গণঅভ্যুত্থানের সাবলিমিটি : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন
১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
The success of this movement is the strongest proof that Bangladeshi people are no longer content with economic progress at the cost of human rights, free speech and democracy. (জেনিফার চৌধুরী, আল জাজিরা, ৫/৮/২০২৪)। অর্থাৎ মানবাধিকার, বাক-স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মূল্যে বাংলাদেশের জনগণ যে হাসিনা সরকারের অর্থনৈতিক অগ্রগতির গল্পে আর সন্তুষ্ট নয় তার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ এই আন্দোলনের সাফল্য। এই সাফল্য রক্তের ¯্রােতরেখা বেয়ে অর্জিত হয়েছে, জন্মেছে আন্দোলনের সাবলিমিটি।
খ্রিষ্টীয় প্রথম বা তৃতীয় শতাব্দীতে গ্রিক লেখক লঙ্গিনাস তার ‘অন দ্য সাবলাইম’ গ্রন্থে সাহিত্যের সাবলিমিটিকে ভাষার শ্রেষ্ঠত্ব, মহান আত্মার অভিব্যক্তি এবং পাঠকদের মধ্যে পরমানন্দকে উস্কে দেওয়ার শক্তি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে গেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে একইভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ জায়গায় স্থান দিতে চাই আমরা। সাহিত্যের সাবলিমিটিতে উন্নত ভাষা, শক্তিশালী বা মহান চিন্তার অপ্রতিরোধ্য প্রকাশকে যেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় তেমনি জুলাই বিপ্লব একটি মহৎ উত্তরণে আসীন হয়েছে, যাকে আন্দোলনের সাবলিমিটি বা সমুন্নতি হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। লঙ্গিনাসের মতে, সাহিত্যের উচ্চমানের জন্য আদর্শ ও পরিমার্জিত বোদ্ধা পাঠক দরকার। একইভাবে গণ-অভ্যুত্থানকে বুঝতে হলে রাজনীতি বিষয়ে উন্নত চিন্তা ও মানবতাবাদী চিন্তার ধারক হতে হবে। কারণ মানবতাবিরোধীরা সবসময় দমন-পীড়ন, অত্যাচার দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চায়।
২.
‘গুলি করি মরে একটা, একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না, এইটা হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়।’ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পুলিশ কর্মকর্তা এই কথা বলার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের হত্যালিপ্সাকে তুলে ধরেছে। এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে গেছে। (দি ডেইলি ক্যাম্পাস, ১৩/৮/২০২৪) আন্দোলনকারীদের পুলিশ গুলি করেও দমাতে পারছে না বলে যে তথ্য জানায় পুলিশ কর্মকর্তা ইকবালÑতাতেই স্পষ্ট হয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের অঙ্গীকার। জুলুমবাজ স্বৈরশাসক ক্ষমতার পরিবর্তনকে অকল্পনীয় মনে করেছিল। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে পদদলিত করে হত্যা, গুম, নিপীড়ন চালিয়ে মানুষকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করে পলাতক জীবনে পৌঁছায়। পবিত্র কোরানে লেখা রয়েছে, ‘আমি ধ্বংস করেছি কত জনপদ যেগুলির বাসিন্দা ছিল যালেম, এসব জনপদ তাদের ঘরের ছাদসহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল এবং কত কূপ পরিত্যক্ত হয়েছিল ও কত সুদৃঢ় প্রাসাদও।’(সুরা হাজ্জ্ব, আয়াত ৪৫)।
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত ছিল অলিগার্কিক শাসনব্যবস্থা। রাজনৈতিক পরিভাষায় অলিগার্কিক হলো যেখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অল্প সংখ্যক লোকের হাতে থাকে। এই শাসকরা সামরিক নিয়ন্ত্রণে থাকতে পছন্দ করে। অলিগার্কি হিসাবে বিবেচিত ক্ষমতা কাঠামো জবরদস্তি বা বা নিপীড়নের করে জনসাধারণের আনুগত্য আদায় করে। তৈরি করে ভয়ের সংস্কৃতি। অলিগার্কি হল অভিজাততন্ত্রের বিকৃত রূপ। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসীন হয়ে শেখ হাসিনা দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ক্রমশ অকার্যকর ও সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেলে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এতটাই সহিংসভাবে তার রাজনৈতিক বিরোধিতাকে দমন করেছিল এবং বিচার বিভাগ, মিডিয়া এবং নিরাপত্তা কাঠামোর উপর নিয়ন্ত্রণ কুক্ষিগত করেছিল যে, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে দুর্নীতি করে জনগণের অসন্তোষের পরও ‘আমি-ডামি, আমরা আর মামুরা’র তামাশার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। ক্ষমতা দখলে কোনো হুমকি না থাকায় ভোটের পরে দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা পুনঃপশ্চাদপসরণ ঘটে।
