খাদের কিনারে মধ্যপ্রাচ্য

Daily Inqilab সরদার সিরাজ

২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম

গাজায় চলমান হত্যাকা- ও ধ্বংসলীলাকে শতাব্দীর অন্যতম ট্র্যাজেডি এবং নেতানিয়াহুকে দানব বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। পবিত্র ঈদের দিনেও ভয়াবহ আক্রমণ চালিয়েছে ইসরাইলি ঘাতকরা। তাতে হামাস নেতা হানিয়ার তিন ছেলেসহ বহু মানুষ নিহত-আহত হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে এক নাগাড়ে চালিত লোমহর্ষক আক্রমণে এ পর্যন্ত ৩৩ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং অসংখ্য আহত ও গৃহহীন হয়েছে। উপরন্তু শহরটি প্রায় ধ্বংস হয়েছে। অনেক স্থানে নিহত শিশুদের গণকবর দেওয়া হয়েছে! তাই গাজাবাসীরা পবিত্র রোজা ও ঈদ পালন করেছে কোনো মতে। গাজার সাম্প্রতিক খবর হচ্ছে: জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাব পাস হয়েছে গত ৫ এপ্রিল। ওআইসির পক্ষে পাকিস্তান উত্থাপিত মানবাধিকার পরিষদের ৪৭টি দেশের ২৮টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ও যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ ৬টি দেশ বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। আর ভারত ও ফ্রান্সসহ ১৩টি দেশ ভোট দেয়নি। প্রস্তাবে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলকে বিচারের আওতায় আনারও আহ্বান জানানো হয়েছে। ইতোপূর্বে এই পরিষদে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়েছে। গাজায় গণহত্যা ঠেকানোর পদক্ষেপ এবং নির্বিচার হামলায় বিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে মানবিক পরিস্থিতি উন্নয়নে ব্যবস্থা নিতে গত ২৬ জানুয়ারি ইসরাইলকে নির্দেশ দিয়েছে আইসিজে। গত ১২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি পিয়ের বলেছেন, গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ। দুর্ভিক্ষ আসন্ন। ডব্লিউএফপির প্রধান ম্যাককেইন বলেছেন, এ মুহূর্তে গাজায় লোকজন অনাহারে মারা যাচ্ছে। গাজায় ক্ষুধা ও অপুষ্টির সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আইপিসির মতে, গাজার মোট ২৩ লাখ লোকের অর্ধেকের বেশি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে পড়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, গাজা উপত্যকায় গত ছয় মাস ধরে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। এতে এক লাখ ৭ হাজারের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছে। উপরন্তু ১০ লাখের বেশি মানুষ চরম ক্ষুধার সম্মুখীন হয়েছে। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধকে মানবতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলে অভিহিত করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার ও ইমার্জেন্সি রিলিফ বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল গ্রিফিথস। জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক গত ৩ এপ্রিল বলেছে, ইসরাইলি হামলায় যুদ্ধের মাত্র চার মাসে প্রায় ১৮.৫ বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো হারিয়েছে ফিলিস্তিনরা (যা বর্তমানে অনেক বেড়েছে)। সম্প্রতি বিবিসিকে রাফাহর শরণার্থী শিবিরের এক শিশু বলেছে, ‘গত বছর ঈদে আমরা একসাথে খেলেছি, আনন্দ করেছি। কিন্তু এই ঈদে আমরা তা মিস করছি...। কারণ খেলার মতো কোনো খেলনা বা বন্ধু নেই। তারা সবাই মারা গেছে’! ইউএনআরডাব্লিউএ বলেছে, খান ইউনিস থেকে ইসরাইল সেনা প্রত্যাহার করার পর তারা স্কুলের ভেতরে অবিস্ফোরিত এক হাজার পাউন্ড বোমা পেয়েছে।

ইসরাইলের লক্ষ্য গাজা ধ্বংস ও আল আকসা দখল করা। তবুও গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার ঠিকাদার-পশ্চিমারা যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। শুধুমাত্র আহ্বান জানিয়েছে। উপরন্তু মানবাধিকার পরিষদ ইসরাইলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার আহ্বানের পরও পশ্চিমারা ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। ইসরাইলের আমদানিকৃত অস্ত্রের ৬৮% যুক্তরাষ্ট্রের, ৩০% জার্মানির ও বাকি যুক্তরাজ্য, ইতালি ও অস্ট্রেলিয়ার। তবে, অস্ট্রেলিয়া বলেছে, তারা গাজাযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরাইলকে কোনো অস্ত্র দেয়নি। গাজার নারকীয়তা নিয়ে মুসলিম দেশগুলোর, বিশেষ করে পাশের দেশগুলোর যেভাবে গর্জে ওঠা উচিত ছিল, তা হয়নি। শুধুমাত্র পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। তবে, গাজাযুদ্ধ বন্ধ/বিরতির জন্য কাতার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আরো কিছু দেশ এ যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। সর্বোপরি বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান ফিলিস্তিনদের রক্ষা করার জন্য করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করছে। কিন্তু ইসরাইল এসবে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।

গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের ছয় মাস পার হয়েছে। উপত্যকায় ক্রমাগত বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যা। কীভাবে যুদ্ধ শেষ হবে বা পরবর্তী সময়ে কী করতে হবে, তা নিয়ে ইসরাইলের কোনো দৃশ্যমান পরিকল্পনা নেই। বৈশ্বিক পর্যায়ে ইসরাইল একঘরে হয়ে পড়েছে। বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, ইসরাইল যা করেছে, তা গণহত্যা। ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোও এখন নেতানিয়াহু সরকারের সমালোচনা করছে। ইসরাইলকে অস্ত্র না দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ওপর চাপ বাড়ছে। পন্ডিতদের মতে, গাজায় যত বেশিদিন সামরিক অভিযান চলবে ইসরাইলের আর্থিক ক্ষতি তত বাড়বে। উপরন্তু এ যুদ্ধে ইসরাইলের নিহত-আহতের সংখ্যা অনেক। হামাসের হাতে বন্দি আছে অনেক ইসরাইলি (ইসরাইলেও অনেক ফিলিস্তিন বন্দি আছে)। ইসরাইলের এক মন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, ‘অর্ধ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষুদ্র গাজা উপত্যকায় বোমা বর্ষণ করেও বন্দীদের উদ্ধার করতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ব্যর্থ হয়েছে’। তাই নেতানিয়াহু বিরোধী জনমত তীব্রতর হয়েছে।

ফিলিস্তিনদের উপর ইসরাইলের নারকীয়তা আজ নতুন নয়। যেদিন থেকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে ইউরোপের ইহুদিদের বসতি করে দেওয়া হয়েছে, তখন তথা ১৯৪৮ সাল থেকেই চলছে ভয়াবহ নির্যাতন। এতে লাখ লাখ নিরীহ ও নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি নিহত, আহত ও গৃহহীন হয়েছে। শরণার্থী হয়েছে অর্ধেকের বেশি। উপরন্তু বহু ইহুদীকে পশ্চিম তীরে স্থায়ী করা হয়েছে। তাই ফিলিস্তিনিরা স্বাধীনতা আন্দোলন করছে তখন থেকেই। কিন্তু তা নিষ্ঠুরভাবে দমন করছে ইসরাইল। উপরন্তু ফিলিস্তিনকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে কয়েকবার ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছে। সম্প্রতি ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধাভাব চলছে। কারণ, ইরানের অভ্যন্তরে কয়েকবার অন্তর্ঘাতমূলক আক্রমণ হয়েছে ইসরাইলের ইন্ধনে। উপরন্তু গত ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরাইলের আক্রমণে আইআরজিসির কমান্ডার জাহেদিসহ ১১ কর্মকর্তা নিহত হয়েছে। এর জবাবে ইরান গত ১৩ এপ্রিল রাতে ইসরাইলে ৩শ’ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হামলা চালায়, যার অনেকগুলো ইসরাইল আকাশে প্রতিহত করেছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জর্ডানের সহায়তায়। তবুও ৯টি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে ইসরাইলে আঘাত হেনেছে। তাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপরন্তু আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করতে ১.৩৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে। সবোপরি নিউইয়র্ক টাইমসের ভাষায়, ইরানি হামলায় ইসরাইলের আত্মবিশ্বাস ধূলিসাৎ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্য ইরানের হামলার নিন্দা করেছে। জি-সেভেনের নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরাইলের ওপর ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, গ্রুপ পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করবে এবং ইরানের বিরুদ্ধে নতুন অবরোধের প্রস্তুতি নেবে। আইএইএ প্রধান বলেছেন, ইরানি পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাতে পারে ইসরাইল। তাই ইরান তার সব পরমাণু স্থাপনার কাযক্রম স্থগিত করেছে সাময়িকভাবে। চীন, রাশিয়াসহ বহু দেশ উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তবুও ইসরাইলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভা ইরানের হামলার জবাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইরানও বলেছে, আমরাও পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত। নিরাপত্তা পরিষদে ইরান ও ইসরাইল পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে। ইসরাইলে ইরানের আক্রমণ টক অব দি ওয়ার্ল্ডে পরিণত হয়েছে। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের সূচকে ইরান ১৪তম ও ইসরাইল ১৭তম।

ইরান জর্দানকেও কড়া হুঁশিয়ারি জানিয়েছে। সর্বোপরি বলেছে, ইসরাইলের নতুন কোনো আগ্রাসনে আমেরিকা জড়ালে এই অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থের নিরাপত্তা থাকবে না। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য উপসাগরে নৌশক্তি বৃদ্ধি করেছে। রাশিয়া ভূমধ্যসাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। উপরন্তু হুতি ও হিজবুল্লাহ ইসরাইলে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। ইসরাইলও গত ১৫ এপ্রিল ফিলিস্তিন ও লেবাননে বিমান হামলা চালিয়েছে। সর্বশেষ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ভোরে ইরানের ইস্পাহান শহরকে লক্ষ্য করে ইসরাইল ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইরানি সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, সন্দেহজনক তিনটি ছোট ড্রোনকে ইস্পাহানের আকাশে শনাক্ত করে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে সেগুলোকে আকাশেই ধ্বংস করা হয়েছে। এ অবস্থায় ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ বাঁধলে মধ্যপ্রাচ্যে ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। এমনকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধও বেঁধে যেতে পারে। ফলে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে সারাবিশ্বে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিবও বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য খাদের কিনারে। এ অঞ্চলের মানুষ একটি পূর্ণমাত্রার ধ্বংসাত্মক সংঘাতের মুখোমুখি। তারা যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এখনই সময় তাঁদের খাদের কিনার থেকে ফিরিয়ে আনার। আর এ দায়িত্ব যৌথভাবে সবার। সৌদি আরব বলেছে, মধ্যপ্রাচ্য আরেকটি যুদ্ধ সহ্য করার সক্ষমতা রাখে না। বিশ্ববাসীও যুদ্ধ নয়, শান্তি চায়। অপরদিকে, আরব আমেরিকান বৈষম্যবিরোধী কমিটি বলেছে, ইসরাইলকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নিঃশর্ত সমর্থন বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রকে দুর্বল করছে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সহায়তায় ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে দীর্ঘদিন যাবত! তাই সেখানের অধিকাংশ মুসলমানের আকাক্সক্ষা ইহুদিদের যেখান থেকে এনে ফিলিস্তিনে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে সেই ইউরোপে ফিরিয়ে নিয়ে স্থায়ী করা। আবার অনেকের অভিমত, মুসলমানরা যদি খুন হওয়ার আগে একজন করে ইহুদি খুন করতো তাহলে বহুদিন আগেই ইহুদি জাতির বিলুপ্তি ঘটতো। কিন্তু মুসলমানরা তা করেনি। কারণ, এটি ইসলামী নীতির পরিপন্থী। ইসরাইলের একটি ইহুদি সংস্থা ২০২৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জানিয়েছে, বিশ্বে ইহুদির সংখ্যা ১.৫৭ কোটিতে পৌঁছেছে, যার ৪৬% ইসরাইলে, ৬৩ লাখ যুক্তরাষ্ট্রে ও অবশিষ্টরা বিভিন্ন দেশে বাস করছে। অন্যদিকে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মুসলমানের সংখ্যা ১৮০ কোটির অধিক।

যা’হোক, ১৯৯৩ সালে অসলোতে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি হয়। তাতে স্বাক্ষর করেন পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাত ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ইতজাক রবিন। তারা এ জন্য শান্তিতে নোবেল পান। এই চুক্তির প্রধান দিক হচ্ছে- ‘চুক্তির পর থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনিরা গাজা ও পশ্চিম তীরে স্বায়ত্তশাসন পাবে এবং ২০০০ সাল থেকে পূর্ণ স্বাধীন হবে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে’। এই শান্তি চুক্তিকে বিশ্ববাসী সমর্থন করেছে। জাতিসংঘসহ ১৩৯টি রাষ্ট্র স্বাধীন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে বহু আগে। উপরন্তু ২০১১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনকে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দিয়েছে। তবুও ইসরাইলের কট্টরপন্থীরা শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করেনি। বরং ফিলিস্তিনে নারকীয়তা অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি প্রবলতর হয়েছে বিশ্বব্যাপী। গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের স্থায়ী সমাধানের জন্য দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের আহ্বান জানানো হয়েছে। গত ২ এপিল স্পেনের প্রধানমন্ত্রী সানচেজ বলেছেন, এ বছরের জুলাই মাসের মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে চলেছে তার দেশ। স্লোভেনিয়া, মাল্টা, আয়ারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেছে। পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট সার্বভৌম ফিলিস্তিন মাতৃভূমির আহ্বান জানিয়েছেন গত ২ নভেম্বর। চীন সম্প্রতি বলেছে, জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদের জন্য ফিলিস্তিনের আবেদনকে সমর্থন করবে সে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ‘দুই রাষ্ট্র তত্ত্ব’ প্রত্যাখ্যান করেছেন গত জানুয়ারিতে, যা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

বিশ্বের বেশিভাগ দেশ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং দু’ রাষ্টভিত্তিক সমাধানের পক্ষে। এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিরসন হবে না। তাই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এখন অপরিহার্য। এর কোনো বিকল্প নেই। ইসরাইল তা করতে রাজী নয়। তাই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের আগের সীমান্ত মানতে ইসরাইলকে বাধ্য করতে হবে জাতিসংঘকে। এ ব্যাপারে ওআইসি, মুসলিম দেশ ও মুসলমানদের ব্যাপক সোচ্চার হওয়া দরকার। যতদিন ফিলিস্তিন স্বাধীন না হয়, ততদিন পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে দৃঢ় ঐক্য, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ইসরাইল ও তার দোসরদের পণ্য বর্জন করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যেই ইসরাইলকে সমর্থন করায় ডাউনিং স্ট্রিটে আয়োজিত ঈদ উদ্যাপন বয়কট করেছেন আমন্ত্রিতরা। একই কারণে এবার হোয়াইট হাউজের ইফতারও বয়কট করেছেন আমন্ত্রিতরা। এভাবে ইসরাইল ও তার দোসরদের বয়কটের সুনামি সৃষ্টি করতে হবে বিশ্বব্যাপী।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

অতিক্তি লোক ভিড় করায় মাওলানা মামুনুল হক মুক্তি পাননি

অতিক্তি লোক ভিড় করায় মাওলানা মামুনুল হক মুক্তি পাননি

দুটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ারসহ চার জাহাজে হামলা হুতিদের

দুটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ারসহ চার জাহাজে হামলা হুতিদের

দক্ষিণাঞ্চলীয় বাহিনীর সদর দফতরে হামলা রাশিয়ার

দক্ষিণাঞ্চলীয় বাহিনীর সদর দফতরে হামলা রাশিয়ার

আমাকে উৎখাতের পর ক্ষমতায় কে?

আমাকে উৎখাতের পর ক্ষমতায় কে?

ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-১

ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-১

সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-১

সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-১

উচ্চতাপ বজ্র-ঝড় কালবৈশাখী ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা এ মাসেই

উচ্চতাপ বজ্র-ঝড় কালবৈশাখী ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা এ মাসেই

অবশেষে গ্রেফতার সেই ভয়ঙ্কর প্রতারক মিল্টন সমাদ্দার

অবশেষে গ্রেফতার সেই ভয়ঙ্কর প্রতারক মিল্টন সমাদ্দার

ধরা পড়েনি কিলিং মিশনের ১২ খুনি, অভিযোগ ভুক্তভোগীদের

ধরা পড়েনি কিলিং মিশনের ১২ খুনি, অভিযোগ ভুক্তভোগীদের

ওসির শেল্টারেই চেয়ারম্যান তপনের নানা অপকর্ম

ওসির শেল্টারেই চেয়ারম্যান তপনের নানা অপকর্ম

জড়িতদের শাস্তির দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ আজ

জড়িতদের শাস্তির দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ আজ

৭ জানুয়ারির নির্বাচন ’৭৫ সালের পর দেশে অনুষ্ঠিত সুষ্ঠু নির্বাচন -ওবায়দুল কাদের

৭ জানুয়ারির নির্বাচন ’৭৫ সালের পর দেশে অনুষ্ঠিত সুষ্ঠু নির্বাচন -ওবায়দুল কাদের

বাংলাদেশ ও ভারতের দুই সচিবের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক

বাংলাদেশ ও ভারতের দুই সচিবের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক

কাউকে ছাড় দেবে না বিএনপি

কাউকে ছাড় দেবে না বিএনপি

ওমরা পালনে সস্ত্রীক সউদী আরব গেছেন মির্জা ফখরুল

ওমরা পালনে সস্ত্রীক সউদী আরব গেছেন মির্জা ফখরুল

শনিবার মাধ্যমিকে রোববার থেকে প্রাথমিকে পাঠদান চলবে

শনিবার মাধ্যমিকে রোববার থেকে প্রাথমিকে পাঠদান চলবে

এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি কমেছে ৪ কোটি ডলার

এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি কমেছে ৪ কোটি ডলার

ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা কলম্বিয়ার

ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা কলম্বিয়ার

রাশিয়ার উপগ্রহ-বিরোধী পারমাণবিক অস্ত্র ভয়ঙ্কর হতে পারে : পেন্টাগন

রাশিয়ার উপগ্রহ-বিরোধী পারমাণবিক অস্ত্র ভয়ঙ্কর হতে পারে : পেন্টাগন

শিক্ষা ক্যাম্পাসজুড়ে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ, চলছে গ্রেফতার-উচ্ছেদ

শিক্ষা ক্যাম্পাসজুড়ে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ, চলছে গ্রেফতার-উচ্ছেদ