মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ পুলিশ থেকেই শুরু করা হোক
০১ মার্চ ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪, ১২:১২ এএম
এক শ্রেণীর পুলিশ সদস্যের অপরাধ প্রবণতা ও অপেশাদার ভূমিকার কারণে পুরো বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের আস্থার সংকটে ভূগছে। এ ক্ষেত্রে মাদকসেবী ও মাদক কারবারের সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যরা সমাজের জন্য এক ভয়ঙ্কর হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সরকার এবং পুলিশ প্রশাসন এ সংকট উত্তরণে নানামুখী উদ্যোগও গ্রহণ করেছে। তাতে কতটা সফল হওয়া গেছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে পুলিশ বাহিনীকে জনবান্ধব করে গড়ে তুলতে প্রতি বছর পুুলিশ সপ্তাহে বিভিন্ন উদ্যোগ ও শ্লোগান তুলে ধরার পাশাপাশি সাহসী পেশাদারি ভূমিকার জন্য পুলিশ সদস্যদের পুরষ্কৃত করা হয়। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, অপরাধি পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমেই জননিরাপত্তাসহ নানা ক্ষেত্রে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন নিশ্চিত করা সম্ভব। চলমান পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে দেয়া বক্তব্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক(আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন মাদকসেবী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। সাধারণ মাদক সেবিদের চেয়ে পুলিশের মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে বেশি কঠোর ভূমিকার কথা জানিয়েছেন আইজিপি। কোনো পুলিশ সদস্যের মাদক সেবনের তথ্য ধরা পড়লে তার চাকরিচ্যুতিসহ মামলা ও শাস্তির আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
সারাদেশ মাদকে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তার কারণে দেশের যুব সমাজের একটি অংশের মধ্যে চরম হতাশা ভর করেছে। এদের মধ্যে অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পরিবার ও সমাজে দুষ্টক্ষত সৃষ্টি করছে। শহরের পাড়া-মহল্যা থেকে শুরু করে প্রতিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারা মাদকের জাল বিস্তৃত করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের যুব সমাজকে মাদকের ছোঁবল থেকে রক্ষা করতে হলে প্রথমে পুলিশ বাহিনীকে মাদকমুক্ত করতে হবে। কারণ, পুলিশেরও কিছু সদস্য মাদকসেবী হিসেবে বিভিন্ন সময়ে চিহ্নিত হয়েছে। তাছাড়া দেশি-বিদেশি মাদক চক্রের সাথে এক শ্রেণীর পুলিশ সদস্যের সংশ্লিষ্টতা কারো অজানা নয়। বিভিন্ন সময় পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযানে অনেক মাদক কারবারির সাথে কিছু পুলিশ সদস্যেরও ধরা পড়তে দেখা গেছে। গত বছর প্রকাশিত এক রিপোর্টে ঢাকা মেট্টোপলিটান পুলিশের(ডিএমপি) করা মাদক কারবারীর তালিকায় ওয়ারি বিভাগেই ৫৮জন পুলিশ সদস্যের নাম পাওয়া যায়। মাদক সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের কেউ কেউ মাদকের স্পট থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলে তাদের ব্যবসা করার সুযোগ করে দেন, আবার অনেকে সোর্সের মাধ্যমে নিজেরাই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন বলে জানা যায়। গত কয়েক বছরে পুলিশের হাতে মাদকসহ পুলিশ সদস্য গ্রেফতার হওয়ার অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে।
পুলিশে নিয়োগ এবং বিভিন্ন সময়ে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্তি শনাক্তের উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। ডোপ টেস্টে প্রমাণিত হয়ে শত শত পুলিশ সদস্য চাকরিচ্যুত এবং মামলার সম্মুখীন হয়েছে। এরপরও মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সমাজ। আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেট বাংলাদেশকে মাদক চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে গ্রহন করেছে। গত ২৪ জানুয়ারি ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম সলিড কোকেনের চালান জব্দ করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এ ঘটনায় মালাউই, ক্যামেরুন ও নাইজেরিয়ার নাগরিকসহ বাংলাদেশী আটজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ভয়ঙ্কর ড্রাগ কোকেনের বাজার এখানে গড়ে না উঠলেও শতকোটি টাকা মূল্যের কোকেনের এ বিশাল চালান বিভিন্ন দেশে পাচারের রুট হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করায় বড় ধরণের ঝুঁকি ও হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে দেশের যুব সমাজকে কোকেনের জালে ফেলে নতুন বাজার সৃষ্টির অপপ্রয়াসও থাকতে পারে। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের ডোপ টেস্ট, চাকরিচ্যুতির ভয় এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর অবস্থান সত্ত্বেও মাদকের আগ্রাসন থামানো যাচ্ছে না। গত এক দশকে দেশে ৪১ কেজি কোকেন ধরা পড়লেও শুধুমাত্র গত বছরেই ১৩ কেজির বেশি কোকেন পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যায়, চোরাচালান হওয়া মাদকের খুব সামান্য অংশই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে মাদকসেবী ও মাদক কারবারের সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যরা অনেক বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শত শত কোটি টাকার মাদক ব্যবসার সাথে গড়ে উঠেছে পেশাদার অপরাধিচক্র। এরা সমাজে অশান্তি, নিরাপত্তাহীনতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। দেশের সমৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা ও সামগ্রিক সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে সারাবছর অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। এটা পুলিশের অভ্যন্তর থেকেই শুরু করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বজ্রপাতে মাদারীপুরে পৃথক স্থানে দুই জন নিহত
একটানা ৩৭ দিন তাপপ্রবাহে অতিষ্ট চুয়াডাঙ্গাবাসীর ভাগ্যে অবশেষে মিললো স্বস্তির শিলা বৃষ্টি
আমেরিকা ও ইউরোপের বহিষ্কৃত ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেবে ইরান
প্রশ্ন : প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা ঋণ নিয়ে হজ্জ করা প্রসঙ্গে।
মধুখালি ডুমাইনের পঞ্চপল্লীতে দুই সহোদর হাফেজ খুন,স্বজনরা উল্টো আতঙ্কে কেটে গেল ১৮ প্রহর
বজ্রপাতে তিন জেলায় ৪ জনের মৃত্যু
নিজ কক্ষে মিললো আওয়ামী লীগ নেতার ঝুলন্ত লাশ
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড মীরসরাই
কুষ্টিয়ায় বিয়ের গাড়ি আটকে ভাঙচুর , আটক ৪
খুলনায় কাটলো তাপদাহ, নামলো বৃষ্টি
সিরিজ নিশ্চিতের অভিযানে শান্ত-হৃদয়রা
গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
দেশে বেকার বেড়েছে ১ লাখ ২০ হাজার
১ আগস্ট থেকে সরাসরি জেদ্দায় ফ্লাইট শুরু ইউএস-বাংলা’র
বিজয়ের সেঞ্চুরিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন আবাহনী
পিকে হালদারসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বড় জয়ে ডিপিএল অভিযান শেষ মোহামেডানের
গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ
ঝড়ে ১০ তলা থেকে দেয়াল ভেঙে পড়লো টিনশেড ঘরে, নারীর মৃত্যু আহত ৮