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান কেবল কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল না বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অসন্তোষের অনেক ঘটনা বিক্ষোভকে উস্কে দিয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীসহ সকল রাজনৈতিক দল স্বৈরাচার শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলন বৈষম্যবিরোধীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিল। হাসিনা আমলে জামায়াতের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিচারের নামে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হওয়া, ছাত্রশিবিরকে অন্যায়ভাবে হামলা-মামলায় ও জঙ্গি আখ্যা দিয়ে জেলে পাঠানো প্রভৃতি বিষয়ও আন্দোলনে আগুন ছড়িয়েছে। ছাত্রদের প্রতিবাদটি ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারী, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে বৃহত্তর অসন্তোষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। কেবল কোটা সংস্কার নয় অর্থনৈতিক অসন্তোষ, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, অর্থ পাচার, দুর্নীতি, বেকারত্বের গ্লানি, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নিপীড়ন আন্দোলনে গতিবেগ দান করে।
মনে রাখতে হবে, ২০২৪ সালের জুনের শুরুতে চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ আইনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিক্ষোভ শুরু হয়। সরকারের দমন-পীড়নের ফলে এটির আকার এবং তীব্রতায় বাড়তে থাকে। প্রতিবাদ যত বাড়তে থাকে হাসিনা তত বিদ্বেষপরায়ণ ও হিংসাত্মক হয়ে ওঠেন। তিনি শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হননিÑএজন্য বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে পাত্তা বা গুরুত্ব দিতে চাননি। কিন্তু আন্দোলনের নেপথ্যে বিএনপি’র মতো রাজনৈতিক দল প্রথম থেকে ভূমিকা পালন করেছে। ফলে জুলাইয়ের ১৯ তারিখে খুনি হাসিনা কারফিউ জারি করেন এবং প্রায় এক সপ্তাহের জন্য সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেন। একই মাসে পুনরায় ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু হয়। ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ দমন করার জন্য পুলিশকে লেলিয়ে দেওয়া হয়। তারা সহিংস হয়ে ওঠে, বিক্ষোভকারীদের মারধর করে এবং তাদের বিরুদ্ধে মারণাস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করে, শত শত ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে। সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবাদ আরো বৃদ্ধি এবং বিস্তৃত হয়। প্রথমে পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় থেকে শুরু হলেও ক্রমান্বয়ে প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয় এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। সঙ্গে যুক্ত হয় বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা। বিশেষত কমপ্লিট শাটডাউনকে সমর্থন দিয়ে প্রকাশ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।(দৈনিক যুগান্তর, ১৭/৭/২০২৪) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়। এ সম্পর্কে একটি মন্তব্য উপস্থাপন করা যেতে পারে। ‘এটা হচ্ছে, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শহীদদের রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা (Popular ev Peoples Sovereignty) প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপ দেওয়ার দায়। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য নতুন গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অভিপ্রায়কে ধারণ এবং তাকে গাঠনিক রূপ দেবার কর্তব্য। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের যে গাঠনিক ক্ষমতা (Constituent Power) ঐতিহাসিক ভাবে তৈরি ও হাজির হয়েছে তাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গঠন করাই আমাদের কাজ। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের জনগণ বলশেভিক বা চিনা ধাঁচের ‘বিপ্লব’ করেনি। গণঅভ্যুত্থানের সেটা উদ্দেশ্যও ছিল না। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান ও ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা বাতিল করে বাংলাদেশের জনগণ চেয়েছে নিজেদের রাজনৈতিক ভাবে নতুনভাবে ‘গঠন’ (Constitute) করাÑঅর্থাৎ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ। জনগণ নিজেরা নিজেদের জন্য একটি গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করবে যা তাদের ‘অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবেÑএটাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সারকথা। একেই বলা হয় গণ সার্বভৌমত্ব (Popular Sovereignty) বা জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা।’ (ফরহাদ মজহার, ফেসবুক থেকে ২৫ অক্টোবর ২০২৪)।
