পরিস্থিতি উত্তরণে গঠনমূলক ব্যবস্থাই কাম্য
০৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম
বেইলি রোডের গ্রীন কোজি কটেজে অগ্নিকান্ডের প্রথম কয়েক ঘন্টায়ই ৪৬ জনের মৃত্যু এবং আরো অন্তত ২২ জনের আশঙ্কাজনক অবস্থার কথা জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। ভয়াবহ আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়া এবং এত মানুষের মৃত্যুর পর শহরের হোটেল-রেস্তোঁরা এলাকাগুলোতে বড় ধরণের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। শহরের ভোজন রসিকদের রসনার জন্য দশকের পর দশক ধরে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা নানা ব্রান্ডের চেইন রেস্টুরেন্ট মালিকরা যত্রতত্র ভবন ভাড়া নিয়ে ব্যবসার প্রসার বাড়িয়েছেন। তারা কখনো নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করেননি। মূলত প্রতিটি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা-অগ্নিকান্ডের পরই দুর্ঘটনা কবলিত ভবন, গাড়ী, জাহাজ, কারখানা কিংবা স্থাপনা নিয়ে অজানা নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা তোড়জোড়-তৎপরতা দেখা যায়। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। রমজানের আগে বেইলি রোডের আগুনের আঁচ ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে অবস্থিত হোটেল-রেস্তোরায় পড়ছে। আবাসিক ভবনে জাঁকজমকপূর্ণ হোটেল-রে¯েঁÍারা খুলে সামাজিজ যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে প্রচার পেয়ে রাতারাতি বাণিজ্যিক প্রসার একই ধরণের নতুন নতুন উদ্যোগকে উৎসাহিত করেছে। একটি ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে নির্দ্দিষ্ট ব্যবসা-উদ্যোগের ধারাবাহিক কর্মকান্ডে যে সব বাধ্যবাধকতা থাকার কথা তার কিছুই না মানা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব এমন প্রাণঘাতী দুর্ঘটনাকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে।
আবাসিক ভবনকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের অনুমোদন থাকার কথা নয়। তদুপরি, প্রতিদিন শত শত মানুষের জন্য রান্নাবান্না, পরিবেশন এবং হাজারো মানুষের ওঠা-নামা, গমনাগমন ও নিরাপত্তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সাধারণ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে থাকার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তদারকি ও নিরাপত্তা বিধানে সরকারি সংস্থাগুলোর সংশ্লিষ্টরা দায় এড়াতে পারেনা। বড় দুর্ঘটনার পর গাড়ি কিংবা নৌযানের ফিটনেস সার্টিফিকেট, রুট পারমিট, ভবনের অনুমোদন, আর্কিটেকচারাল ডিজাইন, ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশগত সার্টিফিকেট. ফায়ার সার্টিফিকেট ও অন্যান্য লাইসেন্স না থাকার চিত্র বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। দুর্ঘটনায় বেশ কিছু মানুষের মৃত্যু ও হতাহত হওয়ার আগ পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে কোনোকিছু ধরা পড়ে না কেন? গ্রীন কোজি কটেজ রেস্ত্োঁরায় আগুনের পর শহরের সব রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আইনগত দুর্বলতা ও জবাবদিহিতা এড়াতে অনেকেই আত্মগোপনে কিংবা সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে দৌড়ঝাপ করছেন বলে রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে। স্থপতি ইকবাল হাবিবের মতে, ঢাকায় একটি রে¯েঁÍারা খোলার আগে ১০টি সংস্থার প্রত্যয়নপত্র নিতে হয়, এসব সংস্থার কর্মকান্ডে দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা ও প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে অগ্নিকান্ড ঘটে। খাবারের কাচামালের উৎস, সংরক্ষণ ব্যবস্থা, কর্মী ও গ্রাহকদের নিরাপত্তা, পরিবেশ, খাবারের মান, মূল্য নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল প্রতিরোধের মত বিষয়গুলোও সংশ্লিষ্ট সংস্থার নজরদারি ও তদারকির আওতাভুক্ত। গ্রীন কোজি রেস্তোঁরায় অগ্নিকান্ড শুরুর সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হলে এবং পর্যাপ্ত নিজস্ব অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা থাকলে আগুন এতটা ছড়িয়ে পড়ত না এবং এত লোকের প্রাণহানী ঘটত না।
