ইসরাইলে ইরানের নজিরবিহীন হামলা
১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ এএম
গাজায় ইসরাইলি হামলা ৬ মাস পেরিয়েছে গত রোববার। এ পর্যন্ত নির্বিচার গণহত্যায় সেখানে প্রাণ হারিয়েছে ৩৩ হাজার ২০৭ জন। হত্যা এখনো অব্যাহত। আহতের সংখ্যা অনির্ণেয়। হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশের বেশি। গাজা সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ। এখন সেখানে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ইত্যাদি বিধ্বস্ত হয়েছে। গোটা গাজাবাসী এখন উদ্বাস্তু। গাজা কার্যতই শরণার্থী শিবিরে পর্যবসিত হয়েছে। গাজায় এ ধরনের আগ্রাসন, গণহত্যা, ধ্বংসকাণ্ড এই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে গাজা ইসরাইলি বর্বরতার চরম শিকার হয়েছে। অতীতের লাগাতার হত্যাকাণ্ড, জুলুম ও নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে রীতিমত অতিষ্ঠ হয়েই হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে ঝটিকা হামলা চালিয়ে বিপুল সাফল্য অর্জন করে। ওইদিনই ইসরাইলও গাজায় হামলা চালায়, যা এখনো চলছে। গাজায় ইসরাইলি হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত, অধিকাংশ রাষ্ট্র সোচ্চার হলেও ইসরাইলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হামলা-হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। অথচ, যুক্তরাষ্ট্র ও এসব ইউরোপীয় দেশ বিশ্বে মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিত। কোথায় তাদের সেই মানবাধিকারের বুলি, সেখানে একটি অসহায় জনগোষ্ঠিকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জোর অপতৎপরতা চলছে? আসলে গাজাযুদ্ধ ইসরাইলই চালাচ্ছে না, চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন-ব্লিংকেনের উসকানিতে চলছে এ যুদ্ধ। বাকিরা তাতে অন্ধ সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতির দাবি উঠেছে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই। কিন্তু আজো যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত আসেনি। এ ব্যাপারে সবশেষ বৈঠকও বস্তুত ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে মন্তব্য করেছে হামাস ও ইসরাইল উভয়ই। বলা বাহুল্য, যুক্তরাষ্ট্র চাইলে ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি জানাতে বাধ্য। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে না বলেই যুদ্ধবিরতি বা যুদ্ধবন্ধ হচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের বলেই ইসরাইল বলীয়ান। এই যুদ্ধের যাবতীয় অস্ত্র ও অর্থ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্য মিত্ররাও উদারহস্ত এক্ষেত্রে। ফলে ইসরাইল বরাবরের মতোই বেপরোয়া। গাজায় নৃশংস গণহত্যা চালানোর পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী লেবানন, সিরিয়া প্রভৃতি দেশে হামলা করার স্পর্ধাও সে কখনো কখনো দেখাচ্ছে। এ রকমই এক হামলা চালায় সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে। ১ এপ্রিল চালানো হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল সেখানকার ইরানি কনস্যুলেট। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে সেখানে ১৩ জনকে হত্যা করা হয়, যাদের মধ্যে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি)’র ৭ জন সদস্য ছিলেন। এই ৭ জনের মধ্যে আইআরজিসির বিদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ইউনিট কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল রেজা জাহেদিও আছেন। এটা যে, সুপরিকল্পিত এবং টার্গেটেড কিলিং ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। স্বভাবতই ইরান এতে চরম ক্ষুব্ধ হয় এবং এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে ইসরাইলে হামলা চালানোর প্রতিজ্ঞা ঘোষণা করে। পর্যবেক্ষকদের মতে, শনিবার দিবাগত রাতে ইরান ইসরাইলে যে হামলা চালিয়েছে তা নজিরবিহীন। প্রথম বারের মতো নিজের ভূমি থেকে ইরান সরাসরি ইসরাইলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্যের’ সূচনা করেছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষাবাহিনীর (আইডিএফের) একজন সাবেক মুখপাত্র জানিয়েছেন: ‘আমি ইরানের কাছ থেকে ইরানের মাটি থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ আশা করিনি। এটি এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশকে টেনে আনবে।’ স্মরণ করা যেতে পারে, ইরানের বদলা নেয়ার হুমকির প্রেক্ষিতে ইসরাইলসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ ইসরাইলে তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে দেয়। বাইডেন ইসরাইলকে ‘লৌহবর্মের’ মতো সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তার এ প্রতিশ্রুতি বিন্দুমাত্র কেয়ার না করে ইরান হামলা চালিয়ে তার সামরিক সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। প্রযুক্তিতে কারো মনোপলি নেই, ইরান তারও সাক্ষ্য দিয়েছে। প্রযুক্তি ও শক্তির শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার দিন ধীরে ধীরে শেষ হয়ে আসছে।
ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলে কী ধরনের ও কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এখনো তা বিস্তারিত জানা যায়নি। ইসরাইলের দাবি, অধিকাংশ ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই প্রতিহত করা হয়েছে। খবরে প্রকাশ, প্রতিহত করার কাজে ইসরাইলকে সরাসরি সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং জর্দান। এসব দেশকে ইরানের পক্ষ থেকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় তিনটি দেশের ভূমিকা সবারই জানা। জর্দান ব্যতিক্রম থাকলেও এবার অবস্থান সম্পূর্ণ পাল্টেছে। মুসলিম দেশ হিসেবে এটা তার কাছ থেকে কেউ আশা করতে পারে না। বাদশাহ আব্দুল্লাহ ইহুদি-খ্রিস্টানদের পক্ষ নেয়ার দায় এড়াতে পারবেন না। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: ‘হে বিশ্বাসীগণ, ইহুদি-খ্রিস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদের একজন হবে।’ সুরা মায়িদা-৫১। দুর্ভাগ্যজনক হলেও বলতে হচ্ছে, পবিত্র কোরআনের এ শিক্ষা অনেক মুসলিম দেশ ও মুসলমানই পরোয়া করে না। তার খেসারতও তাদের কোনো না কোনোভাবে দিতে হচ্ছে। বলা আবশ্যক, ইহুদিরা একটি অকৃতজ্ঞ জাতি। তারা ইতিহাসে অভিশপ্ত জাতি হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। রাষ্ট্রহীন জাতি হিসেবে হাজার হাজার বছর ধরে ইহুদিরা উদ্বাস্তুর মতো বিভিন্ন দেশে বসবাস করে আসছে। ইসরাইল এখন তাদের জাতিরাষ্ট্র বলে তারা মনে করলেও বিশ্বের অধিকাংশ দেশ তা স্বীকার করে না। এই অবৈধ রাষ্ট্রটি, শুধু মধ্যপ্রাচ্যেরই নয়, বিশ্বেরও শান্তি-নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। ঘটমান পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। ইসরাইল ইরানে পাল্টা হামলার হুমকি দিয়েছে। ইরানও তার জবাব দিয়েছে এই মর্মে যে, আরো বড় হামলা চালানো হবে, যদি ইরানে হামলা চালানো হয়। এ প্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলায় যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেবে না। কেননা, যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবেই জানে, এর পরিণতি কী হবে বা কী হতে পারে। সকলেরই জানা, যুদ্ধ কোনো শান্তি ও সমাধান দিতে পারে না, রক্তপাত ও ধ্বংস ছাড়া। কাজেই, যুদ্ধ যাতে না ছড়ায়, বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে তা নিশ্চিত করতে হবে। একটি অভিশপ্ত জাতির পাল্লায় পড়ে বিশ্ব অশান্ত, অনিরাপদ, বিপন্ন হয়ে পড়ুক তা কারোই কাম্য হতে পারে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মার্কিন পতাকা নামিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উড়ল ফিলিস্তিনের ঝান্ডা!
ক্যাডবারি চকোলেটের ওপর মিলল ফাঙ্গাস
পেরুতে ৬৫০ ফুট গভীর খাদে পড়ল বাস, হতাহত ৪৫
সেমিকন্ডাক্টর রফতানিতে জাপানের কড়াকড়ি : চীনের উদ্বেগ
সিনচিয়াংয়ের মরুভূমিতে চলছে ধানচাষ
পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে ভয়ংকর হাতিয়ার বানাল ইরান
রুকু থেকে উঠার সময় ‘সামিআললাহু লীমান হামিদাহ’ বলা প্রসঙ্গে।
যুক্তরাষ্ট্রে আসামি ধরতে গিয়ে গুলিতে ৩ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত
ইন্দোনেশিয়ায় ফের আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত
অতি বাম আর অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী
জার্মানিতে ৬ বছরের নিখোঁজ শিশুর সন্ধানে ১,২০০ জন
বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণ ‘প্রত্যাখ্যান’ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ কি বৈধ?
পান্নুনকে খুন করতে ‘হিটম্যান’ পাঠিয়েছিল ‘র’ অফিসার!
জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান প্রেসিডেন্টের
২০৩০ সাল নাগাদ চীনে বাণিজ্যিকভাবে আসবে ৬-জি
কলম্বিয়ায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৯ সেনা নিহত
বহির্বিশ্বে মিলল প্রাণের সন্ধান!
মোদির ভারতে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা মুসলিমদের
ইসরায়েলকে সমর্থন, মালয়েশিয়াতে বন্ধ কেএফসির বেশীরভাগ আউটলেট