ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৫ মার্চ ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৪, ১২:০৮ এএম

সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে যথাযথ খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা অত্যাবশ্যক। প্রত্যেক নাগরিকের খাদ্য চাহিদা পূরণ ও নিরাপদ খাদ্য তথা খাদ্যের মান নিশ্চিত করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। সব আন্তর্জাতিক আইনেও খাদ্য চাহিদা পূরণের অধিকারের স্বীকৃতি রয়েছে। পুঁজিাবাদী রাষ্ট্র নাগরিকের জন্য খাদ্যসহ এসব মৌলিক জীবনোপকরণ সরবরাহ না করলেও প্রতিটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে, খাদ্যসহ মৌলিক জীবনোপকরণের সরবরাহ এবং মান নিশ্চিত রাখা। আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপদ খাদ্য তথা, সুলভ মূল্যে প্রয়োজনীয় খাদ্যের উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহ নিশ্চিত করার সাথে সাথে এর পুষ্টিমানসহ আনুসাঙ্গিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে। খাদ্যে ভেজাল, নকল এবং ক্ষতিকর-বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার আমাদের জনস্বাস্থ্যকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। সর্বক্ষেত্রে ভেজাল ও মানহীন খাদ্য গ্রহণের ফলে কোটি কোটি মানুষ চরম স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। গত বছরের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশে দু’কোটির বেশি মানুষ কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত। কিডনি ও লিভারের সমস্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, খাদ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার এবং অনিয়ন্ত্রিত ও ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস। কৃষি খামারের উৎপাদন প্রক্রিয়া, সংরক্ষণ, বিপণন থেকে শুরু করে খাদ্যশিল্প, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও বাসাবাড়ির রান্নাঘরের তেল-মসলা ও উপকরণের মধ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে।

দু’ বছর আগে জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের দেয়া তথ্য অনুসারে, দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৭ শতাংশ কিডনি রোগে আক্রান্ত। এ হিসাবে দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা দু’ কোটির বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১৫ হাজার কিডনি রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেছিল। এর পরের বছর ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজারের বেশি। বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা আরো অনেক বেশি। অনেক স্বচ্ছল রোগী চিকিৎসার জন্য বিদেশে যায়। কিডনি ও লিভারের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। খাদ্যের ভেজাল এবং বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধ করার পাশাপাশি অনিয়ন্ত্রিত ও ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে পারলে দেশে কিডনি ও লিভারের সমস্যা অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। শুধু কিডনি, লিভার সমস্যাই নয়, নানা ধরনের ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিসের মতো রোগ-ব্যাধির প্রধান কারণ খাদ্য ও পানির ভেজাল ও দূষণ। আমাদের দেশে খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, বিপণন ও ভোক্তার খাবার টেবিলে পৌঁছা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ভেজাল, দূষণ ও রাসায়নিক সংমিশ্রণের মধ্য দিয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া সক্রিয় রয়েছে।

খাদ্যের ভেজাল ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সাধারণ নাগরিক সমাজ কিছুটা সচেতন থাকলেও খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়ার কাছে তারা অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছে। কয়েক বছর আগেও খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হতে দেখা গেছে। যদিও এসব অভিযান খুব সীমিত পর্যায়ে, ঢাকার হোটেল-রেস্তেঁঁরা ও খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষুদ্র কারখানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এভাবে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। শিশুখাদ্য, দুধ, মাছ-মাংস, ফলমূল, শাক-সব্জি, চিনি, লবণ, ভোজ্য তেল থেকে জরুরি ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধ পর্যন্ত ভেজাল কাঁচামাল ও নকলের ছোবলে আক্রান্ত। এর বিপরীতে খাদ্য অধিদফতর, কৃষি বিভাগ, নিরাপদ খাদ্য বিভাগ, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, পরিবেশ অধিদফতরের তৎপরতা খুবই সীমিত। এসব সরকারি সংস্থার দায়িত্ব ও তৎপরতা সঠিকভাবে পালিত হলে কোটি কোটি মানুষের জীবনকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়া খাদ্যের ভেজাল ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব নয়। খাদ্যপণ্যে যত্রতত্র ফর্মালিন, কার্বাইড, পেস্টিসাইড, ফাঙ্গিসাইড, ননফুডগ্রেড রঙ, রাসায়নিক মিশ্রিত নকল খাদ্যপণ্যের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে কঠোর উদ্যোগকে জনগণ সমর্থন করে। যারা বাড়তি মুনাফার জন্য মানুষকে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা ও মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়, তাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি। খাদ্য ও কৃষিতে ব্যবহৃত বিষাক্ত রাসায়নিকের উৎপাদন, আমদানি, বিপণন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়

গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়

সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫

ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫

লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি

লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি

দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ

দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ

সিলেটে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার, নারী গ্রেফতার

সিলেটে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার, নারী গ্রেফতার

আশ্বিনকেও ফেরালেন তাসকিন

আশ্বিনকেও ফেরালেন তাসকিন

কক্সবাজার পাহাড়তলীতে অনৈতিক কাজে অতিষ্ঠ মানুষ, বাধা দেয়ায় বাসার মালিকের উপর হামলা

কক্সবাজার পাহাড়তলীতে অনৈতিক কাজে অতিষ্ঠ মানুষ, বাধা দেয়ায় বাসার মালিকের উপর হামলা

অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইইউ

অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইইউ

তাসকিনের জোড়া আঘাত, লিটনের রেকর্ড

তাসকিনের জোড়া আঘাত, লিটনের রেকর্ড

ডিবির আলোচিত ডিসি মশিউর গ্রেপ্তার

ডিবির আলোচিত ডিসি মশিউর গ্রেপ্তার

১৯৯ রানের জুটি ভাঙলেন তাসকিন

১৯৯ রানের জুটি ভাঙলেন তাসকিন

গণপিটুনিতে দুই মাসে ৩৩ জনের মৃত্যু

গণপিটুনিতে দুই মাসে ৩৩ জনের মৃত্যু

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয়

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয়

মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ

মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ

বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই

বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