ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

মন্ত্রীদের বেফাঁস মন্তব্য কাম্য নয়

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০৪ এএম

জেলা প্রশাসকদের জাতীয় সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কওমি মাদরাসাবিরোধী মন্তব্য দেশের আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। ডিসি সম্মেলনে তিনি প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার পেছনে কওমি মাদরাসাগুলোকে দায়ী করে দেয়া বক্তব্যে প্রকারান্তরে কওমী মাদরাসা বন্ধের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন অনেকে। শিক্ষামন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন ইসলামি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা। বিভিন্ন ইসলামী সংগঠেনের প্রতিবাদলিপিতে শিক্ষামন্ত্রীর ইসলামি শিক্ষা বিদ্বেষী মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। তারা বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রী একদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীতে ইসলামি সংস্কৃতি ও আকিদার সাথে সাংঘর্ষিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করছেন, অন্যদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমে যাওয়া কিংবা ঝরে পড়ার জন্য কওমি মাদরাসাগুলোকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন। শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে শিক্ষামন্ত্রীর এমন বক্তব্য সাধারণ মানুষ ও আলেম সমাজের বিক্ষুব্ধ হওয়া স্বাভাবিক। এমনিতেই পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদের ইসলামোফোবিক এজেন্ডার আড়ালে মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এসব ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার উপেক্ষা করে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি সমান্তরাল ধারায় মাদরাসা শিক্ষা সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। এক শ্রেণীর ইসলাম বিদ্বেষী মানুষ বরাবরই এ ব্যাপারে বিরোধিতা করে আসছে। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য তাদেরকে আরও উসকে দেবে বলে ইসলামি চিন্তাবিদরা মনে করছেন।

শুধু শিক্ষামন্ত্রীই নন, জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন আসন্ন রমজানে রোজাদার মুসলমানদের খেজুর ও আঙুরের পরিবর্তে বরই- পেয়ারা দিয়ে ইফতার করার আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এসব বক্তব্য ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রচ্ছন্ন বিরোধিতা ও হুমকি হিসেবে দেখছেন দেশের আলেম সমাজ ও সাধারণ মানুষ। সারাদিন রোজা রাখার পর খেজুর, শরবত ও ফল দিয়ে ইফতার করা মুসলমানদের হাজার বছরের রেওয়াজ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর নানা রকম খাদ্য সামগ্রী আমদানি করতে হয়। খেজুরও তার একটি। খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। এখন দাম বেশি বলে যদি এসব খাবার খাওয়ার বিরোধিতা করা হয়, তাহলে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠে, সরকার দেশের কি উন্নয়ন করল? আমরা ভারত-পাকিস্তান এমনকি সিঙ্গাপুরকেও উন্নয়নে ছাড়িয়ে গেছি বলে যে বাহাদুরি করা হয়েছে, তা কি প্রকৃতচিত্র আড়াল করার জন্য করা হয়েছে? মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন কোথায় হয়েছে? কয়েক দিন আগে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশের মানুষ ভাল আছে। তাদের জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে। অথচ দেশ এক গভীর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নিত্যণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস চলছে। অর্থনীতির সব সূচক নি¤œগামী। এসব সংকট মোকাবেলার কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত দেয়া নিয়ে যেন মন্ত্রীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এটা কি সার্বিক সংকট থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয়া কিংবা অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করা নয়? মন্ত্রীদের এহেন বক্তব্য সাধারণ মানুষের কাছে ‘কাটা গায়ে লবণের ছিটা’ মনে হওয়া স্বাভাবিক। বলা বাহুল্য, দেশে নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি কিংবা ছাত্রকে গুলি করার মতো ঘটনা ঘটছে। তরুণ সমাজ মাদকের ভয়াবহ ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এসবের দিকে নজর না দিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত ও বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের বেফাঁস এবং অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক।

