বান্দরবান কার নিয়ন্ত্রণে?
০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৬ এএম | আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৬ এএম
বান্দরবানে ১৭ ঘন্টার মধ্যে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের তিনটি শাখায় প্রকাশ্য ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। রুমা ও থানছিতে হাটবারে ত্রাস সৃষ্টি করে ব্যাংক ডাকাতি করে ডাকাতরা শুধু ব্যাংক থেকে লাখ লাখ টাকাই নিয়ে যায়নি, নিরাপত্তারক্ষী আনসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে অন্তত ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র, মোবাইলফোন ও কিছু গোলাবারুদও ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। ডাকাতির আগে তারা বিদ্যুতের স্থানীয় উপকেন্দ্র বন্ধ করে দেয় এবং সোনালী ব্যাংক রুমা শাখার ব্যবস্থাপককে আটক করে নিয়ে যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ এই ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে জড়িত বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে। কেএনএফ’র সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। ইতিমধ্যে এই গোষ্ঠির সাথে সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঘটনায় দুই পক্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বান্দরবানের স্থানীয় প্রতিনিধি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা মারমার আহ্বানে একটি শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করে এই সশস্ত্র গ্রুপের সাথে আলোচনার উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল। আলোচনায় সাড়া দিয়ে কেএনএফ’র দাবি দাওয়ার পরিবর্তন ও নমনীয়তার আভাসও পাওয়া গিয়েছিল। গতমাসে সেনাবাহিনীর হাতে দুই কেএনএফ সদস্য আটক হওয়ার পর কেএনএফ’র তরফ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বদলা’ নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার ও বুধবারের ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা তাদের ঘোষিত বদলা বলেই ধারনা করা হচ্ছে।
পাবর্ত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠিগুলোর উত্থানের পেছনে আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির সম্পর্ক বিদ্যমান। তবে দেশের সেনাবাহিনী এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই পাবর্ত্য অঞ্চলে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থ রক্ষা করে এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাহাড়ে নতুন সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠির উত্থান এবং ভয়ঙ্কর তৎপরতার পেছনে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের ব্যর্থতার দায় এড়ানো যাবে না। দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জনগণের রাজস্ব থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন ইন্টিলিজেন্স আউটপোস্ট, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর পেছনে যে বিপুল পরিমান অর্থ খরচ করা হয়, তার বিপরীতে পাবর্ত্য অঞ্চলের পাহাড়ি-বাঙ্গালী সাধারণ জনগোষ্ঠির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যত ব্যর্থ হচ্ছে বাহিনীগুলো। পাবর্ত্য শান্তিচুক্তির পর চুক্তি অনুসারে পাহাড় থেকে অনেক আর্মি ক্যাম্প গুটিয়ে ফেলার কারণেই নতুন সশস্ত্র গ্রুপ গঠন ও আত্মপ্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কেএনএফ’র উত্থান ও তৎপরতা পাহাড়ে সেনাবাহিনীর অবস্থানের বাস্তব প্রয়োজনীয়তাকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। পূর্বে ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে কেএনএফ’র ব্যাংক ডাকাতি, অর্থ ও অস্ত্র লুঠ, ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনা তাদের বেপরোয়া তৎপরতা ও সামরিক সক্ষমতাকেই নির্দেশ করছে। এ ধরণের তৎপরতা ঠেকাতে না পারা আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর জন্য একটি লজ্জাজনক ব্যর্থতার উদাহরণ। এ ধরণের ব্যর্থতা মেনে নেয়া যায়না।
বান্দরবানে সশস্ত্র গোষ্ঠির ডাকাতি-সন্ত্রাসী ঘটনার পর সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জেলার ৬টি উপজেলার সব ব্যাংক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমনিতেই দেশের অর্থনীতি টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট ও মূল্যস্ফীতির কারণে দেশে এক প্রকার নিরব দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, গণতন্ত্রহীনতা এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে ক্ষমতার ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাং সহ নানা রকম অপরাধ প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসি কর্মকান্ডের পাশাপাশি সমাজের সর্বত্র ভিক্ষাবৃত্তিও বেড়ে গেছে। এসব চরম অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রমান দেয়। পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আইনের শাসন নিশ্চিত করার বদলে বিরোধীদল দমনে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে ব্যস্ত রাখার কারণে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিশীল হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষার চেয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিদেশে শান্তিরক্ষি মিশনে প্রেরণ ও ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত রাখার অভিযোগও উঠেছে। বিজিবি ও সেনাবাহিনীকে তার ঐতিহ্য ও পেশাদারিত্ব ভুলে গেলে চলবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর তৎপরতা বন্ধে সেনাবাহিনীকে আরো কঠোর অবস্থানসহ নাগরিক নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড নির্বিঘœ রাখতে হবে। বান্দরবানের থানছি ও রুমায় ব্যাংক ডাকাতির প্রায় একই সময়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালিতে ইসলামী ব্যাংকের একটি এজেন্ট শাখার ভল্ট ভেঙ্গে ৫ লক্ষাধিক টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। গত দেড় দশকে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সীমাহীন দুর্নীতি ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকেই ফোঁকলা ও দেউলিয়া করে তোলা হয়েছে। বড় ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে অর্থ লোপাটের সুযোগ কমে গেলেও মেগা প্রকল্পের নামে জনগণের সম্পদ লোপাট এখনো বন্ধ হয়নি। বিদেশি ঋণ সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পের টুলস্ ক্রয়ে শত শত গুন বেশি মূল্য দেখিয়ে অর্থ লোপাটের চিত্র এখনো বেরিয়ে আসছে। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার প্রভাব পড়ছে সর্বত্র। রাজনৈতিক বিভক্তি ও অস্থিতিশীলতার সুযোগ পাহাড়ে ও সমতলে নানামাত্রিক সামাজিক সংকট দেখা দিয়েছে। নিরাপত্তাহীনতা ও সুশাসন নিশ্চিতে নিরাপত্তা বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দুই দিনেই পরাজয়ের ধ্বনি শুনছে বাংলাদেশ
ছাত্রআন্দোলনে শহীদ ছাত্রদলনেতা ওয়াসিমের কবর জিয়ারতে কেন্দ্রীয় নেতারা
অনেক সচিবসহ কর্মকর্তারা নাশকতা করার চেষ্টা করছে:রিজভী
রাজধানীতে ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ফিরে আসছে: উপদেষ্টা নাহিদ
কমলা হ্যারিস জিতলে বিনিয়োগ তুলে নেয়ার হুমকি প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওয়ারেন বাফেটও: ইলন মাস্ক
বান্দরবানের রুমায় অস্ত্র গোলাবারুদ জ্যামার উদ্ধার
প্রথমবারের মতো ছুটির দিনেও চলছে মেট্রো
বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ ও বিচারের দাবীতে খুলনায় মানববন্ধন
শেখ হাসিনার দলবলকে আগলে রেখেছে বর্তমান প্রশাসন: সেলিমা রহমান
রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ জনে
অনতিবিলম্বে ভিসি নিয়োগ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী ইবি শিক্ষার্থীদের
৩শ' আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
বরিশালে রাইজিং স্কলার অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ অনুষ্ঠিত
ঈশ্বরদীতে সাপের কামড়ে ১ ব্যাক্তির মৃত্যু
৭ দিনের রিমান্ডে মশিউর রহমান
সিলেট মহানগর শ্রমিক কল্যাণের ট্রেড ইউনিয়নের দিনব্যাপী কর্মশালা সম্পন্ন
দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৪ ডিগ্রী বেশী মধ্য শরতের দুঃসহ গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত
নামাজের আগে বায়তুল মোকাররমে নাটকীয়তা