আন্দোলন শুরু হওয়ার পরপরই শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন, তাদের রাজাকার বা বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করেন। তার আমলে যারাই সরকারের বিরুদ্ধে মতামত প্রকাশ করেছেন কিংবা সমালোচনা বা ভিন্নমত ব্যক্ত করেছেনÑ তাদের জন্য ভয়াবহ শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে আয়নাঘরের গোপন কারাগারে আটক মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমান, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর সাবেক আমীর গোলাম আযমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী, লেঃ কর্নেল হাসিনসহ অনেককে। পাশাপাশি মানবাধিকার কর্মী আইনজীবী আদিলুর রহমান, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম, ফটোগ্রাফার শহিদুল আলম, সাংবাদিক ড. কনক সরওয়ারের বোনসহ আরও অনেকে। একই কারণে জেল-জুলুম মামলা-হামলার শিকার হতে হয়েছে বিএনপি’র সর্ব স্তরের নেতা-কর্মীকে। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ অনেক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়। বিএনপি’র একজন বড় নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দীন আহমদকে গুম করে ভারতে ফেলে রেখে আসা হয়। বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর, আত্মত্যাগী নেতা রহুল কবির রিজভী এবং স্থায়ী কমিটির প্রবীণ ও জনপ্রিয় কয়েকজন নেতাকে একাধিকবার জেলে যেতে হয়েছে। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দি রাখা এবং বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা, উপরন্তু দেশনায়ক তারেক রহমানকে একাধিক বানোয়াট মামলায় সাজা প্রদান ও নির্বাসনে রাখা প্রভৃতি অমানবিক কর্মকা-Ñ খুনি হাসিনা সরকারের পশুর চেয়ে ইতর শ্রেণির হীন মানসিকতার পরিচয় হিসেবে অনেকদিন থেকেই জনসাধারণের কাছে নিন্দনীয় হয়ে আসছে।
বাংলাদেশের জনগণের বিপ্ল¬বের সবচেয়ে শক্তিশালী আধুনিক উদাহরণ ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’। এ থেকে বিশ্ব অনেক কিছু শিখতে পারে। ছাত্রদের রাজনৈতিক পদক্ষেপ এবং কৌশল জাতীয়ভাবে সংগঠিত ছিল; সারাদেশে তাদের নয়জন জাতীয় সমন্বয়কারী ছিল যারা সকলেই একই দাবির সমষ্টিকে ঘিরে আন্দোলন করছিল। তারা পূর্বের আন্দোলন সম্পর্কে এবং কেন তারা ব্যর্থ হয়েছিল সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন ছিল। এবং তারা ২০১৮ সালের কোটা সংস্কারের মতো এই আন্দোলনগুলি থেকে শিক্ষা নিয়েছে এবং তাদের কৌশল ও অনুশীলন পরিবর্তন করেছে। রাষ্ট্রীয় সহিংসতা অকল্পনীয় মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনের ইনটেনসিটি বাড়িয়ে দ্রুত নয়টি দাবি থেকে একটিতে চলে যায়।
৩.
প্রকৃতপক্ষে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হয়ে বিএনপি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়। এই ছাত্র আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির মধ্যে একটি ছিল রাজনৈতিক এবং আদর্শগত বিভাজনগুলিকে এক জায়গায় আনার সক্ষমতা। সকলকে একত্রিত করা সম্ভব হয়েছিল ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার অহঙ্কার ও দাম্ভিকতার যথার্থ জবাব নিশ্চিত করণে। ১৪ জুলাই কোটা আন্দোলনকে লক্ষ করে ‘রাজাকার’ শব্দটি উচ্চারণ করেন শেখ হাসিনা। অতি দ্রুত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিশেষত রাতে রোকেয়া ও শামসুননাহার হলের ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে স্লোগানে মুখরিত করেন ক্যাম্পাস। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে রোববার রাত সোয়া ১১টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসি প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এসময় ‘ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘তুমি কে আমি কে-রাজাকার রাজাকার’সহ বিভিন স্লোগান দিতে থাকেন তারা।’(দৈনিক ইনকিলাব, ১৪/৭/২০২৪)। খুনি হাসিনাকে লক্ষ্য করে স্লোগান রূপান্তরিত হয় এভাবেÑ ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার ! রাজাকার ! কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।’ এই অন্তর্ভুক্তি প্রতীকী। ‘রাজাকার’ শব্দটি দীর্ঘকাল ধরে নিন্দনীয় হলেও আন্দোলনে তাৎক্ষণিক পলিটিক্যাল রেটরিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
