হিন্দুত্ববাদের কবলে আমাদের পাঠ্যবই

Daily Inqilab তারেকুল ইসলাম

০৬ মে ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৬ মে ২০২৪, ১২:০৭ এএম

আজ থেকে দেড়-দুই যুগ আগেও আমাদের জাতীয় পাঠ্যবই নিয়ে বিতর্ক তৈরির নজির তেমন ছিল না। কিন্তু লক্ষ করেছি, আমাদের প্রতিবেশী একটি দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় হিন্দুত্ববাদী শক্তির উত্থানের পর থেকে সেটির প্রভাব নানাভাবে আমাদের দেশেও এসে পড়েছে। তারই ফল জাতীয় পাঠ্যপুস্তকের হিন্দুত্বকরণ প্রচেষ্টা। প্রথম বিতর্ক ওঠে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সরকারের নতুন পাঠ্যবই বিতরণকালে। তখন শিক্ষার্থীদের দেয়া কয়েকটি নতুন বইয়ে ইসলামী মূল্যবোধ ও ভাবধারার কন্টেন্টগুলো বাদ দিয়ে পাঠ্যবইয়ের হিন্দুত্বকরণ ঘটানো হয়। ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন মুসলিম লেখকদের রচনাসমূহ বাদ দিয়ে সাম্প্রদায়িক হিন্দু ও ইসলামবিদ্বেষী সেকুলার কবি-সাহিত্যিকদের রচনায় সয়লাব করে ফেলা হয়। এতে সচেতন ধর্মপ্রাণ মুসলিম নাগরিকরা তীব্র সমালোচনা শুরু করেন। পাঠ্যবইয়ের হিন্দুত্বায়ন রুখে দিতে তখন কয়েকটি ইসলামী দল সরব হয়ে জনসচেতনতামূলক কাজ করে। তাদের দাবি ছিল, হিন্দুত্ববাদী ষড়যন্ত্র থেকে পাঠ্যবইকে মুক্ত করে আগের অবস্থায় নিয়ে আসা এবং যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত হয়ে ইসলামী ভাবধারার রচনাগুলো বাদ দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। নিরেট প্রমাণ ও তথ্য-উপাত্তসহ প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। পরের বছরই পাঠ্যবইয়ের সংশ্লিষ্ট বিতর্কিত কন্টেন্টগুলো বাদ দিয়ে অনেকটা আগের ভার্সন ফিরিয়ে আনা হয়।