দুইকোটি মানুষের শহর ঢাকায় বিভিন্ন স্তর ও মানের হাজার হাজার হোটেল-রেস্তোঁরা গড়ে ওঠা স্বাভাবিক। এসব হোটেল-রেস্তোঁরার সাথে হাজার হাজার মানুষের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের স্বার্থ জড়িত রয়েছে। বেইলি রোডে অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর শুরু হওয়া বিভিন্ন সংস্থার তৎপরতা এই সেক্টরে বড় ধরণের অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। অনুমোদন, লাইসেন্সিংসহ নানা ব্যত্যয় শনাক্ত করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা জরিমানাসহ রেস্তোঁরা সিলগালা করে দেয়ার মত তৎপরতা চলছে। শহরের হাজার হাজার হোটেল-রেস্তোঁরা রাতারাতি কিংবা এক-দুই মাস বা বছরে গড়ে ওঠেনি। সুতরাং রাতারাতি এসব হোটেল-রেস্তোঁরা বন্ধ করে দেয়ার সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কেও ভাবতে হবে। নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক বিষয়ে যে সব সংস্থার তদারকি-নজরদারি থাকার কথা তা না থাকার কারণে দীর্ঘদিনে সৃষ্ট অবস্থার চিত্র একেকটি অগ্নিকান্ডের পর বেরিয়ে আসার পর সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অতি তৎপরতা নতুন একটি নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি করে। হোটেল-রেস্তোরার উপর চলমান অভিযানে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই মোটা অংকের লেনদেনের সুযোগ ও আশ্রয় খুঁজতে পারেন। পবিত্র রমজান এবং ঈদের আগে ঢালাওভাবে হোটেল-রেস্তোরা বন্ধ কিংবা সিলগালা করে দেয়ার কারণে হাজার হাজার রেস্তোঁরা শ্রমিকের জীবনে চরম অর্থনৈতিক দুর্ভোগ নেমে আসতে পারে। জননিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেই হবে। বছরের পর বছর ধরে যে সব প্রতিষ্ঠান নানা ধরণের ব্যত্যয় ও সীমাবদ্ধতা নিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করছিল, হঠাৎ করে তাদের সবকিছু বন্ধ করে দেয়া কোনো সুবিবেচনাপ্রসুত সমাধান নয়। এভাবে অভিযান চালিয়ে রমজান মাসের ইফতার-সেহেরির বিশাল ব্যবসা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর হাতে তুলে দেয়ার অভিযোগ তুলেছে রেস্তোঁরা মালিক সমিতি। আমরা মনে করি, সারাবছর ধরেই অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। রাতারাতি আমূল পরিবর্তন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। অবস্থা ভেদে সময় ও শর্ত দিয়ে ধীরে ধীরে নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে
দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়
সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে
ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫
লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি
দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ
সিলেটে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার, নারী গ্রেফতার
আশ্বিনকেও ফেরালেন তাসকিন
কক্সবাজার পাহাড়তলীতে অনৈতিক কাজে অতিষ্ঠ মানুষ, বাধা দেয়ায় বাসার মালিকের উপর হামলা
অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইইউ
তাসকিনের জোড়া আঘাত, লিটনের রেকর্ড
ডিবির আলোচিত ডিসি মশিউর গ্রেপ্তার
১৯৯ রানের জুটি ভাঙলেন তাসকিন
গণপিটুনিতে দুই মাসে ৩৩ জনের মৃত্যু
ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয়
মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ
বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই
জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