদ্দেশ্যে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে জাতীয় বাজেট বরাদ্দ এলাকা ও কেন্দ্রের মাঝে গ্রহণযোগ্য অনুপাতে বিভাজন করা যায়। নির্বাচনী এলাকার গণপ্রতিনিধি আন্তরিকতা, সততা, কর্মদক্ষতা এবং আইনানুগভাবে দেশের প্রধানমন্ত্রীর ন্যায় তুলনামূলক ছোট পরিসরে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
কেন্দ্র ও এলাকার মধ্যে কর্মকা-, যেমন, নৈমিত্তিক, সেবা ও উন্নয়ন ইত্যাদির দায়িত্ব বণ্টন করা যাবে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বা রাস্তার কথা উদাহরণস্বরূপ ধরা যায়। কেন্দ্র এলাকার বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ বিক্রি করবে, এলাকা বিদ্যুৎ ক্রয়, বিতরণ, বিক্রি ও বিক্রি-উত্তর সেবা প্রদান করবে। মূল সড়ক কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবে, এলাকায় রাস্তাঘাট এলাকার দায়িত্বে থাকবে। কেন্দ্র ও এলাকার মধ্যে বাজেট বিভাজন জনগণ ও রাষ্ট্রের পক্ষে সরকারের মধ্যে একটি সেতু হিসাবে কাজ করবে। এলাকাভিত্তিক বিভাজন জনগণের জন্য জনগণকে নিয়ে রাজনীতি ও জনগণকেন্দ্রিক রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করবে। রাষ্ট্রীয় বাজেটের একটি অংশ সরাসরি এলাকায় ব্যয় হলে, জনগণ রাষ্ট্রের কাছে থেকে কী পেল তা প্রত্যক্ষ করবে এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অনুধাবন করবে। একজন গণপ্রতিনিধির ব্যক্তিক বৈশিষ্ট্য, তার স্বভাব, চরিত্র, সুস্বাস্থ্য, কর্মক্ষমতা, আন্তরিকতা, সততা, দূরদর্শিতা ও মনন ইত্যাদির গুরুত্ব অনুধাবন করতে সচেষ্ট হবে। কারণ সংসদ সদস্য প্রত্যক্ষভাবে তাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। জনগণ যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট প্রদানে অধিক সজাগ হবে।
শতকরা ২৫/৩৫/৪৫ ভাগ সরাসরি এলাকা পেতে পারে এবং ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি প্রশাসনিক, আর্থিক ও অন্যান্য কর্ম পদ্ধতির দক্ষতার উপর নির্ভর করবে। এলাকার প্রাপ্তি মাথাপিছু হিস্যা হওয়াই যথাযথ। তবে কাস্টেড ভোটসংখ্যাভিত্তিক হলে গুটি কতক অর্জন বৃদ্ধি পাবে। ভোটসংখ্যাভিত্তিক হলে ভোটে জনগণের অংশগ্রহণ স্বপ্রণোদিত ও নিশ্চিত হবে। নির্বাচনে স্বল্প কাস্টেড ভোটের দূষণ দূর হবে। অতি অধিক ভোটার উপস্থিতি ঘটবে বিধায় ভোট কারচুপি দূর হবে, প্রশাসনিক পক্ষপাতিত্ব অকার্যকর হয়ে পড়বে। জনগণের রাষ্ট্রীয় অধিকার ভোট এবং ভোট সরকার ও রাষ্ট্রের সেতুবন্ধন। ভোটের সঙ্গে প্রাপ্তির সরাসরি সংযোগ না থাকায় দেশে ভোটের গুরুত্ব জনসাধারণ মূল্যায়ন করে না। নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব না হলেও বর্তমানে ভোটদানে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করার জন্য জনগণকে আহ্বান করতে হয়, উৎসাহ উদ্দীপনার মাঝে ভোটগ্রহণ মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। কাস্টেড ভোটসংখ্যাভিত্তিক বিভাজন গণতন্ত্রের পরিচিত কিছুটা দূষণ দূর করবে।
রাজধানী, সমুদ্র বন্দর, আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ইত্যাদির অবদান বা জনগণের প্রাপ্ত উপকার একজন ব্যক্তির অবস্থানের দূরত্বের সাথে কমতে থাকে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় এ সকল সম্পদের উপকার পাওয়ার অধিকার সকল নাগরিকের সমান এবং রাষ্ট্রই ওই অধিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করবে। এলাকাভিত্তিক বিভাজন পদ্ধতি অর্থাৎ দূরত্ব বাড়ার সাথে প্রাপ্তব্য অংশ বৃদ্ধি এর অন্তত আংশিক সমাধান দিতে পারে। সরকারের কর্মকা- জনগণের অর্থপুষ্ট। নির্বাচনী এলাকা রাষ্ট্রীয় অর্থ ভা-ারে আর্থিক অবদান রাখতে পারে।
লেখক: চেয়ারম্যান, আনন্দ শিপইয়ার্ড এন্ড স্লিপওয়েজ লি.। সভাপতি, এসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট অরিয়েন্টেড শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার দাবীতে নীলফামারীতে ছাত্রলীগের পদযাত্রা, সমাবেশ
মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে নেমে আসবে: অর্থ প্রতিমন্ত্রী
নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বিএনপির আরো ৩ জন বহিষ্কার
গাম্বিয়ার দায়ের করা রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় ওআইসি’র সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চুয়াডাঙ্গার ভোগাইল বগাদী গ্রামের শিশু মাইশা হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন
টাঙ্গাইল শাড়ী নিয়ে ভারতে আইনি লড়াইয়ের ল’ফার্ম নিয়োগ
অবৈধ টিভি চ্যানেল ও লাইসেন্সবিহীন বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধে কাজ শুরু করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়
এয়ারটেল নিয়ে এলো ই-স্পোর্টসের বড় আসর
চাঁদপুরে পিকআপ-অটোরিকশা মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা- ছেলে নিহত
গাছ কাটা-লাগানো বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল
দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেট আয়োজিত সেমিনারে মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী
লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে শপথবাক্য পাঠ করালেন প্রধানমন্ত্রী
ময়মনসিংহে মহিলালীগনেত্রীর ভিডিও ভাইরাল, ৬ জনকে আসামি করে মামলা
টুঙ্গিপাড়ায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন
বিমানযাত্রীর পকেটে মিলল জ্যান্ত সাপ
ডেঙ্গু সচেতনতা সৃষ্টিতে কাউন্সিলররা পাবেন ৫০ হাজার টাকা
হামলা আসন্ন, নাগরিকদের রাফা ছাড়তে বলল ইসরায়েল
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে দেশটির পতাকা উত্তোলন ছাত্রলীগের
মিল্টন সমাদ্দার মাদকসেবী, তার টর্চার সেলে অত্যাচারের মাত্রা অমানবিক: ডিবি
সম্পদ অর্জনে এমপিদের চেয়ে চেয়ারম্যানরা এগিয়ে : টিআইবি