কিন্তু ২০২১ সালে মোদিবিরোধী বিক্ষোভের জেরে অন্যায়ভাবে প্রতিবাদী আলেমদের গণগ্রেপ্তার করে কারাবন্দি করা হলে তাদের অনুপস্থিতিতে আবারও তৎপর হয়ে ওঠে দেশি-বিদেশি হিন্দুত্ববাদী অপশক্তি। ফলস্বরূপ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নতুন পাঠ্যবই বিতরণের সময় ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান বইকে কেন্দ্র করে আবারও বিতর্ক শুরু হয়। বই দুটিতে দেখা যায়, পৌরাণিক কাহিনী, পৌত্তলিকতা, হিন্দুত্ববাদী ধ্যান-ধারণা ও মুসলিমবিদ্বেষী ইতিহাসের বয়ানে ভরপুর! এতে দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজ হতবাক হয়ে যান। এ উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনপূর্ব মুসলিম শাসকদের ন্যায়পরায়ণতা ও ইনসাফপূর্ণ শাসনব্যবস্থার কথা সর্বজনবিদিত। ২০১৮ সালের আগস্টে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেয়া এক আলোচিত সাক্ষাতকারে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ^বিদ্যালয়ে এশিয়া চর্চার অধ্যাপক ও ভাষাতাত্ত্বিক শেলডন পোলক বলেছিলেন, ‘মুসলমান শাসকরা জোর করে ধর্মান্তর করালে ভারতে একজনও হিন্দু থাকত না। কারণ, মুসলমান শাসকরা ভারতে প্রায় বারোশো বছর রাজত্ব করেছিলেন।’ অথচ ওই পাঠ্যবই দুটিতে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক ইতিহাসের বয়ান ঢুকিয়ে উপমহাদেশের ব্রিটিশ শাসনপূর্ব মুসলিম শাসকদের মিথ্যাচারপূর্বক হেয় করা হয়েছে এবং অন্য ধর্মের শাসকদের তুলনায় তাদের নিচুভাবে দেখানো হয়েছে। যেখানে দিল্লি সালতানাতের সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি এসে ব্রাহ্মণ্যবাদী সেন রাজাদের অবর্ণনীয় অত্যাচার থেকে বাংলার নি¤œ বর্ণের হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম প্রজাকে মুক্ত করেন, সেখানে তাকে লুণ্ঠনবাজ ও দখলদার হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। এছাড়া, শুধু মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ধর্মীয় সংস্কৃতি বাদ দেয়া হয়েছে তা-ই নয়, বরং একতরফাভাবে হিন্দুয়ানি ভাবধারা ও হিন্দুত্ববাদী চিন্তাধারা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। অত্যাচারী ব্রাহ্মণ্যবাদী আর্যদের জাতপাত ভেদ ও বর্ণপ্রথাকেই সঠিক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ছবিসহ গ্রিক দেব-দেবীর পরিচয় ও বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। মুসলমানদের দাড়ি-টুপি, পর্দা-হিজাব-বোরকা ও ধর্মীয় পোশাক নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যও লক্ষণীয়। যাই হোক, হিন্দুত্ববাদীদের ইতিহাস-বয়ানে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করানোর এ সুযোগ কারা কিসের স্বার্থে দিয়েছে তা অনুমান করা কঠিন নয়। এমনকি সরকারি মাদরাসার পাঠ্যবইয়েও একই চিত্র পাওয়া গেছে। ইসলামবিরোধী বিবর্তনবাদ তত্ত্ব, পর্দাবিদ্বেষ ও নাস্তিক্যবাদী ধ্যানধারণা সেখানেও ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। মাদরাসার পাঠ্যবইয়ে গান-বাজনা, ঢোল-তবলা ও ছেলেমেয়ের অবাধ মেলামেশাকে ছবিসহ ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, পাঠ্যবইগুলোর প্রচ্ছদ এবং ভেতরের ডিজাইনেও হিন্দুয়ানি সংস্কৃতির প্রাধান্য লক্ষণীয়। মুসলিম পরিচয়, ইসলামী মূল্যবোধ ও ভাবধারা একেবারেই উপেক্ষিত।

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান বইয়ে ‘শরীফার গল্প’ নামে একটি উদ্ভট কাহিনী যুক্ত করে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের ‘ট্রান্সজেন্ডারিজম’ শেখানোর প্রয়াস নেয়া হয়েছে। এই মতবাদ অনুসারে জন্মগতভাবে লিঙ্গ যা-ই হোক, কোনো ছেলে ইচ্ছে করলে নিজেকে যেমন মেয়ে মনে করতে পারবে, আবার কোনো মেয়েও ইচ্ছে করলে নিজেকে ছেলে ভাবতে পারবে। ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দের এক ফতোয়ায় ট্রান্সজেন্ডার হওয়াকে হারাম বলা হয়েছে। ট্রান্সজেন্ডারিজমের প্রকৃত অর্থ ‘রূপান্তরকামিতা’ বা ‘লিঙ্গ বিকৃতিকরণ’। মূলত সমাজে সমকামিতা ও সমকামী পরিচয়কে স্বাভাবিক করে তুলতেই এই নতুন ছদ্ম-পরিভাষার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। ইদানীং এলজিবিটির (খএইঞ) পরিবর্তে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ পরিভাষার প্রচলন বেড়েছে। এর আড়ালে মূলত সমকামিতার স্বাভাবিকীকরণই উদ্দেশ্য, যেহেতু সমকামিতা ও সমকামী পরিচয় আমাদের সমাজে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া, আমাদের দেশে না জানার কারণে অনেকেই হিজড়া সম্প্রদায়কে ট্রান্সজেন্ডারদের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। হিজড়া সম্প্রদায়কে ইংরেজিতে ইন্টারসেক্স (ওহঃবৎংবী) বলা হয়। অর্থাৎ, হিজড়াদের লিঙ্গত্রুটি জন্মগত। তাদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা আছে। তাদেরকে আমরা সাহায্য-সহযোগিতাও করে থাকি। এমনকি দেশের কোথাও কোথাও তাদের জন্য কোরআন ও প্রাথমিক দ্বীন শিক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তাদের প্রতি আমাদের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। কিন্তু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করা রূপান্তরিত পুরুষ (ঞৎধহং গবহ) বা রূপান্তরিত নারী (ঞৎধহং ডড়সবহ), এদের সাথে হিজড়াদের এক করা যাবে না। হিজড়া সম্প্রদায়ের মৌলিক ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণের যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্তু চতুরতার সাথে ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা এবং ট্রান্সজেন্ডারের নামে অভিশপ্ত এলজিবিটি তথা সমকামী গোষ্ঠীকে সমাজে প্রতিষ্ঠার আমরা তীব্র বিরোধী। খোদ পশ্চিমা দেশগুলোতেও ট্রান্সজেন্ডার সমস্যাটি প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে অনেক অভিভাবক এ নিয়ে পারিবারিক সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। ট্রান্সজেন্ডারদের অনেকে পরবর্তীতে নিজের ভুল বুঝতে পেরে হতাশায় ভুগছেন। কারো কারো আত্মহত্যার খবর পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমেও এসেছে। আমাদের দেশের অভিভাবকরাও সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তাদের অনেকে এখন স্কুলের পরিবর্তে মাদারাসাকেই বেছে নিচ্ছেন সন্তানদের জন্য।

পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডারিজম ঢোকাতে পশ্চিমা ফান্ডে পরিচালিত কয়েকটি বড় এনজিওর প্রভাব থাকার ধারণা অমূলক নয়। কারণ, দেশি-বিদেশি কয়েকটি এনজিওর বিরুদ্ধে সমকামী এলজিবিটি গোষ্ঠীকে অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর রন ডিস্যান্টিস বাংলাদেশে বাইডেন প্রশাসন কর্তৃক ট্রান্সজেন্ডারদের পৃষ্ঠপোষকতাকল্পে লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করাকে ‘তার দেশের করদাতাদের টাকার অপচয়’ বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন। সুতরাং, আমরা মনে করি, ট্রান্সজেন্ডারিজম প্রজেক্টের সঙ্গে পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিঙ্গ রূপান্তর ও চেহারা পরিবর্তন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এটি উচ্চ সম্ভাবনামূলক ব্যবসার ক্ষেত্রও বটে। ফলে একে ঘিরে পশ্চিমা পুঁজিপতিরা নতুন বাণিজ্যিক ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার কোশেশ চালাচ্ছে। আর আমেরিকাসহ বিভিন্ন পশ্চিমা সরকারের বিরুদ্ধে পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করার অভিযোগ অনেক পুরনো। এ ব্যাপারেও আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

যাই হোক, ইসলামবিরোধী বিবর্তনবাদ তত্ত্বটি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব একটি মতবাদ মাত্র। বানর গোত্র বা শিম্পাঞ্জি থেকে বিবর্তিত হয়ে মানবজাতির উদ্ভবই বিবর্তনবাদের মূল ধারণা, যা এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। এটি কখনো প্রমাণিত হওয়ারও নয়। কারণ ইসলামের মানব সৃষ্টিতত্ত্ব অনুযায়ী প্রথম আদি মানব হযরত আদম (আ.), যাকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। এ ব্যাপারে কোরআনে সূরা সোয়াদের ৭১-৭২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘স্মরণ করো, তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বলেছিলেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করছি মাটি থেকে। যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো।’ সূরা ত্বীনের ৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে সৃষ্টি করেছি।’ নবী আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) থেকেই মূলত মানবজাতির বিকাশ। এছাড়া, সূরা বাক্বারায় আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। সুতরাং, ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বটি যে কোরআনে বর্ণিত মানব সৃষ্টিতত্ত্বের বিরোধী এতে কোনো সন্দেহ নেই। এরপরেও বিজ্ঞানের নামে এমন ইসলামবিরোধী মতবাদ পাঠ্যবইয়ে গুরুত্বের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য, কোমলমতি মুসলিম শিশু-কিশোরদের মন-মানসে নাস্তিক্যবাদী ধ্যানধারণা সৃষ্টি করা।

