পানি সংকট ও নদী দূষণে মারাত্মক বিপর্যয়ের শঙ্কা
০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:১১ এএম
এক জটিল রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটের আবর্তে হাবুডুবু খাচ্ছে দেশ। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপে নাকাল সাধারণ মানুষ। পানি, বায়ু ও পরিবেশ দূষণের কারণে কৃষি, খাদ্য, জনস্বাস্থ্য ও শিল্পোৎপাদনে ভয়াবহ বিপযর্য়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একের পর এক অগ্নিকান্ড নাগরিক জীবন ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে তুলেছে। গত সপ্তাহে রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডে একটি রেস্তোঁরা থেকে ভবনে ছড়িয়ে পড়া আগুনে অন্তত ৪৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর রেশ না কাটতেই চট্টগ্রামে কর্ণফূলীর তীরে এস আলম গ্রুপের চিনি পরিশোধন কারখানার আগুনে ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এসব অগ্নিকান্ড এবং দূষণ পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তার উপর রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণহীনতা ও নজরদারির অভাবকেই নির্দেশ করছে। গতকাল দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সবগুলো সেচপাম্প বিকল হয়ে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের অচলাবস্থার তথ্য পাওয়া যায়। প্রকল্পের সব পাম্পই এখন বিকল। ক্ষেতে পানি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কৃষকরা চিন্তিত-বিচলিত। পাকিস্তান আমলে চালু হওয়া সেচ প্রকল্পটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৪ লক্ষাধিক হেক্টর কৃষিজমিতে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করলেও পদ্মার উজানে ভারতের বাঁধ নির্মাণের কারণে অনেকগুলো শাখা নদী ও খাল শুকিয়ে যাওয়ায় সেচের আওতা ইতোমধ্যে অনেক কমে গেছে। অথচ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাসহ নানাবিধ কারণে কৃষিজমি হ্রাস পাওয়ার বাস্তবতায় সেচ প্রকল্পের আওতা বৃদ্ধি ও নিরাপদ রাখার কোনো বাস্তব সম্মত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আগামীতে সম্ভাব্য খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা মোকাবেলায় সেচ ব্যবস্থা ও কৃষি উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
নদীতে পানি স্বল্পতার কারণে সেচ প্রকল্পগুলো ক্রমেই ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে এই নির্ভরশীলতায় পরিবেশগত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ভয়াবহ আকারে দেখা দিয়েছে। সেচের জন্য প্রতিবছর যে পরিমান পানি গভীর অগভীর নলকূপ দিয়ে তুলে নেয়া হচ্ছে, প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় তা পুরণ না হওয়ায় শত শত নলক’পে পানি না ওঠা এবং পানিতে আর্সেনিক দূষণের মত ভয়াবহ দূষণ দেখা দিয়েছে। রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকা দেশের অন্যতম শস্যভান্ডার। নদনদী, খালবিল শুকিয়ে যাওয়ার পর এই এলাকার হাজার হাজার কৃষক সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভর করে আসছিল। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক হারে নিচে নেমে যাওয়ার কারণে সেখানে বোরো মওসুমে সেচের আওতা অনেক কমে যাওয়ায় আবাদযোগ্য জমি অনাবাদি রাখতে বাধ্য হচ্ছে কৃষক। একদিকে নদনদীর পানিশুন্যতা, দূষণ এবং সেচ প্রকল্পগুলোর অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণে ব্যর্থতার কারণে হাজার হাজার কৃষক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে অন্যদিকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাও বড় ধরণের হুমকির মুখে পড়ছে। জিকে সেচ প্রকল্পের পাম্পগুলো বেশ কয়েক বছর ধরে বন্ধ থাকার পর কিছুদিন আগে দেশীয় প্রকৌশলীরা একটি পাম্প মেরামত ও চালুর মধ্য দিয়ে যে আশাবাদ জাগিয়েছিল গত মাসের ১৯ তারিখে সেটি বিকল হয়ে যাওয়ার পর থেকে জিকে সেচ প্রকল্পের আওতাধীন কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গার কৃষকরা বড় ধরণের আশঙ্কার মধ্যে পড়েছেন।
গঙ্গা-তিস্তাসহ প্রায় সব অভিন্ন নদীর উজানে ভারতের পানি প্রত্যাহার ও বাঁধ নির্মাণের চরম খেসারত দিচ্ছে বাংলাদেশ। সেই সাথে দেশের অভ্যন্তরে পানি ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা, নদী দখল ও দূষণ, অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার এবং পরিবেশগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আইনী বাধ্য বাধকতার তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র শিল্প কারখানা স্থাপন ও নিচু জমি ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে দেশকে ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দূষিত, বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকার প্রথম দিকে স্থান পাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে(একিউআই) বিশ্বের অন্যতম দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার প্রথম ও দ্বিতীয় নাম্বারে ঢাকার নাম উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে। ঢাকার চারপাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীগুলোর মধ্যে বুড়িগঙ্গা অনেক আগেই বিপজ্জনক দূষণের শিকার হয়েছে। অনেক প্রকল্প গ্রহণ করে শত শত কোটি টাকা খরচ করেও বুড়িগঙ্গার দূষণকে সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। ইতিমধ্যে শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু ও ধলেশ্বরি নদীও দূষণের স্বাভাবিক মাত্রা অতিক্রম করেছে। বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রাণ প্রবাহ কর্ণফুলীর দূষণ নিয়ে অনেক আলোচনা ও আশঙ্কার কথা বলা হলেও শিল্পদূষণ বন্ধ করে নদী দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। নদ-নদী না থাকলে, কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে, বিশুদ্ধ পানি ও প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো বিশুদ্ধ বায়ুর প্রবাহকে দূষিত করে যে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, তা আদতে কোনো কাজে আসবে না। বিশ্ব জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলার প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়ন এবং নদীর পানি, বায়ু, মাটি ও পরিবেশগত দূষণ ও হুমকি মোকাবেলায় সরকারের কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চায় দেশের মানুষ।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে
দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়
সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে
ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫
লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি
দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ
সিলেটে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার, নারী গ্রেফতার
আশ্বিনকেও ফেরালেন তাসকিন
কক্সবাজার পাহাড়তলীতে অনৈতিক কাজে অতিষ্ঠ মানুষ, বাধা দেয়ায় বাসার মালিকের উপর হামলা
অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইইউ
তাসকিনের জোড়া আঘাত, লিটনের রেকর্ড
ডিবির আলোচিত ডিসি মশিউর গ্রেপ্তার
১৯৯ রানের জুটি ভাঙলেন তাসকিন
গণপিটুনিতে দুই মাসে ৩৩ জনের মৃত্যু
ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয়
মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ
বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই
জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