দেশের সাধারণ শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ইসলামি শিক্ষা ও মূল্যবোধ সম্পৃক্ত বিষয়গুলো বাদ দিয়ে তদস্থলে হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি ও শিক্ষা চালুর নানা আলামত ইতিমধ্যে বিভিন্ন সময়ে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। ইসলাম শিক্ষা বইয়ে হিন্দু দেবীর মূর্তির ছবি দেয়ার মত ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে। দেশের আলেম সমাজের চাপের মুখে কিছু পরিবর্তন হলেও একশ্রেণীর মানুষের ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব ধামাচাপা দেয়া যাচ্ছে না। প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা, শিক্ষাব্যবস্থা ও পরিবর্তিত কারিকুলামের প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থা ইত্যাদি বিষয়গুলো অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। প্রাথমিক শিক্ষা কারিকুলামকে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ থেকে বিচ্ছিন্ন করার কারণেই অভিভাবকরা সন্তানদের মাদরাসায় দিতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে কিনা তা নিয়ে পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষাকে গণমুখী ও কর্মমুখী করতে হলে সাধারণ পাঠ্যক্রমকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধ সম্পৃক্ত করা এখন সময়ের দাবী। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে যে সর্বব্যাপী অবক্ষয় দেখা দিয়েছে, তার নেপথ্য কারণগুলো অনুধাবণ করে যাথাযথ ব্যবস্থা নেয়া অপরিহার্য। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশেষায়িত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির নামে যে নৈরাজ্য চলছে, তার বিরুদ্ধে এসব মন্ত্রীরা তেমন কিছু না বললেও যেকোনো অজুহাতে মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে ছাড়ছে না। শিক্ষাবাণিজ্য, কোচিং বাণিজ্য, সার্টিফিকেট বাণিজ্য, খুন-ধর্ষণ, চাদাবাজি, গণরুম, টর্চার সেল সংস্কৃতি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে কলুষিত ও অকার্যকর করে তুলেছে। দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এসব সমস্যার সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ধানের ভরা মৌসুমেও বিদেশ থেকে লাখ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়। পেঁয়াজ, আলু, ডাল, আদা-রসুন দেশে উৎপাদিত হলেও বিদেশ থেকে আমদানি করা বন্ধ হয় না। সেখানে খেজুর আমদানিতে রাজস্ব কমিয়ে কিংবা ভতুর্কি দিয়ে মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার পদক্ষেপ না নিয়ে রমজানে বরই-পেয়ারা দিয়ে খেজুরের চাহিদা মেটানোর সমাধান উপহাসের শামিল। ইসলাম ও এর কৃষ্টি, সংস্কৃতি নিয়ে মন্ত্রীদের এসব বেফাঁস বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এতে যেমন ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে, তেমনি সরকারকেও বিব্রত করছে। যেকোনো বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার আগে মন্ত্রীদের সতর্ক ও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়

গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়

সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫

ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫

লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি

লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি

দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ

দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ

সিলেটে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার, নারী গ্রেফতার

সিলেটে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার, নারী গ্রেফতার

আশ্বিনকেও ফেরালেন তাসকিন

আশ্বিনকেও ফেরালেন তাসকিন

কক্সবাজার পাহাড়তলীতে অনৈতিক কাজে অতিষ্ঠ মানুষ, বাধা দেয়ায় বাসার মালিকের উপর হামলা

কক্সবাজার পাহাড়তলীতে অনৈতিক কাজে অতিষ্ঠ মানুষ, বাধা দেয়ায় বাসার মালিকের উপর হামলা

অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইইউ

অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইইউ

তাসকিনের জোড়া আঘাত, লিটনের রেকর্ড

তাসকিনের জোড়া আঘাত, লিটনের রেকর্ড

ডিবির আলোচিত ডিসি মশিউর গ্রেপ্তার

ডিবির আলোচিত ডিসি মশিউর গ্রেপ্তার

১৯৯ রানের জুটি ভাঙলেন তাসকিন

১৯৯ রানের জুটি ভাঙলেন তাসকিন

গণপিটুনিতে দুই মাসে ৩৩ জনের মৃত্যু

গণপিটুনিতে দুই মাসে ৩৩ জনের মৃত্যু

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয়

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয়

মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ

মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ

বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই

বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