এই স্লোগানটি তাৎপর্যের বিভিন্ন স্তর বহন করে। গবেষক লিখেছেন - This slogan carries several layers of significance. First, by challenging the Razakar vs. non-Razakar divide, it eased the concerns of “non-political” citizens who feared marginalization if they joined the movement. Second, it created a safe space for organized political forces opposed to the government, garnering substantial moral and political support from a broad segment of the population – a crucial strategic advantage. Third, by labeling the head of government as a dictator, it validated the longstanding demands of parties like the BNP and JI, reinforcing their claims. (দি ডিপ্লোম্যাট, ২৪/৯/২০২৪) এইভাবে, ছাত্র আন্দোলন বিরোধী দলগুলির অংশগ্রহণের একটি বিরল সুযোগ দিয়েছিল।
বছরের পর বছর যন্ত্রণা এবং শাসনের পতনের আকাক্সক্ষায় নিমজ্জিত ছিল বলেই বিএনপি প্রকাশ্যে আন্দোলনের সাথে নিজেদের একত্রিত করেছে। তাদের রাজনৈতিক আদর্শ দীর্ঘদিন ধরে হাসিনা কর্তৃক রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার কারণে, ছাত্র আন্দোলনের স্লোগানের ভাষা দ্বারা পুনরুজ্জীবিত হয়। ‘স্বৈরাচার স্বৈরাচার’ স্লোগানটি অন্যান্য স্লোগানের মতোই সাধারণ জনগণকেও অনুপ্রাণিত করেছিল। স্লোগান আর দেয়াল লিখনে আরো রয়েছেÑ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই, রাজনৈতিক দমন নয়। আমরা শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার চাই। আমরা আমাদের কণ্ঠস্বর শুনতে চাই।’ স্লোগান ছিলÑ‘লাখো শহীদের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই।’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক/ মেধাবীরা মুক্তি পাক।’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা/ দেশটা কারো বাপের না।’ ‘স্বৈরাচারী বুবুজান/ নৌকা লইয়া ভারতে যান।’, ‘যে বলেছে রাজাকার/ তার চৌদ্দগুষ্টি স্বৈরাচার।’, ‘পা চাটলে সঙ্গী/ না চাটলে জঙ্গি।’
উপর্যুক্ত স্লোগানের মধ্যে ‘আমরা আমাদের কণ্ঠস্বর শুনতে চাই’Ñএই প্রত্যাশা খুবই গুরুত্ববহ। সাব-অল্টার্ন তত্ত্বে যেমন গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক একদা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘ক্যান দ্যা সাব-অল্টার্ন স্পিক?’ নি¤œবর্গের কণ্ঠস্বর কি কখনও শ্রুত হয়? কেবল বিদ্রোহের মুহূর্তে উচ্চবর্গ বুঝতে পারে নি¤œবর্গেরও কণ্ঠস্বর আছে। সেরকমই আন্দোলনরত শিক্ষার্থী-জনতার ফ্যাসিস্ট বিরোধী অভ্যুত্থানই বার্তা দিয়েছে যে তাদের কণ্ঠস্বরের মূল্য আছে। একজন মুগ্ধ, একজন আবু সাঈদ, একজন সাজিদÑ শত শহিদে পরিণত হয়ে অন্য সকলের ত্যাগের মহিমায় বিপ্লবের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে বিশ^জুড়ে। (চলবে)
লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক, থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাচ্ছেনা আর্জেন্টিনা
খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু
পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক তল্লাশি
আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার
অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী
পার্লামেন্টে ক্ষমা
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তায় নতুন প্রহরী: রোবট কুকুর!
লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে বহিস্কার
মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেফতার
সীমান্তে ৪ বাংলাদেশী নারী আটক
গুলি বর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ শনাক্ত গ্রেফতারের উদ্যোগ নেই
সিলেটে মতবিনিময় সভা করলো নেজামে ইসলাম পার্টির
স্বামী স্ত্রীকে শর্ত লাগিয়ে তালাক দেওয়ার পর শর্ত উঠিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে।
আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন
জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার
ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি
বিতর্ক পরিহার করতে হবে
ইসরাইলি বাহিনী হিজবুল্লাহর সঙ্গে অস্ত্রবিরতিতে যাবে না
নির্বাচনে হারার পর প্রথমবার জনসমক্ষে বাইডেন ও কমলা