দুদক আইনজীবীর এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য
০৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম
দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান গত বৃহ¯পতিবার বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা চেয়ে বলেছেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা সংক্রান্ত তার বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল। গতকাল ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ-এর এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। খুরশীদ আলম বলেছেন, একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূত আমাদের দেশে বসে আমাদের শ্রম আইন না জেনে, না বুঝে এমন মন্তব্য করতে পারেন না। গত সোমবার পিটার হাস ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে তার বাসায় ডিনারের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানে তাদের মধ্যে প্রায় তিন ঘন্টা বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে পিটার হাস বলেছেন, ড. ইউনূস এবং তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্র নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। হাস উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এসব মামলা বাংলাদেশের শ্রম আইনের অপব্যবহারের উদাহরণ হতে পারে। হাসের এ বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে, দুদকের আইনজীবী সাংবাদিকদের কাছে উপরোক্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। পর্যবেক্ষকরা একজন রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের একজন বেতনভুক কর্মকর্তার এ ধরণের বক্তব্য দেয়ার এখতিয়ার রয়েছে কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ, পররাষ্ট্রবিষয়ক কোনো বক্তব্য দেয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রলায় যেমন রয়েছে, তেমনি আইন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার জন্য আইন বিষয়ক মন্ত্রণালয় রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন প্রসঙ্গে বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর বেফাঁস ও অনভিপ্রেত মন্তব্য-বক্তব্য সরকারকে যথেষ্ট সমালোচনা ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে। সরকারের বর্তমান মেয়াদে তিন মাসের মধ্যে মন্ত্রীদের এ ধরনের মন্তব্য ও বক্তব্য কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত নয়। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনটি এমন সময়ে হয়েছে, যখন দেশের অর্থনৈতিক সংকট অত্যন্ত শোচনীয় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছে। নতুন সরকারকে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও উত্তরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েও কোনো কূলকিনারা করতে পারছে না। এমতাবস্থায়, যেখানে মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতার সাথে কাজ করা প্রয়োজন, সেখানে তাদের কাউকে কাউকে এমন সব মন্তব্য করতে দেখা গেছে, যা দেশের মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে। এর মধ্যেই দুদকের আইনজীবী যে মন্তব্য করেছেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গণে তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে, দেশের রাজনীতি শান্ত এবং দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে আন্তর্জাতিক চাপ ছিল, তা এখন নেই। তবে ভেতরে ভেতরে যে আন্তর্জাতিক নানা চাপ চলছে, তা পর্যবেক্ষকরা বুঝতে পারছেন। সরকারকে একদিকে, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার অসীম চাপ, অন্যদিকে পর্দার আড়ালে আন্তর্জাতিক চাপও সামলাতে হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে, মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের লাগামহীন ও বেফাঁস মন্তব্য সরকারের চাপ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। দুদকের আইনজীবী মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা তিনি দিতে পারেন কিনা, কিংবা তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে কিনা, এ প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের জবাব দেয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রী রয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং করছেন। এছাড়া আইনমন্ত্রীও দীর্ঘদিন ধরে আইনমন্ত্রলয়ে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। কোনো রাষ্ট্রদূত যদি আইন বিষয়ক কোনো মন্তব্য করেন এবং তা যথাযথ না হয়, তাহলে এর জবাব তিনি দিতে পারেন। রাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বক্তব্য দিতে পারেন না। এটা তার কর্মপরিধির মধ্যেও পড়ে না। এতে আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমর্যাদাও ক্ষুণœ হয়। এ ধরনের এখতিয়ার বর্হিভূত বক্তব্য কাম্য হতে পারে না।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষ রয়েছে। সে বরাবরই এ নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য বলে আসছে। যদিও দেশটি সরকারের সাথে কাজ করে যাবে বলে বলেছে, তারপরও তার অসন্তোষ বিভিন্ন বক্তব্য পদক্ষেপে প্রকাশিত হচ্ছে। ড. ইউনূসকে নিয়ে পিটার হাসের বক্তব্য তারই বহিঃপ্রকাশ। এছাড়া দেশের এক নম্বর রফতানি খাত গার্মেন্টের একক বৃহৎ ক্রেতা দেশ যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচন নিয়ে অসন্তোষের কারণে দেশটিতে পোশাকের অর্ডার কমে গেছে। নতুন করে এ খাতে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশসহ সামগ্রিক বিষয় মূল্যায়ন ও তদন্ত শুরু করেছে দেশটি। এটা নিশ্চিতভাবে পোশাক খাতের জন্য অশনিসংকেত। গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। তারা উদ্বেগ প্রকাশও করেছেন। শুধু গার্মেন্ট খাত নিয়েই নয়, নীরবে আরও অনেক বিষয়ে পুনর্মূল্যায়নের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব কর্মকা- সরকারের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সতর্ক ও সচেতন হয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দেয়ার কথা, সেখানে উল্টো অপ্রয়োজনীয় এবং সরকারের জন্য বিব্রতকর বক্তব্য দিচ্ছেন। তাদের উচিৎ, যেকোনো বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার আগে অধিক সতর্ক ও সাবধানতা অবলম্বন করা। যার যে বক্তব্য দেয়ার দায়িত্ব, তারই সে বক্তব্য গ্রহণযোগ্যভাবে দেয়া উচিৎ। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ও আন্তর্জাতিক সব বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত। কিভাবে বক্তব্য দিতে হবে, তা তাঁর চেয়ে বেশি কেউ জানে না। কাজেই, মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের তাঁর বক্তব্য অনুসরণ করাই শ্রেয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ
জুলাই গনঅভ্যুত্থানে শিক্ষকসহ জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি ইবি ছাত্রদলের
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী মাস অক্টোবর,বললেন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা প্রধান
'বক্স অফিস কাঁপানো সিনেমা 'সিংহাম এগেইন' এবার ওটিটিতে স্ট্রিমিং হতে যাচ্ছে'
ডেমোক্র্যাটদের 'অপরাজেয়' জোটের স্বপ্ন ধুলোয় মিশে গেছে ট্রাম্পের হাত ধরে
রাজবাড়ীতে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর, হাতেনাতে যুবক আটক
কালিয়াকৈরে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনবন্ধুর মৃত্যু আহত-১
হামাসের সঙ্গে চুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে ইসরাইলিরা
সাতকানিয়ায় ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মাঠে বিজিবি
আ.লীগের নাশকতা ঠেকাতে টঙ্গীতে মহাসড়কে বিএনপির অবস্থান-বিক্ষোভ
ফ্যাসিস্ট হাসিনার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নকারী ১০ জন গ্রেপ্তার
‘ফ্যাসিস্টদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’ স্লোগানে উত্তাল নূর হোসেন চত্বর
পেন্টাগন কীভাবে সামলাবে ট্রাম্পের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত?
ক্যান্সার আক্রান্ত অভিনেত্রী আফরোজা হোসেন আর নেই
দোয়ারাবাজারে ইউপি শ্রমিক লীগের সভাপতি জামিল খান গ্রেফতার
আ.লীগ নিষেদ্ধের বিষয়ে যা বললেন চিফ প্রসিকিউটর
আলতাফ হোসেন চৌধুরীর গাড়ীতে হামলা ঘটনায় আ.লীগের ৫৬ নেতাকর্মীর নামে মামলা
ঘানাকে পরিচ্ছন্ন করতে মাঠে নেমেছে "বাজ স্টপ বয়েজ" - দেশজুড়ে প্রশংসিত
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশ থেকে ৯ গ্রেনেড উদ্ধার
শিশু মুনতাহা হত্যায় জড়িত সন্দেহে ৩ নারী আটক