ঢাকা শহরে এত মানুষ কোথা থেকে এলো

Daily Inqilab ড. অজয় কান্তি মন্ডল

০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৬ এএম | আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৬ এএম

দীর্ঘ ৬ বছর পর রোজার সময়ে ঢাকা অবস্থান করছি। ঢাকা বলতে এলিফ্যান্ট রোড, বাটা সিগন্যালের ধার ঘেঁষেই বাসা। রমজান মাসে বাইরে বের হলে স্বভাবতই সন্ধ্যার সময়ে বিশেষ করে ইফতারের পরপরই বের হওয়ার চেষ্টা করি। সন্ধ্যায় বের হওয়ার পিছনে অবশ্য একটা কারণ আছে। ঐ সময়টাতে রাস্তায় মানুষ একটু কম থাকবে, দোকানপাট তুলনামূলক ফাঁকা থাকবে কিংবা সর্বোপরি যানজট একটু হলেও কম হবে। সারাদিনের দাপ্তরিক ব্যস্ততা, সাংসরিক ব্যস্ততা তদুপরি দিনভর রোজা রাখার পরে মানুষের ক্লান্তিকর সময় হচ্ছে সন্ধ্যা পরবর্তী সময়। এটা অবশ্য আমার উপলব্ধি। বিগত সময়ে এমনটাই অভিজ্ঞতা ছিল, বলা যায়। তাছাড়া সন্ধ্যার পরে নিজেরও একরকম ফ্রি সময় অতিবাহিত হয়। সে কারণে বাইরে বের হওয়ার জন্য সন্ধ্যাকে বেছে নেওয়া।

রমজান মাস শুরু হওয়ার প্রথম সপ্তাহের যেকোন একদিন সন্ধ্যা প্রায় আগত, এমন সময়ে মেয়েকে নিয়ে বাটা সিগন্যাল থেকে নীলক্ষেতের দিকে পায়ে হেঁটে রওনা দিলাম। উদ্দেশ্য নীলক্ষেতের বইয়ের দোকান থেকে কিছু বই কেনা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ইফতার শুরু হবে। ইফতারকে কেন্দ্র করে ফুটপাত জুড়ে মানুষ খাবার নিয়ে বসে পড়েছে। চলতি পথে যেসব রেস্তোরাঁ নজরে আসল তার কোনটাতে তিল পরিমাণ জায়গা নেই। এমনকি রেস্তোরাঁর বাইরে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে টেবিল চেয়ার সেট করে দিয়েছে রেস্তোরাঁ মালিক। সেখানেও বসার জায়গার সংকুলান হচ্ছে না। অনেকেই বড় বড় বিপনি বিতানের সিঁড়ি দখল করে বসেছে। এটা ইফতারের ঠিক আগের মুহূর্তের দৃশ্য। এত মানুষের একসাথে উপস্থিতির প্রধান কারণ অবশ্য সহজেই অনুমেয়। আশপাশে অবস্থিত নিউমার্কেট, চন্দ্রিমা মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেটসহ সকল প্রকার লোকাল পণ্যের কেনাবেচা থেকে প্রায় সবধরনের ব্র্যান্ডের শো-রুম আছে। এসব মার্কেটে সবাই ঈদ উপলক্ষে মার্কেট করতে এসেছে। তাই মানুষের এত উপচে পড়া ভিড়। যদিও ঈদের বেশ বাকি। তারপরেও মানুষ এখন অনেক বেশি অ্যাডভ্যান্স বলা যায়। ঈদের কেনাকাটা নাকি এখন বেশ আগে থেকেই শুরু হয়। যেমনটি এবারও অনেক মিডিয়ার নিউজ ফিডে শুনেছিলাম। অনলাইন যেসব শপিং জোন আছে তারাতো কয়েকমাস আগে থেকেই ঈদের অফার শুরু করেছে। দ্রুত অর্ডার করুন, স্টক সীমিত, মেগা ডিস্কাউন্ট অফার দিয়ে তাদের রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

যাইহোক, ফুটপাত ফাঁকা না থাকায় আমরা ফুটপাত ছেড়ে মেইন রোডের কিনারা ঘেঁষে হেঁটে নীলক্ষেত পৌঁছে প্রয়োজন মেটালাম। তবে এক্ষেত্রে মেইন রোড ফাঁকা বলা যায়। রিক্সা বা গাড়ির চাপ একেবারে নেই বললেই চলে। কিন্তু ফেরার সময় চিত্র ভিন্ন। পুরো ফুটপাত তখন হকারদের দখলে। আগেও হকার ছিল কিন্তু মানুষ ইফতারিতে ব্যস্ত থাকায় তারা তাদের ব্যবসা সাময়িক স্থগিত করেছিল। কিন্তু ইফতারের পরে সর্বত্র সোরগোল। প্রতিটি হকারের চারপাশে ক্রেতাদের ভিড়। ফুটপাতে হকারদের বসা মানে তার চারপাশে ক্রেতাদের ভিড় থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। এবার মেইনরোডেও ভিন্ন চিত্র। রিক্সা ও প্রাইভেটকারের দখলে চলে গেছে পুরো রাস্তা। তার মানে পথচারীদের চলাচলের তেমন কোনো সুযোগ দেখলাম না। যেখানে ১০ মিনিটে পায়ে হেঁটে পৌঁছেছিলাম কিন্তু ফেরার সময় প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লেগে গেল। রিক্সা নিলে সেটা ১ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগত। কেননা আসার সময় জ্যামে আটকে থাকা রিক্সার তেমন কোনো নড়ন চড়ন চোখে পড়েনি।

এর সপ্তাহ খানিক পরে সাপ্তাহিক ছুটির দিনের এক সন্ধ্যায় পুনরায় নিউমার্কেটে যাওয়ার উদ্দেশে বের হলাম। তবে এবার এলিফ্যান্ট রোড হয়ে ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশ দিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করলাম। সাইন্স ল্যাব মোড়ের ওভার ব্রিজ পার হয়ে আড়ংয়ের শো রুমে যাব ভাবলাম। উদ্দেশ্য ছিল বাচ্চাদের কিছু পোশাক কেনা। সাথে ছিল আমার স্ত্রী এবং মেয়ে। শো-রুমে প্রবেশের পূর্বে এটিএম বুথ থেকে কিছু টাকা উঠানোর জন্য গেলাম। কিন্তু বুথে টাকা পেলাম না। ভাবলাম আজ কর্মদিবস না থাকায় হয়ত টাকা শেষ হয়ে গেছে। ওভার ব্রিজ পার হয়ে আড়ংয়ের শো-রুমে প্রবেশের সাহস পেলাম না। বলে রাখা ভালো, এখানকার আড়ংয়ের শো-রুমটি দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত। নিচ তলায় অন্যান্য ব্র্যান্ডের কিছু শো-রুম আছে। সেখানেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। যেহেতু উদ্দেশ্য আড়ংয়ে যাব সেহেতু দ্বিতীয় তলার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। কিন্তু মানুষের ভিড়ে দ্বিতীয় তলায় উঠতে ৫ মিনিট সময় লেগে গেল। ভাবলাম শো-রুমের ভিতরে হয়ত ফাঁকা হবে। কিন্তু দ্বিতীয় তলায় উঠে চক্ষু চড়কগাছ। পুরো শো-রুমের ভিতর তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা নেই। গেটে প্রবেশ করে কাক্সিক্ষত পোশাকের পাশে যেতে পারলাম না। এর মধ্যে আড়ংয়ে কর্মরত ভলেন্টিয়াররা সজোরে চিৎকার করে বলছে ‘ম্যাম একটু সাইড প্লিজ, স্যার একটু সাইড প্লিজ’। এসব দৃশ্য দেখে এবং সামনে পা বাড়ানোর উপায় না পেয়ে শো-রুম থেকে বের হয়ে এলাম।

আবারো ওভার ব্রিজ পার হয়ে ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশের অবস্থিত ফুটপাত ধরে এগুতে লাগলাম। কিন্তু ফুটপাতের পুরোটাই হকারদের দখলে। হকার বসলে ক্রেতা আসবেই। ঠিক তেমনটাই লক্ষ করলাম। সব হকার এবং ক্রেতাদের মধ্যে দেদারছে কেনাবেচা চলছে। বছরের অন্যান্য সময়ে এই স্থানে হকার থাকলেও ঈদের সময় পরিস্থিতির দৃশ্যপট পাল্টে যায়। সামনে এগুতে এগুতে এটিএম বুথ খুঁজতে লাগলাম। পেয়ে গেলামও বেশ কয়েকটা। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, কোনো বুথে টাকা ছিল না। কোনো কোনো বুথের গার্ড বড় কাগজে ‘ক্যাশে টাকা নাই’ লিখে বুথের গেটে ঝুলিয়ে দিয়েছে। আবার কোনো বুথে প্রবেশের পূর্বেই গার্ড বলে দিচ্ছে টাকা নাই। তাই টাকা উঠাতে পারলাম না। সাথে অল্প কিছু টাকা ছিল। সেটা দিয়ে প্রয়োজনের সামান্য কিছু মিটিয়ে বাসার উদ্দেশে রওনা দিলাম।

ভিড় ঠেলে আসতে ১০ মিনিটের পথ আধা ঘণ্টা পার হয়ে গেল। তবে এত ভিড়ের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য হারে ভিখারিদের উপস্থিতি খেয়াল করলাম। ছোট ছেলে কিংবা মেয়ে, বাচ্চা কোলে মধ্যবয়সী মহিলা, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা সবারই বেশ আনাগোনা। ঢাকা শহরে ভিখারি অনাদিকাল থেকেই ছিল। কিন্তু এখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে উঠেছে। মাঝেমধ্যে আমার মনে হয়, পুরো রাজধানীতে ভিখারির ঢল নেমেছে। পথ চলতে তারা মানুষের কাছে হাত পাতছে, গাড়ি থামলে জানালায় আঘাত করছে। পঙ্গু, অন্ধ, খোঁড়া, বয়স্ক মানুষের সঙ্গে শারীরিকভাবে ভালো মানুষকেও ভিক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে। শারীরিকভাবে অক্ষম, দৈহিকভাবে প্রতিবন্ধী ভিখারির পাশাপাশি আছে বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীরা। আমার বাস্তব অভিজ্ঞতায় মনে হয় রোজার সময় ঢাকা শহরে উল্লেখযোগ্য হারে ভিখারির সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অনেকে বলে থাকে, পবিত্র রমজান মাসে অনেকেই ভিক্ষা করতে গ্রাম থেকে ঢাকায় আসে। অনেকে মন্তব্য করে, বর্তমানে ভিক্ষাবৃত্তি একটি ব্যবসা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কেননা, বাসাবাড়ি, আবাসিক এলাকা, অলিগলি, বাজার, শিক্ষাঙ্গন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, হাসপাতাল সবখানেই ভিখারিদের আধিক্য দেখে এমনটি মনে হওয়ায় স্বাভাবিক। এমনকি দেশের সব রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, এয়ারপোর্ট, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজের সামনে, মাজার, মসজিদ, মন্দির, রাস্তাঘাটে অজস্র ভিখারি। এসব মেনে নিয়েই বলতে হবে শহরে প্রকৃত ভিখারি ব্যাপক হারে বাড়ছে। অর্থনীতিবিদরা মন্তব্য করেছেন যে, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি, মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া, বেকার হয়ে পড়া, কর্মসংস্থানের অভাবসহ সার্বিক অর্থনীতির শোচনীয় পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে চারদিকে অভাব আঁচ করা যায়। একারণে ভিখারির সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

একদিকে এটিএম বুথে টাকার জন্য হাহাকার, অন্যদিকে মানুষের কাছে হাতপেতে ভিক্ষা করা মানুষের আধিক্য এবং সেইসাথে বিপনিবিতানগুলো থেকে শুরু করে সকল খুচরা মার্কেটে উপচে পড়া ভিড় কিছুটা হলেও নিজের মধ্যে মিশ্র উপলব্ধির উদ্ভব করল। তবে একথা অনস্বীকার্য, মানুষ এখন অনেক বেশি স্মার্ট। হয়ত সেই উদ্দেশে ঈদের বেশ আগে থেকেই ঈদের বাজার সেরে ফেলছে। যাক তাহলে ঈদে হয়ত এবার চাপ কম পড়বে। আবার ভাবলাম, যে হারে মানুষ বাইরে খাচ্ছে কিংবা মার্কেট করছে তাতে দেশের মানুষের হাতে ভালোই টাকা আছে বলা যায়। এসব ভাবতে ভাবতে বাসার কাছাকাছি এসে খেয়াল হলো কাঁচাবাজারে যেতে হবে। মেয়ে মুরগি ছাড়া ভাত খেতে চায় না। কিন্তু বাসায় মুরগি নেই। এক্ষেত্রে তার ব্রয়লার মুরগিই অধিকতর পছন্দ। সেই উদ্দেশ্যে হাতিরপুল কাঁচা বাজারে গেলাম। ব্রয়লার মুরগির একদাম ২৪০ টাকা কেজি। আশপাশের বেশ কয়েকটা দোকানে যাচাই করলাম। সবার ক্ষেত্রে একদাম। কিছুদিন আগেও ব্রয়লাম ২০০ টাকা কেজি কিনেছি। যেটাও একরকম অতিরিক্ত দাম মনে হয়েছিল। কিন্তু ২৪০ টাকা মানতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। ফিরে এলাম। আশার পথে অবস্থিত মিনা বাজারে ঢুকলাম। সেখানে দেখলাম চামড়া বিহীন ব্রয়লার মুরগি ৩৭৫ টাক কেজি। সাথে শতকরা ৫ টাকা ভ্যাট যুক্ত হবে। মানে প্রায় ৩৯৫ টাকা কেজি পড়বে। রোস্টের মুরগি (সোনালি) ৬৫০ টাকা কেজি। আমার মতো একজন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের কাছে এসব অংক নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে কষ্ট হচ্ছিল। তারপরেও বাধ্য হয়ে একরকম মনের বিরুদ্ধে মিনা বাজার থেকে ৩৯৫ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি কিনলাম। ভেবে দেখলাম, একসময় ব্রয়লার মুরগি মানুষের অপছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকত। এই একসময় খুব বেশিদিন আগের কথা না। আলুর কেজি বর্তমানে ৪৫-৫০ টাকা। দাম বাড়ার যে ধরন তাতে মনে হচ্ছে, এবার মৌসুমের শেষ পর্যায়ে আলু সেঞ্চুরি করতে পারে।

রাস্তায় ভিখারির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধির অন্যতম কারণ দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় অত্যাধিক হারে বৃদ্ধি। যে কারণে মানুষ অভাব সামলে নিতে পারছে না। ফলে শহরে অভাবী মানুষ হাত পাতছে অন্য মানুষের কাছে। দরিদ্র শ্রেণির একটি অংশ বেকার, কর্মহীন বা অসুস্থ হয়ে ভিক্ষাবৃত্তির পথে পা বাড়াচ্ছে। দেশের মানুষের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য বৃদ্ধি, অধিকতর মানুষের ক্রমশ অভাবের অতলে পৌঁছে যাওয়ার দৃষ্টান্ত এই ভিখারির সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। দিনকে দিন ধনী আরও ধনী এবং গরিব আরও গরিব হচ্ছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। পুঁজিবাদী সমাজে এটাই দৃষ্টান্ত। তবে সরকারের বর্তমান উন্নয়নের প্রচার, তার সাথে ভিখারির এত আধিক্য মানায় না। দশ বছরেরও বেশি সময় আগে ভিক্ষাবৃত্তি নির্মূল ও পুনর্বাসনের জন্য একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল সরকার। তবে সেটি ব্যর্থ না সফল এখনো তা স্পষ্ট নয়। শহরে ভিখারির আধিক্য বুঝিয়ে দেয় ঐ কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছে। প্রকৃত ভিখারি না হয়েও যত মানুষই ভিখারি সাজুকনা কেন, বাস্তবে প্রকৃত অভাবীর পাশাপাশি প্রচুর পেশাদার ভিক্ষাজীবী আছে সেটা অস্বীকার করা যাবে না। সমগ্র দেশের কথা বাদ দিলাম, শুধুমাত্র ঢাকা শহরে কত ভিখারি আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কারও জানা নেই। ভিক্ষাবৃত্তি কোনো স্বীকৃত পেশা নয়, কোনো শোভন পেশাও নয়। মানুষের সামনে আয়ের সহজ পথ খোলা না থাকায় বাধ্য হয়ে অনেকেই হয়ত নিজেদের লাজ-লজ্জা বিসর্জন দিয়ে অন্যের কাছে হাত পাতছে। নাম লেখাচ্ছে ভিখারির কাতারে।

নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই বিষয়গুলো নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে। ভাবতে হবে আয় বৈষম্য নিয়ে। আর্থিক অসাম্য দূর না হলে আমাদের সব সংকল্প ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের দেশে উৎপাদনের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা আছে সুষ্ঠু বণ্টনে, তদুপরি সমস্যা রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিতে। আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয় বাড়ার পরিসংখ্যান খাতা কলমে চালু আছে। কিন্তু সেই বৃদ্ধির সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছেছে কি না সেটা গভীরে গিয়ে খতিয়ে দেখা হয়নি। অথচ প্রতিটি নাগরিকের আয় বৃদ্ধির সমান ভাগীদার হওয়ার অধিকার অনস্বীকার্য। দেশের অর্থনৈতিক সূচক যাতে ঊর্ধ্বগামী হয় সেদিকে নীতিনির্ধারকদের খেয়াল রাখতে হবে। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এমআরটি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেলসহ বড় বড় মেগা প্রজেক্ট নির্মিত হওয়ার সাথে সাথে সাধারণ মানুষের জীবনমান নিয়ে চিন্তা করতে হবে। উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। অভাব-অনটনে পড়ে মানুষ যাতে ভিখারিতে পরিণত না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। সকল দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় করে সুচিন্তিত মতামতের ভিত্তিতে সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে সামনে এগুতে হবে। তা না হলে আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

অতিক্তি লোক ভিড় করায় মাওলানা মামুনুল হক মুক্তি পাননি

অতিক্তি লোক ভিড় করায় মাওলানা মামুনুল হক মুক্তি পাননি

দুটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ারসহ চার জাহাজে হামলা হুতিদের

দুটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ারসহ চার জাহাজে হামলা হুতিদের

দক্ষিণাঞ্চলীয় বাহিনীর সদর দফতরে হামলা রাশিয়ার

দক্ষিণাঞ্চলীয় বাহিনীর সদর দফতরে হামলা রাশিয়ার

আমাকে উৎখাতের পর ক্ষমতায় কে?

আমাকে উৎখাতের পর ক্ষমতায় কে?

ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-১

ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-১

সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-১

সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-১

উচ্চতাপ বজ্র-ঝড় কালবৈশাখী ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা এ মাসেই

উচ্চতাপ বজ্র-ঝড় কালবৈশাখী ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা এ মাসেই

অবশেষে গ্রেফতার সেই ভয়ঙ্কর প্রতারক মিল্টন সমাদ্দার

অবশেষে গ্রেফতার সেই ভয়ঙ্কর প্রতারক মিল্টন সমাদ্দার

ধরা পড়েনি কিলিং মিশনের ১২ খুনি, অভিযোগ ভুক্তভোগীদের

ধরা পড়েনি কিলিং মিশনের ১২ খুনি, অভিযোগ ভুক্তভোগীদের

ওসির শেল্টারেই চেয়ারম্যান তপনের নানা অপকর্ম

ওসির শেল্টারেই চেয়ারম্যান তপনের নানা অপকর্ম

জড়িতদের শাস্তির দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ আজ

জড়িতদের শাস্তির দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ আজ

৭ জানুয়ারির নির্বাচন ’৭৫ সালের পর দেশে অনুষ্ঠিত সুষ্ঠু নির্বাচন -ওবায়দুল কাদের

৭ জানুয়ারির নির্বাচন ’৭৫ সালের পর দেশে অনুষ্ঠিত সুষ্ঠু নির্বাচন -ওবায়দুল কাদের

বাংলাদেশ ও ভারতের দুই সচিবের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক

বাংলাদেশ ও ভারতের দুই সচিবের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক

কাউকে ছাড় দেবে না বিএনপি

কাউকে ছাড় দেবে না বিএনপি

ওমরা পালনে সস্ত্রীক সউদী আরব গেছেন মির্জা ফখরুল

ওমরা পালনে সস্ত্রীক সউদী আরব গেছেন মির্জা ফখরুল

শনিবার মাধ্যমিকে রোববার থেকে প্রাথমিকে পাঠদান চলবে

শনিবার মাধ্যমিকে রোববার থেকে প্রাথমিকে পাঠদান চলবে

এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি কমেছে ৪ কোটি ডলার

এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি কমেছে ৪ কোটি ডলার

ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা কলম্বিয়ার

ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা কলম্বিয়ার

রাশিয়ার উপগ্রহ-বিরোধী পারমাণবিক অস্ত্র ভয়ঙ্কর হতে পারে : পেন্টাগন

রাশিয়ার উপগ্রহ-বিরোধী পারমাণবিক অস্ত্র ভয়ঙ্কর হতে পারে : পেন্টাগন

শিক্ষা ক্যাম্পাসজুড়ে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ, চলছে গ্রেফতার-উচ্ছেদ

শিক্ষা ক্যাম্পাসজুড়ে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ, চলছে গ্রেফতার-উচ্ছেদ