আরো লজ্জার বিষয়, সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান বইয়ে চৌর্যবৃত্তি, গুগল ট্রান্সলেটরে অনুবাদিত টেক্সট হুবহু বসিয়ে দেয়া, ভুলভাল তথ্য দেয়া, রেফারেন্স বা সোর্স উল্লেখ না করা, ক্রেডিট না দেয়াÑ এসব বিতর্কও উঠেছে। শিশু সাহিত্যিক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বিজ্ঞান বইসহ বেশ কয়েকটি পাঠ্যবইয়ের সম্পাদনা পরিষদের প্রধান। তার তত্ত্বাবধানেই এসব ঘটেছে। সেকুলার প্রগতিশীল অঙ্গনে তিনি একজন মহীরূহ হিসেবে গণ্য। অথচ পাঠ্যবই ইস্যুতে তার মাধ্যমে তথাকথিত বিজ্ঞানবাদী সেকুলার প্রগতিশীল গোষ্ঠীর এত-এত অযোগ্যতা, অদক্ষতা, অনৈতিকতা ও ভ-ামি উদাম হয়ে ধরা পড়ল।

আর না বললেই নয়, আমাদের দেশীয় প্রিন্টিং প্রেস শিল্পে পর্যাপ্ত সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিবছর জাতীয় পাঠ্যপুস্তক ভারত থেকে ছাপিয়ে আনা হয়। এটা কিসের ও কাদের স্বার্থে তা আর বোঝার বাকি নেই। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করি, ইসলামবিদ্বেষী প্রগতিশীল ও সেকুলারগোষ্ঠী এদেশে ইসলাম ঠেকানোর জন্য কিংবা ইসলাম নির্মূলের রাজনীতি হিসেবে হিন্দুত্ববাদের দোসরে পরিণত হয়েছে। আর ইসলাম মোকাবেলায় হিন্দুত্ববাদের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আমাদের জাতীয় পাঠ্যপুস্তককে প্রথম টার্গেট বানানো হয়েছে।

হিন্দুত্ববাদী ষড়যন্ত্র থেকে আমাদের দেশের মুসলিম শিশু-কিশোরদের রক্ষা করতে হবে। ইসকন নামের একটি উগ্র সংগঠন বেশ কয়েক বছর আগে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুলে কোমলমতি মুসলিম শিশু-কিশোরদের মাঝে কৃষ্ণ প্রসাদ বিতরণ করেছিল, যা মুসলমানদের জন্য হারাম। শুধু তা-ই নয়, প্রসাদ বিতরণকালে মুসলিম শিক্ষার্থীদের মুখ দিয়ে ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম হরে হরে রাম রাম...মাতাজি প্রসাদ কি জয়’ স্লোগান বলানোর ধৃষ্টতাও তারা দেখিয়েছিল। মুসলমানদের ঈমান-আকিদা ও ইজ্জত-আব্রু ধ্বংস করার জন্য তারা সবসময় তৎপর। শুধু জাতীয় পাঠ্যপুস্তকেই নয়, দেশি-বিদেশি হিন্দুত্ববাদী অপশক্তি নানা দিক থেকেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ ব্যাপারে আমাদের আরো সতর্ক হতে হবে। কোমলমতি বাচ্চাদের অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। স্কুলগুলোতে তাদের সন্তানদের কী পড়ানো হচ্ছে বা কী শিক্ষা দেয়া হচ্ছে সেসব নিয়ে তাদেরও সরব থাকতে হবে। অন্যথায়, ইসলামী চেতনা ও ঈমান-আকিদার বিরোধী শিক্ষাব্যবস্থা জাতির জন্য আত্মঘাতী পরিণতি ডেকে আনবে।

বাংলাদেশ একটি মুসলিম-অধ্যুষিত দেশ। সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মীয় চেতনা, সংস্কৃতি ও স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা সম্ভব নয়। আমাদের জাতীয় পাঠ্যপুস্তক আজ হিন্দুত্ববাদের কবলে পড়েছে। মুসলমানের ছেলেমেয়েদের ঈমানি চেতনা ধ্বংস করার আয়োজন করা হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে পাঠ্যপুস্তকের হিন্দুত্বায়ন ঠেকাতে ওলামায়ে কেরামকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মুসলিম প্রজন্মের ঈমান-আকিদা ও ধর্মীয় চেতনা সুরক্ষিত করতে আমাদের জাতীয় চেতনা এবং ইসলামী মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের আলোকে জাতীয় পাঠ্যপুস্তককে আবারও ঢেলে সাজানো এখন সময়ের জোরালো দাবি।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক
Email: [email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সমীকরণ মেলানোর রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা শেষে চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু

সমীকরণ মেলানোর রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা শেষে চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

পানির সংকট

পানির সংকট

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু